পৃথিবীতে সাধারণ মানুষ বলতে কোন কিছু নেই। মানুষ মানেই অসাধারণ! আগুন যেমন কখনও ঠাণ্ডা হয় না, মানুষ কখনও সাধারণ হয় না! প্রত্যেকটা মানুষ তার নিজের জগতে অনন্য! যে মানুষগুলো নিজেদের সাধারণ বলে দাবী করে, আসলে তারাও খুব অসাধারণ রকমের সাধারণ!
পৃথিবীতে বসত করা সবগুলো জীবসত্তার মূল গঠনে কোন তফাৎ নেই। প্রত্যেকেই একই রকম বেইজ পেয়ারে গঠিত নিউক্লিক এসিড অণু দিয়ে তৈরি! সবচেয়ে সরল প্রাণীটির নিউক্লিক এসিড যে বেইজ পেয়ারগুলো তৈরি, সবচেয়ে জটিল প্রাণীটিও একই বেইজ পেয়ার নিয়ে তৈরি! কিন্তু এই বেইজ পেয়ারগুলোর বিন্যাস, সমাবেশের উপর ভিত্তি করেই এই পৃথিবীর জীবগুলোর মাঝে একটা শ্রেণীবিভাগের সূত্রপাত হয়েছে। এই শ্রেণীবিভাগে সবচাইতে উঁচু আসনটাতে Homo sapiens বা মানুষরা, শারীরিকভাবে যারা অন্য অনেক প্রাণীর চাইতেই বেশ দূর্বল। প্রকৃতির এই শ্রেণীবিভাগে মানুষের সর্বোচ্চ আসনে অসীন হবার একমাত্র কারণ তার নিউক্লিক এসিড অণুতে বেইজ পেয়ারগুলোর অসাধারণ সজ্জা আর বিন্যাস! মানুষ তার সৃষ্টির একদম মূল থেকেই অসাধারণ! মানুষকে চেষ্টা করে অসাধারণ হতে হয় না, অসাধারণত্ব নিয়েই সে জন্ম গ্রহণ করে!
মানুষকে বলা যেতে পারে সৃষ্টির সবচাইতে ধূর্ত, অসৎ, স্বার্থপর প্রাণী। আবার সৃষ্টির সবচাইতে ভালো, দায়িত্বশীল, পরোপকারী প্রাণীটির নামও মানুষ! যে মানুষটাকে হয়ত তুমি ‘একজন ভালো মানুষ’ হিসেবে চেন, তার হৃদয়েও একটা মোটা কালো দাঁগ থাকাটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। আবার ‘ভয়ানক খারাপ মানুষ’ হিসেবে যে মানুষটাকে দেখেই লোকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, খুঁজে দেখ, তার মনেও এমন ভালো কিছু আছে, যা হয়ত ‘একজন ভালো মানুষ’র মনেও তুমি খুঁজে পাবে না! ভালো আর মন্দের এমন অসাধারণ মিশেল সৃষ্টিজগতের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না!
অসাধারণ প্রাণীর বুদ্ধিমত্তা অসাধারণ রকমের। বুদ্ধিমান প্রাণীর প্রধান বৈষিষ্ট্য হল সে কখনও নিজের জীবনের প্রতি হুমকিস্বরুপ, এমন কাজ করবে না। কিন্তু মানুষ তার ব্যতিক্রম। নিতান্ত অপরিচিত একটি শিশুর কান্না শুনে, এমনকি সামান্য একটি কুকুর ছানার জীবন বাঁচাতেও বিশাল আগুনের শিখায় ঝাপ দিতে পারে মানুষ – সে তখন জীবনের তোয়াক্কা করে না! অসম্ভব বুদ্ধিমান একটি প্রাণী হয়েও মানুষ ব্যতিক্রম আর সব বুদ্ধিমান প্রাণী থেকে; প্রতিনিয়ত এমন প্রকাণ্ড বোকামী করতে পারে বলেই মানুষ অসাধারণ!
অসাধারণ প্রাণীর আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল তার চিন্তাধারা। অসাধারণ প্রাণীর চিন্তাধারা অসাধারণ রকমের হয়। স্বাভাবিক চিন্তাধারা বলে, বাস্তবতাকে মেনে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। মানুষ অসম্ভব বুদ্ধিমান একটি প্রাণী। কিন্তু সে বাস্তবতাকে মেনে নিতে চায় না। অনিবার্য পরিণতির সামনে দাঁড়িয়েও মানুষ চিন্তা করতে থাকে, বাস্তবতাকে পরাজিত করে দেবার পথ খুঁজতে থাকে সে। বাস্তবতাকে জয় করার এই চিন্তাধারা কেবল মানুষের মাঝেই দেখা যায়। জগতের সকল প্রাণীই বাস্তবতাকে নির্মোহভাবে গ্রহণ করতে চেষ্টা করে, কিন্তু মানুষ তার ব্যতিক্রম। যতক্ষণ তার দেহে প্রাণের সঞ্চালন আছে, সে বাস্তবতার সাথে লড়াই করবার চেষ্টা করতে থাকে। বাস্তবতাকে চ্যলেঞ্জ ছুড়ে দেবার এমন দুঃসাহস জগতে আর কারও নেই, মানুষের আছে। আর সেজন্যেই মানুষ অসাধারণ!
মানুষ বড্ড অযৌক্তিক রকমের অসাধারণ একটা প্রাণী। প্রকৃতি মাঝে মাঝে এমন অযৌক্তিক কাজ করে, অযৌক্তিক জিনিস সৃষ্টি করে। নিজের জন্যেই প্রকৃতি এমনটা করে! এই অযৌক্তিক কাজগুলো না করলে প্রকৃতির ভারসাম্য থাকে না! আপন ভারসাম্য রক্ষার্থে প্রকৃতির সবচেয়ে অসাধারণ সৃষ্টিটির নাম মানুষ!
(y)
ইন্সপিরেশনাল লেখা! সবগুলা প্যারাই দারুণ। স্পেশালি, তিন নাম্বার প্যারাটা ‘চিন্তা-জাগানিয়া’, চারের শেষাংশ অনুজিয়ান এবং পাঁচ নাম্বার প্যারাটা মোটিভেটিং! 😀