“একটা ভয়ঙ্কর গল্প শুনতে চাও?”
“কতটা ভয়ঙ্কর?”
“ঠিক যতটা ভয়ঙ্কর হলে তুমি শীতের মাঝেও ঘেমে যাবে। এই অন্ধকারেও তোমার কপালের দুশ্চিন্তার রেখাগুলো পড়া যাবে।”
“হেয়ালি করবা না রাতুল। একদম হেয়ালি করবা না। আমার হেয়ালি পছন্দ না।”
পুষ্পা বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে, রাতুল বুঝতে পারছে আর কিছুক্ষণ চললে পুষ্পার চোখ রাগে লাল হয়ে যাবে আর একটু পরই বিকট শব্দে চিৎকার করে উঠবে। এতেও কিছু হত না যদি এরপরের ঘটনাগুলো না ঘটত, পুষ্পা এরপর অনেক চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করবে, মাথা ধরে মাটিতে আছড়ে পরতে থাকবে, ততক্ষণ যতক্ষণ না সে একেবারে নিস্তেজ হয়ে যায়। পুষ্পাকে গত দুই বছরে রাতুল খুব ভালো করে চিনে ফেলেছে আর তাই আর ঘাটানোর চেষ্টা করলো না সে।
“আচ্ছা ঠিক আছে কোন ভয়ঙ্কর গল্প হবে না। তুমি কি ঘুমাবা? মাথায় হাত বুলিয়ে দিব?”
“ন্যাকামি বন্ধ করো রাতুল। তোমার ন্যাকামি আমার সহ্য হয় না। লাইট বন্ধ করে দাও। আমি ঘুমাবো।”
রাতুল কিছু বলে না। সে চুপ করে লাইট বন্ধ করে দিয়ে বারান্দায় চলে যায়। বারান্দার জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে সে। বাইরে আকাশে চাঁদ নেই, ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিন্তু রাস্তায় বাতি জ্বলছে। এখন আর নিয়ন বাতির আলো নেই, ফ্লুরোসেন্ট নিয়ন কে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে। এখন ঢাকার রাস্তাগুলো আরও আলোকিত দেখায় কিন্তু রাতুলের মনে হয় এই ফ্লুরোসেন্টের বাতির আলোয় কি যেন নেই। নিয়নের মাঝে এক অদ্ভুত সৌন্দর্য ছিল যা ফ্লুরোসেন্টে পাওয়া যায় না। “আচ্ছা পুষ্পা কি ফ্লুরোসেন্ট হয়ে গেছে আর আমি নিয়ন হয়েই পরে আছি, সেই পুরাতন?” নাহ এখন এসব ভাবার সময় নেই। রাতুল জানালার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে থাকে। একটা দুইটা রিক্সা যাচ্ছে। দূরে কোথাও দুই একটা কুকুর জোরে ডেকে উঠছে। হয়তো কোন অনাকাঙ্ক্ষিত আগন্তুককে দেখে চিৎকার করছে কুকুরগুলো।
জাহিদ আজ আবারও বাইরে বের হয়েছে। ঘুটঘুটে অন্ধকার বাইরে। এই অন্ধকার রাত তার খুব পছন্দ। সবাই যখন ঘুমিয়ে পরে সে তখন গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে হাতে একটা ছোট্ট মাউথ অর্গান নিয়ে বের হয়ে পরে। রাস্তার মানুষকে মাউথ অর্গান বাজিয়ে শোনানোর কোন ইচ্ছা তার নেই কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু জায়গায় সে থেমে যায়। হয়তো কোন নিঃস্ব বৃদ্ধের পাশে অথবা অসহায় একজন ছোট্ট শিশুর পাশে। তাদেরকে সে মাউথ অর্গান বাজিয়ে শোনায়। আর আসার সময় হাতে একটা পাঁচশ টাকার নোট গুজে দিয়ে চলে আসে। কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে সে শুধুমাত্র একটি গানের সুরই তোলে অর্গানে। কেউ যদি খুব ভালো করে খেয়াল করে তাহলে সে বুঝতে পারবে সুরটা অনেক করুণ। যেন মনে হয় কাউকে খুঁজছে জাহিদ। অচেনা অজানা কাউকে। যাকে না পেয়ে আজও এই অন্ধকার রাস্তায় একা একা হেঁটে বেড়ায় সে।
“কি জাহিদ, আজ তো কেউ নাই রে। একটা কাক পক্ষীও নাই। রাস্তা এত ফাঁকা ক্যা রে? হরতাল নাকি রে? নাহ হরতাল হইব ক্যা? ঢাকার মানুষ অধিকার কি হেইডাই ভুইল্যা গেছে, তাইলে আবার অধিকারের লাইগ্যা হরতাল! হা হা হা”, নিজের সাথে নিজেই কথা বলতে থাকে জাহিদ। হাঁটতে হাঁটতে অনেকটা রাস্তা পার হয়ে সরু একটা গলি দিয়ে বের হতেই একটা বড় রাস্তায় এসে পরল জাহিদ।
“দুই পয়সা আয় করনের মুরদ নাই, ঘরে বইসা খালি বাপ-মায়ের মাথা গিলস। কু** বাচ্চারে কইলাম একটা গ্যারেজে যা, কাম কর। না, নবাবের ব্যাটা হইছে। ঠ্যাং এর উপর ঠ্যাং তুইল্যা খাইব। তোর বাপের নবাবী পাইছস। বাপ- দাদায় তো খানদানি সম্পত্তি রাইখ্যা গেছে। সবাই মরে আমি মরি না ক্যা। এই আজাতরে কোন পাপে যে জন্ম দিছিলাম কে জানে? তোর বাপের মত লম্পটই তো হবি আর কি হবি। বান্দী পাইছিল আমারে। বিয়া কইরা রাইখ্যা পালায় গেছে গা, আর রাইখ্যা গেছে তোর মত কুলাঙ্গাররে। এত কষ্ট কইরা ভাবলাম তোরে কিছু কাম শিখামু, টাকাও জমাইলাম কিন্তু তুই সব টাকা দিয়া জুয়া খেললি, মদ খাইলি। আরেহ কু** বাচ্চা টাকা দেখছস জীবনে। এক টাকা কামাই করার মুরোদ আছে!…..
“কত ট্যাকা লাগবো তোমার?”, কামরুল ঠান্ডা মাথায় কথা বলে।
“এ্যাহ নবাবে ব্যাটার ঢং দেখো ……”
“আমি জিগাইছি, কত লাগবো তোমার?”
“তুই ট্যাকা কই ত্থেকা পাবি?”
“তোমার হেডি দিয়া কি কাম? কত লাগব?”
“৫০০ ট্যাকা আইনা দে। বাসায় বাজার নাই।”
“আইচ্ছা চুপ কইরা বইয়া থাকো। নড়বা না। আর মুখ দিয়া একডা কথা বাইর যাতে না হয়।”
হালিমা বেগম চুপ করে বসে থাকে। চোখ দিয়ে পানি পরতেছে তার। ছেলেটা তার খারাপ না। মদ জুয়া সে ছুঁয়েও দেখে না। কিন্তু ছেলেটা বেকার। অনেক চেষ্টা করেও কাজ খুঁজে পায় নি। ছোট বেলা থেকে মানুষের সাথে মিশতে পারে না। “মনু হারামি”র ছেলে শোনার ভয়ে বাইরে বের হত না। হালিমা মানুষের গালি, মাইর খেয়ে যা আয় করার নিয়ে আসত। কিন্তু কামরুল খুপরি থেকে বের হত না। কখনও ভুল করে বেড়িয়ে পরলে কালাম, মাসুদরা তাকে ক্ষেপাত, আর সে প্রতিবাদ করলে সবাই মিলে তাকে পেটাত। কামরুল তাই আর কোনদিন দিনের বেলা খুপরির বাইরে বের হয় নি। আর তাই চাকরি কিংবা কাজ করার যোগ্যতাও তার হয় নি। আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয় কামরুল কিভাবে যেন সকালে দেখতে পায় না ভালো করে, ঝাপসা দেখে কিন্তু রাতে ঠিকই সব কিছু তার কাছে পরিষ্কার। যত বেশি অন্ধকার তত তীক্ষ্ণ তার দৃষ্টি। আর তাই এখন যা করার সে রাতের বেলাই করে….
রাতুল বারান্দায় দাঁড়িয়ে ভাবছে “এই তো! বেশি দিন কই? মাত্র বছর দুই এক আগের কথা। তখনও পুষ্পা এমন ছিল না।” পুষ্পার সাথে তার বিয়েটা প্রেমের পরে বিয়ে না। অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ। কিন্তু তাই বলে তাদের মাঝে সম্পর্কের কোন জড়তা ছিল না। পুষ্পা খুব সুন্দরভাবে হাসি মুখে তার সাথে কথা বলত। বিয়ের আগে যখনই দেখা হত অনেকক্ষণ ধরে গল্প করত। তাদের দুইজনের মাঝে বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পরই যেন তারা প্রেম করতে শুরু করল। একসাথে ফুচকা খেতে যাওয়া, সিনেমা দেখতে যাওয়া সব কিছুই হত। এমনকি বিয়ের পরও তাদের মাঝে বিন্দুমাত্র বোঝাপড়ার অভাব ছিল না। দুইজনের দিন খুব ভালোই কাটছিল। বিপত্তি বাঁধল সেইদিন, মাস তিনেক হবে হয়তো, পুষ্পা আর রাতুল হাঁটছিল বাসার পাশের পার্কের রাস্তা ধরে, হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই এক ছেলে এসে সামনে দাঁড়িয়ে বলল, “পুষ্পা! তুমি? কই ছিলা তুমি? আমি তোমাকে খুজতেছি কতদিন ধইরা। কই ছিলা তুমি?”
ব্যাস ! শেষ। রাতুল-পুষ্পার সাজানো সংসার মাত্র ঐ দুইটি লাইনের পর শেষ। পুষ্পা ওখানে এক মুহূর্তও দাড়ায় নি। রাতুলের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসে সে। পেছন থেকে ছেলেটা চিৎকার করে যাচ্ছিল, “পুষ্পা!”
জাহিদ ভাবে, “পুষ্পার সাথে দেখা হইল একটা কথাও কইল না। একটা মানুষ এত তাড়াতাড়ি এমনে বদলায় যাইতে পারে?” জাহিদ ভাবে তাদের মায়া কাননের দিনগুলার কথা। পুষ্পার সাথে বিয়ে হয়েছিল তার। বাবা-মা’র অবাধ্য হয়ে পালিয়ে বিয়ে করল দুইজন। কাজী অফিসে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরই পুষ্পা বলে উঠে, “জাহিদ, আজকে নাহয় বাসায় চলে যাই। পালিয়েছি ঠিকই কিন্তু এখনই মনে হয় না তোমার বোঝা হওয়াটা ঠিক হবে।” জাহিদ ভাবে তাইতো, সদ্য অনার্স পড়ুয়া ছেলে সে, একটা কলেজের মেয়ের ভরণ পোষণ দেওয়ার মত টাকা সে কোথায় পাবে। আর বাসায় নিয়েও তো তুলতে পারবে না পুষ্পাকে। তার চেয়ে বরং থাকুক, বাবা-মার কাছেই থাকুক। বিয়ে তো আর দিতে পারবে না। কাগজ আছে তার কাছে! “আইচ্ছা যাও।” ওটাই শেষ কথা ছিল জাহিদ আর পুষ্পার। এরপর বছরের পর বছর পেরিয়ে গেছে, পুষ্পাকে আর পায় না জাহিদ। পরের দিন পুষ্পাদের বাসায় গিয়ে দেখে দরজায় তালা, পুষ্পারা আর নেই! সেই পুষ্পার সাথে এত বছর পর দেখা, সে একটা বার কথাও বলল না। “ক্যামনে পারে এরা?” জাহিদ এইবার একা একাই তার সেই করুণ সুর তোলে মাউথ অর্গানে।
শিকার আসতেছে, কামরুল চুপ করে রাস্তার মাথায় দাঁড়িয়ে আছে। ওই যে দূরে শিকার দেখা যায়। কামরুলকে দেখে কুকুর গুলা চিৎকার করতেছে। কামরুল আস্তে করে ধমক দিল, “চুপ ব্যাটা মানুষের বাচ্চ। মায়ে আমারে কয় আমি নাকি তগো প্রজাতি। তাইলে তোরা কি রে? দেখ, দূরে দেখ, ওই যে শিকার আহে। চুপ কইরা থাক।” অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর কামরুল বুঝে শিকার আর আসবে না এইদিকে। সে আপন মনে গান গাচ্ছে। “হালার পুত!” গালি দিয়ে আস্তে করে মুখে রুমালটা বেঁধে রাস্তা ধরে এগিয়ে যেতে থাকে কামরুল। মনে মনে দোয়া পরছে, “আল্লাহ মালটা যাতে ভাইগ্যা না যায়।”
রাতুল এইবার অর্গানের সুর শুনতে পায়। এত বিষন্ন কেন সুরটা? মনে হচ্ছে কেউ যেন রাতুলের মনের দুঃখ সব বের করে নিয়ে আসছে মাউথ অর্গানের সুরে। রাতুল চোখ বন্ধ করে সুর শুনতে থাকে। হঠাৎ রাতুল খেয়াল করে কুকুরগুলো চিৎকার করা বন্ধ করে দিল। রাতুল ওইদিকে তাকায়। দেখে কালো একটা ছায়া আস্তে আস্তে তার বাসার সামনে এগিয়ে আসছে। রাতুল ভালো করে বুঝতে পারে না কিন্তু মনে হচ্ছে হাতে কিছু একটা চকচক করে উঠল। রাতুল আস্তে করে বারান্দা থেকে সরে যায়। নিচে নামতে হবে। সে দৌড়ে গেট খুলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে।
জাহিদ একমনে বাজিয়ে যাচ্ছে। “ভাইজান”, অচেনা একটা কন্ঠ ডাকে জাহিদকে।
“কে?”
“ভাইজান, চোখটা খুলেন।”
“ও! আপনি ক্যাডা?”
“আমি ভাই কেউ না।”
“মুখে গামছা প্যাচায় রাখছেন ক্যান? আপনি কি গুন্ডা?”
“নাহ আমি গুন্ডা না। আমি হারামির পোলা। তা ভাইজান এত রাতে এইখানে কি?”
“এমনেই হাটতাছি।”
“তা ভাইজানের কাছে ট্যাকা পয়সা কিছু আছে নাকি?”
“আছখাজার খানেক আছে। ক্যান মিয়া? ট্যাকা লাগবো নাকি?”
“আপনে কি দুধের বাচ্চা! বুঝেন না। যাক কষ্ট করতে হইল না। চুপচাপ ট্যাকাটা দিয়া দেন।”
জাহিদ পকেট থেকে পাঁচশ টাকার দুইটা নোট বের করে দিয়ে দেয় কামরুলকে। কামরুলের চোখে একটা হাসি ফুটে উঠে, ভয়ঙ্কর হাসি।
রাতুল সিড়ি দিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে। দুইটা ছেলে কথা বলতেছে। একজনের হাতে পেছনে বড় একটা ছোঁড়া। ছেলেটার মুখ দেখা যাচ্ছে না। পাশে আরেকটা লোক, এই লোকটা মনে হয় মাউথ অর্গান বাজাচ্ছিল। এই দুইজন লোক এত রাতে কি করে? রাতুল বুঝতে পারে বিপদ হতে যাচ্ছে কিছু একটা। রাতুল আস্তে আস্তে সামনে এগুতে থাকে। হাতে তার লাইসেন্স করা পিস্তল। ছোঁড়া ওয়ালা ছেলেটা একটু নড়লেই গুলি করে দিবে। আরেকটু এগুতেই রাতুল এবার সুর তোলা লোকটাকে দেখতে পায়। আর দেখার পর চমকে উঠে, একবারই দেখেছে সে এই লোককে কিন্তু ওই একবারই যথেষ্ট। এরপর আর প্রয়োজন পরে নি। ওই একবারেই জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছে লোকটা। এই সেই পার্কের লোকটা। কিন্তু এত রাতে সে এখানে কি করে? আচ্ছা পুষ্পা কিংবা আমাদের কোন ক্ষতি করতে আসে নাই তো। নাকি ঐ ছোঁড়া ওয়ালা ছেলেটাও ওর দলের কেউ। দুইজনে মিলে বাসার সামনে এসে কিছু ফন্দি করছে। রাতুলের চোয়াল শক্ত হয়ে যায় দুইটাকেই এক গুলিতে উড়িয়ে দিবে সে। পুষ্পার জীবনে কোন অন্যায় সে সহ্য করবে না। সে পিস্তলটা ধরে আস্তে আস্তে এগুতে থাকে।
কামরুল ভাবে, “বাহ ! রক্ত ছাড়াই হাজার ট্যাকা! বাহ।” সে আস্তে করে পেছনে ঘুরে যেই পা বাড়াবে অমনি সে দেখে কে যেন তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে। সে সঙ্গে সঙ্গে জাহিদের গলায় ছোঁড়া ধরে দাঁড়ায়। “ঐ ক্যাডা! ঐ ক্যাডা! ক্যাডা ঐখানে? ঐ কথা কস না ক্যা?” “ঐ হালার পুত, কারে লইয়া আইসস! চালাকি করস! চালাকি!”, কামরুল জাহিদের গলায় জোরে ছোঁড়াটা চেপে ধরে। কামরুল আস্তে করে চিৎকার দেয়, “ঐ যেই থাকস, ভাগ ওইখান থেইক্কা নাইলে কিন্তু কল্লা ফালায় দিমু।” রাতুল শুনতে পায় কামরুলের চিৎকার। এতক্ষণে সে বুঝে গেছে ছোঁড়া ওয়ালা আর অর্গানওয়ালা এক দলের লোক না, কিন্তু অর্গানওয়ালার বিপদ। সে থেমে যায়। কিছু একটা ভাবতে থাকে। রাতুলের মুখে একটা বিদঘুটে হাসি ফুটে উঠে, একটা শান্তির হাসি ফুটে উঠে। কামরুল বলে, “যাস না ক্যান, ভাগ! ভাগ তুই।” জাহিদ কোন কথা বলে না, সে কিছুই বুঝতে পারে না। একটু পরে কামরুল নিজেই জাহিদকে ধাক্কা দিয়ে দৌড় দেয় পেছন দিকে। রাতুল পিস্তল তাক করে, পর পর দুইটা গুলির আওয়াজ শোনা যায়, আর একটা আর্ত চিৎকার।
কামরুল দৌড়াচ্ছে। সে এখনও বুঝে পাচ্ছে না। গানওয়ালা মানুষটারে গুলি করল কে? সেও কি কামরুলের মত কয়েকটা টাকা নিতে আসছিল! হয়তো!
এরপর অনেক বছর পেরিয়ে যায় পুষ্পা আর রাতুল খুব সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। তাদের একটা ছোট্ট মেয়েও আছে। মেয়েটা মাঝে মাঝেই মাঝ রাতে কেঁদে ওঠে। “বাবা কুকুর! কুকুর চিল্লাছে!” রাতুল মেয়েকে অভয় দেয়, “ওসব কিচ্ছু না মা। একটা গল্প শুনবা মা।”
“কোনটা বাবা, সেই ভয়ঙ্কর গল্পটা। যেখানে একটা গানওয়ালা আঙ্কেলকে মেরে ফেলে রাস্তার একটা বস্তির ছেলে?”
“হ্যাঁ বাবা, সেই গল্পটা।”
“নাহ বাবা, শুনবো না। ঐ গল্পটা বলতে গেলে তুমি যেন কেমন হয়ে যাও, তোমার ভয় করে বাবা। থাক।”
ভাল্লাগছে,
জাহিদ ক্যারেক্টারটা একটু অস্পষ্ট, তবে সেইটাই ভালো।
ছোট গল্পে পাঠকের চিন্তা করার জায়গা থাকা উচিত বলে মনে করি।
শুভকামনা, সবসময়।