জহির রায়হানের বেহুলাঃ আমাদের অবহেলা [সরব “মুভি থেকে নেয়া”- ১১]

‘বেহুলা সুন্দরী’, ‘বেহুলা ও লখিন্দর’, ‘ফিরে এসো বেহুলা’ নয়,
বলছি,জহির রায়হান পরিচালিত অতি পরিচিত লোককাহিনী অবলম্বনে নির্মিত ‘বেহুলা’র কথা। যেটি মুক্তি পায় ‘৬ দফা’র বছরে।
যে ছবিতে তাঁর দুই স্ত্রী প্রধান দুই চরিত্রে অভিনয় করেন। যে ছবিতে ‘নায়ক’ হিসেবে রাজ্জাক প্রথমবারের মতো রূপদান করেন।

ছবিটি সাগ্রহে দেখার মতো। ভালো লাগার মতো। ছোটখাটো ভুল ত্রুটি বাদ দিলে চমৎকার এক সিনেমা।
মনসামঙ্গল কাব্য থেকে তখনকার সময়ে এই গল্প বাছাই করে ছবি বানানো ছিল দুর্দান্ত সাহস ও চরম ঝুঁকির কাজ। জহির রায়হান তাঁর নিজস্ব ছাপ রেখেই সেটি করে দেখিয়েছিলেন।
রাজ্জাকের প্রথম দিককার অভিনয় বাদে মোটামুটি সবার অভিনয় আশানুরূপ। কেন জানি আমার কাছে ফতেহ লোহানীকে পুরোদস্তুর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলে ভ্রম লাগে। অসামান্য অভিনয় করেছেন তিনি।
ছবির গানগুলো মজার ও শ্রুতিমধুর। সংগীতের ব্যবহার বেশ ভালো। সংগীত পরিচালক ছিলেন আলতাফ মাহমুদ। অনবদ্য সব সুরের সৃষ্টি হয়েছে তাঁর হাত ধরে। ভালো না হয়ে উপায় আছে?
সেট ডিজাইন মানানসই। কিছু কিছু ‘লোকেশন’ অস্পষ্ট অথবা ‘প্রপস’ মেকি থাকার কারণে হয়তোবা  ক্যামেরা ধরা হয়েছিল হাই এঙ্গেল থেকে। গোঁজামিল দেয়া হল কিনা,প্রশ্ন থেকে যায়।
আনোয়ারার মতো এটিও ৬৬ সালে নির্মিত সিনেমা। তাই সে সময়ের কথা চিন্তা করলে ছবিটি বেশ উপভোগ্য ও মানসম্মত। রেকর্ড পরিমান ব্যবসা করেছিল এই ছবি। তবে বাজি ধরে বলা যায়,সিনেমাটি এ প্রজন্মের অল্পসংখ্যক মানুষের দেখা।

আসুন,সবাই মিলে বাংলা সিনেমা দেখি। বাংলা সিনেমা লিখি। কথা বলি বাংলা সিনেমা এবং বাংলা সিনেমা বানাই।

সিনেমার আশ্চর্য আকাশে নিঃসন্দেহে জহির রায়হান এক অবিস্মরণীয় জ্বলজ্বলে তারা। আমাদের সিনেমা জগতকে সামান্য পরিমাণ সমৃদ্ধ করার জন্য হলেও তাঁকে টুপিখোলা শুভেচ্ছা জানাতে হয়। তাঁর পথ ধরেই পরবর্তীতে আলমগীর কবীর,মসিহউদ্দিন শাকের এবং তারেক মাসুদের মতো চৌকশ সিনেমা পরিচালকদের জন্ম।

এমনি করে জন্ম নিক হাজার অযুত মেধাবী সিনেমাপাগল,যাদের সিনেমা আমাদের স্বপ্নের ঘুড়ি আরও উপরে ওড়াবে এবং আমাদের আশার আকাশ রৌদ্রকরোজ্জ্বল করে ছড়াবে..

আল মাহফুজ

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চলচ্চিত্র-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।