অন্তঃপুরীর অন্তরালের কাব্যকথা

সাইনবোর্ডে গোটা অক্ষরে লিখা-
‘এখানে আদর কেনাবেচা হয়- সস্তায়।’
এ পথ দিয়েই হেঁটে যেতে চোখে পড়ে কথাগুলো
ভারী কাচের চশমা মুছে আবার তাকায়-
দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকে,
ঠোঁটগুলো তার অনড় ঠেকে,
দীর্ঘশ্বাসের প্রস্রবণ উষ্ণ করে চারপাশটা।
একটা প্রশ্ন মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরেন-
‘আদর কেন কিনতে হবে? বেচতে হবে?
ভালোবাসা কি আজ পণ্য তবে?’
নির্ঘুম এক রাত্রি শেষে ভোর না হতেই
বেরিয়ে পড়া-
প্রশ্নগুলোর উত্তর তার খুঁজতে হবে।

সাইনবোর্ডের সামনে এসে দাঁড়ায়-
হাতের ইশারায় এক কিশোরী তাকে ডাকে,
এগিয়ে যায় চাকুরী থেকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ-
দেশের বিভিন্ন সমস্যা, উত্তরণের পথ নিয়ে চিন্তা-ভাবনাকেই
যিনি এখন চাকুরী হিসেবে নিয়েছেন।

বৃদ্ধকে দেখে মুখ টিপিয়ে হাসে কিশোরী,
দাদার বয়েসী এমন খদ্দের আগে কখনো আসেনি।
‘ভেতরে আসুন।’ বলে মুখটিপিয়ে আবার হাসে;
পলকহীন চোখে আপাদমস্তক কিশোরীকে দেখে বৃদ্ধ।
লাল ফিতেতে ফ্রেঞ্ছ-বেণী, চোখজুড়ে গাঢ় কাজল
পানের রসে রাঙা ঠোঁট আর গলায় সুগন্ধি পাওডারের সাদা দাগ-
ভাগ্য পরিহাস না করলে সে হয়তো আজ বেণী দুলিয়ে স্কুলে যেত।
বৃদ্ধের দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে উঠে ছোট ঘোরটা: কোন শব্দ খুঁজে পায় না।

‘মাগো, আমার সাথে যাবে তুমি, আমার বাড়ি?
আমার মেয়ের সাথে খেলবে তুমি, স্কুলে যাবে;
যাবে তুমি?’ স্নেহের চোখে বৃদ্ধ তাকিয়ে থাকে।
কিশোরীর চোখ চিকচিক করে লোনা জলে-
এমন কথা আগে কখনো শুনেনি সে,
নিজেকে সামলে নিয়ে- ‘যেতে পারি…
গণিকালয়ের সব পতিতা আমার সাথে যাবে;
বোর্ডিংয়ের সব শিশুগুলোকে সঙ্গে নেবেন?
ওদের কারো মা-বাবা নেই- অনাথ ওরা!
আদর বেঁচে ওদের জন্য খাবার কিনি, ওদের পড়াই!
ওদের আমরা বড় করব; মানুষ করব।
ওদের ফেলে কি করে যাই?’
চোখের জল যেন বাঁধ মানে না, অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে।
‘আসি মা।’
কিশোরীর মাথায় হাত বুলিয়ে বৃদ্ধ বেরিয়ে আসে।

অন্তঃপুরীর অন্তরালের কাব্যকথায় আজ সিক্ত হৃদয়;
সাইনবোর্ডের লেখাগুলোর দিকে তাকায় বৃদ্ধ-
বুক ভরে উঠে গর্বে-শ্রদ্ধায়।

অনিমেষ ধ্রুব সম্পর্কে

"You've gotta dance like there's nobody watching, Love like you'll never be hurt, Sing like there's nobody listening, And live like it's heaven on.'' অসম্ভব পছন্দ উইলিয়াম পার্কারের এই কথাগুলো! নিজের মত করেই নিজের পৃথিবীটা কল্পনা করে নিতে ভাল লাগে। ঔদাসিন্য,অলসতা শব্দ দুটি আমার সাথে বনে যায়। গভীর মনোযোগ কিংবা অসম্ভব সিরিয়াস মুড আমার কখনোই আসে না। একা অচেনা রাস্তায় অকারণে হাঁটতে ভালো লাগে, মানুষ দেখতে ভালো লাগে, ভাল লাগে কবিতা লিখতে...তবে স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখি আমার চারপাশে থাকা মানুষগুলোর জন্য কিছু একটা করার, দেশকে কিছু একটা দেয়ার। পারব কি-না জানি না, তবুও স্বপ্ন বুনে চলেছি নিরন্তর... http://www.facebook.com/kamrul.h.hridoy.3
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে অনুপ্রেরণা, কবিতা, সাহিত্য-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

3 Responses to অন্তঃপুরীর অন্তরালের কাব্যকথা

  1. হাসান বলেছেনঃ

    হৃদয় খুব ভাল লাগলো লিখাটা …।
    এভাবে সাইন বোর্ড লাগিয়ে আর্ট করে হয়ত কেও বলেনা কিন্তু ঘটনা ঘটে।
    যদি মুক্তি চাও কিছু করা উচিত না এর জন্য ??
    ঐ বৃদ্ধ একা বলে সবাইকে নিতে পারেনি সুস্থ পরিবেশে, কিন্তু পরিবেশটাই যদি আমরা পুরো পাল্টে দেই সেই সাধনা কি করতে চাও?

    এমন সমস্যা নিয়ে কবিতা লেখাও একটা বড় কাজ, কিন্তু অনেকেই একসাথে নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে না চললে ঐ বৃদ্ধের মতই চোখের পানি ফেলতে ফেলতেই আমাদের কবরে যেতে হবে।

  2. শারমিন বলেছেনঃ

    ভালো লিখা 😀
    মনে একটা নাড়া দিয়ে গেল আসলেই তো আমরা এদের সম্পর্কে কতটুকু ভাবি 🙁
    সবাই মিলে কাজ করলে হয়ত কিছু করা সম্ভব।

  3. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    তোমার চিন্তার ধরন এবং লেখার গভীরতা সবসময়ই মুগ্ধ করে।

    তবে সত্যি বলতে, যা নিয়ে তুমি লিখেছ সে বিষয়ে আমার কিছু বলারও নেই, ভাবারও নেই।

    দেশ, জাতি, ধর্ম, স্পেসিসের গন্ডি পেড়িয়ে চিন্তা করলে বুঝি-‘মানুষ আসলে অত ভালো কিছু না’। তাই সভ্যতার সুন্দর ছবিটার ফ্রেমের মধ্যে যত বিভৎস পোকামাকড় থাকুক। আমি আর বিচলিত নই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।