বিয়িং হিপোক্রেট

১.
আজকের প্রথম আলোর খবর অনুযায়ী রংপুরের দুইটি উপজেলায় গত এক সপ্তাহে অতিরিক্ত স্টেরয়েড ও হরমোনের কারণে মারা গিয়েছে ৩০টি গরু। তাহলে বাংলাদেশের ৪৮৯টি উপজেলায় অতিরিক্ত হরমোন বা স্টেরয়েডের কারণে কতটি গরু মারা গেছে? আর, বেঁচে আছে যেগুলো।  যেসব গরুকে এভাবে মোটা করা হচ্ছে, সে সব গরুর মাংস খেয়ে কিডনি বা লিভার ভয়াবহ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানুষের।
কিন্তু, গরু বিক্রেতাদের তাতে কি-ই বা আসে যায়।
২.
অফিসের কাজে আমার মাঝে মাঝে হেড অফিস থেকে ফ্যাক্টরি যেতে হয়। মিরপুর বেড়ীবাঁধ দিয়ে যাওয়ার সময় হাতের বামে পড়ে তুরাগ নদী। বর্ষাকালে সে নদী এতো চমৎকার রূপ ধারণ করে বলার মতো না। কিন্তু, বর্ষা এলেই দেখা যায় তুরাগের তীর ধরে একের পর এক জায়গায় বালু ফেলা হচ্ছে। গরম এলেই বোঝা যায়, এক ঋতুতে কতটা জায়গা দখল হয়ে গেলো। গ্রীষ্মের শীর্ণ নদীটা দেখলে দখলদারিদের প্রতি ভয়াবহ বিতৃষ্ণায় ভরে যায় মন। ভরতে ভরতে একটা সময় নিশ্চয়ই মূল প্রবাহ বন্ধ করে দেখা হবে নদীটার।
এই দুর্মূল্যের বাজারে একটা নদীর চেয়ে সেখানে কয়েক লক্ষ মানুষ থাকার প্লট করে ফেলাই মনে হয় উত্তম।
৩.
আমরা মাছের সাথে ফর্মালিন খাচ্ছি। ফলের সাথে খাচ্ছি কার্বাইড। মসলায় কাপড়ের রঙ ও ইটের গুড়া মেশানোর এক অদ্ভুত ফর্মুলাও আমাদের তৈরি। দোকানে খাবার ভাজার সময় মেশানো হচ্ছে মবিল। এমনকি চালের সাথে মেশানো হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক। সামনের দিনগুলোতে ভয়াবহভাবে এই দেশের জনগোষ্ঠীকে জড়িয়ে ধরবে ভয়াবহ সব রোগ।
কার-ই বা কি যায় আসে তাতে? যাদের পকেট ভরার তাদের পকেট ভরলেই হলো।

৪.
এবার দুর্গাপূজায় ১৫টি জেলায় ২২টি মণ্ডপ ভাংচুর হয়েছে। একজনকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে দেখলাম, “৯৭% মুসলিমের দেশে পূজা করতে দেয়া উচিত না।” এ তো শুধু দুর্গাপূজা। যে কোন ইস্যু তৈরি হলেই তো দেখি কিছু লোক হৈ হৈ করে ভেঙে দিয়ে আসে মন্দির।
নিয়মিত পত্রিকায় খবর দেখি, উপজাতিদের উপর নির্যাতনের খবর। এসব সহিংসতার কোন বিচার হয় বলে তো চোখে পড়ে না।
একটা সফল জাতি কখনো ধর্মের বা গোত্রের ভিত্তিতে কি হয়? পাশাপাশি থাকতে পারাটা একটা জাতির জন্য কি অনেক গুরুত্বপূর্ণ না?

৫.
ছোট্ট একটা শিশুকে আমরা শেখাই, “এটা তোমার, অন্য কাউকে দেখিয়ো না কিন্তু।” স্কুলে শেখাই, “সবাই সবার প্রতিযোগী। অন্যকে পিছিয়ে সবসময় এগিয়ে যেতে হবে।” রাস্তায় একজনকে মারা হলে আমরা ভাবি, “আমার কাউকে তো কিছু করা হচ্ছে না।” আমরা শুধু নিজের কথাই ভেবে যাই। আমাদের শিশুদেরও শুধু নিজেদের কথাই ভাবতে শেখাই। অন্যরা চলে যাক উচ্ছন্নে…আমার কী?
নিজের কথা ভাবতে ভাবতে আমরা ভুলে যাই, অন্যরাও আমার মতো মানুষ। তাদের প্রতিও আমাদের দায়িত্ব আছে। দেশ হিসেবে, জাতি হিসেবে, মানুষ হিসেবে আমরা আসলে এক। দিনের পর দিন আমরা নিজের কথা ভাবতে ভাবতে এমনই ‘হিপোক্রেট’ হয়ে গিয়েছি, জাতি হিসেবে আমরা একসাথে শারীরিক ও মানসিকভাবে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি সেটা ভুলে যাচ্ছি সবাই।

একটা দিন নিশ্চয়ই আসবে যখন সবাই অন্যের কথাও ভাববে। খাবার ভেজালমুক্ত হবে। সব ধর্মের মানুষ একসাথে সুখে থাকবে। পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাবে পৃথিবীর মানুষ। সেই দিনটা কবে আসবে সেটাই প্রশ্ন এখন।

স্বপ্ন বিলাস সম্পর্কে

বাস্তবে মানুষ হবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। জীবনের নানা পথ ঘুরে ইদানীং মনে হচ্ছে গোলকধাঁধায় হারিয়েছি আমি। পথ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করি আর দেখে যাই চারপাশ। ক্লান্ত হয়ে হারাই যখন স্বপ্নে, তখন আমার পৃথিবীর আমার মতো......ছন্নছাড়া, বাঁধনহারা। আর তাই, স্বপ্ন দেখি..........স্বপ্নে বাস করি.....
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা, সচেতনতা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

2 Responses to বিয়িং হিপোক্রেট

  1. অনুজ বলেছেনঃ

    ভালো লেগেছে… 🙂

    স্বপ্ন দেখি, ‘একটা দিন নিশ্চয়ই আসবে যখন সবাই অন্যের কথাও ভাববে। খাবার ভেজালমুক্ত হবে। সব ধর্মের মানুষ একসাথে সুখে থাকবে। পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাবে পৃথিবীর মানুষ… ‘
    ভাবতে শিখব, অন্যরাও আমার মতই মানুষ!

  2. শারমিন বলেছেনঃ

    :welcome: ভাইয়া 😛

    অনেকদিন পর আপনার লিখা পড়লাম 😀
    ভালো লেগেছে 🙂
    আসলেই সেই দিন যে কবে আসবে
    আশাবাদী হতে ইচ্ছে করে
    আসবে হয়ত

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।