ফেসবুক

প্রথম প্রথম ফেসবুকে সবাই একাউন্ট খুলত, তাই খুলতাম। ঐ সময় পরিচিত কারো আইডি ছিল না, থাকলেও নিয়মিত ব্যবহার করত না। তাই কি আর করা, পরিচিত অপরিচিত সবাইকে এড করতাম। এটা ছিল এড পর্ব।

ব্লগ গুলোর সাথে পরিচিত হলাম। ব্লগিং শুরু করলাম। ব্লগের নিজের সম্পর্কের জায়গায় ফেসবুকের লিঙ্ক ও যুক্ত করে দিলাম। ঐ ভাবে দুই একজন যুক্ত করতে লাগল। ব্লগের কারণে ঐ দুই একজনের মধ্যে কাউকে কাউকে চিনতাম। চ্যাট করতাম। মাঝে মধ্যে বাস্তবে দেখা হত।

এরপর আস্তে আস্তে ফেসবুকে নিজে যা করতাম, তাই পোস্ট দেওয়া শুরু করেছি। -_- হাবিজাবি যা ইচ্ছে তাই। এখনো দিচ্ছি। কেউ লাইক বা কমেন্ট করলে দারুণ লাগত।

এক সময় বিরক্তি চলে আসছে। ভালো লাগে না কিছু। কিছু করার নেই বলেই ফেসবুকে সময় দিচ্ছি। আসলে অনেক কিছুই করার আছে। অলস মানুষ। অলসতা করতে ভালো লাগে, তাই ফেসবুকে বসে বসে অলস সময় পার করি।

এক সময় আমি অনেককে যুক্ত করেছি। পরিচিত অপরিচিত সবাইকে। এরপর আমাকেও অনেকে যুক্ত করতে লাগল।

এরপর জুকারবার্গের বেধে দেওয়া ৫০০০ জন পূর্ন হলো। কিন্তু এর আগেই এ ফেসবুকের প্রতি অনিহা চলে আসছে। কেন আসছে জানি না। সময় গুলো নষ্ট করে যথেষ্ট। এর থেকে পাওয়ার কিছু আছে? কিছুই নেই। তারপর ও ব্যবহার করে সবাই, ব্যবহার করি।

প্রথম প্রথম অনেক কিছুতেই ফ্যান্টাসি থাকত। কাউকে চ্যাটে নক করছি, উত্তর দেয় নি কেনো? অবশ্যই ভাব ধরছে। আরে! আমারে ঝুলিয়ে রাখছে। আরো কত কিছু। বুঝতাম না যারে নক করছি তার কাজ থাকতে পারে।

ফেসবুক ভার্সুয়াল দুনিয়া। হয়তো সময় কাটে। হয়তো একটু আনন্দ দেয়। কিন্তু এটার বাহিরে অনেক বিশাল একটা দুনিয়া পড়ে আছে। ফেসবুকে যার তার সাথে সরাসরি কথা বলা যায় না। ঐ যে, কেউ ব্যস্ত থাকবে। আপনার সাথে কথা বলবে না। হয়তো আপনাকে চিনে না। তাই। তখন মনে হবে, ভাব ধরছে। আমারে পছন্দ করে না। আমি কে সে জানে?! ইত্যাদি। সত্যি কথা, এক সময় এসব হাস্যকর লাগবে। প্রমাণ? এই যে, আমি লিখতেছি!
অনেকেই ফেসবুকে অপরিচিতদের যুক্ত করে না। তাই এটাকে ভাব না ভেবে তার সাথে পরিচিত হয়ে থাকলে ইনবক্স করলেই হয়। নিজের পরিচয় দিয়ে একটা মেসেজ দেওয়ার পর যদি কেউ যুক্ত না করে, তাহলে হয়তো পারসনাল সমস্যা থাকতে পারে। তাই এটাকে ভাব না ভাবলেই ভালো 🙂

পরামর্শ দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। তারপর ও যারা আমার থেকে জুনিয়র, তাদেরকে বলি। যদি ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলতে হয়, ফোনে দুই মিনিট কথা বললেই অনেক কথা বলা যায়। ফেসবুকে চ্যাট করে কথা বললে সারা রাত ও শেষ করা যাবে না। পড়ালেখা রেখে চ্যাট করা অবশ্যই ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

আগে আমরা গল্পের বই পড়তাম, এখন সবাই ফেসবুক পড়ি। যার মধ্যে শিক্ষনীয় কিছু খুজে পাওয়া যায় না। যা খুজে পাওয়া যায়, তা হচ্ছে শিক্ষার বিকৃত রুপ। বারান্দায় বা নিজ বাগানের কোন গাছের উপর বসে গল্পের বই পড়ার মজা কেমন যদি বুঝাতে পারতাম। হয়তো অনেকেই আমার সবুজ কোন গাছের নিছে বসে ফেসবুকিং করার মজা বুঝাবে।

বিনোদনের দরকার আছে। সারাক্ষন যে বিনোদন, তা আর বিনোদন থাকে না। তা হয়ে যায় আসক্তি। Addiction। তাদের সবাই বলে এডিক্টেড!

জাকির হোসাইন সম্পর্কে

একজন প্রোগ্রামার। লিখতে প্রচন্ড ভালোবাসি। দুটোই। কোড এবং গল্প বা ফিকশন। পেশা হিসেবে একজন ফ্রীল্যান্সার। প্রযুক্তি নিয়ে লেখা গুলো পাওয়া যাবে আমার টেক ডায়েরীতে
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

3 Responses to ফেসবুক

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    পোস্টটা চমৎকার এবং জরুরি একটা ইস্যুকে হাইলাইট করেছে।
    পাশাপাশি কীভাবে আমরা নেতিবাচক বিষয়কে এভয়েড করে ইতিবাচক কাজ করতে পারি? সেটাও আনা যায়।

    ফেইসবুক না থাকলে তোমার সাথে মিট করতাম কীভাবে?

    • জাকির হোসাইন বলেছেনঃ

      অনেক গুলো ইতিবাচক কাজ করা যায়। কিন্তু কয় জনে করে? সময়ই বেশি নষ্ট করে।।

      আসলেই, ফেসবুক না থাকলে আপনাদের যাথে মিট করতাম কীভাবে? 🙂

  2. সামিরা বলেছেনঃ

    “প্রথম প্রথম অনেক কিছুতেই ফ্যান্টাসি থাকত। কাউকে চ্যাটে নক করছি, উত্তর দেয় নি কেনো? অবশ্যই ভাব ধরছে। আরে! আমারে ঝুলিয়ে রাখছে। আরো কত কিছু। বুঝতাম না যারে নক করছি তার কাজ থাকতে পারে।” – খুব ভালো উপলব্ধি। অনেকেই বুঝতে চায় না।

    আমার মনে হয় ফেইসবুকের অনেক ইতিবাচক ব্যবহার সম্ভব হলেও, বেশিরভাগ মানুষের সম্ভবত নেতি-কে পাশ কাটিয়ে শুধু ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করার ক্ষমতা/বোধ থাকে না। কিংবা বোধ জন্মাতে জন্মাতে অনেক দেরি হয়ে যায়। তাই কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টাই ভালো!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।