“উঠবি নাকি দিলাম লাত্থি!”
সকাল বেলা সকালে কেউ এই ঝাড়ি খেয়ে ঘুম থেকে ওঠে? আম্মু হলেও একটা সুবিধা ছিল, একটু এপাশ ওপাশ করে বলা যেত, “আম্মু আজকে ক্লাস নাই।” তখন আমার ভোলাভালা মা টা ভাবত, “থাক ছেলেটা এত কষ্ট করে, এখন বরং একটু ঘুমাক। ক্লাস যেহেতু নাই, ঘুমাক না একটু।” কিন্তু দূর্ভাগ্য আমার সময়টা এখন আমার না। আম্মু নাই। নাই মানে এইখানে নাই আর কি! এখনও অতটাও দূর্ভাগা হয়ে পরি নাই। জীবনটা এখনও সুখের, দুঃখের দেখা কিংবা ছোট্ট ছোঁয়াও এখনও গাঁয়ে লাগে নি। হয়তো এর পিছনে বাবা-মায়ের একটা বিশাল রকমের ষড়যন্ত্র আছে। দাদা মুখে শুনেছিলাম জন্মের পর আব্বুর প্রথম কথাই নাকি ছিল, “এই ছেলেকে একটা মুহূর্তের জন্য কষ্ট করতে দিব না। যতদিন আছি এইটাই আমার সব।” আম্মু নাকি শুনে মুচকি হেসেছিল। বোধহয় ভাবছিল, এইটা সব হয় কিভাবে? তারাও তো আছে, নাকি? কিন্তু বড় হতে গিয়ে দেখা গেল আসলেই বাবার জীবনে আমি ছাড়া কেউ নেই। সকালে আমি, বিকালে আমি, সবসময় আমি। আম্মুর জীবনেও তাই। এক আমি ছাড়া যেন তাদের জীবনে কিছুই নাই। আমিও একমাত্র ছেলে হওয়ার পুরো ফায়দা তুলে নিতাম, নিজের মত পড়াশোনা, বই এর পর বই, একগাদা খেলনা, কি ছিল না আমার। তবে সব কিছুর একটা শেষ থাকে। আমার সেই রাজার হালের শেষ ছিল ইন্টার পাশ করার পর পরই। কুষ্টিয়া ছেড়ে ঢাকায় পড়তে আসবো। আব্বু আম্মু তো পারলে আমার সাথে পুরো বাসাটা পাঠিয়ে দেয়, আব্বু তো আম্মুকেও পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিল কিন্তু আমি না করলাম। কারণ আব্বুর বেশি দরকার আম্মুকে, একটা সময় ছিল যখন আমার দরকার ছিল তাদের সবচেয়ে বেশি কিন্তু এখন তাদের দুইজন দুইজনের বেশি দরকার, আমাকেও দরকার তবে একটু ছাড় দিয়ে।
ঢাকার প্রথম দিনটা ছিল অমানুষিক। এই ঢাকায় পা দেওয়ার পর আমার প্রথম অনুভূতি, “এখানে মানুষ বাস করে? ক্যামনে ম্যান?” সকাল আটটার পর বাসে ওঠা যায় না যেন একটা টিনের ক্যানে চাপাচাপি করে মানুষ নামের প্রোডাক্ট ভরা হয়েছে, রাস্তায় হাটা যায় না, উপরে সূর্য ফ্যাল ফ্যাল করে হাসে, জীবনটা ছাই! তারপরও ঐ সব কিছু পার হয়ে নিজের মেসে গিয়ে যেই উঠলাম, মেসের চেহারা দেখে আমার চেহারার পানি শুকিয়ে গেল। একটা শীর্ণ জীর্ণ চকি, হ্যাঁ এইটাকে আর যাই হোক খাট বলা যায় না। পাশে একটা ঘুনে ধরা টেবিল আর তার পাশে আধ খাওয়া একটা ঠ্যাং ভাঙ্গা চেয়ার ! মনে মনে নিজেকে কয়েকবার গালি দিলাম যে কেন আগে এসে দেখে যাই নাই। পাশের বাড়ির আঙ্কেলের কথা শুনে কি বিপদে পরলাম আমি! এইখানে আমি থাকব! আমি? নাহ বাবা, জীবনে সব ছাড়তে পারি কিন্তু ঘুম আর পড়ার আরাম! কোনভাবেই না। আমার রুমে আর কিছু লাগবে না, ভালো একখানা আরাম করে ঘুমাবার মত বেড আর একটা পড়ার টেবিল সাথে একটা বই এর সেলফ! ব্যাস! আমার জীবনে আরাম আর আরাম! এই ভাবতে ভাবতে কল্পনার রাজ্যে যেই যাবো অমনি কে একজন বলে উঠল, “পাশের বেডের চাদরটা আমার, নিজেরটা বিছাইয়্যা আমারটা ফেরত দিয়া দিও!” ঐ একটা কথাই। এরপর সোজা বের হয়ে আসলাম মেস থেকে। এইখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না। পুরান ঢাকায় ছোট মামার এক বন্ধুর বাসা। ছোট বেলা থেকেই চিনতাম। ঠিকানাটা সাথেই ছিল। সোজা গিয়ে তার দরজায়, “মামা, একটা এক রুমের বাস খুঁজে দেন মামা।”
বাসা পাওয়া গিয়েছিল। সেই বাসায় আমার একমাত্র ফ্লোরিং করা বিছানার উপরে আমি আরাম করে ঘুমাচ্ছিলাম যখন পীযূষ হারামিটা আমাকে লাত্থি দেওয়ার ভয় দেখাচ্ছিল।
“হইছে কি তোর আকাশ? উঠবি না? আজকে ক্লাস কয়টায় ভুইলা গেছস! তুই গেলে চল। নাইলে আমি আর দুই মিনিটও বসুম না।”
“আর তিন মিনিট ঘুমাই দোস্ত!”, আমার চোখে মরার ঘুম।
“সিরিয়াসলি লাত্থি খাবি, সিরিয়াসলি!”
“আচ্ছা, উঠি!”
পীযূষ, আমার ঢাকা শহরের একমাত্র এবং ভার্সিটির অনেকের মাঝে একজন উপকারী দোস্ত। ঢাকা শহরের একমাত্র কারণ ওকে ছাড়া আমি এই শহরে বাহিরে বের হই না। আমাকে যেমন এক চৌরাস্তায় ছেড়ে দিলে আমি ঘুরতে ঘুরতে আরেক চৌরাস্তায় গিয়ে পরব, ও হচ্ছে আমার উল্টা। ও পুরো শহর ভেজে খায়। আমি যেমন দুই চোখে ঢাকা শহরকে দেখতে পারি না, ও ঠিক উল্টোটা। ঢাকা শহর হচ্ছে ওর প্রাণের শহর। লালমনিরহাটের পীযূষের ঢাকা পছন্দ হওয়ার অনেকগুলো কারণের একটা এখানের বাতাস দূষিত! আর তাই এই দূষিত বাতাসকে আরও দূষিত করতে ওর গাঁয়ে লাগে না। একটার পর একটা সিগারেট, যেন সিগারেট ওকে এইবার বলবে, “তুই আমারে ছাড়বি, নাইলে কোনদিন না জানি আমি তোরে ছাইড়া দেই।” মাঝে মাঝে বড় বড় ফিলোসফি ঝাড়ে, “নাহ রে আকাশ এইবার আর না। শুধু শুধু জীবনটারে নষ্ট করে কি হবে বল? সিগারেটটা আজকেই শেষ! কিন্তু বেচারা হচ্ছে আউনিক দেবদাস, সে না পারে সিগারেট ছাড়তে না পারে তার পারুকে ছাড়তে, ওহ তার পারু হচ্ছে তার কইচ বয়সের প্রেমিকার ডাক নাম (অবশ্যই তার দেওয়া, এই যুগে কোন বাবা-মা তার মেয়ের নাম পারু রাখবে! কি দরকার দেবদাসের মত ছেলের পাল্লায় পরা!)
“দোস্ত চিন্তা করতেছি একটা নতুন বিজনেস দিমু”
“কি বিজনেস?”
“সার্ভিস আর কী!”
“কি সার্ভিস আবার! কাহিনী কী?”
“ছ্যাকা খাওয়ার পরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়া। মানুষজন বুঝে না। আরেহ ব্যাটা, পোলাপাইন গুলা ড্রাগস ধরে ক্যান ক তো? মোস্ট অফ দ্য কেস, ব্যাটা ছ্যাঁক খায়। তো তারে ড্রাগ ছাড়ানোর চেয়ে ছ্যাকা মুক্তি করানো বেটার না!”
“হুম বুঝলাম!”
“কি বুঝলি আকাশ দোস্ত!”
“তোর জন্য পাবনায় একটা সীট বুকিং দিতে হবে।”, আকাশ হাসতে থাকে।
“তুইও বুঝলি না! ধ্যাত শালা!”
“আচ্ছা না দোস্ত বল, কি জানি করবি?”
“কিচ্ছু না, মইরা যা।”, পীযূষ এইবার চুপ। এইবার আর কথা বলে না আকাশ। এখন পীযূষ অনেকক্ষণ কিছু একটা ভাববে, পরে একা একা ঠিক হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে আকাশ ভাবে এই ছেলেটার আসল দূঃখ কে? ওর মা, যে কিনা খুব ছোটবেলায় ওকে রেখে চলে গেছে আল্লাহর কাছে, নাকি ওর বাবা যে বছরে এক বারও ভাবে না ছেলেটা কোথায় আছে, নাকি পারু, যার জন্য আস্তে আস্তে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে ও! আকাশ বুঝে না, কষ্টটা কোথায়! হয়তো ওটা বোঝার ক্ষমতা ওকে দেওয়া হয় নাই।
“আচ্ছা আকাশ, তুই প্রেম করবি না?”
“এই নিয়ে কয়বার প্রশ্নটা করলি তুই?”
“যতবারই করি, তুই তো উত্তর দেস না।”
“কই উত্তর দেই না? প্রতিবারই তো আমি বলি না, প্রেম করবো না!”
“এইটা বিশ্বাস হয় না। প্রেম করবি না ক্যান?”
“আমার সাথে যায় না। আমি হচ্ছি বই পাগল ছেলে। আমার প্রেমটা হতে হবে বই এর মত।”
“বুঝি নাই!”
“দেখ, এখনকার ছেলে মেয়ের একটা কমন সমস্যা ওরা প্রেমটাই বোঝে না। অথবা এই জেনারেশনের প্রেমের সংজ্ঞা পাল্টে গেছে। আমি এখন প্রেম দেখি না মানুষের মাঝে। কেমন যেন একটা মিউচুয়্যাল বোঝাপড়া। আবার একটু মতের মিল হল না, ধুম ধাম রেখে চলে যাবে। প্রযুক্তির দিন, সকাল-সন্ধ্যা কথা বলে, চ্যাটিং করে প্রেম হয়ে যাচ্ছে পানসে। এখন এদের কারো কাছে কেউ মূল্যবান না। সারাদিনের সবটা সময় একজনের সাথে কাটালে একসময় তাকে বিরক্তি লাগতে থাকে, চার্মটা চলে যায় আর এদের প্রেমও জমে না। এরা দুই দিনে ক্র্যাশ খায়, সাত দিন পেছনে ঘোরে এরপর দশমাস প্রেম করে, এরপর থেকেই প্রেম মরতে থাকে একসময় শেষ! আমার বাপ এইসবের কোন ইচ্ছা নাই।”
“তা বুঝলাম, যদিও তোর সব কথার সাথে একমত না, তাও বাদ দেই। বাট তাইলে তুই কেমন প্রেম করতে চাস?”
“সিম্পল, আএকটু আগের যুগের মত। একজন আরেকজনকে দেখার জন্য অপেক্ষা করে থাকবে। ঐসব ভার্চুয়াল জগতে না, বাস্তব জীবনে মেয়েটা দাঁড়ায় থাকবে, আমি একটা আধমরা যুবক হাতের পেছনে একটা ছোট্ট গোলাপ নিয়ে ছুটতে ছুটতে আসবো। সে অভিমান করবে, আমি মান ভাঙ্গাবো! মাঝে মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে বাসার নীচে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো। একটা দুইটা চিঠি থাকবে। আমি অসুস্থ থাকলে কোন এক দুপুরে ধুম ধাম আমার বাসায় এসে পরবে এক বাটি ভাত নিয়ে . . .”
“থাম! তোর প্রেম তুই কর! বেটার অপশন কই মামা? চান্দের দেশে চইলা যা। ঐখানে এরকম দুই একটা পাইলে পাইতেও পারোস বাট এইটা ফাস্ট যুগ তোর মত চিন্তা করার মত কেউ বইসা নাই!”
“আমিও তো তাই বললাম! এর জন্যই তো বললাম প্রেম করবো না।”
“করিস না”
গল্পটা এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো। আমি প্রেম করবো না, এইতো কাহিনী শেষ। কিন্তু মাঝে মাঝে মানুষের জীবনে কিছু টুইস্ট থাকে। যা সে জীবনেও কল্পনা করতে পারে না, তাই ঘটে যায় হুট করে। আমারটাও ব্যতিক্রম না। হুম, প্রেমে পরে গেছি। শুধু পরি নাই, পরে খাবি খাচ্ছি। ঝামেলা হচ্ছে এ আমার গল্পের নায়িকার মতই। যাকে দেখলে মনে হবে শরৎ চন্দ্রের উপন্যাস থেকে বের হয়ে আসছে। এখনকার মেয়েদের সাথে যার চালচলন কোনভাবেই যায় না। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা নেই কিন্তু জ্ঞানী জ্ঞানী একটা ছাপ স্পষ্ট। বই যে পড়ে তা তো বলাই বাহুল্য। মাঝখান থেকে গান ও গায় ! একেবারে পারফেক্ট! রিক্সা দিয়ে আসে, আলাদা কোব চাকচিক্য নেই, সাদা সিধে। কারও আগেও না, কারও পিছেও না। মনে হয় ওর জীবনে শুধু ঐ একা। ঝামেলা বাঁধল যখন আমার মনে হল আমিই সেই মানুষ যার জন্য সে একা ! কিন্তু বেচারা আমি। আমার বোঝা উচিৎ ছিল, আমার প্রেম কাহিনী। একটা টুইস্ট তো থাকবেই। যেই মেয়ে সাতদিনের মাথায় ডেট করতে চায় আমি তো আর তার প্রেমে পরবো না! কিন্তু তাই বলে এক বছর! পাক্কা এক বছর লাগলো ওর সাথে আমার প্রথম কথা বলতে! প্রায়ই চাইতাম ওর সাথে কথা বলি। ক্যাফের পাশে কিংবা ওদের ডিপার্টমেন্টের বারান্দায় মাঝে মাঝেই ওকে দেখতাম কিন্তু কথা আর বলা হয় নি। ঐদিন সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলাম। আমার নায়িকার নামটাই জানি না আমি এখনও! কিন্তু তাকে নিয়ে আমার মাথার মাঝে বেশ কয়েক হাঁড়ি কবিতা হয়ে গেছে।
“স স স স শুনছেন..”, শুরুটাই তোতলামি! ধুর ! শেষ সব শেষ।
“জ্বী!”
আমি শেষ! আমি নাই। আমার চারপাশে কিছু একটা হচ্ছে। এইটা মানুষের গলা! কিভাবে কী? জ্বী তো বলে নাই যেন সুরেলা কন্ঠে আমার কানের কাছে কি একটা বলছে।
“আমি আপনাকে ভালোবাসি।”
এরপর ঝিরঝির একটা শব্দ শোনা যায়। এইটা হচ্ছে আমার লাইফের এন্টেনার ঝিরঝির শব্দ। টিভি নষ্ট হওয়ার আগে একটা কাপুনি দিয়ে নষ্ট হয় যেমন আমার লাইফ তখন ঐ এক বাক্যে শেষ। গাধার মত দ্বিতীয় বাক্যে ভালোবাসার প্রকাশ একমাত্র আমি গাধাই করতে পারি। যাকে বলে শুরুতেই হাঁড়ি ভেঙ্গে দিছি। সে একটা কথাও না বলে সোজা ক্লাসরুমে চলে গেল। আমি কোনমতে পরি মরি করে ছুট!
এরপরে গুনে গুনে আরও তিন মাস সাত দিন। হঠাৎ দেখি আমার সুকন্ঠী আমার ডিপার্টমেন্টের বারান্দার সামনে। সাহস পাচ্ছি না সামনে যাবার। কাউকে খুঁজছে মনে হয়। হঠাৎ দেখি পীযূষ আসছে এইদিকেই। মেয়েটাও আবার ওকেই ডাক দিল। দুইজনের মাঝে কি যেন কথা হচ্ছে। আমি শুনতে পাই না। মনে মনে শালা দেবদাসের বাচ্চাকে কয়েক হাজার গালি দিয়ে ফেলছি। “এ্যাহ! পারু ! এইখানে পর নারীর সাথে টাঙ্কি মারে আবার পারু! দাঁড়া খালি!” কিন্তু দুইজন আমাদের ক্লাসের দিকে আসে কেন? এইরে এক্ষুণি মেয়েটা আমাকে দেখবে আর সাথে সাথে একটা সপাট করে আওয়াজ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। পীযূষের প্রেমটাও শেষ হয়ে যেতে পারে। আমি ভাগি! যেই কথা সেই কাজ! জাস্ট হাওয়া হয়ে গেলাম পেছনের দিকের দরজা দিয়ে। আমার সুকন্ঠীকে আর দেখা হলো না।
“কি রে শালা দেবদাসের বাচ্চা!”
“মামা, ক্ষেপা ক্যান? কাহিনী কী?”
“কাহিনী! মাইরা তোরে….”
“কি হইছে কবি তো!”
“কি হইছে? কি হইছে? ঐটা কে ছিল তোর সাথে?”
“আমার সাথে? কে? সাইফুল?”
“লাত্থি দিয়ে তোকে ব্যাঙ বানামু শালা!”
“আজীব! কে কইবি না?”
“ঐ মেয়েটা কে?”
“ওহ! রুদমিলা! হুম ইংরেজীতে পড়ে। পরিচিতা। এক সাথে কবিতার কিছু ক্লাস করেছি। কোন এক ছেলেকে খুঁজতে আসছিল, বর্ণনা শুনে তো মনে হইল তোরে খোঁজে। কিন্তু তোরে ক্যান খুজবো! তাই শিওর করার জন্য ক্লাসে নিয়ে আসছিলাম বাট তোরে পাইলাম না….”
“ওকে কই পাবো এখন?”
“কি জানি, ক্যাফে তে দেখ। কিন্তু ক্যান…..”
ঐ দেবুর কথা আর কে শোনে। আমি দৌড়! খালি দৌড় নাকি, যাকে বলে রোমিওর সেই দৌড়। জুলিয়েটের বাসায় গিয়ে ধরা খাওয়ার পরের সেই দৌড় খালি পার্থক্য একটাই আমি পালচ্ছি না খুঁজছি।
“এই যে শুনছেন।”
“হুম বসুন!”
“একেবারে বসতে বলে দিলেন যে?”
“বসুন আগে।”
আমার আত্মার পানি শুকিয়ে গেছে তাও বসলাম।
“আমাকে খুজছিলেন?”
“এই ক্যাম্পাসে এখন পর্যন্ত আমাকে দ্বিতীয় বাক্যে ভালোবাসি একজনই বলেছে সো সেই হিসেবে আপনার সম্পর্কে জানার আগ্রহ আমার থাকতেই পারে, এর জন্যোই খুঁজছিলাম। পাছে আবার আপনার মনে খৈ না ফুটে তাই আগে ভাগেই জানিয়ে দেই।”
খাইসে রে! এ তো সাংঘাতিক! উহু বাবা আকাশ, ভাগো। “আচ্ছা তাহলে আসি।”
“নাহ, আসবেন কেন? বসুন। এক কাপ চা খান?”
“আরেকদিন?”
“নাহ আরেকদিন এই চা খাওয়ার ইচ্ছা আমার নাও থাকতে পারে।”
এইটা জল্লাদ, পালা আকাশ। সুকন্ঠী মানেই সুভাষিণী নয়! পালা।
“আচ্ছা বসি।”
“হুম, আবুল মামা দুই কাপ চা দিয়ে যাও তো! আচ্ছা এইবার বলেন ভালোবাসি বলেই পালালেন কেন? কি ভেবেছিলেন, এক বাড়িতেই কেল্লামাত?”
“নাহ মানে, আমি আসলে বুঝি নি।”
“কি বোঝেন নাই? এই স্টাইলে ভালোবাসি বললে আমি পটবো না, নাকি যা বলেছেন সেটাই বোঝেন নাই?”
“আমি আসি?”
“উহু চা তো খেয়ে যান!”
“আমি পানি খাবো।”
“আচ্ছা তাও খান।”
“নাম কী?”
“আকাশ, আপনি?”
“রুদমিলা”
“আচ্ছা আপনি তো বদরাগী না, কিন্তু এমন ভাব করছেন কেন?”
“কে বলল আপনাকে আমি বদরাগী না?”
“আপনার চোখ কথা বলে, কিছু মানুষের চোখ দেখে সব কিছু বোঝা যায়। তারা চাইলেও নিজেদের লুকাতে পারে না। এই যেমন এই মুহূর্তে আপনি আমার কাছ থেকে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করছেন একটা রাগী মুখোশ দিয়ে….”
এরপরের কনভার্সেশন শোনার আর দরকার নেই। মনে হতে পারে এরপর বোধহয় রুদমিলা আমার কথায় পটে একাকার হয়ে গেছে, কিন্তু বাস্তব বড়ই কঠিন! নিজে গল্প লিখলে হয়তো এখন একটা সুন্দর কাহিনী বানিয়ে বসতাম কিন্তু দূর্ভাগ্য আমার, আমার জীবনে এই কাহিনী হল না। তবে এতটাও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। সেইদিন পটে নি কিন্তু শুরুটা ঐদিনই ছিল। এরপর অনেকদিন একসাথে বসা, কথা বলা আর রুদমিলার সাথে এরপর আমি প্রেম করেছি উমম তিন বছর চার মাস সতের দিন এবং কন্টিনিউ হচ্ছে। আমরা দুইজনই ভিন্ন ধাঁচের। আমি যেমন ওকে দেখি আমার গল্পের সেই নায়িকাটার মত, আমিও যেন কিভাবে কিভাবে ওর সেই নায়কটা হয়ে গেছি, দুইজন মাঝে মাঝে গলা ফাটিয়ে ঝগড়া করি। ক্যাফেতে বসে চা এখনও খাই, তবে আগের মত গলা শুকায় না আমার। একটু অভ্যস্ত হয়ে গেছি। ও আসলেই বদরাগী না, তবে ভীষণ অভিমানী। আর কিছুদিনের মাঝেই হয়তো বিয়েটা হয়েই যাবে। তবে শুরুতেই দুইজন দুজনকে কিছু শর্ত দিয়ে নিয়েছি, প্রথমত জামাই-বউ হবো না। আগে যা ছিলাম তাই, একটু হয়তো পাল্টাবে কিছু কিন্তু দিন শেষে যেন আকাশকে পায় রুদমিলা, আর রুদমিলাকে আকাশ কারণ অনেক কষ্টে এই আধুনিক যুগে একটা প্রাগৈতিহাসিক প্রেম কাহিনী হয়ে গেছে, এটাকে একটা গল্পের মত এন্ড না দিলে কি হয়?
:wallbash:
আফা ! মাথা বাইড়ায় ভাইঙ্গালবাইন নাকি? 😯
yup after reading this :haturi:
good starting. but that so called happy ending was really hurtful. ur practical writings are better, i like those more. 🙁