একদা খেলার মাঠে করিম আমাকে বলল, “ আজকে কিন্তু বাংলাদেশে জিতবে।”
একের পর এক খেলায় হারছে বাংলাদেশের ক্রিকেট দল। আমি খুবই চিন্তিত বিষয়টি নিয়ে। অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম কেন?
করিম উওর দিল, “ সাকিবুল হাসান আজ খেলছে।”
কতোটা নির্ভর করতাম আমরা সাকিবকে।
ঘটনাটি অনেক আগের। সাকিব যখন নতুন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে খেলছে তখকার ঘটনার। আমি প্রচন্ড ক্রিকেট খেলা পাগল ছিলাম। স্কুল থেকে বাসায় এসে বিকালে ব্যাট-বল হাতে মাঠে চলে যেতাম। খেলার মাঠে খেলার পাশাপাশি চলত খেলা নিয়ে আলোচনা। সাকিব আসার বাংলাদেশ দলে আসার পর আমাদের আলোচনার মধ্যমনি হয়ে গেল সাকিব। সেই কবে ঘটনা কিন্তু আজও যেন চোখের সামনে ঘটছে ঘটনাগুলো। ক্রিকেট পাগল করিমও দেশের বাহিরে পাঁচ বছর হলো। তবুও স্মৃতির আড়াঁলে ঘটনাগুলো রয়ে যায়।
বাংলাদেশের ক্রিকেটকে সাকিব কতদূর এগিয়ে নিয়ে গেছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ঠান্ডা মেজাজের হাসিমাখা ছেলেটার আজ দলের শৃংখলা ভঙ্গের অপরাধে সবধরণের ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে । খবরটি শোনার পর বুকটা কেমন যেন হুহু করে উঠল। এক অজানা আতঙ্ক মনে হতে লাগলো। না জানি আশরাফুলের মত সাকিবের অবস্থা হয়।
ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কাদের কথায় চলছে তা নিয়ে সহেন্দ হচ্ছে আমার। নাকি দাদাদের কথা মত চলছে। সাকিব প্রতিবার এক নম্বর অলরাউন্ডার হয়। তাঁর জন্য দাদাদের দেশের বিখ্যাত খেলোয়াররা এক নম্বর অলরাউন্ডার হতে পারে না। এই প্রতি হিংসা কিন্তু আছে দাদাদের।
প্রতিটি ঘটনার মত আমাদের মিডিয়া তিলকে বানাচ্ছে তাল। দেখুন কয়েকটি নমুনা
সাকিবঃ আমি দেশের হয়ে খেলতে গিয়ে অনেক সময় বাবা মা বোনকে সময় দিতে পারি নাই।
পত্রিকার শিরোনামঃ
মা বোনকে সময় দেন না সাকিব।
সাকিবঃ মনে হয় মাঝে মাঝে বউয়ের চেয়েও ক্রিকেটকে বেশি ভালোবাসি।
পত্রিকার শিরোনামঃ
ভালোবাসার মাপকাঠিতে স্ত্রী শিশিরকে অনেক নিচে ঠাই দিলেন সাকিব।
সাকিবঃ ব্যাটিং এ ব্যার্থ হলে চিন্তা করি বল দিয়ে পুষিয়ে দিতে হবে।
পত্রিকার শিরোনামঃ
ব্যাটিং ব্যার্থতা নিয়ে ভাবেন না সাকিব আল হাসান।
সাকিবঃ এই পরাজয় থেকে শিক্ষা না নিলে উন্নতি সম্ভব হবে না।
পত্রিকার শিরোনামঃ
বাংলাদেশের ক্রিকেটে উন্নতি সম্ভব নয় – সাফ জানিয়ে দিলেন সাকিব।
সাকিবঃ ফুটবলে আমার প্রিয় দল আর্জেন্টিনা।
পত্রিকার শিরোনামঃ
বাংলাদেশ ফুটবল দলকে ঘৃণা করেন ক্রিকেটার সাকিব।
এরকম অনেক উদাহরণ পাওয়া যাবে। সাকিবের অপরাধের খবরটি যখন সংবাদ পত্রে প্রকাশ হওয়ার পর ফেইসবুকে স্ট্যাটাসের বন্য রয়ে যায়।
রয়েল বেঙ্গল বলেছেন, এ রকম ভাব ওয়ালা খেলোয়ারের বাংলাদেশ টিমে না রাখাই ভালো।
মনিরুজ্জামান মনির তার স্ট্যাটাসে বলেছেন, এই গরীব দেশটা সাকিবকে অনেক দিয়েছে । ওর কৃতজ্ঞতাবোধ এত কম কেন? টাকাই কি সব? দেশের হয়ে খেলা এক বিরাট সম্মানের ব্যাপার। ওর উচিত মাশরাফির কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। মাশরাফি একবার বলেছিলেন “আমি যতই ইনজুরিতে পরি, পায়ের লিগামেন্ট যতই ছিঁড়ুক, আমি দৌড়ে যাব । আমার ভেতরটা সবসময় আমাকে বলে, দৌড়া, দেশের জন্য দৌড়া ।”
আমরা সাধারণত কোন ঘটনা না দেখে মন্তব্য করতে খুব বেশি পছন্দ করে থাকি। সংবাদপত্র কি প্রকাশিত হয়েছে তা দেখে অনেক সাকিবকে গালাগালাজ করে একাকার করেছে।
এমনি কি সাকিবের বউ এবং পরিবার নিয়ে অশালীন কথা পর্যন্ত বলছে। তা মোটেও উচিত নয়। অপরাধ করলে সাকিব করেছে তাঁর বউ এবং পরিবারকে কেন গালিগালাজ করা হবে আমি বুঝি না?
আজ যখন সাকিবকে নিষিদ্ধ করা হলো তখন আবার সারা ফেইসবুকময় হলে গেল সাকিব। আলাপ আলোচনায় সবাই সবার মন্দ জানাচ্ছে। কেউ খুশি হয়েছে কেউ কষ্ট পেয়েছে।
পক্ষ বিপক্ষ বুঝি না। আমি চাই দ্রুত যেন সাকিবকে খেলার মাঠে দেখতে পারি। সাকিব আবার ছক্কা মেরে বাংলাদেশের দর্শকদের মত ভুলিয়ে দিবে। আবার আমরা খেলায় জিতব সাকিব থাকবে জয়ের নায়ক। আবার ম্যাচ অব দ্যা ম্যাচ হয়ে হাসি মুখে সাকিব বক্তব্য দিবে। শুভ কামনা সাকিব। আবারো ফিরে এসো বাংলাদেশের প্রান সাকিবুল হাসান।
পত্রিকাওয়ালা আর তথাকথিত পত্রিকাগুলার কর্মকাণ্ড + আমাদের অতি উৎসাহ ইত্যাদি সব কিছু মিলিয়ে খুবই বাজে অবস্থা।
এত বেশি উত্তেজিত হই *সবকিছুতেই*
তুমি তো দেখি কারেন্ট ইস্যুতে দুমদাম লিখে ফেলো। দারুণ বিষয় । কিপিটাপ।
(শিরোনামের বানান প্রাণ হবে )
ধন্যবাদ ভাইয়া। শিরোনাম ঠিক করা হয়েছে। ধন্যবাদ
সাকিব আল হাসান হল নামের বানান।
ভাইয়া সাকিবুল হাসান ইচ্ছা করে দেয়া। কেনানা খেলার মাঠে তখন আমরা সবাই সাকিবুল হাসান বলে ডাকতাম। আদর করে আর কি:)
তাই এখানে সাকিব আল হাসান ব্যবহার না করে সাকিবুল ব্যবহার করেছি ইচ্ছাকৃতভাবে ।
🙂