গাঁজা/গাজাঃ আসুন চন্দ্রবিন্দু শিখি

চন্দ্রবিন্দু শেখানো হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। অনেক বাচ্চারা শেখে কিন্ডারগার্টেনে। কিন্তু কিছু মানুষের মস্তিষ্ক জন্ম থেকেই ভোঁতা- তারা বর্ণমালা শিখলেও চন্দ্রবিন্দুকে ভুলে যায়। ফলাফল- টিচারের পিটুনি (যা আজকাল বকুনিতেই সীমাবদ্ধ) আর বড় হয়ে(শুধু শারীরিক দিক দিয়ে অবশ্যই। এদের মানসিক বিকাশ হয়না। অনেক রেসিস্ট এদের “ভোম্বল” বলে ডাকে) একটি ভাববিশিষ্ট সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল।

ভুল পড়লেন আপনি না আমি ভুল লিখলাম?

নাহ, আমি আগরতলা থেকে খাটের তলায় যাইনি, সম্মানিত পাঠক। আসুন যাচাই করে নেওয়া যাক!

২০১৪ সালে এসে আধুনিক দুনিয়ায় ফেসবুক/টুইটার ছাড়া চলা মুশকিল। কপোত-কপোতী বহুকাল পর দেখা পাওয়ার পরে উভয়ের দিকে আগে প্রাণভরে না তাকিয়েই একখান “চেক-ইন” দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আগে। “মা-দিবস” বা “বাবা-দিবস” এ বাবা মায়ের সাথে সময় কাটানোর আগে লম্বাচওড়া একখান স্ট্যাটাস দেওয়াটা আসে। কার ফলোয়ার কত এটা দিয়ে সামাজিক শ্রেণীবিভাগ করা হয়- সম্ভবত সমাজ বইয়ে বিভিন্ন প্রকার সামাজিক শ্রেণীবিভাগে এই ক্যাটাগরি অদূর ভবিষ্যতে যুক্ত হবে। তো যাইহোক, ইজরায়েল নামে একখান রাষ্ট্র, যার চামচা কিনা খোদ আমেরিকা- প্রতি বছরের মত এবারও তাদের অস্ত্রগুলো নিয়ে প্র্যাকটিস করার জন্য ফিলিস্তিনের গাজার নিরীহ মানুষগুলোকে বেছে নিল। পৃথিবীতে মানুষ দিনদিন বাড়ছে, সাথে বাড়ছে ফ্যাসাদ। সে জায়গায় মানুষ মেরে ইজরায়েল তো অনেক পুণ্যকাজ করছে! তারা বীর, যোদ্ধা! এমনই বীর, যারা গণহত্যা চালানোর পরেও বিশ্বের বহু দেশ কিচ্ছু বলে না তাদের। এমনই বীর, যারা বিশ্বাস করে একটা কয়েক মাস বয়সী শিশুও তাদের প্রাণের জন্য হুমকি, একজন গর্ভবতী মহিলাও যাদের কাছে “টেরোরিস্ট”! কিসের হারকিউলিস, কিসের রুস্তম! ইজরায়েল ডিফেন্স ফোর্স ইজ দ্য নিউ অ্যাভেঞ্জার, আমাদের হিরু, যারা খায়না কোন গাঁজা-হিরু!

এই সেরেছে!

আবার চন্দ্রবিন্দু!

মহাবিপদ তো। গাঁজা আর গাজা- দেখুন এই দুটো শব্দের মধ্যে পার্থক্য কেবল ওই চন্দ্রবিন্দুটাই। কিন্তু কতিপয় লোক আছেন, যারা ওই চন্দ্রবিন্দুযুক্ত বস্তু সেবন করেন কিনা জানিনা, কিন্তু তারা আসলে চন্দ্রবিন্দু ঠিক শিখে উঠতে পারেননি আজও। তারা ফেসবুক টুইটারের “খুল” সম্প্রদায়। যেকোন কিছু একটা ট্রেন্ড হয়ে গেলে তারা সদর্পে উহার প্রতিবাদ করেন। ফাস্টফুড খেয়ে ভোম্বলে পরিণত হওয়া মানবজাতির কিছু সংখ্যক যখন বুঝতে পারে ইজরায়েল আসলে ইতিহাসের অন্যতম ভয়ানক গণহত্যাটি এইমুহূর্তে চালাচ্ছে, তখন সেই কাপুরুষের দল অনেক হম্বিতম্বি করার পর তাদের সোশ্যাল মিডিয়াতে হ্যাশট্যাগের যুদ্ধে নামে। কারণটা সহজ, চাইলেই এখন বাংলাদেশের এক কিশোর ছুটে গিয়ে বীরপুরুষ হিরু ইজরায়েলি সৈন্য ধরে পেটাতে পারবে না। তাকে বহনকারী প্লেন দরকার হয় গুলি করে সাগরে ফেলে দেওয়া হবে। কিন্তু অনলাইনে ইজরায়েলের ভাড়া করা আত্মাহীন পশুগুলো, (যাদের শিং আছে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস) প্রচার করে বেড়াচ্ছে ইজরায়েলের মহত্ব(!!!!!!!!), তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে না করলে একদিন আপনার সন্তানের সামনে আপনি লজ্জা পাবেন।

পাশ্চাত্যের মিডিয়াগুলো শয়তানে শয়তানে ভরে গিয়েছে। তারা বিশ্বকে বুঝাতে চাচ্ছে ইজরায়েলকে ধ্বংস করে দিচ্ছে ফিলিস্তিন, অথচ প্রতিটাদিন গাজার ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে ছিঁড়ে খাচ্ছে ইজরায়েলি সৈন্যরা। এই সত্যটা আপনার চোখের সামনে মিথ্যা বানিয়ে ফেলছে ওরা। হ্যাশট্যাগ দিয়ে একের পর এক পোস্ট আর টুইট করছে মিথ্যা এই খবর দিয়ে, আর ভোম্বল বিশ্ববাসী বলছে, “wow! We are with you, Israel!”

আপনার হয়ত দুইটা/ তিনটা অ্যাকাউন্ট আছে সোশ্যাল মিডিয়াতে। সেগুলো থেকে আপনি #SupportGaza  বা #SavePalestine লিখে টুইট/পোস্ট করুন সত্যটি। মিডিয়া হয়ে যান আপনি নিজেই, নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ দিয়ে যতটুকু পারুন করুন। যদি তাও না করতে পারেন, অন্তত চুপ থাকুন। এটা মশকরা করার বিষয় না। আপনি একটা ভোম্বল, তাই আপনি স্ট্যাটাস দিতে পারেন, “I am “…” from Bangladesh and I don’t eat #mod #gaza”– হ্যাঁ, আপনি ভোম্বল, বাচ্চাকাল থেকে ভোম্বল। কারণ আপনি এত বছর পড়াশুনা করেও চন্দ্রবিন্দু শিখতে পারেন নাই। আপনি অনেক “খুল” কিন্তু আপনি একটা ভোম্বল। আপনার জিনে সমস্যা না কেবল আপনার মস্তিষ্কে সমস্যা জানিনা। কিন্তু আপনি যেটা নিয়ে মশকরা করলেন, সেই জায়গায় এই মুহূর্তে হয়ত গাজার একটা শিশু একই সাথে এতিম এবং পঙ্গু হয়ে গেল। হয়ত আরও ভয়াবহ কিছু ঘটে গেল তার জীবনে।

 

ছবির উৎসঃ Matt Hamilton.

 

সবসময় স্রোতের বিপরীতে চলাই “খুল” আর চমার্ট হওয়া না। হয়ত গাজার এই মানুষগুলো নিয়ে কোন অস্কারজয়ী সিনেমা হবে না, হয়ত আমাদের সন্তানেরা এই হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে জানতে পারবে একটা গণহত্যা হয়েছিল। তখন আপনার সন্তান আপনার টুইট/পোস্ট পড়বে এবং জানতে পারবে আপনি কতটা মূর্খ ছিলেন, কতটা ভোম্বল ছিলেন যে আপনি চন্দ্রবিন্দু চিনেননা। কতটা লেইম ছিলেন আপনি যে কোনটা নিয়ে মজা করতে হয় আপনি জানতেন না। কতটা হাস্যকর আর অন্তঃসারশূন্য প্রাণী ছিলেন আপনি, যে আপনি একটা গণহত্যা নিয়ে মশকরা করতে পারেন। আপনার সন্তান লজ্জিত অনুভব করবে আপনার মত বাবা/ মা পেয়ে। কারণ বিশ্বের অন্যতম মর্মান্তিক গণহত্যার সময় আর যে যাই করুক, আপনি গাঁজা খেয়ে বা না খেয়ে, যেভাবেই হোক, চন্দ্রবিন্দু ভুলে গিয়েছিলেন এবং খুব মজা পাচ্ছিলেন বিষয়টা নিয়ে।

 

ওহহো! ভুলেই গিয়েছিলাম, চমার্ট এবং খুল মানুষদের আবার ম্যাগনিটোর হেলমেট আছে কিনা, ভেতরে কোন কথা ঢোকে না তাদের। সুতরাং চালিয়ে যান আপনারা, আর মাঠের যুদ্ধের মত মিডিয়া যুদ্ধটাও জিতে নিক ইজরায়েলি হিরুরা।

 

আশা করি একদিন আপনার সন্তান আপনাকে চন্দ্রবিন্দু শেখাতে আসবে। রক্তে ভেজা চন্দ্রবিন্দু।

 

#SaveGaza

ইতস্তত বিপ্লবী সম্পর্কে

যদি কখনো আমায় মনে পড়ে যায়,খোলো দুয়ার আকাশের-আমি তারাময়!
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে ইতিহাস, সচেতনতা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

3 Responses to গাঁজা/গাজাঃ আসুন চন্দ্রবিন্দু শিখি

  1. ইকু বলেছেনঃ

    ভালো বলেছেন

  2. গাঙচিল বলেছেনঃ

    বলেন কী?! এই বিষয় নিয়েও সোশাল মিডিয়ায় ঠাট্টা-তামাশা হয়েছে! বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়! 🙁

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।