চলচ্চিত্র কি?বিনোদন।মানুষ বিনোদন পেতে ভালোবাসে।এই জন্যই আমরা ফিল্ম
স্টারদের ফ্যান,হার্ভার্ড কিংবা অক্সফোর্ডের জ্ঞানী-গুনী প্রফেসরদের খবরও
রাখি না।আর এই মুভি জগতের সবচেয়ে জনপ্রিয় সিরিজগুলোর মধ্যে ‘হ্যারি পটার’
কোন সন্দেহ ছাড়াই সবার উপরে থাকবে।২০০১ থেকে ‘১১ এই দশ বছরে মুক্তি পাওয়া
আটটি পর্বের সবকয়টিই বক্স অফিস কাঁপিয়ে দিয়েছিল।মোট আয়ের দিক দিয়ে এটিই
এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফলতম সিরিজ।আর সম্ভবত একমাত্র সিরিজ যেটির বিদায়
হয়েছিল ভক্তদের চোখের জলের মধ্য দিয়ে,লন্ডনের বিখ্যাত ট্রাফালগার
স্কয়ারে।
হ্যারিকে নিয়ে লেখা জেকে রাউলিংয়ের সাতটি উপন্যাস যে দুনিয়াজুড়ে ঝড়
তুলেছিল একথা কারোরই অজানা থাকার কথা না।আর দশটা পাঁচটা ফিকশনের মতো এটিও
তখাকথিক ‘হিরো ভার্সেস ভিলেন’ টাইপ কাহিনী।কিন্তু তারপরেও সিরিজটিতে এমন
কিছু একটা আছে যার জন্য ছেলে-বুড়ো সবাইকে সমানভাবে আকর্ষন করে।কাল্পনিক
জগতের চরিত্রগুলো লেখিকার কলমে এতোটাই বাস্তবে রূপ নিয়েছিলো যে,পাঠক
হ্যারি-রন-হার্মায়েনীদের নিজের আপন কেউ ভাবতে বাধ্য হয়।চলচ্চিত্রগুলোতেও
এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
২০০১ সালে মুক্তি পায় সিরিজের প্রথম মুভি ‘হ্যারি পটার এন্ড দ্য ফিলসফারস
স্টোন’।নয়শ মিলিয়ন ডলারেরও বেশী আয় করা মুভিটি সমালোচকদের নজর কাড়তেও
সক্ষম হয়।’ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ,রূপার্ট গ্রিন্ট আর এমা ওয়াটসন’ এই তিন
খুদে অভিনয়শিল্পী রীতিমতো সুপারস্টারে পরিনত হয়ে যান এর কল্যানে।মুভিটিতে
হগোয়ার্টসের কাল্পনিক দুনিয়াকে তুলে ধরাটা একরকম চ্যালেন্জই ছিলো বলা
যায়।কেননা আগে থেকেই ভক্তদের বিশাল এক্সপেকটেশনের একটা ব্যাপার
রয়েছে।পরিচালক ক্রিস কলম্বাস সফলভাবেই সেই চ্যালেন্জ উতড়েছিলেন বলা
যায়।পরবর্তী ছবিটিও তিনিই পরিচালনা করেন।তবে তৃতীয় পর্বে পরিচালক বদল
হয়,আলফেনসো কাউরন আসেন ক্রিস কলম্বাসের জায়গায়।সব মিলিয়ে চারজন পরিচালক
কাজ করেছেন হ্যারি পটার সিরিজে।ঘন ঘন পরিচালক বদলের একটা প্রভাবও পড়েছিল
সিরিজটির উপর..
বইয়ের পুরো কাহিনীকে মুভিতে তুলে ধরা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ।তাছাড়া
চলচ্চিত্রের একটা বানিজ্যিক দিক রয়েছে সেটিও মাথায় রাখতে হয়।তাই বইগুলো
পড়া না থাকলে হ্যারি পটারের কাহিনী বুঝতে একটু সমস্যা হবারই কথা।তারপরেও
জাদু-বাস্তবতার অন্যরকম ঐন্দ্রজালিক জগতে ডুব দেওয়ার জন্য মুভিগুলো
যথেষ্ট।হ্যারি যখন একদম শিশু তখন ভয়ংকর কালো জাদুকর লর্ড ভোল্ডেমর্ট
হ্যারির বা-মাকে হত্যা করে।যদিও টার্গেট ছিল হ্যারি নিজেই কিন্তু
দৈবক্রমে হ্যারি বেঁচে যায় আর কিলিং কার্স উল্টো ভোল্ডেমর্টের উপরই আঘাত
হানে।অনাথ হ্যারি আঙ্কেল-আন্টি আর এক কাজিনের সাথে অবহেলার মধ্যে দিয়ে বড়
হতে থাকে।এগারোতম জন্মদিনে সে জানতে পারে যে সে একজন জাদুকর।পা রাখে
হগোয়ার্টসের অন্য রকম জগতে।কাছের বন্ধু হিসেবে পায় রন আর
হার্মায়েনীকে।তাদেরকে নিয়েই হ্যারি একের পর এক বিপদ মোকাবেলা করতে
থাকে।অনাথ হ্যারি নিজের পরিবারকে খুঁজে পায় ওয়েসলী ফ্যামিলির
মাধ্যমে।সিরিজটির যে জিনিসটি আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষনীয় লেগেছে সেটি হল
এর চরিত্রগুলো।প্রত্যেকটি চরিত্রকেই বাস্তবে খুজে পাবেন আপনি।বন্ধুত্বের
মাঝেও যে একটা ইর্ষাবোধ কাজ করে গবলেট অব ফায়ারে রনের মধ্যে সেটা দেখতে
পাবেন।আবার ম্যালফয়ের মাঝে খুজে পাবেন স্কুল কলেজের সেই ব্যাড বয়,যে কিনা
সবসময় আপনার সাথে ঝামেলা পাকাতো।ওয়েসলী পরিবারটি হয়তো তেমন ধনাঢ্য
নয়,কিন্তু একটি সুখী পরিবারেরই বাস্তব প্রতিচ্ছবি।আরেকটা দিক উল্লেখ না
করলেই নয় তা হলো চরিত্রগুলোর মেন্টাল গ্রোথ।বয়সন্ধিকালের স্বাভাবিক
ব্যাপারগুলোও মূল কাহিনীর পাশে অসাধারনভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে,বিশেষ করে
হাফ-ব্লাড প্রিন্সে।আর এইসব দিকগুলোই মূলত সিরিজটির প্রতি মানুষের
আকর্ষনের প্রধান কারন।আর একদম শেষের দিকে সেভেরাস স্নেইপের রহস্য
উন্মোচনের টুইস্টটি ছিল আমার দেখা অন্যতম সেরা।
মেকিং এর ব্যাপারটা ধরলে হ্যারি পটার সিরিজ যথেষ্ট সন্তোষজনক বলা
যায়।আমার মতে প্রিজনার অব আজকাবান,হাফ ব্লাড প্রিন্স(স্পেশালী
সিনেমাটোগ্রাফির জন্য) আর শেষ মুভিটিই সবচেয়ে ভালো মনে হয়েছে।তবে ডেথলী
হ্যালোজ পার্ট টু’র রানিং টাইম আরেকটু বেশি হলে ভালো লাগত।ঘন ঘন ডিরেক্টর
বদলের কারনে মুভিগুলোর নির্মানে যে ভিন্নতা রয়েছে সেটি চোখে পড়ার মতো।আর
অভিনয়ের কথা ধরলে প্রধান তিনজনের মধ্যে এমা ওয়াটসন সবচেয়ে সেরা।সাচ এ
ট্যালেন্টেড এন্ড বিউটিফুল গার্ল!জাস্ট লাভ হার!আর ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ
নামটি তো একরকম চাপাই পড়ে গেছে ‘হ্যারি পটার’ নামের আড়ালে।তবে অভিনেতা
হিসেবে রূপার্ট গ্রিন্টকে বেটার মনে হয়েছে আমার কাছে।ডাম্বলডোর চরিত্রে
রিচার্ড হ্যারিসন অভিনয় করেছেন প্রথম দুইটিতে আর বাকিগুলোতে মাইকেল
গ্যাম্বন।দুইজনকেই ভালো লেগেছে।আর একজনের কথা না বললেই নয়,তিনি হলেন এলান
রিকম্যান দ্য সেভেরাস স্নেইপ।কিছুই বলার নেই তার ব্যাপারে।ডেথলী হ্যালোস
পার্ট টু তে তার অভিনয় চোখে লাগার মত।
বেশ কয়েকটি নমিনেশন পাওয়ার পরও হ্যারি পটার সিরিজ একটাও অস্কার পায়
নি।বাট হু কেয়ারস?!হ্যারি পটার যুগ যুগ ধরে টিকে থাকবে ভক্তদের
কম্পিউটারের হার্ড ডিস্কের আলাদা করে রাখা একটি ফোল্ডারে…..