আমি এখন যে বাসাটায় থাকি,এই বাসা থেকে আকাশ দেখা যায়না। আমি যে খুব বিশাল প্রকৃতি প্রেমী তা কিন্তু না, কিন্তু আমার মাঝে মাঝে আকাশ দেখতে ভীষণ ইচ্ছা করে, আকাশ দেখার প্রতি আমার প্রবল একটা আকুতি কাজ করে । যখনি আকাশ দেখি, আমার অবাক লাগে, যখন রাতের আকাশে বাঁধভাঙ্গা জ্যোৎস্না নামে্, আমার ভিতরে একটা তোলপাড় শুরু হয় , শুধু আমার না, আমি জানি বাংলাদেশের লক্ষ তরুণের ভেতর হাহাকার শুরু হয়, এই তরুণেরা রাতের জ্যোৎস্নার দিকে হা করে চেয়ে থাকে, দূর থেকে দেখলে মনে হয় এরা জ্যোৎস্না খাচ্ছে, কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলে জানা যায় আসলেও তাই, এরা জ্যোৎস্নাই খাচ্ছে, যারা প্রশ্ন করে তারা খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে, জ্যোৎস্নাভুখ তরুনেরা মৃদু হাসি মুখে প্রশ্ন কর্তার দিকে তাকিয়ে থাকে, যে হাসি কাউকে এলোমেলো করে দিতে যথেষ্ট। কিছু কিছু বাড়ির দোতালায় এই জ্যোৎস্নাভুখ তরুণদের খুব কাছের কেউ দাঁড়িয়ে থাকে , অনেক আশা নিয়ে , হয়ত আজ তাদের কেউ আসবে , তরুনেরা কথা রাখেনা , তারা আসে না, আসলেও কাছের সেই মানুষের সাথে দেখা করেনা , নিয়ম নেই , সেই তরুন দের খুব সুন্দর একটা নাম আছে ,তাদের নাম হিমালয় , ডাক নাম হিমু । আর তাদের সেই অতি কাছের মায়াবতির নাম রূপা ।
আমি কখনো কাউকে বলিনি , আমি সবসময় রূপা হতে চেয়েছিলাম , যেখানেই রূপার কথা পড়তাম আমার ভীষণ হিংসে হতো , আমি জানি আমি কোনোদিন রূপা হতে পারবনা, তবুও প্রায়ই রূপার স্রষ্টা কে চিঠি লিখতাম,আপনি রূপাকে নিয়ে একটা অনেক বড় উপন্যাস লিখবেন প্লিজ , অনেক বড় উপন্যাস ? আমার খুব রুপা হতে ইচ্ছে করে … তারপর সেই চিঠি বাসার ছাদে নিয়ে উড়িয়ে দিতাম ,আমার প্রায় মনে হত, কোন একটা চিঠি নিশ্চয়ই রূপার স্রষ্টা পর্যন্ত যেয়ে পৌঁছুবে । যেদিন রুপা কে হাতে পেলাম , আমি বার বার ছুঁয়ে দেখছিলাম আমার মনে হয়েছিল তিনি নিশ্চয়ই আমার কোন একটা চিঠি পেয়েছেন ।আজ রুপার স্রষ্টা চলে গেছেন, এমন এক জায়গায় যেখানে গেলে কেউ ফেরে না , আচ্ছা , তিনি কি আগেই জানতেন এমন কিছু হবে? অপারের ডাক আসলে আসলেই কি মানুষ আগে থেকে টের পেয়ে যায় ? কি সুন্দর বলে গেলেন আর সিনেমা বানাবেন না , আশঙ্কা করলেন নিষাদ ,নিনিত বেশিদিন তাকে কাছে পাবে না, সব সত্যি হয়ে গেল । মিথ্যা হয়ে গেল তিনি বেঁচে ছিলেন এই কথাটা ।
পৃথিবীর শুদ্ধতম বালিকাটির নাম কি?
– রূপা
পৃথিবীর সবচেয়ে মায়াবতী নারীর নাম কি?
– রূপা
পৃথিবীর সমস্ত রূপাদের আজ মন খারাপ , দোতালা বাড়ির জানালায় বাতি জ্বলছেনা, রুপারা জেনে গেছে হিমুরা সত্যিই কখনও কারো হাত ধরেনা ……
ভাল থাকুন হুমায়ুন আহমেদ, পৃথিবীতে যতদিন জ্যোৎস্না থাকবে, যতদিন চান্নিপসর রাত থাকবে, যতদিন বর্ষা থাকবে , কদমফুল আর রবীন্দ্র সঙ্গীত থাকবে , পৃথিবীবাসী আপনাকে ততদিন মনে রাখবে । এই প্রথম আমি আপনার বিরোধিতা করে বলছি , পৃথিবীতে চলে যাওয়া মানুষের স্থান থাকে , যেমন আপনার থাকবে শত কোটি সুপ্রভা, রূপা , হিমু , মিসির আলি, জরি ,মীরা মৃন্ময়ী কিংবা শুভ্রদের বুকে……
পুনশ্চঃ দুবছর আগের দিনগুলো ভীষণ মন খারাপ করা ছিলো। সেই মন খারাপের দিন গুলোতে কালো মেঘের তুলি দিয়ে আঁকিবুঁকি কাটতে কাটতে এক বইয়ের তাক ভর্তি হুমায়ূন আহমেদ নিয়ে কাটিয়ে দিতাম। কখনো এক আবোলতাবোল ভালোবাসতে জানা মেয়ে তিতলীর কষ্টে কেঁদে বুক ভাসিয়েছি, কখনো তাহেরের পিতৃ বিয়োগে। মনে আছে অপেক্ষা বইটিতে সুপ্রভা চরিত্রের যখন ইতি টানা হয়েছিলো, আমি রাত জেগে বইটা পড়ছিলাম, সারারাত ধরে সুপ্রভার জন্য কেঁদেছিলাম। আমি ভয়ঙ্কর আবেগী মেয়ে, পান থেকে চুন খসলে চোখে পানি টলটল করে। কখনো চিন্তা করিনি এইসব চরিত্রের সৃষ্টিকর্তাকে নিজ চোখে হারিয়ে যেতে দেখবো। দেখেছি। কি এক ভীষণ শূন্যতা আর হাহাকারবোধ থেকে সেদিন লিখতে বসেছিলাম। গুনে গুনে সাতশ ঊনত্রিশ দিন পার হয়ে গেলো তবু বিষাদ কাটেনা, তবু শূন্যতা কাটেনি।
প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ,
মধ্যবিত্ত সমাজের আকাশপাতাল ভালোবাসা, অবাক বিষণ্ণতা, সহজিয়া সুখ, বেঁচে থাকার আনন্দের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। মেঘের উপর বাড়িতে থেকে দেখতে কি পান, আপনার ভক্তরা ভালো নেই? তারা আপনার জন্য কাঁদছে, জনম জনম কেঁদে যাবে?
এক কথায় অসাধারণ লিখেছিস। তোর লেখার ফ্লুয়েন্সি ঈর্ষণীয় মাশাআল্লাহ!
হুমায়ূন আহমেদ স্যারের স্থান আমাদের হৃদয়ে, কিছু মানুষের অভাব পূরণ হয় না কখনও!
রাইয়্যান বলেছেন :
হুমায়ূন আহমেদ স্যারের স্থান আমাদের হৃদয়ে, কিছু মানুষের অভাব পূরণ হয় না কখনও! :huzur:
ভালো লেখেছিস রে 🙂
ধন্যবাদ রে… 🙂
এখন হুমায়ুন আহমেদের চরম কমেডিগুলোও অদ্ভুত এক হাহাকারের জন্ম দেয়। এই শূন্যতার সীমা নাই…
তার লেখা প্রতিটি চরিত্র মিস করি। আসলে তাকেই মিস করি…
বাহ দারুন লিখেছেন 🙂
ধন্যবাদ! 🙂