রাজিন রিভিউ: Interstellar

interstellar4

রাতের মেঘমুক্ত আকাশ দেখলে সবারই অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়। মিটমিট করে লক্ষকোটি তারা তাকিয়ে থাকে আমাদের দিকে। কী ভয়ানক সুন্দর! কিন্তু আকাশে তাকালে আমাদের গ্রহটিকে আমরা দেখতে পাই না। নিজের গ্রহের সৌন্দর্য নিয়ে আমরা নির্বিকার।

 

ধুর মিয়া। পৃথিবীর আবার কী হবে? আমার এই পলিথিনটা সমুদ্রে ফেললে কী আর এমন ক্ষতি হবে?

 

আমরা কী আমাদের ঘরকে একটু বেশি নোংরা করে ফেলছি? এমন কী হতে পারে যে এই গ্রহে আর খাদ্য উৎপাদন সম্ভব হবে না? তখন কী করবো আমরা? ঐ মিটমিটে জ্বলা তারাগুলি কী কোন কাজে আসবে? এরকমই এক কাহিনী নিয়ে Christopher Nolan উপস্থিত তার সর্বশেষ মুভি “Interstellar” । সবাইকে এক্কেরে তাক লাগিয়ে দেবার জন্য।

 

কাহিনী জানা যাক। বেশি বলা যাবে না। দুনিয়াতে খাদ্য উৎপাদন এখন বিরাট সমস্যা। এক মাত্র শস্য ভুট্টা। সেইটাই বা কতদিন থাকবে কে জানে? এক কালের পাইলট কুপার ( Matthew McConaughey)  এখন ভুট্টার কৃষক। তার ১০ বছর বয়সী মেয়ে মার্ফি চরম ট্যালেন্ট। হঠাৎ কেমন করে জানি NASA ‘র সাথে যোগাযোগ হয় কুপারের। হয়ত মানবজাতিকে বাঁচানোর একটি উপায় আছে। একটি Wormhole দিয়ে হয়তো অন্য দুনিয়া খুঁজে পাওয়া যাবে। কুপারের সাহায্য একান্ত জরুরী। শুরু হয় মিশন। কিন্তু সবকিছু কী এতই সহজ?

 

আমি নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করি যে এমন এক যুগে জন্মেছি যে যুগে Christopher Nolan এর মত মুভি নির্মাতা রয়েছে। পুনরায় দুর্দান্ত এক মুভি। এই লোকের মাথায় কী আসে কে জানে? এই টপিক নিয়ে মুভি তো দেখতে যেতেই লোম খাড়া হয়ে যায়, সেখানে এই মুভি বানায় কীভাবে? দুর্দান্ত থেকে দুর্দান্ত একেকটি দৃশ্য।

 

মুভির সবচাইতে অসাধারন দিক নিঃসন্দেহে মুভির দৃশ্যায়ন। ব্ল্যাক হোল, ওয়ার্মহোল, কৃত্রিম অভিকর্ষ সবকিছুতেই চেষ্টা করা হয়েছে যেন বৈজ্ঞানিকভাবে সঠিকতা বজায় থাকে। শেষের দিকের এক দৃশ্যে আমার মুখ হা হয়েছিল তো ছিলোই। বন্ধ আর হয়না। উদাহরণ স্বরুপ, এই মুভিতে ব্ল্যাক হোলের দৃশ্যায়ন করতে গিয়ে বিজ্ঞানী কিপ থর্ন Astrophysics এবং Computer Graphics এ কয়েকটি জার্নাল পর্যন্ত প্রকাশ করে ফেলেছেন। কিছু কিছু ফ্রেম পুরোপুরি ভাবে ফুটিয়ে তুলতে ১০০ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লেগেছে।

 

অভিনয়ের দিক দিয়ে Matthew McConaughey, MacKenzie Foy, Anne Hathaway, Jessica Chastain, Michael Caine প্রত্যেকেই মারাত্মক। নোলানের মুভির নায়ক হিসেবে Christian Bale অথবা Leonardo Dicaprio কে আশা করেছিলাম কিন্তু এই মুভির জন্য Matthew McConaughey এর কোন বিকল্প হতেই পারে না।

 

সংগীতে Hans Zimmer কতটা ভালো করেছেন সেটা আসলে বলা বাহুল্যস্বরুপ।

 

এবার মুভির খারাপদিকগুলি আলোচনা করা শুরু করি। প্রথমে মুভিটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন Steven Spielberg। Jonathan Nolan এর সাথে কাহিনী কিছুটা তৈরীও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে দায়িত্ব Christopher Nolan এর হাতে আসে। সেকারণে কাহিনীর মধ্যে কিছু একটা খটকা আছে বলে মনে হয়।

 

এছাড়া মুভিটি ভয়ংকর রকমের জটিল। Inception ও অনেক জটিল ছিল কিন্তু তাও কিছু বোঝা গেসে। এটাতেই কিছু কিছু জিনিস একেবারেই বোঝা যায়না। যদিও আমার একটি দৃশ্যে মনে হয়েছে, “আরে খাইসে!! কিসুই বুঝতাসি না। তাও জোস লাগতাসে …”।

 

মুভিটির সমাপ্তিটাও তেমন জুতসই হয়নি। মুভিটি সর্বকালের সেরা মুভি হতে পারতো। কিন্তু হয়তো সমাপ্তির কারণেই তা বলা যাচ্ছে না।

 

যাই হোক এই রকম মুভির ভুল ধরা আর অনন্ত জলিলের পাছায় চিমটি কাঁটা একই ধরনের স্পর্ধা। সবার হয়তো ভালো লাগবেনা। তাই বলে বলা যাবে না যে, মুভিটি খারাপ। কিন্তু Christopher Nolan এর কাছে কেন জানি একটু বেশি আশা করে করে লোভী হয়ে গিয়েছি।

 

সবমিলিয়ে চরম একখান মুভি।

 

রেটিং – ৪ / ৫

রাজিন সম্পর্কে

এক কথায় চলচ্চিত্র ভক্ত , বোদ্ধা নয়।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চলচ্চিত্র-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

4 Responses to রাজিন রিভিউ: Interstellar

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    “আরে খাইসে!! কিসুই বুঝতাসি না। তাও জোস লাগতাসে …”।

    হাহা দেখতে হবে এইটা।

  2. সামিরা বলেছেনঃ

    রিভিউ পড়েই দেখতে ইচ্ছা করলো।
    “আরে খাইসে!! কিসুই বুঝতাসি না। তাও জোস লাগতাসে …” এই কথাটা জোস! ইনসেপশন দেখতে গিয়ে আমার এরকমই মনে হয়েছিল। এটাও তার মানে কিছু বুঝবো না। 😛

  3. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    ওয়াও, এই টাইপ মুভি আমার ভালো লাগে। মুভি দেখার পরও অনেক্ষন লোকজনের সাথে আলাপ আলোচনা করা যায়। সেইটা আরেক মজা…

  4. অনিকেত প্রান্তর বলেছেনঃ

    আমি খুব একটা মুভিভক্ত নই। বেশিরভাগ সময়ই রিভিউ পরে, উইকি ঘেঁটে দেখতে বসি; ক্লাসিক মুভি-ই কেন যেন বেশি ভালো লাগে। ‘ইন্টার-স্টেলার’ দেখার আগে ঘাঁটাঘাঁটির আর কিছু থাকছে না- দেখবো ইনশাল্লাহ 😀

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।