ঠিকমতো চোখ ফুটবার পরে যখন চারকোনা একটা বাক্স এর সাথে টেলিভিশন নামে পরিচিত হলাম, তখন থেকেই একটা লোককে খুব আপন লাগতো। লোকটার মুখ ভর্তি দাড়ি, চোখে সানগ্লাস হাতে চেইন। সে চেইন ঘোরাত আর ব্যাকগ্রাউন্ডে গান বাঁজতো “হাওয়া ম্যা উড়তা যায়ে, মেরা লাল দোপাট্টা মাল মাল কা”। গুণ্ডা-বদমাশ জাতীয় একটা লোক যে কারও আপন হতে পারে তা বিশ্বাস করা ব্যাপক কঠিন। অথচ কাঠিন্যকে কাঁচকলা দেখিয়ে সারা দেশের মানুষের কাছে সে লোকটি হয়ে গেলো তাদের ভাই, “বাকের ভাই” !
শুধু এ পর্যন্ত হলেও কথা ছিলো। কোন একটা কমার্শিয়াল বিজ্ঞাপনে যেনও বলে, “এমন অনেক কিছু হবে যা আগে কেউ দেখেনি”। অথচ যা হয়ে গেছে, তা কেউ দেখবেও না! “কোথাও কেউ নেই” নামক নাটকটির বাকের ভাই চরিত্রটি ঘটনার প্রেক্ষিতে ফাঁসির আদেশ হলে সারা দেশের মানুষ রাজপথে নেমে পরে ! তারা ঘেরাও দেয় বাকের ভাই চরিত্রের স্রষ্টার বাড়ি। এ মনুষ্য সন্তানরুপী স্বপ্ন স্রষ্টা কি এমন জাদুকরী মোহ ছাড়ালেন যে একটা নাটকের চরিত্র সবার আবেগকে এক সাথে রাস্তায় নেমে আনতে বাধ্য করলো? কে এই লোক ?
তিনি হুমায়ূন আহমেদ। তিনি সেই মানুষ যে একের পর এক সৃষ্টি করলেন দুর্দান্ত সব নাটক। “কোথাও কেউ নেই”, “এইসব দিন রাত্রি”, “অয়োময়”, “আজ রবিবার” এবং আরও অনেক ! ছোটো পর্দা থেকে মন দিলেন বড় পর্দায়। আমাদের সবচেয়ে বড় গর্ব, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নির্মাণ করলেন এদেশের সেরা সিনেমার একটি – “আগুনের পরশমণি। সৃষ্টি করলেন অবাক করা এক সৃষ্টি – “শ্রাবণ মেঘের দিনে”। প্রচলিত বস্তা পচা ধারার জগত থেকে বেড়িয়ে আবার সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র নিয়ে ভাবতে বাধ্য করলেন অনেককে। তিনি নিজে থেমে থাকেন নি। তার হাতেই জন্ম নিলো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরেকটি অসাধারণ সিনেমা “শ্যামল ছায়া” যা কিনা অস্কার প্রদর্শনীর জন্য মনোনীত হয়।
তবে, সব কিছু ছাপিয়ে তার যে পরিচয় তাকে আজকের অবস্থানে এনে দিয়েছে, তা হলও তার উপন্যাস সমূহ! ১৯৭২ সালে ছাত্রাবস্থায় রচনা করেন এমন এক উপন্যাস যা কিনা আহমদ ছফা, ভাষা শাস্ত্র পণ্ডিত আহমদ শরীফের মতো মানুষকে চমক লাগিয়ে দেয়! বাংলা সাহিত্যে অবাক করা এক নতুন ঔপন্যাসিক তার সম্পূর্ণ নতুন ধারা নিয়ে সদর্পে হাজির হন, তিনি হুমায়ূন আহমেদ। তার সে উপন্যাসের নাম “নন্দিত নরকে”। এরপরেই তিনি তাক লাগিয়ে দেন আরেকটি কালজয়ী উপন্যাস লিখে , “শঙ্খনীল কারাগার”।
এরপরে আর কলম থামেনি, জীবনে দুঃখ-দুর্দশা কম আসেনি, কিন্তু কলমের আঁচড়কে কাগজে বুক থেকে কেউ সড়াতে পারেনি। ৭১ এর বুক খালি করা হাহাকার নিয়ে তিনি লিখলেন “জ্যোৎস্না ও জননীর গল্প”।
কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে এদেশের সাহিত্য চরিত্র গুলোর মধ্যে সবচাইতে রহস্যময় চরিত্র কি, তাহলে আমি যে উত্তর দেবো, আমার মনে হয় একশভাগ লোকই একই উত্তর দেবে। চরিত্র দুটি হলও হিমু ও মিসির আলী। লজিক আর এন্টি লজিকের দুটি তব্দা খাবার মতো চরিত্র তিনি তৈরি করে তার লেখনীর প্রচণ্ড শক্তি সম্পর্কে খুব ভালো একটি ধারণা সবাইকে দিয়েছে বলেই আমি মনে করি। বিশেষ করে, প্যারানরমাল জগতের রহস্য সমাধানে মিসির আলীর যুক্তির সিঁড়ি বেয়ে সমাধানে পৌঁছানো – অনেক সময় অসম্ভব মনে হয়! আমি অবাক হয়ে যাই এই ভেবে, মিসির আলী আর হিমু না হয় আলাদা চরিত্র, কিন্তু তাদের স্রষ্টা হুমায়ুন স্যারতো একটিই সত্ত্বা ! একটি মানুষের মস্তিষ্ক থেকে সম্পূর্ণ বিপরীত দুটি চরিত্র কিভাবে এতোটা মহিমাময় হতে পারে, ভেবে আমি কুল কিনারা পাইনা। আমার স্বল্প জ্ঞানে আমি যদ্দুর দেখেছি, বাংলা সাহিত্যে আমি এর আগে প্যারানরমাল জগত ও এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেবার মতো কোনও লেখা মিসির আলীর আগে পাইনি।
হুমায়ূন স্যারের প্রেমের উপন্যাস নিয়ে কিছু কথা না বললেও পাপ, তবে সেগুলা বিচার বিশ্লেষণ করা আমার জন্যে বলতে গেলে মহাপাপ! প্রেম-ভালোবাসাকে লুতুপুতু লেখনী থেকে সরিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন অভিনব উপায়ে একেকটি উপন্যাসে উপস্থাপন করেছেন তিনি। হুমায়ুন স্যারের বই এর সমস্যা একটাই, একেবারে শেষ না করে অন্য কোনও কাজ করতে পারিনা। পাঠক সৃষ্টি করায় তার সমকক্ষ এ দেশে আর নেই।
নন্দিত জনের নিন্দুক থাকাটাই স্বাভাবিক। কিছু নিন্দুকের মুখে মাঝে কলরব উঠেছিলো, তিনি নাকি অপন্যাস লেখা শুরু করেছেন এবং তার লেখা নাকি মান-সম্পন্ন নয়। মড়ার ওপর ঘা বলে একটা আছে, উনি যা করলেন সেটা অনেকটা মরার উপরে ক্যান্সার ! তাঁর হাতে থেকে সৃষ্টি পেলো এ দেশের আরেকটি কালজয়ী সৃষ্টি “মধ্যাহ্ন”। এরপরে প্রতি বছর এ ধরনের ইতিহাস ও বর্তমানের মিশেল ঘটিয়ে “মধ্যাহ্ন-২”, “মাতাল হাওয়া” আর “বাদশাহ নামদার” এর মতো দুর্দান্ত কিছু বই উপহার দিলেন!
এবার একটু অন্য প্রসঙ্গ, কেমন? কিছুদিন আগে আমাদের ছেড়ে নামের আগে “প্রয়াত” শব্দটি যুক্ত করেছেন এ দেশেরই এক বীর মুক্তিযোদ্ধা, যে কিনা অধিক পরিচিত বাংলাদেশের পপ-সম্রাট তথা পপ সঙ্গীতের জনক নামে। তিনি আমাদের মরহুম আজম খান। খুব বেশী কিছু বলবোনা, শুধু এইটুকুই বলবো যে, উনি প্রাপ্য সম্মান নিয়ে যেতে পারেননি পরপারে। বহুদিন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে অবহেলায় পরে ছিলেন, কেউ কোনোদিন খোজ ও নেয় নি। অথচ উনার মৃত্যু সংবাদ শোনার পর দেশে যেনও শোকের ছায়া নেমে আসে ! রাস্তা-ঘাটে, ব্লগে-ফেসবুকে সব জায়গায় শুধু হায় আজম, হায় আজম ! প্রোফাইল পিকচার, ফেভারিট সিঙ্গার সবখানেই আজম খানের নাম। এই প্রহসনের মানে কি? এই মাতামাতিটা কি উনি বেঁচে থাকতে করলে খুব ক্ষতি হতো? কিছুটা তৃপ্তি নিয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু আমরা তা হতে দেয়নি।
এতক্ষণ যে লোকটার কথা বললাম, যুগে যুগে ওপার বাংলায়, ইউ.এস.এ., যুক্তরাজ্য সহ আরও অনেক দেশে এদেশের লেখনীকে ছড়িয়ে দিয়েছেন যে হুমায়ূন আহমেদ, তিনি আজ কোলন-ক্যান্সার নামক ঘাতক ব্যাধিতে আক্রান্ত। যে লোকটা এতোটা বছর ধরে কলমের জোরে আমাদের হাঁসালো, কাঁদালও, প্রতিবাদী করলো সর্বোপরি এদেশের মানুষকে আবারও বইমুখী করলো আগামী ১৩ই নভেম্বর তাঁর জন্মদিন। আল্লাহ না করুক, হতে পারে এটাই আমাদের জন্য পাওয়া তার শেষ জন্মদিন। আমি মনে প্রাণে চাই আল্লাহ যেনও এই বাক্যটা মিথ্যে করে দেন। তাকে সম্মান জানিয়ে আমরা কি কিছু করতে পারিনা? নাকি আজম খানের মতো তার জন্যও আমরা অপেক্ষা করছি কখন সংবাদে নীচের স্ক্রলে দুঃসংবাদটা আসবে?
সরব- পরিবারের পক্ষ থেকে হুমায়ূন স্যারের জন্মদিন উপলক্ষে একটি ই-বুক বের করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই ই-বুকে স্থান পাবে হুমায়ূন স্যারকে নিয়ে বিভিন্ন রকম লিখা। সে লিখা হতে পারে স্যারের নাটক, সিনেমা কিংবা উপন্যাস নিয়ে যার যার নিজের অভিমত, স্যারের প্রথম লেখা পরে যার যার অনুভূতি, হিমু আর মিসির আলীকে নিয়ে তাদের একান্ত ভাবনা অথবা এ সম্পর্কিত নিজস্ব রচনা! আগামী ৮ই নভেম্বর এর মধ্যে লেখা জমা দেবা জন্য আবেদন জানানো হচ্ছে। এই ই-বুক শুধু একটা অনলাইন একটিভিটিজমই নয়, এটা হবে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের প্রতি আমাদের মনের শুদ্ধতম ভালোবাসার খুব ছোট্টও একটি অংশের প্রকাশ। আমরা আশা করি, আপনাদের সবাইকে পাশে পাবো। সবশেষে হুমায়ূন স্যারের জন্য অনেক অনেক প্রার্থনা আর শুভকামনা আশা করছি সবার কাছ থেকে। এতো ভালোবাসাকে পাশ কাটিয়ে স্যার যেতে পারেন না, ঐ কালো আকাশের ওপাশে যিনি আছেন, এতো মানুষের দোয়া তিনি ফেলে দিতে পারবেন না। স্যার, আপনাকে ফিরে আসতেই হবে।
লেখা পাঠাবার ঠিকানা: [email protected]
লেখা পাঠাবার শেষ সময়: ৮ই নভেম্বর রাত ১২.০০ মিনিট
দারুণ উদ্যোগ! :beshikhushi:
আছি আছি! 😀
লিখতে বইসা যাইতে হবে! 8)
আপনের লিখা দেয়া আবশ্যক ! নাইলে ৪২০ ধারা অনুযায়ী সকাল,দুপুর , রাইতে ৩ বেলা হীরাঝিলে খিচুরী কাচ্চি আর ফালুদা ! :happy:
আমিও লিখতে চাই। :penguindance:
কিন্তু কী যে লিখি!
যা মন চায় ! শুধু লেখায় কয়েকবার হুমায়ূন স্যারের নাম থাকলেই চলবে! উনার নামটাই এমন, অখাদ্যকেও বেহেশ্তি খাদ্য বানিয়ে ফেলে
দারুণ উদ্যোগ!……
স্বাগত সরব কে………
স্যার হুমায়ন আহমেদ যেন সুস্থ্য হয়ে যায় দ্রুত এই কামনা করি
ইনশাল্লাহ 🙂
লেখা দিবেন কিন্তু ! সময় বেশী নাইইইই ! 😯
ইনশাল্লাহ 🙂
লেখা দিবেন কিন্তু ! সময় বেশী নাইইইই !
হুমায়ুন আহমেদ… !!
এই মানুষটা সম্পর্কে কি বলব!
আমার বই পড়া শুরু এই মানুষটার লেখাগুলো থেকে, আমার লেখালেখিরও শুরু এই মানুষটার লেখালেখি পড়ে পড়ে।
আমিও অংশ নিতে চাই। যদিও জানি না আমার সেই যোগ্যতা আছে কিনা।
আগে লেখা দাও গো দিদি ! যোগ্যতার বিচার পরে !!!! এইখানে লিখতে জানলেই হয়, ফেয়ার এন্ড লাভ্লী মাইখা নাচ-গান করা লাগেনা :love:
🙂
হাসলেই কি হপে ???? লেখা কি হাসি দিয়ে আসিবে ???? লিখতে যাউউউ !!! 8)
“এই ই-বুক শুধু একটা অনলাইন একটিভিটিজমই নয়, এটা হবে হুমায়ূন আহমেদ স্যারের প্রতি আমাদের মনের শুদ্ধতম ভালোবাসার খুব ছোট্টও একটি অংশের প্রকাশ।”>> প্রার্থনা করি, এই ভালোবাসা বৃথা যাবে না।
লেখা যাক বা না যাক চেষ্টা করব কিছু লিখতে। যদিও সাধ্য কম কিন্তু সাধটা যে অনেক বেশি! 😐
তুমি পারবাই ! তোমাকে পারতেই হপ্পে !!! কারণ তোমার আছে নি – —- — শম 😀
( নিচ্চ্যই ভাবসিলা নিডো :love: ???)
লেখার কি কোন সাইজ লিমিট আছে নাকি?
না 🙂 মনের যতো অনুভুতি আছে, সব ঝেড়ে লিখে ফেলুন। অনুভুতির কোনো সীমা নাই, আমি বিশ্বাস করি 🙂
ই-বুকের জন্য লেখা আহবান করার লেখা যদি এতো চমৎকার ঝরঝরে হয়। ই-বুকের লেখাগুলো নিশ্চয় অসাধারণ হবে।
মুখিয়ে আছি ই-বুকের লেখগুলো পড়ার জন্য।
লেখা অসাধারণ এবং অবাকান্বিত করবার মতো হবে, যদি কি না আপনে লেখা পাঠান বড়দা !!! তাড়াতাড়ি !!! 😯
কিছু না কিছু তো লিখতে হবে।
ভাবছি বাবাকেও বলব লিখতে। হাজার হোক, বাবা-ই তো প্রথম হুমায়ুন স্যারের বই তুলে দিয়েছিল হাতে। এছাড়া বইমেলায় স্যারের বই কেনার ল-অ-ম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে তাকেই তো বায়না পূরণ করতে হয়! :happy:
তোমার বাবা মানে, আমাদের সব্বার বাবা 😀 😀 😀
বাবার কাছে আবদার, আমাদেরকেও বই কিনে দিতে হবে বইমেলায় 😀
kobe prokash hobe? Ami porbo 😀
ভাইয়া মনে হয় উনার জন্মদিনে প্রকাশ হবে 🙂
বলেন আমি লেখবো 8)
একদম ঠিক কথা ধরেছো কিনাপু 😛 আমি তো ধরতেই পারিনি ভাইয়ার কথা 😛
lekha dei nai, ki moja 😀
আমার আঙ্গুলে ব্যাথা 🙁
🙁
মাইনাচ!
তবে অনেক অনেক প্লাস! 😀
লেখা আহ্বান করার লেখা যদি এত মারাত্মক সুন্দর হয়, তাহলে বাছাই করা লেখাগুলো কেমন হবে, এখনই একটা আভাস পাচ্ছি!
চিন্তাই লাগছে- লিখব, আদৌ পারব কি না! :thinking:
পারবেন কি না পারবেন, সেইডা আমরা দেখুম, আপনে আগে লেখা পাডান মিয়া বাই !!! :babymonkey:
আমি মিস করলাম…… প্রচণ্ড মেজাজ গরম হইল লেখাটা পড়ে…… :crying: :crying:
নিশম ভাই, আপনি তো ফেবু থেকে খুব ভালো করেই জানতেন যে আমি হুমায়ূন স্যারের বিশাল পাগল…… কিন্তু, আপনে আমাকে বলেন নাই…… কি খারাপ……
ফেবুতে শত শতবার শেয়ার হইছে এই পোস্টটা। তুই কি কানা নাকি !!! হ্যাঁ ?? তোরে আমি এট্টা রঙ্গীন চশমা কিনে দেবোনে 🙂
আমি দেখি নাই…… আমার আত্মহত্যা কড়া উচিত……