“গবেষণা” আর “বিজ্ঞানী” শব্দ দুইটা ছোটবেলা থেকেই পত্রিকা, সিনেমা আর টিভিতে বহুবার পড়েছি,শুনেছি আর দেখেছি। আর ভাবতাম যে, যারা বিজ্ঞানী হয় তারা সেই রকম কোন এক জিনিস! বুঝে না বুঝে এক এর পর এক বই আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খেলার মাঠের মত দৌড়ে দৌড়ে পার হয়ে কিছু ঠাওর করার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকে যাই। আর চয়েজ ফরম নামক এক লটারিতে এমন এক বিষয়ে পড়ার জন্য ভর্তি হই যার নাম আমি আর আমার পরিবারের কেউ কোন দিন শুনি নাই এর আগে। বয়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকিউলার বায়োলজি। অনেকেই বলল, “কেমিস্ট্রি আর বায়োলজি এক সাথে। ডিমান্ড ভালো হবে।” আস্তে আস্তে জানতে পারলাম যে এটা নাকি গবেষণাধর্মী বিষয়। আমার মাথা তো নষ্ট। তাইলে তো আর আমি টপ হইতে পারমু না। কারণ, গবেষণা তো সাধারণ মানুষের কাজ না। তবে বড় ভাইদের কাছে থেকে শুনতে থাকলাম, প্রচুর স্কলারশিপ পাওয়া যায়। যারা পাশ করে তারা সবাই নাকি “স্কলার”, আর “শিপ” না হলেও প্লেনে করে বিদেশ গমন করে। ভয় আর ও বেড়ে গেলো। আমি ছোট বেলা থেকেই ক্লাস ফাইভ এবং এইটে বৃত্তি পাই নাই। তাই বৃত্তি জিনিসটা ও আমার কপালে নাই বলেই ছোট বেলা থেকেই ধরে নিয়েছিলাম। সব শেষ! টপ ও হতে পারবো না, আর স্কলারশিপ ও পামু না।
কিন্তু, “তাইরে-নাইরে-বন্ধুরে, কলা-খাইলো-ইন্দুরে” গোছের পড়ালেখা করেও কিভাবে জানি গবেষণা নামক মাকড়শার জালে জড়িয়ে গেলাম। এক এক করে গবেষণামুখী বড় ভাই থেকে শুরু করে স্যারদের সাথে কাজ করা শুর করলাম। অন্যরা কিভেবে গবেষণা করে জানি না, তবে আমার ক্ষেত্রে মজা করা আর উপলব্ধি করার মধ্যে দিয়েই এগিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমার টাইপের চিন্তা-ভাবনা নিয়ে গবেষণা করতে আসলে “কি পাবেন কি পাবেন না”, তা জানি না, তবে অনেক উপভোগ করবেন। বিশেষ করে কাজ করতে গিয়ে একে একে যখন অনেক ধরণের ভণ্ডামি লক্ষ্য করতে থাকলাম, তখন “বিজ্ঞানী” আর “গবেষণা” নামক শব্দ দুইটা থেকে ভয় সরে গেলো। এই সিরিজের প্রথম লেখা হিসেবে প্রথমেই আমাদের দেশে যেই ধরণের গবেষণা হয় তা কয়েকটা উদাহারন দিয়ে পরিষ্কার করা চেষ্টা করি।
আমাদের এখানে কাজ করার প্রথম লক্ষ্য হল, ফলাফল আসা লাগবে, তা যেমন করেই হোক। আর আপনি যখন জোর করে ফলাফল দাড় করানোর চেষ্টা করবেন, তখন অবস্থা হবে তেলাপোকা গবেষকের মতো। তার এক্সপেরিমেন্ট ছিল অনেকটা এই রকম। তিনি তেলাপোকাকে একটা নির্দিষ্ট স্থান থেকে ছেড়ে দিয়ে ঘড়ি ধরে দেখেন যে বেধে দেয়া দূরত্ব অতিক্রম করতে কেমন সময় লাগে। তারপর তিনি তেলাপোকার এক পা কেটে দিয়ে দৌড় দিতে বললে, তা আগের চেয়ে বেশি সময় নেয় ঐ একই দূরত্ব অতিক্রম করতে। তার পর দুই পা কেটে দেন এবং দৌড় দিতে বলেন। আর ও বেশি সময় লাগলো এবং তিনি লিখে রাখলেন। এমনি করে তিন পা কেটে দিলেন, আর দৌড় দিতে বললেন। এই বার আর তেলাপোকাটা গন্তব্যতে পৌছাতে পারলো না। গবেষক এবার তার গবেষণাপত্রে তার ফলাফল ব্যাখা করলেন এই ভাবে, “তেলাপোকার পায়ের সংখ্যার সাথে তার শ্রবণ শক্তি সম্পর্কিত। কারণ, পায়ের সংখ্যা কমতে থাকলে সে নির্দেশ কম শুনে আর আস্তে দৌড়ায়। কিন্তু, তিন পা কেটে দিলে সে কানেই শুনে না, তাই আর দৌড়ায় না!!!”
বিশ্বাস করেন এমন ধরণের অনেক কাজ অনেক ফিল্ডে করে অনেকেই পাবলিশও করছে। যারা এই ধরণের কাজ পাবলিশ করে তাদের মধ্যে তাদের মধ্যে দুইটা দল আছে। প্রথম দলের “তেলাপোকা গবেষকরা” বুঝে এই কাজ করে এবং জানে যে এই সব কাজ পুরাই ভাউতা বাজি। কিন্তু, ফান্ড পাওয়ার জন্য এই ধরণের সস্তা কাজ করে বছরের পর বছর চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তাদের মন্তব্য অনেকটা এই রকম, “যখন সর্ব অঙ্গে ব্যাথা, তখন মলম দিবো কোথায়!” কারণ, তারা ভাবে ঘুণে ধরা দেশে বসে ভালো কাজ করার চেষ্টা করা পুরাই আহাম্মকের পরিচয়। তাদের ধারনা আংশিক হলেও সত্যি। আর দ্বিতীয় দলের “তেলাপোকা গবেষকরা ” ভাবেন, তারা যা করছেন এইটা গবেষণা, সেই রকম কিছু করে ফেলছেন। আসলে তারা নিজেরা জানেন না যে তারা কি করছেন। কারণ, প্রথম দলের লোকদেরকে তারা অন্ধের মতো অনুসরণ করেন।
এবার সমালোচনা ছেড়ে ভালো উদাহরণ দেই। পরিসংখ্যানের ভাষায় একটা লাইন আছেঃ “Correlation is not causation.” আমেরিকানরা জাতি হিসেবে খুবই পরিসংখ্যান প্রিয়। তাদের থেকে একটা উদাহারন নিয়ে লাইনটা ব্যাখা করি। একবার দেখা গেলো যে, লাং ক্যান্সারের রোগীরা পায়ে জুতা পরে রাতে ঘুমান। তাদের ডাটা থেকে তারা এই সিদ্ধান্তে আসতে পারলো। কিন্তু, আপনি যদি বিষয়টা ব্যাখা করতে যান, তাহলে তা দাঁড়ায়, মদ্য পান করে যারা বাসায় ফিরে, তারাই জামা-জুতা না খুলে ঘুমায় পরেন, তারাই মদ্য পানের কারণে লাং ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, জুতা পড়ে ঘুমানোর কারণে না! আপনি যদি প্রথম সিদ্ধান্ত পর্যন্ত এসে থেমে যান, তাহলে হয়ে যাবেন “তেলাপোকা গবেষক” আর যদি আর একটু চিন্তা করে কারণটা খুঁজেন তাহলেই পেয়ে যাবেন আসল “কারণ”।
তবে অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে ও অনেকেই ভালো কাজ করছেন এই দেশে বসে। দেশের সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছেন। এই সিরিজের লেখার মধ্যে দিয়ে আমার ছোট্ট গবেষণার জীবনে দেখা মজার ঘটনা আর মহান মানসিকতার লোকদের নিয়ে আসার চেষ্টা করবো।
এহ হে হে! কেমন একটা লেখা দেখলাম এটা? 😀
আপনার পোস্ট পড়ে যেটুকু বুঝলাম, আপনিও ঐ গরু-সার্চ কমিটির সম্মানিত সদস্য। তবে, বলতে পারি না, হঠাৎ তেলাপোকাবাদীদের উপর কেন ক্ষ্যাপলেন?
আসলে বুঝতে পারছি, স্রেফ মজা করার জন্যই বিষয়গুলো এভাবে বলছেন। অনেকেই ভাল কাজ করছেন, করবেন। কিন্তু, দুঃখের বিষয় হলো, তাঁদেরকে চিনতে পাবো না।
নেক্সট পর্বে কোন গল্পের গরুকে ধরে আনছেন? দ্রুত দেখতে চাই।
:callme: :callme:
ভাই, দুনিয়াতে যার কিছুই করার থাকে না সেই গরু খুজতে আসে। আমিও ঘুরতে ঘুরতে গরু খোজার কাজে নিয়োজিত হয়ে পড়েছি। এখন, রাখাল হতে চাচ্ছি।
সামনের পর্বে বিশ্রী “তেলাপোকা” ছেড়ে সুশ্রী “প্রজাপতি” নিয়ে উড়াউড়ি করবো। এক সাথে উড়ার এবং কমেন্ট করার আহ্বান রইলো ভাইয়া।
যা-ই বলেন ভাই, তেলাপোকা মারা ‘কাজের মত কাজ’ না হলেও সহজ কাজ নয়,
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
valo laglo likhata..