কেউ কিছু বলে না…

চোখ বুজলেই দেখতে পাই একটা বিন্দু, উজ্জ্বল বিন্দু।
সেই বিন্দু আমায় ডাকে,
কোথায় যেন নিয়ে যেতে চায় সে আমারে।
পথটা আমার অচেনা নয়, নয় পুরোটা অজানা-ও!
একই পথে হেঁটেছি আমি, হাঁটে আমার মতন অনেকেই।
তবু আমায় কেন ডাকে? কেন দেখায়…?
দেখতে পেলেই-বা কী করবো আমি?
আমি যে অপারগ অনুভূতিকে সশব্দে প্রকাশ করতে:
এক বাকশক্তিহীন কবি-
কেবল শব্দের বুননে ভাবনাগুলো খানিক শৃঙ্খলিত করতে পারি।

 

হাঁটতে-হাঁটতে একদিন দেখেছিলাম
মাঝবয়েসী দোকানির হাতে এক ক্ষুধার্ত পথশিশুর প্রহার-
প্যাকেটে চিনি পুরতে গিয়ে খানিকটা পড়ে গিয়েছিল-
এটাই ছিল শিশুটির অপরাধ!
শক্ত হাতের চড়ে কচিঠোঁট ফেটে বেরিয়ে এসেছিল রক্তের ফিনিক ধারা।
অনেকেই দেখেছিল, কেউ কিছু বলেনি: কেউ কিছু বলে না।
আমিও ফিরেছিলাম মাথা নিচু করে।

 

একদিন হাঁটতে-হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে বসেছিলাম একটা টঙের বেঞ্চিতে
খানিক দূরে রিকশা চালিয়ে দ্বিগুণ ক্লান্ত ষাটার্ধো রিকশাচালক।
পারিশ্রমিকের অপেক্ষায় চেয়ে আছেন তরুণ যাত্রীর দিকে।
কিন্তু হঠাৎ-ই দেখলাম চড়ের দমকে মাটিতে লুটিয়েছে বৃদ্ধ চালক।
পাশ দিয়ে সিনা উঁচিয়ে বীরদর্পে চলে গেল দুই তরুণ!
বীরের মতোই কাজ করেছে বটে-
পিতৃতুল্য এক বৃদ্ধকে দক্ষিণ-হস্তের জোর দেখিয়েছে সুনিপুণে।
আমি জানি না কী ছিল বৃদ্ধের অপরাধ, কী ভুল করেছিল সে-
এমন কী অপরাধ করলে পরে একজন বৃদ্ধকে এভাবে আঘাত করা যায়?
আমি দেখেছিলাম অশ্রুসিক্ত চোখ ঘামে সিক্ত গামছায় মুছে তার প্রস্থান।
অনেকেই দেখেছিল, কেউ কিছু বলেনি: কেউ কিছু বলে না।
আমিও ফিরেছিলাম মাথা নিচু করে।

 

এক সন্ধ্যায় হাঁটছিলাম এক ব্যস্ত সড়ক ধরে
সবাই ভীষণ ব্যস্ত; মনুষ্য- ব্যস্ততা দেখতে আমার বরাবরই ভালো লাগে।
পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল এক তরুণী, হাতে কলেজ ব্যাগ।
সমবয়েসী কিছু তরুণ পথ আগলে দাঁড়ায় তরুণীর।
অমার্জিত শব্দাবলী অবলীলায় বলে যাচ্ছিল ওরা,
অপরিশীলিত দেহভঙ্গিতে স্পষ্ট প্রতীয়মান অশ্লীল ইঙ্গিত।
কিছুক্ষণ বাদেই হাসতে-হাসতে চলে যায় ওরা, অশ্রুসজল নয়নে নির্বাক তরুণী।
অনেকেই দেখেছিল, কেউ কিছু বলেনি: কেউ কিছু বলে না।
আমার ইচ্ছে করছিল ওর মাথায় হাত রেখে জানাই নিজের অস্তিত্ব।
কিন্তু পারিনি, ফিরেছিলাম মাথা নিচু করে।

 

এভাবেই হেঁটে চলেছে এই আত্মাপহারী সমাজ;
সমাজের সবাই কেবল দেখে, কেউ কিছু বলে না।
সচল মুখ থেকেও তারা মূক: আত্মকেন্দ্রিকতায় লেপিত নির্জীব মাংসের স্তূপ।

অনিমেষ ধ্রুব সম্পর্কে

"You've gotta dance like there's nobody watching, Love like you'll never be hurt, Sing like there's nobody listening, And live like it's heaven on.'' অসম্ভব পছন্দ উইলিয়াম পার্কারের এই কথাগুলো! নিজের মত করেই নিজের পৃথিবীটা কল্পনা করে নিতে ভাল লাগে। ঔদাসিন্য,অলসতা শব্দ দুটি আমার সাথে বনে যায়। গভীর মনোযোগ কিংবা অসম্ভব সিরিয়াস মুড আমার কখনোই আসে না। একা অচেনা রাস্তায় অকারণে হাঁটতে ভালো লাগে, মানুষ দেখতে ভালো লাগে, ভাল লাগে কবিতা লিখতে...তবে স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখি আমার চারপাশে থাকা মানুষগুলোর জন্য কিছু একটা করার, দেশকে কিছু একটা দেয়ার। পারব কি-না জানি না, তবুও স্বপ্ন বুনে চলেছি নিরন্তর... http://www.facebook.com/kamrul.h.hridoy.3
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে কবিতা, সাহিত্য-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

12 Responses to কেউ কিছু বলে না…

  1. অক্ষর বলেছেনঃ

    হে হে ! নাম বদলালেই কি ‘বায়োপোয়েট’ অনিকেত প্রান্তর হয়ে যাবে ! যথারীতি আমি কবিতা বুঝি না ! 😛

  2. অনিকেত প্রান্তর বলেছেনঃ

    বিখ্যাত মানুষরে কবিতা বুঝাইতে পারলাম না, আমি ‘বায়োপোয়েট’ / ‘অনিকেত প্রান্তর’ কিছুই না- নাবালেক কুবি 🙁

  3. তুসিন বলেছেনঃ

    এভাবেই হেঁটে চলেছে এই আত্মাপহারী সমাজ । আসলেই তাই ।

    বিদ্র: নাম পরিবর্তন 🙂 :welcome: 😛

    • অনিকেত প্রান্তর বলেছেনঃ

      খালি স্বাগতম জানালেতো হবে না, মিষ্টি খাওয়াও! এমন নিয়ম করা উচিত যাতে স্বাগতম জানানো হয় ইকুইভ্যালেন্ট ফ্রিতে মিষ্টি খাওয়ানো! 😛

  4. কবিতাটা অনেক ভালো হয়েছে। তবে প্রথম প্যারাটুকু আমার অনেক বেশি ভালো লেগেছে। কারণ কবি একটা অনিশ্চয়তা রেখেছেন ওটুকুতে। অবশিষ্ট অংশে কবিতাটা নির্দিষ্ট হয়ে গেছে, তাই আর অনিশ্চয়তায় থাকতে হয় নি।

  5. সামিরা বলেছেনঃ

    হুম!

  6. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    ভাবতে থাকো, লিখতে থাকো।
    পারলে লিখাটা বাড়াও।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।