যখন রূপালি পর্দার দেখা পায় নয়নের জল [সরব “মুভি থেকে নেয়া” -২১]

মুভি দেখে কেঁদেছেন? কবে, কখন, কেন? আমরা তো জানিই একটি চলচ্চিত্র মেকি, মানবনির্মিত। সেখানে যা দেখানো হয়, তা প্রাকৃতিক নয়। তারপরেও আমরা চলচ্চিত্র দেখে কাঁদি। আমরা বেশিরভাগ, “মুভি দেখে কাঁদা” কে ঢেকে রাখতে চাই। আমরা মনে করি যে মুভি দেখে কাঁদে, তার মানসিক শক্তি বেশ সন্দেহজনক (!!!) এবং দুর্বল – সমাজে টিকে থাকার কোন সুযোগ হয়তো সে পাবে না। কিন্তু কয়জন ভাবে, সেসব মানুষ যারা কোন মুভি দেখে কাঁদে, তারা কতটা মিশে যায় মুভির চরিত্রগুলোর সাথে, মুভিতে দেখানো পরিবেশের সাথে, সেই ঘটনাগুলোর সাথে যেগুলোকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয় সিনেমাটির কাহিনী। সিনেমা দেখে তারাই কাঁদে যারা সিনেমাতে নিজেদের জীবনের ছাপ খুঁজে পায়, যারা সিনেমাতে তার পারিপার্শ্বিকতাকে খুঁজে পায়, যারা সিনেমাতে জীবনকে তুলে ধরার খুদ্র প্রয়াসের গুরুত্বকে অনুধাবন করে ঐ সিনেমাকে তার জীবনের দর্পণ হিসেবে পরিচয় দিতে কার্পণ্যবোধ করে না।

কাঁদতে বাধ্য করা সিনেমার সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। কিন্তু সব মুভি সবাইকে কাঁদায় না আবার কিছু মুভি দেখে না কাঁদা ছাড়া মানবানুভূতি কোন উপায় দেখে না। কান্না তো চোখের জন্য ভালো, কিছু জীবাণু দূর হয়। লাইসোজাইম এনজাইমের প্রভাবে চোখ কিছুটা নিরাপত্তা পায়, আবার আমরাও আমাদের আনন্দ-কষ্টের অনুভূতিগুলোকে অক্ষিবারিরূপে মুক্ত করে সাধন লাভ করি। প্রথম যে মুভির দেখা পেয়েছিল আমার চোখ, তা হচ্ছে টাইটানিক। তখন ছিলাম ছোট, মুভির পুরোটুকুও তখন দেখা হয়নি। দেখেছিলাম কেবল জাহাজের ডুবে যাওয়া অংশটুকু। তখন একজন মানুষের মরে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন ভাবনার উদ্রেক আমার মনে স্থান পায়নি। পরেরবার কেঁদেছিলাম রাকেশ রোশন পরিচালিত “কোই মিল গেয়া” মুভি দেখে। মুভির নায়ককে সবাই মিলে যখন অপমানিত করে, ক্লাস সেভেনে পড়া এই ছোট্ট ছেলেটির মন তখন আর নিজেকে থামাতে পারেনি। তারপরে কাঁদলাম অনেকদিন পরে, আমির খানের “তারে জামিন পার” দেখে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, মুভিটা আমি এবং আমার পৌনে এগার বছরের ছোট আদরের ভাই একসাথে মিলে দেখেছিলাম। সেই শেষের দৃশ্য যখন ছোট ছেলেটি (কেন্দ্রীয় চরিত্র), তার শিক্ষককে জড়িয়ে ধরে অঝরে কাঁদতে থাকে। আমি কেঁদেছিলাম, তখন তো সবে ক্লাস টেনে উঠলাম, অনুভূতিগুলো নিয়ন্ত্রণ করা শিখিনি। আমি বোধহয় কিছুটা বুঝেই কেঁদেছিলাম কিন্তু আমার ছোট ভাইটা সেদিন লুকিয়ে কাঁদছিল, আমি শুধু তার পানিটুকুই দেখেছিলাম, কান্নার কোন শব্দ শুনতে পাইনি।

এরপর জীবনে “লিটারেলি” বোদ্ধার মত মুভি দেখা শুরু হল। যদিও বিশ্লেষণগুলো আমি ব্যতীত মনে হয় বিধাতাই শুনতে পেত। আবার কাঁদলাম ২০১২ তে এসে, এবার কাঁদলাম ছেলে আর মা মিলে। আমার সতীর্থ হাসান-আল-রেজা তার ফেসবুক একাউন্টে লিখেছিল কোরিয়ান একটা মুভির নাম – “দি ক্লাসিক”। মুভিটা ছিল খুব সাধারণ। উচ্চবাচ্য কিছুই ছিল না। কিন্তু মানুষের ভালোবাসা যে কতটা তীব্র, কতটা শক্তিশালী, কতটা সপ্রভ, কতটা … আর বিশেষণ খুঁজে পাচ্ছি না। মার চোখে পানি এর আগেও দেখেছি, কিন্তু পানি পড়ে যাওয়ার সূচনা হয়তো দেখিনি, সেদিন দেখেছিলাম।

মুভি দেখে কান্না মাঝেই মাঝেই হয়েছে। আমি এই কান্না করা থামাতে চাই না।

 

নাদভী

এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চলচ্চিত্র-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।