তারেক মাসুদের মাটির ময়না [সরব “মুভি থেকে নেয়া”- ৭]

‘মাটির ময়না’
অসাধারন নাম এবং অসাধারণ সিনেমা।
বাংলা ভাষায় তৈরি (এপার বাংলা – ওপার বাংলা) আমার দেখা গুলোর মধ্যে এই সিনেমা টি আমার অন্যতম পছন্দের একটি।
বাংলাদেশের খ্যাতনামা পরিচালক   তারেক মাসুদ পরিচালিত একটি বাংলা চলচ্চিত্র ‘মাটির ময়না’। ছবিটি ২০০২ সালে মুক্তি পায়। এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাক্কালে পূর্ব পাকিস্তানের উদ্বেগের পটভূমিতে তারেক মাসুদের মাদ্রাসায় জীবনের অভিজ্ঞতা ফুটে উঠেছে। পুরো চলচ্চিত্র জুড়ে ঐতিহাসিক ঘটনার উদ্ধৃতি থাকলেও সেগুলো একটি কিশোরের মানবিক অভিজ্ঞতায় প্রকাশিত হয়েছে। মাদ্রাসায় তার শিক্ষক, সহপাঠীদের আচরণ আর পরিবারের সদস্যদের সাথে তার সম্পর্কের ভিতর দিয়ে চলচ্চিত্রটির কাহিনী এগিয়ে গিয়েছে।

প্রথমেএই সিনেমা টা আমি দেখেছিলাম টেলিভিশনে তখন আমি স্কুলে পড়তাম। বাসার সবাই এক সাথে সিনেমাটা দেখেছিলাম, তখন অত কিছু বুঝতাম না তার পরও খুব ভালো লেগেছিল। পরিবর্তিতে একাধিক বার দেখা হয়েছে এই সিনেমাটা। পরিচালকের নিজের ছোটোবেলার জীবনের কাহিনীর ওপ্র ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে ‘মাটির ময়না’। ষাটের দশকের উত্তাল সময়ের প্রেক্ষাপট হতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ঠিক আগের সময়ের একটি পরিবার কিভাবে যুদ্ধ ও ধর্মের কারণে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তার গল্প নিয়ে তৈরি এ চলচ্চিত্র।অত্যন্ত ধার্মিক বাবা কাজী সাহেব তাঁর ছোট্ট ছেলে আনুকে পড়াশোনার জন্য মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেন। দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের পাশাপাশি আনুরমাদ্রাসাতেও চরম ও মধ্যপন্থী মতবাদের বিকাশ ঘটতে থাকে। বিভক্তির এই একই চিত্র দেখা যায় গোঁড়া ধার্মিক কাজী ও তাঁর স্বাধীনচেতা স্ত্রী আয়েশার মধ্যে । ধর্মীয় উদারতা, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র এবং ইসলামের দুর্বোধ্যতা এ সব কিছু মিলিয়ে মাটির ময়না জাগতিক দ্বন্দ্বের একটি দৃশ্যমান প্রতিকৃতি।

ছোট বোন আসমাকে যখন তার ভাই আনু মাটির তৈরি ময়না পাখি উপহার দেয়, রোকন কে যখন শাস্তি হিসেবে  শিতের ঠান্ডা  পুকুরের পনিতে ১০১ বার ডুব দিতে বাধ্য করা হয় তখন চোখের জল আটকে রাখা মুশকিল হয়ে যায়। এই রকম মর্মস্পর্শী দৃশ্যে এই চলচ্চিত্র টি পূর্ণ। সিনেমাটিতে ৪ টি আসাধারন গানও রয়েছে, যা সিনেমাটাকে করে তুলেছে পরিপূর্ণ। বিষেশ করে ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে, “পাখিটা বন্দী আছে দেহের খাঁচায” গানটি খুবই ভালো লাগে।

দেশে বিদেশে অনেক পুরুস্কারে ভূষিত হয়েছে এই আসাধারন চলচ্চিত্র টি। তার মধ্যে
ফিপরেস্কি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস্ এওয়ার্ড,
কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, ২০০২;
সেরা চলচ্চিত্র ও ২ টি অন্য পুরস্কার,
কারাফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, পাকিস্তান ২০০৩;
সেরা চলচ্চিত্র ও সেরা পরিচালক,
চ্যানেল আই ফিল্ম এওয়ার্ড, ২০০৩;
সেরা চলচ্চিত্র ও ৫ টি অন্যান্য পুরস্কার,
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি,২০০৩;

বিদেশী ভাষার অস্কার পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশের প্রথম মনোনীত চলচ্চিত্র;
ফরাসি সরকারের সাউথ ফান্ড কর্তৃক স্ক্রিপ্ট (চিত্রনাট্য) এওয়ার্ড উউল্লেখযোগ্য।

সময় পেলেই দেখে নেওয়া যায় সিনেমাটা।

ধন্যবাদ

নামঃ আবির মোহাম্মদ স্বচ্ছ

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চলচ্চিত্র-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।