অন্ধকারের ফুল

– কি করছো?

– তোমার চিড়ুনিটা ধুয়ে রাখছি।

– কি দরকার? ওটা দিয়ে অন্য কেউ কি চুল আচড়ায়?

– উহু।

– তাহলে তো আর ময়লা হচ্ছে না ! ক’দিন পর পর পরিষ্কারের দরকারটা কি?

– তোমাকে ২-৩দিন পর পর পরিষ্কার করতে দেখতাম, এখন না করলে কেমন যেনো লাগে, মনে হয় অযত্নে অবহেলায় মন খারাপ করে তাকিয়ে আছে। তাছাড়া, ওদেরও একটা শাওয়ারের ব্যাপার আছে না! হা হা হা!

– বলেছে তোমাকে! আচ্ছা, এখনও কি ঘরে ফুল এনে রাখো?

– হুম ! আজকেও অনেক খুঁজে বকুল ফুল এনেছি। শাহবাগের একটা ফুলের দোকানের ছেলের সাথে খাতির করেছি বুঝেছো? আগে থেকে বলে রাখলে, ও আমার জন্য রাত পর্যন্ত রেখে দেয়, আমি অফিস থেকে ফেরার পথে নিয়ে আসি।

– আমি থাকতে এইসব বুদ্ধি কাজে লাগাওনি কেনো?

– তুমি থাকতে তো সারাদিন তোমার চিন্তাতেই ব্যস্ত থাকতাম, অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করবার অবকাশই পেতাম না!

– খুব !!! খুব কথা শিখেছো!

– কি করবো বলো? নিজের সাথে নিজে কথা বলতে বলতে বাচাল হয়ে গেছি

– কেনো? পাশের বাসার সাইদুল ভাই?

– উনারা বাসা চেঞ্জ করেছে, মাস দুয়েক হয়।

– নতুন ভাড়াটিয়া?

– চাকরীজিবি এক যুগল উঠেছে। দুজনই খুব ব্যস্ত, সকালে সিড়ি দিয়ে নামবার বেলা দেখা হয় মাঝে সাঝে, আর কখনও দেখাও হয় না। বসে গল্প করবো, চা-টা খাবো, কিসের কী!

– খুব একা হয়ে গেছো, না?

– যদি বলি হ্যা, তাহলে কষ্ট পাবে?

– হু

– না মুন, আমি একা না। এই যে তুমি প্রতিদিন আসো গল্প করতে, কই আমি একা?

– এই, সাড়ে এগারোটা বাজে, কফি খাবে না তুমি?

– উঠে বানাতে ইচ্ছে করছে না। আচ্ছা বানাচ্ছি, তুমি আসবে?

– আসি, বানিয়ে খাওয়াতে তো আর পারবো না। পাশে দাড়াই কিছুক্ষন।

– তোমার মা’র বাড়ি থেকে যে কফিটা আনতে না, ওটার মতো আর পেলাম না। কফি খাই নাকি গরম পানি, বুঝিও না আজকাল।

– ওটা বড় মামা ব্রুনাই থেকে পাঠাতেন আমার জন্য

– তুমিও গেলে, আমার কফি খাওয়ার কপালও পুড়লো

– কেনো? আমাদের বাসার কারও সাথে কথা হয় না?

– মা কালে ভদ্রে ফোন টোন দেয়, কেমন আছি জিজ্ঞেস করে।

– আর? রোজারিও? ও তো তোমাকে খুব ভালোবাসতো।

– হা হা ! রোজারিও কি আর সেই স্কুলের রঞ্জু আছে? রঞ্জু এখন ভার্সিটিতে পড়ে, বান্ধবী হয়েছে, ব্যস্ত থাকে। বুড়া দুলাভাই এর কথা মনে থাকে বলো?

– বান্ধবী হয়েছে? কি বল! এই হাঁদাটার আবার বান্ধবী!

– রঞ্জু যথেষ্ট স্মার্ট হয়ে গিয়েছে, বান্ধবীটাও খুব সুন্দরী, খুব মানায়, আমি অফিস থেকে আসবার সময় দেখলাম একদিন বাইকে করে যাচ্ছে কোথায় যেনো।

– সবাই বড় হয়ে যাচ্ছে, আমার কি মজা তাই না? কি সুন্দর বয়স আটকে তরুনী হয়ে আছি!

– আমার তো আর তোমার মতো কপাল না সুন্দরী! হা হা হা!

– এই শুনো !

– বলো

– কালকে আমাকে দেখতে আসবে না?

– এতো বছরে কখনও ভুল হয়েছে?

– না হয়নি। কাল আসার সময় আমার জন্য রঙ্গন ফুল নিয়ে আসবে

– চেষ্টা করবো আমি

– না চেষ্টা না, আর না পেলে হাস্নাহেনা এনো, তাতেও চলবে। গত সপ্তাহে যে নাগালিঙ্গম রেখে গিয়েছিলে আমার সিমেট্রিতে, ওটার গন্ধটা পছন্দ হয়নি।

– আমি সরি, কালকে ভালো দেখে খুজে নিয়ে আসবো, কেমন?

– হুম। এখন একটা ঘুম দাও।

– ঘুম পাড়িয়ে দিবে?

– না ফয়সাল, চিরঘুমের দেশের মানুষ হয়ে অন্য কাউকে ঘুম পাড়াতে আমার ভয় করে। তুমি আস্তে আস্তে ঘুমিয়ে যাও, আমি পাশে বসে আছি।

– ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো। শুভ রাত্রী।
© all rights are reseved by NISHOM SARKAR
(ভালো থেকো ফুল, মিষ্টি বকুল, ভালো থেকো – লাইনটি হুমায়ূন আজাদের “ভালো থেকো” কবিতার প্রথম লাইন থেকে নেয়া)

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে গল্প-এ এবং ট্যাগ হয়েছে স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

4 Responses to অন্ধকারের ফুল

  1. শারমিন বলেছেনঃ

    লিখাটাও সুন্দর সেই সাথে ছবিটাও সুন্দর 🙂

  2. সামিরা বলেছেনঃ

    টিল ডেথ অ্যান্ড বিয়ন্ড!

  3. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    বিষাদময়র শান্তির ছোয়া পেলাম লেখাটাতে।

    ভালো থাকবেন।

  4. ইকু বলেছেনঃ

    সুন্দর লিখেছেন… 🙂

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।