A Moment To Remember [সরব “মুভি থেকে নেয়া”-১৭]

A Moment To Remember ২০০৪ সালের অন্যতম হিট রোম্যান্টিক কোরিয়ান মুভি। “Eraser In My Head”নামেও পরিচিত এই মুভিটি। আমার কোরিয়ান মুভি দেখার শুরু করার অন্যতম কারণও বলা যেতে পারে এই মুভিটিকে। এই মুভিটি আমাকে কোরিয়ান মুভি জগতে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করেছিল। এই মুভিতে অভিনয় করেছেন Son Ye-Jin Jung Woo Sung। দুজনের অভিনয় দেখেই মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। এতোটাই বিমোহিত হয়েছিলাম যে এই দুজনের যাবতীয় সব মুভি সিরিয়াল যা পেতাম দেখে ফেলতাম।
তার আগে বলে নেই, কোরিয়ান মুভির একটি বিশেষত্ব হল আবেগের প্রাধান্য। সব দেশের মুভিতে বাণিজ্যিক একটা গন্ধ থাকে, যা এসব মুভিতে বিরল। হয়ত মেয়ে বলেই আবেগ-অনুভূতির প্রাধান্যকেই ভালো লাগে।
মুভিতে So Ye-Jin অভিনয় করেছেন “Kim Su-Jin” নামের এক ফ্যাশন ডিজাইনারের চরিত্রে, যে কিনা বেশ ধনী পরিবারের মেয়ে আর Jung Woo Sungহলেন “Choi Chul-Soo” নামের এক কন্সট্রাকশনকর্মী যে কিনা স্থপতি হবার জন্য পড়াশুনা করছে। সিনেমার শুরুতেই আমরা দেখতে পাই Kim Su-Jinরেলস্টেশনে অপেক্ষা করছে কারো জন্য। যার জন্য সে অপেক্ষা করছিলো সে আসে না। তখন সে নিজের ভুল বুঝতে পেরে কাঁদতে থাকে। বাড়ি থেকে পালিয়ে মনের মানুষের হাত ধরে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল সে। কিন্তু মনের মানুষ মন রক্ষা করেনি। তখন পাশে ঘুমন্ত এক পাগল উঠে বসে এবং বলে, “ When the memory’s gone, so is the soul, so they say.” যখন মানুষের কোন স্মৃতি থাকে না, তখন আত্মাও থাকে না। স্মৃতিকে ঘিরেই তো আবেগ-অনুভূতি বেঁচে থাকে, লালিত-পালিত হয় মনের মধ্যে। ভগ্নহৃদয়েই রেলস্টেশন ত্যাগ করে Su-jin। কাছাকাছি একটা কনভেনশন ষ্টোরে গিয়ে কোল্ডড্রিঙ্কস কিনে, কিন্তু ভুলে গিয়ে ফেলে আসে কোল্ডড্রিঙ্কস ও মানিব্যাগ। কোল্ডড্রিঙ্কস আনতে গিয়ে দেখা হয় Choi Chul-Soo-র সাথে, Su-Jin ভাবে ওর কোল্ডড্রিঙ্কসটা এই বেয়াদব লোক হাতিয়েছে। সেChulSooর হাতের ক্যান ছিনিয়ে নিয়ে সামনেই ঢকঢক করে সাবাড় করে দেয়। তারপর বাসে উঠে ভাড়া দেবার সময় লক্ষ করে যে সে মানিব্যাগ ফেলে এসেছে। কিন্তু স্যরি বলার জন্য খুঁজে পায় না Chul-Sooকে। এভাবেই ছিল নায়ক-নায়িকার প্রথম দেখা।
যখন কোন মেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়, তখন পরিবারের নাম খারাপ হয়। মেয়েটি যখন ফিরে আসে, সমাজ তাকে ভিন্ন নজরে দেখে। অফিসে সবাই কানাকানি করেSu-Jinকে নিয়ে। কলিগরা খোঁচা মেরে কথা শোনায়, কারণ Su-Jin ভালবেসেছিল এক বিবাহিত কলিগকে। নিজের কৃতকর্মের অপরাধবোধে ভোগে Su-Jin। তার বাবা তাকে বলে, নতুন করে জীবন শুরু করতে। তিনি বলেন, “To forget easily is a gift. Let go of your old mistakes.” জীবনের এমন সময়েই বেশ কয়েকবারSu-Jinএর দেখা হয়ে যায় Chul-Sooর সাথে, সবগুলো মুহূর্তই বেশ ড্রামাটিক। আবার নতুন করে হাসতে শুরু করে Su-Jin। আবার নতুন করে প্রেমে পড়ে যায় Chul-Sooর। Chul-Soo কিছু প্রকাশ না করলেও ভালবেসে ফেলে Su-Jinকে। প্রেম হয়ে যায়।
অনেক সুন্দর মুহূর্ত কাটল Su-Jin  Chul-Sooর, Su-Jin বিয়ে করে ঘর-সংসার করতে চায়। কিন্তু Chul-Soo রাজি হয় না, Su-Jinএর পরিবারের সামনে দাঁড়ানোর মত যোগ্যতা তখনো সে অর্জন করে নি। Su-Jin ট্রিক করে তার বাবা-মার সাথে Chul-Sooর দেখা করার ব্যবস্থা করে। মেয়ে এবার প্রেম করছে এক সামান্য কন্সট্রাকশনকর্মীর সাথে। Su-Jinএর বাবা কোনভাবেই মেনে নিতে চান না, কিন্তু মেয়ের চাওয়ার কাছে একজন বাবা নিরুপায়। বিয়ে হয়ে যায় Su-Jin Chul-Sooর।Chul-Sooও একজন স্থপতিবিদ্যায় পাশ করে স্থপতি হয়ে গেছে এর মধ্যে। বিবাহিত জীবন ভালোই কাটছিল, কিন্তু  Su-Jinএর ভুলোমনের জন্য প্রায়ই ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে। প্রায়ই চুলোর আগুন নেভাতে ভুলে যায় সে, হাঁড়িপাতিল পুড়িয়ে ফেলে। Su-Jin ধীরে ধীরে নিজের ভুলোমন নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। অফিস থেকে ফেরার পথে নিজের বাসা খুঁজে পেতে বেশ কষ্ট হয় ওর। এদিকে Chul-Soo ইনডাকশন চুলার ব্যবস্থা করে Su-Jinএর সুবিধার জন্য। Su-Jin নিজের সমস্যা উপলব্ধি করে ডাক্তারের কাছে যায়। ডাক্তার তাকে কিছু টেস্ট করে নিয়ে আসতে বলে।
Chul-Soo Su-Jinকে নিয়ে যায় একটি নতুন জায়গায়, যেখানে Chul-Soo তার স্বপ্নের মত করে সংসার পাতাবে Su-Jinএর সাথে। ড্রয়িংরুম, বেডরুম, বাথরুম সব কিছুর পরিকল্পনা করে তারা একসাথে, নিজেদের নতুন ঠিকানার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠে। ডাক্তারের কাছে রিপোর্ট নিয়ে যায় Su-Jin, ডাক্তার আরো কিছু চেক-আপ করে।Su-Jin অফিসে গিয়ে জানতে পারে, তার নতুন বস আর কেউ নয় তার পুরনো প্রেমিক Young Min, যে রেলস্টেশনে আসার কথা দিয়ে আসে নি।
ডাক্তার Su-Jinকে জানায় যে সে Alzheimer’s diseaseএ ভুগছে। ধীরে ধীরে সে সব ভুলে যাবে। ডাক্তার তাকে পরামর্শ দেয় অফিসের কাজ বাদ দিয়ে ঘরে থাকার। সে টাইপ করা থেকে ফোনে কথা বলাও ভুলে যাবে। ভুলে যাবে পরিবার-পরিজন, প্রিয় মানুষ সবাইকে এমনকি নিজেকেও। মস্তিষ্কের সব স্মৃতি মুছে যাবে। Su-Jin তার রোগের সম্পর্কে কিছুই জানায় না Chul Sooকে। Su-Jin জানায় সে চাকরি ছেড়ে দিবে। Chul-Soo যদিও কিছু ব্যাপার লক্ষ করে, কিন্তু কিছুই বলে না। Su-Jinএর মুখের হাসি যথেষ্ট তার জন্য, বেশি কিছু তার জানার দরকার নাই। একটাসময় Chul-Soo বুঝতে পারে কঠিন কিছু হয়েছে তার স্ত্রীর, ডাক্তারের কাছে গিয়ে সব জানতে পারে সে। Su-Jinকে সে খুঁজে পায় তাদের একটি পছন্দের জায়গায়, Su-Jin বলে, “Did you find out that I have an eraser in my head? সে আলাদা হয়ে যাবার কথা বলে। বলে, “Don’t be so nice to me. I’ll forget everything.Chul-Soo বলে, “I’ll remember everything for you.Su-Jinএর পরিবার তাকে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু Chul-Soo Su-Jinকে কোনমতেই ছাড়বে না। একদিন Su-Jin তার পুরনো প্রেমিকের নাম ধরে Chul-Sooকে ডেকে বলে, “I love you.Chul-Soo কোনরকম অভিব্যক্তি না দেখিয়ে শুধু প্রতি উত্তরে বলে, “I love you, too.” নিজের ভালবাসার মানুষ যখন অন্য কারো নাম ধরে তাকে ডাকে, এর থেকে কষ্টের অনুভূতি হয়ত নেই। Chul-Sooর মনে প্রশ্ন আসে আদৌ Su-Jin কি তাকে প্রকৃতভাবে ভালবেসেছিল। সেটুকু জানার জন্য মুভির শেষ পর্যন্ত দেখার অনুরোধ রইল।
মুভিটির উপস্থাপনা, আবহসঙ্গীত সব কিছুই নিখুতভাবে সুন্দর। অনেকে সুন্দর বা ভালো মুভির লিস্টে “A Walk to remember” বা “Sweet November”কে ফেলে, একসময় আমারো ছিল। কিন্তু “A Moment To Remember” দেখার পর মুভিগুলো ইম্প্রেশন বেশ হাল্কা হয়ে গেছে। মুভিটি দেখার পর কেমন লেগেছে সেটা ভাষায় প্রকাশ করা দুঃসাধ্য। বিজ্ঞান বলে, মন বলে কিছু নেই, সব ব্রেনের কারসাজি। মুভিটি দেখার পর বেশ কয়েকটা বিট মিস হল বলে মনে হল, কি জানি। হয়ত ব্রেনের কোন কারসাজি। সব দোষ পরিচালকের, এতো হৃদয়ছোঁয়া করে না বানালে কি হতো না? আমরা সিনেমা দেখে নায়ক-নায়িকার প্রেমে হাবুডুবু খাই, কিন্তু আমাদের প্রেমের দাবিদার পরিচালকেরা। Lee Jae Hanএর প্রতি ভালবাসা জানিয়ে শেষ করলাম।
গোধূলি বিশ্বাস সীজন
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চলচ্চিত্র-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।