সবসময় শুনে এসেছি, মহাভারতে ধর্মের জয় আর অধর্মের পরাজয় ঘটে ।কিন্তু অধর্মকে পরাজিত করার জন্য মনুষ্য রুপী অবতার শ্রীকৃষ্ণ যখন ছলনা, এবং অনেক ক্ষেত্রে তার দৈব শক্তির সাহায্য নেন, তখন ধর্মের জয়ের মহিমা কি ম্লান হয় না?
ধর্মগ্রন্থের কথা এখানে আর তুললাম না, কারণ বই থেকে একটা ৩০০-৪০০ পর্বের সিরিয়াল বানাতে গেলে অবশ্যই অনেক ঘটনা যোগ করতে হয়, আর যিনি সংলাপ লিখেছেন ,তাকে একটা স্যালুট জানানোটা আসে, আসলেই এত সুন্দর জীবন ধর্মী সংলাপ আমি কখন শুনিনি।
যাই হোক,মনে হচ্ছে , এই মহাভারত কৌরব আর পাণ্ডবদের লড়াই নয়, বরং শকুনি আর শ্রী কৃষ্ণের ছলনার খেলা। কে কাকে ২ নাম্বারি করে পরাস্ত করতে পারে, তারই নিরন্তর চেষ্টা।
পার্থক্য হল, মানুষ শকুনি তার সব ছলনা করেন প্রকাশ্যে, আর শ্রী কৃষ্ণ করেন ভিতরে ভিতরে।
কিন্তু শকুনির ছলনা গুলো ধার্মিক পাণ্ডবগণ সহজেই এড়াতে পারতেন, যদি তাঁরা অতি ধর্ম অবলম্বন কারি না হয়ে কখনও কখনও কিছুটা বাস্তব বুদ্ধি সম্পন্ন হতেন।
পাশা খেলায় শকুনিঃ
এটা ঠিক যে পাশা খেলায় শকুনি ছলনা করেছিলেন, কিন্তু যুধিষ্ঠির যেকোনো সময় পাশা খেলা ত্যাগ করতে পারতেন, সেটার অধিকার ছিল তাঁর । আর পাশা খেলায় নিজের স্ত্রীকে ওঠানোর মত ভুল কাজ না করলে দ্রৌপদির অপমানই হত না কখনো।
ভীষ্ম বধঃ
ভীষ্মের প্রচণ্ড যুদ্ধকে থামানোর জন্য যুদ্ধেরদ মাঝখানেই শ্রীকৃষ্ণ সময় কে দৈব উপায়ে থামিয়ে তাঁর কথা দিয়ে ভীষ্মকে মানসিকভাবে পরিবর্তন করে দেন ।পরবর্তীতে শিখন্ডীনি কে ভীষ্ম এর সামনে এনে তাকে নিরস্ত্র করে, অতঃপর নিরস্ত্র মহারথী ভীষ্মকে পরাজিত করা- এটা কি ধর্মের শক্তিকে কোনোরূপ মহিমান্বিত করল কি?
শকুনির পরামর্শে সাতজন মহারথী মিলে অভিমন্যু কে বধ করা অধর্ম মানলাম, কিন্তু অভিমন্যুর হাতে যুদ্ধ ত্যাগ করার সুযোগ তো ছিল,
জয়দ্রথ কে বধ করা অর্জুনের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না সেইদিন যদি শ্রীকৃষ্ণ তার সুদর্শন চক্র দিয়ে সূর্যকে ঢেকে না দিতেন , ফলে জয়দ্রথ বধ সম্ভব হয় ।কিন্তু তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি যুদ্ধে অস্ত্র তুলবেন না। তো কাজ টা কি অধর্মের চেয়ে কোনরুপ কম হল?
গুরু দ্রোণ কে তার পিতার মিথ্যা সংবাদ দিয়ে অস্ত্র ত্যাগ ও পরে হত্যা। এটা কি যুদ্ধে ধর্মের কোন কাজ হল??
কর্ণের হাতে ইন্দ্রের দেয়া ভয়ংকর অস্ত্র ছিল। তো এই অস্ত্র কেবল অর্জুনের জন্যই রেখে দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শ্রী কৃষ্ণ বুদ্ধি করে তা দিয়ে রাক্ষস ঘটোৎকচ যেন বধ হয় তার প্ল্যান করেন। এটা কি অর্জুনকে অন্যায় সুবিধা দেয়া নয় কি?
কর্ণের রথের চাকা মাটিতে পড়ে গেলে, তিনি তা তুলতে যান। তখন নিরস্ত্র কর্ণের ওপর তীর মেরে তাকে বধ করেন অর্জুন। এটা কি যুদ্ধের ধর্ম মানা হল?
এত ভয়ংকর যুদ্ধের পরে, অবশেষে পাণ্ডবরা যেতে আর কৌরব রা পরাজিত হয়।
কিন্তু পঞ্চপাণ্ডব ছাড়া তাদের বংশে এক শিশু ছাড়া আর কেউ বেঁচে ছিল না।
কি লাভ এমন যুদ্ধ জয়লাভ করে যেখানে যুদ্ধ জয়ের পর ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য কোন কাছের মানুষই বেঁচে থাকে না??
অধর্ম পরাজিত হল সত্য। কিন্তু ধর্ম প্রকৃত পক্ষে জিতল কি?