আধঘণ্টা ধরে আমার নিথর দেহটি
শুয়ে আছে তক্তপোষে;
মৃত্যু ঘটেছিল ফাঁসিতে ঝুলে।
আমার দুই বাহু এখন বাঁধনহীন,
কিছুক্ষণ আগেও মুখ মুড়ে ছিল কালো-কাপড়ে;
জিবের অর্ধেকটা বেরিয়ে এসেছে-
দাঁতগুলোর গভীর আলিঙ্গনে তা নীলাভ বর্ণ ধারণ করেছে।
আমার লাশ নিতে আসেনি আমার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা।
আসেনি স্বজন-বন্ধু-প্রতিবেশী।
আমাকে ওরা বড্ড ঘৃণা করে-
ঘৃণিত ব্যক্তির লাশ কেন নিতে আসবে?
এ-যে ভীষণ লজ্জার, চরম অপামানের!
মৃত্যু ঘটিয়েছে রিক্ততার অবসান-
আমার চেতনা ওদের নির্লিপ্ততা কারণ খুঁজতে অপারগ।
আমি একজন অভজার্ভার –
আমার কাজ নিবন্ধিত এবং সীমাবদ্ধ কেবল দেখে যাওয়াতে!
আজ আমার মেয়ের জন্মদিন-
ঐতো মা মেয়ের মুখে তুলে দিচ্ছে ব্ল্যাকফরেস্টের একটুকরো!
মেয়েটা চকলেট কেক খেতে খুব ভালোবাসে!
স্ত্রী সেজেছে অপরূপে-
ওকে আজ লাগছে ইন্দ্রাণীর মতন!
আমার কলেজে পড়ুয়া ছেলের হাতে গীটার
সবাইকে গান শুনাতে ব্যস্ত- বড় মিষ্টি কণ্ঠস্বর।
এই গানটা আমিই শিখিয়েছিলাম।
বাবার কথা কি ওর মনে পড়ছে?
কই, ওর গলাতো এতোটুকু কাঁপছে না।
হাসিমুখে গান গাইছে- বাবকে ভুলে গেছে,
অপরাধী বাবাকে স্মরণ করাও হয়তো অপরাধ!
আশ্রিতা কিশোরীর চোখ ভেজা কেন?
মাঝে-মাঝে আমি ওকে ডেকে দিতাম
আট-আনার সস্তা তালমিছরি,
মাথা নিচু করে, হাত বাড়িয়ে নিয়ে
দৌড়ে পালিয়ে যেত ও।
ঐ সামান্য মিছরি দানাগুলোতে এত মায়া মাখানো ছিল?
একজনের চোখেও পানি এসেছে-
গোটা মানব-জনম বৃথা যায়নি তাহলে।
আমি একটা সুখ-দৃশ্য দেখতে চেয়েছিলাম-
আমি দেখেছি; আর কিছু দেখতে চাইনা আমি।
সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে চোখ-ধাঁধানো আলো-
চুম্বক আকর্ষণে আমি ছুটে যাচ্ছি আলোর দিকে।
হে পৃথিবীর মানুষ-
তোমার ভালো থেকো, সুখে থেকো।
কবিতাটি হৃদয় র্স্পশ করলো। 🙁 মন খারাপ হয়ে গেল।
“আমি একটা সুখ-দৃশ্য দেখতে চেয়েছিলাম-
আমি দেখেছি; আর কিছু দেখতে চাইনা আমি।
সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে চোখ-ধাঁধানো আলো-
চুম্বক আকর্ষণে আমি ছুটে যাচ্ছি আলোর দিকে”
লাইনগুলো পড়ে নস্টালজি হয়ে গেলাম।
🙁 🙁
‘সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে চোখ-ধাঁধানো আলো-
চুম্বক আকর্ষণে আমি ছুটে যাচ্ছি আলোর দিকে।’
তবে কি এই পৃথিবী, মানুষ, এরা অন্ধকারের বাসিন্দা?