চিন্তা ভাবনা “টুয়েলভ অ্যাংরি মেন” স্টাইল

টুয়েলভ অ্যাংরি মেন মুভিটার কথা মনে আছে?
১৯৫৭ সালের মুভি। সর্বকালের সেরা মুভিগুলোর তালিকায় প্রায় সময়ই রাখা হয়।
১২ জন পুরুষ একটি রুমে তর্ক বিতর্ক করে। সেই মুভি নিয়ে এত হৈচৈ!
যারা দেখেছেন তাঁরা তো জানেনই কেন।
যারা দেখেন নি। শুধু বলব মাস্ট সি।

12_angry_men_lone_holdout

মুভিটা আমার কাছে এই কারণে জরুরি যে এটা হয়ত চিন্তা ভাবনার স্টাইল বদলাতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষ করে ক্রিটিকাল থিংকিং এর প্রথম লেসন হতে পারে এটা।

আমি সব জানি। আমার ইয়ে সব জানে।
ছোটবেলা থেকে যা শুনে আসছি তা কি ভুল হতে পারে? না কখনই না! আমি কি এরশাদ সিন্ড্রোমের শিকার হতে পারি? নাহ কখনই না! বই এ যা পড়ছি, মুভিতে যা দেখছি, পত্রিকায় যা পড়ছি, বড়দের কাছ থেকে যা শুনছি — তা কী কখনও ভুল হতে পারে?
নাহ! কখনই না!

একটা উদাহরণ দেয়া যাক

ছোটবেলা বেলা থেকে হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা পড়ে আসছি। তিনি পিএইচডি করা লোক। ঢাবির শিক্ষক ছিলেন — তিনি কি কখনও ভুল করতে পারেন?

– এই প্রশ্ন করলে সবাই হাসবেন না?

কিন্তু আমরা এমনটাই করি অনেকের ক্ষেত্রে।
আরে মিয়া তুমি অমুক এর বিপক্ষে বলতেছ? তুমি জানো উনি কে?
তুমি কি উনার চেয়ে বেশি বুঝো?
পারবা উনার মতো একটা রম্য গল্প লিখতে! উনি ঠিক বলবে না তো কে বলবে?!!

চিন্তা করে দেখুন। আপনি কোন কোন লেখক /চিন্তাবিদ/ কবি/ সাহিত্যিক/ টক শো বিশেষজ্ঞ এর ফ্যান।
তাঁর কথাগুলাকে আপনি কতটা ক্রিটিকালি দেখেছেন?
কতবার প্রশ্ন করেছেন?

ছোটবেলা থেকে শুনে আসা বিষয়গুলোকে কতবার প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন?

স্পয়লার এলার্ট।

মূল ঘটনাটা এই রকমঃ
১২ জন মানুষ জুরি হিসেবে যায় একটি ছেলের রায় দেবার জন্য।
১১ জন নিশ্চিত থাকে ছেলেটিই দোষী।
কিন্তু একজনের মাথায় কিছু সন্দেহ থাকে। কিঞ্চিৎ অনিশ্চয়তা। তিনি নিশ্চিত নন আসলেই সে দোষী কিনা। তাঁর মাথায় শুধু কিছু প্রশ্ন আছে। সেই প্রশ্ন গুলা তিনি করেন। আস্তে আস্তে দেখা যায় বাকি ১১ জনের মাথাতেও বিষয়টা ঢুকে। ছেলেটা হয়ত সত্যিই অপরাধ করে নি।

জুরর নম্বর ৮ এর একতা চমৎকার কমেন্ট কোট করিঃ
It’s always difficult to keep personal prejudice out of a thing like this. And wherever you run into it, prejudice always obscures the truth. I don’t really know what the truth is. I don’t suppose anybody will ever really know. Nine of us now seem to feel that the defendant is innocent, but we’re just gambling on probabilities – we may be wrong. We may be trying to let a guilty man go free, I don’t know. Nobody really can. But we have a reasonable doubt, and that’s something that’s very valuable in our system. No jury can declare a man guilty unless it’s sure.
আসেন চিন্তা করি।
যে কোন ইস্যুতে আপনি আমি কি আমাদের অবস্থান নিয়ে শতভাগ নিশ্চিত?
নাকি শুনে আসছি দেখে আসছি, তাই বিশ্বাস করে যাই!

মুভিটা দেখে থাকলে আবার দেখুন। চিন্তাভাবনা শুদ্ধ করাটা অনেক বেশি জরুরি।
“An unexamined life is not worth living”

বোহেমিয়ান সম্পর্কে

পেশায় প্রকৌশলী, নেশায় মুভিখোর আর বইপড়ুয়া। নিজেকে খুঁজে পাবার জন্য হাঁটতে থাকি। স্বপ্নের সাথে হাঁটা, স্বপ্নের জন্য হাঁটা। https://www.facebook.com/ibappy
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

8 Responses to চিন্তা ভাবনা “টুয়েলভ অ্যাংরি মেন” স্টাইল

  1. মুনীরা মারদিয়া বলেছেনঃ

    পুরাটা পড়লাম না, কারণ মুভিটা আগে দেখে নিতে হবে, স্পয়লার নিতে চাইনা। 😛
    কয়েকদিন ধরেই একটা কথা সবসময় মাথায় ঘুরছে, যেটাকে বলে Cognitive Dissonance. মুভিটা হয়ত আমাদের এই সমস্যাটাকে ব্যাখ্যা করে। তাড়াতাড়ি দেখে ফেলতে হবে!

  2. অক্ষর বলেছেনঃ

    ভাইজান লিখবেন লিখবেন, তাই বলে আরেকটু ইলাস্ট্রেট করবেন না ! আমার মনে হয় পোস্টটা অবহেলায় অযত্নে বড় হয়েছে। চিন্তকের ভালোবাসা পেলেও লেখকের ভালোবাসা পুরোটা পায় নি। বোহেমিয়ানের কাছ থেকে এর চেয়েও ভালো ভাবে উপস্থাপন আশা করি আমরা। সামনে আরেকটূ গুছিয়ে লেখবা। ওকে? 8)

  3. পাহাড়ি কন্যা বলেছেনঃ

    মুভিটি দেখেছি। খুব স্বল্প পরিসর অথচ শক্তিশালী ডায়ালগ, অসাধারণ অভিনয় আর চরিত্রগুলোর আপন বৈশিষ্টের স্বকীয় প্রকাশ ভঙ্গি মুভিটিকে অনন্যসাধারণ পর্যায়ে নিয়ে গেছে।

  4. সামিরা বলেছেনঃ

    অতি প্রিয় সিনেমা। সবচেয়ে প্রিয় সিনেমা!
    কেউ যদি কখনো অভিযোগ করে যে পর্যাপ্ত রিসোর্সের অভাবে সে ছবি বানাতে পারছে না, তার জন্যেও চমৎকার দৃষ্টান্ত হতে পারে ‘টুয়েল্‌ভ অ্যাংরি মেন’।
    কতদিন পর লিখলে! 🙂

  5. জাকির হোসাইন বলেছেনঃ

    অক্ষরের সাথে একমত। আরেকটু বিস্তারিত লিখলে দারুণ একটা লেখা হতো 🙂

    মুভিটা ডাউনলোড দিচ্ছি।

  6. মুভিটা দেখি নি, কিন্তু লেখাটা পড়ে দেখতে ইচ্ছে করছে।
    আসলে কারো চিন্তাই তো সম্পূর্ণ পরিশুদ্ধ হতে পারে না, তাই অন্ধ বিশ্বাস করা উচিত না। আরেকটু বিস্তৃত লিখলে দারুণ হতো 🙂

  7. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    অনেক দিন পর আপনার লিখা দেখে ভালো লাগলো। মুভিটা দেখিনাই, তবে যখন থেকে নিজের চিন্তাভাবনার একটা… কি বলব, প্যাটার্ন নাকি টেম্পলেট…মানে একটা নিজস্ব ওয়ে তৈরি করার চেষ্টা করছি তখন থেকেই অল্পতেই জাজমেন্টাল হবার প্রবনতা দূর হয়ে গেছে। এটারই পোশাকী নাম ‘ক্রিটিক্যাল থিংকিং’ কিনা জানিনা।

  8. শাণিতা বলেছেনঃ

    ম্যালা দিন পর ঢুকলাম এন্ড টাইটেল দেখে আপনার পোস্ট পড়তে ঢুকলাম :happy: মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মত একটা মুভি এবং আমার অন্যতম প্রিয়। আমাদের চিন্তা-ভাবনায় এরকম প্রভাব পড়ে বৈকি!

    ভালো লিখেছেন

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।