নন-লিনিয়ার মাস্টারপিস মেমেন্ট [সরব “মুভি থেকে নেয়া”- ৮]

Memento

Director: Christopher Nolan B|

বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম নোলানের কোনো মুভি নিয়ে রিভিউ লিখবো কিন্তু লেখার সাহস পাচ্ছিলাম না…  “সরব “মুভি থেকে নেয়া” প্রতিযোগিতা” দেখে  অবশেষে সাহস সঞ্চয় করে বসে পড়লাম লিখতে, কিন্তু কোন মুভি নিয়ে লিখবো… এনাদার কনফিউশন… =D

নোলানের বেস্ট ৩টা মুভির একটি হলো মেমেন্টো… জোনাথন নোলানের শর্ট স্টোরি “Memento Mori” অবলম্বনে নির্মিত এই মুভিটি… জোনাথন নোলানের শর্ট স্টোরি পড়ার পর গল্পটি তার খুব মনে ধরে, এরপর সে Newmarket Films-এর এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসারের কাছে স্ক্রিপ্ট নিয়ে যান, তার কাছেও স্ক্রিপ্টটি বেশ ভালো লাগে, এরপর মাত্র সাড়ে চার মিলিয়ন ডলার নিয়ে নেমে পড়েন কাজে, মাত্র ২৫দিন শুটিং করেন…!!! জ্বী ভাই, মাত্র ২৫দিনে মুভির শুটিং শেষ করেন… কিভাবে পসিবল ম্যান…!!!(আমার তো মনে হয় এই মুভিতে সব রোবট কাজ করসে, তা না হলে এতো তারাতারি কিভাবে সম্ভব)মুভির রান টাইম ১১৩মিনিট্‌ প্রায় ২ঘন্টা, যেখানে আমাদের দেশে ১০মিনিটের ডকুমেন্টারি করতে প্রায় ২দিন লেগে যায় আর সেখানে মাত্র ২৫দিনে ২ঘন্টার মুভির  শুটিং শেষ করা চাট্টিখানি ব্যাপার না… এইটা শুধু নোলানদের দিয়ে-ই সম্ভব… B|

মুভির প্রতিটি সাইড প্রশংসার দাবি রাখে… ইউনিক স্টোরি,ব্রিলিয়ান্ট ডিরেকশন & স্ক্রিনপ্লে সাথে (অ)সাধারণ এডিটিং ও চিত্রায়ন… 🙂

Non-linear প্যাটার্নের মুভি হলিউডে অহঃরহ কিন্তু মাস্টারপিস হাতে গোনা কয়েকটি, সেই কয়েকটি মুভির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে নোলানের মেমেন্টো…  Non-linear মুভির বলতে বোঝায় যেসব মুভির কাহিনি শুরু হয় কোনো একটি ঘটনার মাঝখান থেকে এরপর আস্তে আস্তে কাহিনি সামনের দিকে অথবা পেছনের দিকে এগিয়ে যায়… এক কথায়, বাধা-ধরা নিয়মের বাহিরে, সরলরৈখিক না,  এই টাইপের মুভি খুব-ই জটিল হয়… সিকুয়েন্স শুরু হবে ঘটনার মিডল থেকে… এরপর ঘটনার সূত্রপাত দেখানো হয়, নন-লিনিয়ার মুভির প্রাণ হচ্ছে “স্ক্রিনপ্লে”… স্ক্রিনপ্লে যেমন হবে মুভিও তেমন-ই হবে… সেহেতু এই মুভির স্টোরি মেইনলী জোনাথন নোলানের সেহেতু নোলান  তার প্রতিভা স্ক্রিনপ্লেতে ব্যবহার করেছেন… এবং শুধুমাত্র এই স্ক্রিনপ্লের জন্য মুভিটি অনেক দর্শকের মাথার উপর দিয়ে যাতায়াত করে… =D
স্টোরি ইউনিক, কিন্তু সিম্পল ভাবেও প্রেজেন্ট করা যেতো কিন্তু যেখানে নোলান আছেন, সেখানে কিভাবে মুভি “সিম্পল” থাকে… পীথাগোরাসের উপপাদ্য এখন বেশি সহজ মনে হচ্ছে, এই মুভির স্ক্রিনপ্লে থেকে… ডিরেকশনের যথেষ্ট কারুকাজ দেখিয়েছেন, মাত্র ২৫দিনে শুটিং শেষ, এর থেকে বড় কারুকাজ আর কি হতে পারে… প্রতিটি চরিত্রের উপর সমান গুরুত্ব দিয়েছেন… ব্যাপক “নিখুত্তের” সহিত ফুটিয়ে তুলেছেন চরিত্রগুলোকে… স্ক্রিনপ্লে আর ডিরেকশনে চোখ বুজে ৫/৫ দিবো…
সিনেমেট্রোগ্রাফি মচৎকার হয়েছ… থ্রিলিং সিকুয়েন্সগুলোতে দৃশ্যায়ন ব্যাপক লেগেছে… অভিনয়ে Guy Pearce ছিলেন একাই একশ… পারফেক্ট এক্সপ্রেশনের সাথে ডায়ালগ ডেলিভারি , জাস্ট অসাম… Guy Pearce চরিত্রে প্রথমে ব্রাড পিটকে নেয়ার কথা ছিলো কিন্তু সিডিউল জনিত কারণে আর করা হয়নি… :/ Guy Pearce-ও কম যাননি… B|  শতভাগ দিয়ে কাজ করেছেন… বাকি সবাই খুব ভালো করেছেন… 🙂
এই মুভির একটি সিকুয়েন্সে দেখা যায় লিনি একটি কমিক দোকান ক্রস করে যাচ্ছে, ঐ দোকানের জানালায় খেয়াল করলে দেখা যাবে, ব্যাটম্যান ট্রিলজি কমিক বইটি… এরপর-ই কিন্তু নোলান ব্যাটম্যান সিরিজ নিয়ে কাজ শুরু করেন, ঐখানে সুপারম্যানের কমিক বইটি দেখা যায়, পরবর্তীতে নোলান ম্যান অফ স্টিল মুভিও প্রোডিউস করেন… =D

আমার দেখা অন্যতম সেরা নন-লিনিয়ার মুভি এটি… আমার দেখা বেস্ট দশটি মুভির একটি মেমেন্টো… শুরু থেকে শেষ শট পর্যন্ত থ্রিলে পরিপূর্ণ…
অনেকে মনে করেন আমির খানের গাজনি মুভিটি এই মুভির রিমেক… তথ্যটি সম্পূর্ণ সত্য নহে, রিমেক বলতে আমরা বুঝি এক-ই কাহিনিকে নতুন করে সাজানো, এখানে কাহিনির যোজন-বিয়োজন করা যাবে না, কিন্তু গাজনি মুভিতে দেখা যায় মেমেন্টো মুভির কিছু স্ট্রং প্লট ছাড়া তেমন কিছু নেয়া হয়নি, আর গাজনি মুভির এন্ডিং তো পুরো-ই ভারতীয় কায়দায়… আমির খান নিজেও বলেছেন “গাজনি মুভিটি নোলানের মেমেন্টো থেকে ইন্সপায়ারড”… সো অনেকে হয়তো গাজনি দেখেছেন কিন্তু মেমেন্টো দেখেননি এই ভেবে যে মেমেন্টো মুভির-ই তো রিমেক সেহেতু দেখে কি লাভ… এইটা ভাবলে বিশাল ভুল করবেন… মেমেন্টোর ধারে কাছেও নেই গাজনী… কিন্তু হ্যা, গাজনীও দেখার মতো মুভি… 🙂

মুভির প্লট কিভাবে সাজানো হয়েছে ঃ স্ক্রিনপ্লে লেখার সময় নোলান একটু অভিনব কায়দা ব্যবহার করেন কিভাবে প্লটগুলো appear হবে… মুভিতে সাদা-কালো এবং রঙ্গিন ২টি কালার-ই ব্যবহার করা হয়… কালার সিকুয়েন্সগুলোকে A-V এই ২২টি লেটারে সাজানো হয় আর সাদা-কালো সিকুয়েন্সগুলোকে 1-22 নাম্বার অনুযায়ী সাজানো হয়… আর এই মুভির সিকুয়েন্সগুলোর প্যাটার্ন ছিলো… 1, V, 2, U, 3, T, 4, S, 5, R, 6, Q…20, C, 21, B, 22/A… শেষে 22/A এই সিকুয়েন্সটা একটু জটিল… 22 মানে হলো মুভির শেষ সিকুয়েন্স আর A মানে হলো মুভির প্রথম সিকুয়েন্স… যারা মুভিটি দেখেছেন তারা হয়তো খেয়াল করেছেন শেষের সিকুয়েন্সটি শুরু হয় সাদা-কালো কালারে এরপর সিকুয়েন্সের মাঝখানে ফেড আউট হয়ে রঙ্গিন হয়ে যায়… অর্থাৎ সাদা-কালো সিকুয়েন্স 22 আর কালার A সিকুয়েন্স মিলে এক হয়ে যায়, যদিও শুরু হয়েছিলো আলাদা ভাবে, এটিও নন-লিনিয়ার মুভির একটু নেচার, অডিয়েন্সকে একটু টুইস্ট দেয়ার কৌশল আর কি… =D
মুভিটি যারা এক দেখায় বুঝতে পারেননি তাদের কমপক্ষে ২বার দেখা ফরজ… নোলানের ইনসেপশনের পর এই মুভিকে আমি ডিরেকশনের দিক থেকে এগিয়ে রাখবো…

We all lie to ourselves to be happy… 🙂

 

ইমরান হোসেন

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চলচ্চিত্র-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।