ফ্রেঞ্চ মুভি নিয়ে আমার যত ভাবনা [সরব “মুভি থেকে নেয়া”-১৬]

ফ্রেঞ্চ মুভি সম্পর্কে আমার কোনই ধারণা ছিলনা। কিন্তু যখন ফ্রেঞ্চ মুভি দেখা শুরু করলাম আমি সত্যি এর প্রেমে পরে গেলাম। প্রত্যেকটা মুভির সাথে এতো সুন্দর কিছু মেসেজ থাকে যেটা আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দিয়েছে। আর এই ফ্রেঞ্চ মুভি দেখার শুরু করলাম আমার এক বন্ধুর কারণে। আমার এক বান্ধবী কিছু পার্সোনাল কারণে অনেক ডিপ্রেসেড থাকত তাই আমার বন্ধু ওর মন ভালো করার জন্য কিছু মুভি দেয় ওর পেন ড্রাইভে। তো সেদিন আমার ওই বান্ধবী আর আমি একসাথেই আমার বাসায় ছিলাম। তখন আমি ওর পেন ড্রাইভ থেকে মুভিগুলা কপি করে নেই। সেই থেকে ফ্রেঞ্চ মুভি দেখা শুরু। আর সেই দেখার প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। আমার মনে হয় একজন মানুষ ২-২.৫ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে একটা মুভির পেছনে। তাই সেই সময়টুকু যদি সে এনজয় করে আসলে শুধু এনজয় বললে ভুল হবে সে যদি কিছু জানতে পারে, কিছু শিখতে পারে সেই মুভি থেকে যদি কোনও ইন্সপিরেশন পায় আমার মনে হয় সেই মুভি দেখাটা সার্থক J  

আমার প্রথম দেখা ফ্রেঞ্চ মুভি COCO BEFORE CHANEL… এর পর দেখলাম AMELIE…  মুভি দুইটা দেখে আমি রীতিমতAUDREY TAUTOU এর ফ্যান হয়ে গিয়েছি। অদ্ভুত সুন্দর মেয়েটা আর অভিনয়ও অসম্ভব ভালো করে।

CoCO Before Chanel  মুভিটা নিয়ে একটু বলি…  

টগ বগ টগ বগ শব্দে ঘোড়ার গাড়িটা চলে যাচ্ছে….. ছোট্ট একটা মেয়ে চোখে মুখে অনেক কৌতূহল নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে হয়তো সব কিছুর বোঝার চেষ্টা করছে। মাঝে মাঝে সে তার পাশে শুয়ে থাকা বোনটির দিকে তাকাচ্ছে। হয়তোবা ভাবছিল কি নিশ্চিন্তে তার বোনটি ঘুমাচ্ছে।ধীরে ধীরে বিশাল একটা বাড়ি দেখতে পেল সেই ছোট্ট মেয়েটি।সেই বাড়িটার প্রধান ফটকের সামনে এসে গাড়িটা থামল। সাদা রঙের টুপি আর কালো পোশাক পরা দুইজন মহিলা এসে তাদের কোলে করে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনল।সেই ছোট্ট মেয়েটি পেছনে তাকাল সেই গাড়ি চালকটির দিকে হয়তোবা অপেক্ষা করছিল তার পেছনে তাকাবার জন্য কিন্তু সেই চালক হয়তো চিরায়ত নিয়মেই চলে গেল তাদের ছেড়ে নতুন কোনও যাত্রীর খোঁজে। তাদের দিকে আর তাকানো হলনা। গাড়িটি সঙ্গে করে হয়তো নিয়ে গেল তাদের সেই পুরনো অনেক স্মৃতি ভরা দিনগুলো। অনেকটা এরকমই ছিল ছবির শুরুটা।

নিষ্পাপ দুই শিশু কন্যার এতিমখানায় আগমন এবং তাদের ভাগ্যের সাথে নতুন কোন যুদ্ধেরও হয়তো শুরু ছিল বলা যায়।  

 

প্রত্যেক রবিবার সেই এতিমবাচ্চাদের সাথে আপনজনেরা দেখা করতে আসে। সেই মেয়েটি ভাবে হয়তো তার বাবাও আসবে তাদের সাথে দেখা করতে। কিন্তু দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অপেক্ষা করার পরও সেই বাবা নামক ব্যক্তিটি আসেনি তাদের সাথে দেখা করতে।

সেই ছোট্ট মেয়েটি আসলে গ্যাব্রিয়েল এবং তার বড় বোনের নাম এদ্রিয়েন।

এভাবেই তাদের দেখতে দেখতে ১৫ বছর কেটে গেল।তারা একটা ছোট্ট বারে গেয়ে নেচে গেয়ে অতিথিদের খুশি করতো। তারা কোকো নামে একটা হারিয়ে যাওয়া একটা কুকুরকে নিয়েই গানটা গাইত।সেই থেকে গ্যাব্রিয়েলকে অনেকেই কোকো বলে ডাকতো। কোকো সবচেয়ে যেই জিনিসটা ভালো লাগত সেটা হল তার সাধাসিধে চলাফেরা আর সাধারণ পোশাক। হয়তোবা সেটা অন্যদের চোখে অনেকটাই ছেলেমানুষি যার মধ্যে মেয়েলি ভাব অনেকটাই কম।সেই বারে গান গাওয়া থেকে এদ্রিয়েনের পরিচয় হয় এক পুরুষের সাথে। সেই থেকে তাদের মধ্যে ভালোলাগা। এই ছবিতে আমার কাছে যেই জিনিষটা চোখে পরেছে তার মধ্যে একটি হল বোনের প্রতি ভালবাসা। কারন একদিন এদ্রিয়েন তার ভালবাসার মানুষটির সাথে তার এক বন্ধুকে দেখে সে তার বোন কোকো বলল চলো তার সাথে দেখা করে আসি কিন্তু কোকো এসবের প্রতি হয়তো অনেকটাই অবহেলা ছিল তাই সে বলল “না”। তখন বলল প্লিজ চলো সে আজ একা আসেনি। তখন তারা দুইজন দেখা করতে গেল এদ্রিয়েনের সেই ভালবাসার মানুষটির সাথে। তখন পরিচয় হয় এদ্রিয়েনের ভালবাসার মানুষটির বন্ধু এটিন বেলসান এর সাথে।বেলসান হয়তো প্রথম দেখায় পছন্দ করে কোকোকে। কারন বেলসানের কোকোর প্রতি অনেক কৌতুহলই তা বলে দেয়। আর কোকো ভীষণ চতুর একটা মেয়ে। সেও তার প্রতিটি কথার জবাবও অনেক চালাকির সাথে দেয়।

কোকো এই ছবির মূল চরিত্র। কোকোর কোন জিনিষ ভালো লাগে সেটা বলে শেষ করা যাবে না তার সবই সুন্দর মানে সে যা করতো সব কিছুই ভালো লাগার মতো। স্পষ্টভাষী, সাধাসিধে, উচ্ছ্বাসে ভরপুর এক মেয়ে।বাবার অনেক আদুরের মেয়ে ছিল কোকো। সে হয়তো অন্য মেয়েদের মতো কল্পনা করতনা কিন্তু অন্য সবার মতো স্বপ্ন দেখত।

 

কোকো বই পড়তে অনেক ভালবাসত। তাই প্রতি রাতে সে ঘুমানোর আগে বই পড়ত। সেই গল্পের সমাপ্তিটাও হয়তো একি রকম হতো। মেয়েরা তাদের সব বাঁধা দূর করে এবং শেষে এক রাজপুত্রকে বিয়ে করে। আসলে এই ছবিতে একটা খুবই কমন ব্যাপার তুলে ধরা হয়েছে। সেটা হচ্ছে প্রত্যেকটা মেয়ে একসময় কোনও রাজপুত্রকে বিয়ে করে সংসার করার স্বপ্ন দেখে। সেই রাজপুত্র তার সব দুঃখ কষ্টগুলো ভুলিয়ে দিয়ে নতুন এক জীবনের সঙ্গী হবে। যেমনটা তার বোন এদ্রিয়েন চিন্তা করে আর স্বপ্ন দেখে। কিন্তু কোকো অনেকটাই বাস্তববাদী চিন্তা করে তার মতে আসলে ভালবাসা কল্পকাহিনীতেই ভালো মানায় সত্যিকার জীবনে নয়।আর ভালবাসার মধ্যে সবচেয়ে মজার জিনিষ হল ভালবাসা তৈরি করা( The only  thing interesting in love is makeing love. Too bad you need a guy for that ) এই ছবির সবচেয়ে প্রিয় দুটি লাইন।

কোকো মতে ভালবাসায় ঢুবে থাকা কোনও নারী হচ্ছে সবচেয়ে অসহায়।অনেকটাই ক্ষুধার্ত কোনও কুকুরের মতো। আসলে ভালবাসার পরশ যে পায়নি তার কাছে হয়তো ভালবাসাটা অনেকটাই এরকম।  

 

বেলসানের সাথে কথা বলে কোকো বুঝতে পারে সে তাদের জন্য অনেকটাই দরকারি। কারন বেলসানের সাথে অনেকেরই পরিচয় আছে তাই তারা বেলসানের মাধ্যমে অনেক জায়গায়ই কাজের সুযোগ পাবে এতে তাদের অবস্থার অনেক উন্নতি সম্ভব।

একদিন কোকো তার বোনকে বেলসানের পরিচিত কোনও হোটেলে তাদের অডিশন হবে এটা জানায়। তার বোনকে তাদেরকে সেটার জন্য প্রস্তুত হতে কিন্তু তার স্বপ্নে বিভোর সেই বোন কোকোকে বলে তার ভালবাসার মানুষ তাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে। বিয়ে করে সে পুরোই গৃহিণী হয়ে যাবে তাই আর কোনও নাচ গান নয়। কোকো তার বোনকে অনেক বুঝাল তার মতো গরীব এতিম কোনও মেয়েকে সে কখনই বিয়ে করবেনা। শুধুই স্বপ্ন দেখতেসে। আসলেই সব মেয়ের মতো হয়তো এদ্রিয়েন চেয়েছিল বিয়ে করে সুখি হতে কিন্তু পৃথিবীর নিষ্ঠুর পরিণতি হয়তো তখনও উপলব্ধি করতে পারেনি এদ্রিয়েন। যেটা অনেক আগেই তার বাবার প্রিয় কন্যা কোকো বুঝতে পেরেছিল। কারন কোকো বাবার সবচেয়ে আদরের কন্যা হয়েও মা মারা যাবার পর একবারও দেখতে আসেনি তার সেই মেয়েটি কেমন আছে, কিভাবে আছে। এতো কাছের মানুষ যখন তাকে ভুলে থাকতে পেরেছে তখন দুইদিনের পরিচয়ে গড়ে উঠা সেই ভালবাসার মানুষ কোনও ভাবেই তাদেরমত মেয়েকে গ্রহণ করবেনা। তারা হয়তো শুধুই উপভোগের জন্য।

 

একদিন বেলসান আসলো কোকোর কাছে বিদায় নিতে কারন সে তার নিজ বাড়িতে চলে যাচ্ছে। হয়তো সেদিন কোকো উপলব্ধি করে তার বোন চলে যাচ্ছে তার ভালবাসার মানুষের সাথে এখন বেলসানই তার ভাগ্য পরিবর্তনের একমাত্র অবলম্বন। তাই হঠাৎ হাজির হয় বেলসানের বাসায়। এভাবে শুরু হয় তার আরেক সংক্ষিপ্ত জীবন। কোনও রাতে সেই অসহায়ত্বের বিনিময়ে হারাতে হতো নিজের সবটুকু। হয়তো কোকো তখন বুজতে পেরেছিল এই অসহায় পৃথিবীতে কেউই কারো নয়। সবাই স্বার্থ ছাড়া কেউ কিছুই করেনা। বেলসানের সাথে থাকলে হয়তো অনেকটাই দাসির মতো জীবন যাপন করতে হবে নতুবা আগের মতো টানাপোড়নের জীবনে ফিরে যেতে হবে।

 

এই ছবির আরেকটা অসম্ভব সুন্দর পার্টটা হল চোখ ঝলকান কোনও দৃশ্য নেই। খুবই স্নিগ্ধ পরিবেশে শান্ত ভাবে মানুষগুলোর চলাফেরা। কোকো সবসময় মেয়েদের আড়ষ্ট পোশাক,ভারি মেক-আপ, ভীষণ কারুকাজ পূর্ণ মেয়েদের হ্যাট গুলো দেখে নিজের সাথে কখনই মেলাতে পারেনা। কোকোর আরেকটি গুন ছিল সে অনেক ভালো সেলাই করতে পারত। অনেক সুন্দর সুন্দর মাথার হ্যাট তৈরি করত।সে বারে গানের পাশাপাশি এক দোকানে সেলাইও করতো।

 

এভাবেই কাটতে থাকে কোকোর দিন একদিন সকালে মিষ্টি মিষ্টি পিয়ানোর সুর শুনে সেই সুরের উৎস খুঁজতে খুঁজতে দেখা পায় এক পুরুষের। পিয়ানোর সুরের মাঝে তাদের কিচ্ছুক্ষণ হয় চোখাচোখি। কে জানতো এই দেখাই কোককে নিয়ে যাবে এক ভালবাসার দুনিয়াতে। সেই পুরুষটি ছিলেন আরথার কাপেল কিন্তু সবাই তাকে ডাকে বয়।বয়ের একটা কথাই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে সেটা হল কোকোকে দেখার পর তার প্রশংসা স্বরূপ একটা কথাই বলে তা হল you are elegant.   

এভাবেই ধীরে ধীরে বেড়ে উঠতে থাকে তাদের ভালবাসা। বয়ের কাছে কোকোর যেই জিনিসটা সবচেয়ে বেশি ভালো লাগত সেটা হল তার সিমপ্লিসিটি। বয় আর কোকোর পরস্পরের প্রতি যেই দুর্বলতা ছিল সেটা অনেকটাই বুঝতে পারে বেলসান।তাই অনেকটা হিংসাও হয় সে আর সেটা হওয়াটাই স্বাভাবিক।   

কোকো আর বয়ের অন্তরঙ্গ মুহূর্তটা অনেক বেশি রোম্যান্টিক ছিল।বয় অন্য পুরুষের মতো ঝাঁপিয়ে পরেনি বরং জয় করে নিয়েছিল কোকোকে। আর হয়তো সে জন্যই কোকো ও নিজেকে সমর্পণ করে ছিল বয়ের কাছে।

বেলসানের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে কোকোকে ঘুরতে নিয়ে যায় দুইদিনের জন্য।

এই ছবির অন্য সব দৃশের চাইতে সব চেয়ে সুন্দর দৃশ্য ছিল কোকো আর বয়ের একসাথে ঘুরতে যাওয়া।বেলসানের মতো কোকোর হাত ধরে হাঁটতে তার নিজেকে ছোট মনে হয়নি। সইচ্ছায় কোকোর হাত ধরে হেঁটেছে সমুদ্রের পাড় ধরে। ঐদিন রাতে তারা কেসিনতে নাচবে একথা বয় কোকোকে জানায়। তখন কোকো বলে এটা কি অদ্ভুত না যে তুমি আমার সাথে থাকবে?? তখন বয় অনেক সুন্দর একটা কথা বলে সে বলে “কি অদ্ভুত চিন্তা”। রাতের পার্টির জন্য কোকো বয়কে সাথে নিয়ে নিজে জামার জন্য কাপড় কিনে আনে। নিজেই তার ড্রেস তৈরি করে। কি অদ্ভুত সুন্দর লাগতেসিল সেই কালো ড্রেসে কোকোকে। আর বয় এককথায় charming man….

কোকো বয়কে দেখে তখন বলে সব নারীরা তোমাকে দেখতেসে তখন বয় বলে “না, আসলে সবাই তোমাকে দেখতেসে”।

পরদিন তারা চলে আসে বেলসানের বাড়িতে। বয়েরও যাবার সময় হয়ে আসে। সে কোকোর কাছ থেকে বিদায় নেয় আবার তাড়াতাড়ি তাকে নিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি করে। কোকো তাকে বিদায় দিয়ে চলে যায়।

কোকো আসলে তখন বয়ের প্রেমে বিভোর।সে তখন তার বোনের কাছে গিয়ে তার বিয়ে করার ইচ্ছা পোষণ করে। হয়তো নিজেও বিশ্বাস করতে পারছিল না যে সে এখন তার বোনের মত কাওকে বিয়ে করতে চায়,সুখী হতে চায়।কোকো তখন বেলসানের কাছ থেকে বিদায় নিতে চায়।কিন্তু বেলসান যতই মতলবি হোক না কেনও বয়ের সাথে কোকোর ভালবাসার পর সে আসলে নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারে।সে বুঝতে পারে মেয়েরা ভোগের বস্তু নয় তারা টাকা পয়সা,জস-খ্যাতির চেয়ে ভালবাসা চায়।তাই বেলসান তখন চাইনি কোকো বয়কে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখে কোনও বড় ভুল করুক।বেলসান যা বলে সেটার জন্য হয়তো কোকো কখনই প্রস্তুত ছিল না। কোকো আসলে এক ইংলিশ মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। কারন সেই মেয়ের বাবার টাকা আছে।এ কথা শোনার পর কোকো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনি।

কিছুদিন পর কোকোর সাথে দেখা করতে আসে বয়। কোকোর মুখ দেখেই বয় বুঝতে পারে কোকোর মনের মধ্যে কিছু একটা যুদ্ধ করছে।তখন কোকো তার বোনের কথা বলে যে তার বোন এখনো ভাবছে তার ভালবাসার মানুষ তাকে বিয়ে করবে। তখন বয় বুঝতে পারে কোকোর ইঙ্গিত। বয় তখন বলে যদি তারা পরস্পরকে ভালবাসে সেটাই অনেক। বিয়ে আসলে একটা সামাজিক রীতি।এই কথা অনেকটাই ঠিক ভালবাসা কখনই কোনও রীতি নীতির মধ্যে পড়েনা। দুই জন মানুষ যদি পরস্পরকে ভালবাসে সেই ভালবাসার বন্ধনই যথেষ্ট। তবে হ্যাঁ বিয়ে সেই বন্ধনকে একটা সামাজিক ভাবে গ্রহণযোগ্য রুপ দান করে।আর যদি দুই জন মানুষ একে অপরকে ভালবাসে তবে তাকে বিয়ে না করে কেনও সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত করবে। তাহলে সেটাই বা কেমন ভালবাসা ছিল হয়তোবা সেই ভালবাসায় কোনও খাদ ছিল।তখন বয় কোকোকে বলে সে এক মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছে। কোকো তখন বলে সে জানে। বয় কোকোকে এই বলে সান্ত্বনা দেয় যে সব কিছু আগের মতই থাকবে কিছুই পরিবর্তন হবেনা।ছেলেদের চিন্তা ভাবনা কেন যেনও অন্য রকম মনে হয় আমার কাছে। তাদের চিন্তা তাদের যুক্তি সবটাই কেমন জানি আত্মকেন্দ্রিক। হয়তো আমি ভুল কিংবা সঠিক হয়তোবা এটাই বিধাতার ধারা।যাই হোক, কোকো তখন বয়কে আক্ষেপের সাথে জেরা করেনি কিংবা সম্পর্ক ছিন্ন করারও ভয় দেখাইনি। আমার মনে হয়েছে এটা না করার অন্যতম কারন তার বাস্তব ধর্মী চিন্তা।কারণ কোকো বেলসানের কাছে এসেছিল নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের আসায়। এখানে আসার পেছনেও কোকোর স্বার্থ ছিল তেমনি বয়ও হয়তো নিজের অবস্থা উন্নয়নের আশায় সেই উঁচু ঘরের মেয়েকে বিয়ে করছে। কোকো কে বিয়ে করলে বয় সেটা কখনই পেতনা।ভালবাসা দিয়ে হয়তো সব সময় বেঁচে থাকা যায়না।টাকা পয়সা, খ্যাতি সবই মানুষের জীবনে লাগে।এখানে হয়তো আমিও অনেকটাই স্বার্থপরের মতো চিন্তা করছি।

কোকো প্যারিসে মেয়েদের হ্যাট বানানোর জন্য একটি প্রস্তাব পায়। তখন সে বেলসানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে প্যারিসে যায়।এই কথা শোনার পর বেলসান তাকে বাঁধা দেবার চেষ্টা করে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে কারণ বেলসান কোকোকে বিয়ে করে তার কাছেই রাখতে ছায়।কিন্তু বয় কোকোর এই কাজের ইচ্ছাকে সাধুবাদ জানায় এবং তাকে উৎসাহিত করে।হয়তো এটাই ভালবাসা। ভালবাসার মানুষটির ইচ্ছাকে নিজের ইচ্ছার মতো প্রাধান্য দেয়া।বয় নিজেও চেয়েছে কোকো তার গুণ দিয়ে তার ভাগ্য পরিবর্তন করুক।কোকোর এই ব্যবসার সকল খরচ বহন করার প্রতিশ্রুতি দেয় বয় এবগ সেটা পালনও করে সে।

পরদিন সকালে কোকো প্যারিসে যাবার আগে বেলসানের সাথে দেখা করতে যায়।তখন বেলসান সত্যিই কোকোর প্রতি একটা টান অনুভব করে।আর কোকো ও জানে বেলসান যেমনি হোক না কেনও আসলে সে ভালো মনের একজন মানুষ নতুবা এতো দিন কেও কোনও অচেনা মেয়েকে এভাবে এতদিন নিজের কাছে রাখেনা।বেলসানের একটা কথা খুবই ভালো লাগে সে বলে “তোমাকে ছাড়া আমি কি করবো”।বেলসান কে আলিঙ্গন করে কোকো বিদায় নেয়।

কোকো এখন অনেক ভালো হ্যাট সেলাই করে। প্যারিসের মোটামুটি সব নারীদের মাথায় তার নিজের বানানো হ্যাট দেখা যায়।যায়।বয়ও ভুলে যায়নি কোকোকে। সেও মাঝে মাঝে চলে আসে কোকোর সাথে দেখা করতে।একাকী কিছু মুহূর্ত ভাগাভাগি করে নেয় দুজন। কারো কোনও আক্ষেপ নেই কারোপ্রতি। আর এটাই হয়তো ভালবাসা।কোকোকে দুই মাসের ছুটিতে ঘুরতে নিয়ে যাবার কথা বলে এবারের মতো বিদায় নেয় বয়। 

 

বেলসানও এখন মাঝে মাঝে কোকোর সাথে দেখা করতে আসে।গল্প করে,হাসি-ঠাট্টা করে,একসাথে নাটক দেখতে যায়। একরাতে নাটক শেষে হঠাৎ কোকোর বোন এদ্রিয়েন এসে বলল বয় রোড এক্সিডেন্ট করেছে। কোকো তখন তার বোনকে জিজ্ঞেশ করে “বয় কি হাসপাতালে”?? কিন্তু তার বোনের নীরবতা হয়তো এতটা ভয়ঙ্কর হবে সেটা কোকো কখনই ভাবেনি। বয় চলে গেছে না ফেরার দেশে। ঐদিন রাতেই সেই দুর্ঘটনার জায়গা দেখতে যায় বেলসানের সাথে। তখন কান্নায় ভেঙ্গে পরে কোকো।  

কোকো এখন অনেক নামকরা ডিজাইনার। শুধু হ্যাটই না বরং দৃষ্টিনন্দন সব মেয়েদের পোশাক তৈরি করে কোকো। ছবির একদম শেষে কোকোর পোশাক নিয়ে একটি ফ্যাশন শো দেখানো হয়। তার সুনিপুণ চোখ গুলো দেখে যায় তার তৈরি প্রতিটা পোশাককে। পা দুখানা সিঁড়ির উপর বাঁকা করে রেখে তাকিয়ে থাকে মেয়েদের দিকে হয়তো সেই মেয়েদের পোশাকে খুঁজে ফেরে তার অতীত, তার ভালবাসা, সেই পুরনো কোকোকে।

একটু বলতে গিয়ে অনেকটাই বলে ফেললাম :p…

আর এই মুভি নিয়েই কেনও লিখলাম সেটা যদি বলতে হয় তাহলে বলব এই মুভিটা আমার অনেক পছন্দের একটা মুভি আর এই প্রথম কোনও মুভি দেখে আমি শান্তি পেয়েছি J

ফ্রেঞ্চ মুভির গুণগান অনেক করলাম এখন আমাদের দেশের মুভিতে ফিরে আসি। আমাদের দেশে এখন অনেক ভালো ভালো মুভি তৈরি হচ্ছে এটা খুবই ভালো দিক। সেই মুভিতে প্রযুক্তির ব্যবহারও খুব হচ্ছে তবে অনেক সময় দেখা যায় সেটা অনেক খানি সামঞ্জস্যহীন। যারা মুভি তৈরি করছে তাদের উচিৎ শুধু নিজের চিন্তাকে বাস্তবে রুপ না দিয়ে সামঞ্জস্যপূর্ণ, আমাদের সমাজের রীতিনীতি, কালচার সেই ব্যাপারগুলো মাথায় রেখে মুভি তৈরি করা। একটা মুভির সমাজের অনেক পজিটিভ পরিবর্তন আনতে পারে তাই এই ক্রিয়েটিভ একটা কাজকে শুধু প্রফেশন হিসেবে না নিয়ে একে সমাজ সেবায়ও পরিণত করা যায়। আর আমিও মুভি দেখে সেই সমাজ সেবায় অংশ নিচ্ছি J J  

 

তানজিলা ইসলাম তান্নি

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চলচ্চিত্র-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

5 Responses to ফ্রেঞ্চ মুভি নিয়ে আমার যত ভাবনা [সরব “মুভি থেকে নেয়া”-১৬]

  1. Tanvir Roman বলেছেনঃ

    অনেক সুন্দর হইসে 🙂 তুমি কবে লিখলা এটা ?? ভালোই তো লিখসো আপু 🙂

  2. Tanvir Roman বলেছেনঃ

    valo valo :clappinghands:

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।