Batman Movie Series এর আমার দেখা অন্যতম সেরা মুভি The Dark Knight, আর যারা এই মুভিটা দেখেছেন তারা খুব ভালো করেই বুঝতে পারবেন এই মুভির প্রাণ আসলে ‘জোকার’। সেই জোকারের একটা ডায়লগ একদম মাথায় ঢুকে গিয়েছিল, খুব জোরালো ভাবেই। একটা দৃশ্যে জোকার যখন অন্যান্য মাফিয়াদের সাথে ডিলিং করছিল তখন সে বলে তার সেই বিখ্যাত ডায়লগ ‘If you’re good at something never do it for free.’ এরপর আমার ডিপার্টমেন্টের বড় এক আপুর মুখে শোনার পর অকারণ চিন্তাশীল এই আমি এই সামান্য একটা লাইন নিয়ে চিন্তা করার একটা চেষ্টা করলাম। প্রথমে মনে হচ্ছিল ‘আরেহ ঠিকই তো, আমি যেটা ভালো পারি সেটা আমি বিনামূল্যে করে দিব কেন? কি ঠেকা আমার?’ এরপর চিন্তা করা শুরু করলাম আমি আসলে কী ভালো পারি? চিন্তা করছি তো করছি, করছি তো করছি …চলছে চলবে। 😛 প্রথমে মনে হল আচ্ছা আমি ‘বোধহয়’ ভালো পড়াই, কারণ আমার সবগুলো ছাত্র-ছাত্রীর রেসাল্ট ভালো আলহামদুলিল্লাহ ! পরেই বুঝতে পারলাম এটা নিতান্ত মিথ্যা কথা। আমি ভালো পড়াই এই ব্যাপারটা স্ট্যাট সত্য বললেও আমি মানতে নারাজ বরং বলা চলে আমার ভাগ্য ভালো আমি সবসময় ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের পড়িয়েছিলাম যার কারণে ওরাই আসলে ভালো ছাত্র, এই যুগের ‘গিলিয়ে দেওয়া’ ছাত্র-ছাত্রী হলে আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না ! তাছাড়া এইটা তো আমি এমনিতেও ফ্রীতে করি নাই! 😛 পরে ভাবলাম আর ভাবলাম কিছু জিনিস পাচ্ছিলাম যেটা আমি ভালো পারি বা করতে ভালো লাগে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সেই প্রত্যেকটা ব্যাপারই ‘বিনামূল্যে’ করার জিনিস। হুম ভলান্টিয়ারিজম বলি, ডিপার্টমেন্টের কিংবা ভলান্টিয়ার অর্গানাইজেশনের ইভেন্ট অর্গানাইজিং বলি সব গুলোই আসলে করতে আমার ভালো লাগে, বলছি না ভালো পারি, কারণ ভালো কী পারি সেটা বোধহয় বের করা আমার পক্ষে সম্ভব না। তো পরলাম বিপদে ! ‘এখন তোর হবে কী রে অক্ষর?’ তাহলে কী কথাটা মিথ্যা? আমি এটা যদি ফ্রীতে না করি আমি এখন স্বেচ্ছা সেবার জন্য টাকা পয়সা চাইব? নাকি এখন দ্বারে দ্বারে গিয়ে সম্মান চাইব? নাকি আমার অর্গানাইজেশন বা যেখানে যেখানে কাজ করেছি সেখানে গিয়ে বলবো ‘আমাকে সার্টিফাইড করেন, পিলিজ লাগে!’ তা সে যাই হোক অনেক প্যাঁচাল হয়ে গিয়েছে কাজের কথায় আসা যাক।
ভলান্টিয়ারিজমের কথা বলছিলাম, আমি কেন যেচে পরে নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবো? যারা টুকটাক এইসব কাজের সাথে যুক্ত তারা খুব ভালো করেই জানেন ‘ভলান্টিয়ারিজম’ যতটা সহজ ততটাই কঠিন। নাহ কাজগুলো আহামরি কিছু না, কিন্তু কাজের বিনিময় যোগ্যতা নিয়ে যখন প্রশ্ন করা হয় তখন সেটা আসলেই আপাত ‘বড়’ একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়? ‘এসব করে কি হবে?’ ‘এরকম দুই একটা কাজ করে লাভ কী?’ ‘অন্য’ মানুষকে কোন ‘সহযোগিতা’ করে তোমার কী লাভ? ‘অন্য’ মানুষকে কোন ‘সহযোগিতা’ করে আমার কী লাভ? এই প্রশ্নের সম্মুখীন অনেক বার হয়েছি, নিজেও নিজেকে করেছি। উত্তর এক এক সময় এক এক রকম আসে। কিন্তু এখন মনে হয় একটা ছোটখাটো স্ট্রাকচার দাঁড় করাতে পারি আর তাই সেটা নিয়েই বলছি।
শুরুতে একটা প্রশ্ন আচ্ছা এই ‘অন্য’ মানুষটাকে আমরা কিভাবে ডিফাইন করি? আমরা যখন বলি অন্য মানুষকে সহযোগিতা করে লাভ কী তখন আমরা অন্য মানুষ কাকে বলি? যার টাকায় খাচ্ছি, পড়ছি, পরছি, গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়াচ্ছি তাকে আমরা বলছি ‘অন্য’ মানুষ। কথাটা এওটু খটকা লাগবেই এবং আমার সাথে অমত করবেন এমন লোকের সংখ্যাই বেশি। তবে আমি বিশ্বাস করি আমরা যাদেরকে সহযোগিতা করতে যাই এটা আমাদের মহত্ব না বরং আমাদের দ্বায়িত্ব কারণ আমাদের এই সুখ সমৃদ্ধিতে তাদের অবদান আমাদের চেয়ে বেশি, অনেক অনেক বেশি। একবার চিন্তা করে দেখেছি আমরা যে আমরা কিছু সুযোগ সুবিধা যে পাই সেটা কাদের জন্য সম্ভব হচ্ছে? একজন শ্রমিক খুব কম পারিশ্রমিকে আপনার পোষাকটা বানিয়ে দিচ্ছে বলে আমরা খুব গর্বের সাথে সেই পোষাক পরতে পারছি, একজন শ্রমিক খুব কম পারিশ্রমিকে আমার বইটা বাঁধাই করে দিচ্ছে বলে কম টাকায় বই কিনে বেশি টাকায় নিজের সার্ভিস বিক্রি করতে পারছি আমরা? আচ্ছা চিন্তা করেন তো কাল থেকে কোন বাসের হেল্পার নেই, নেই কোন কুলি, মজুর তখন আমাদের এই মজাদার জীবন যাত্রার অবস্থা চিন্তা করতে পারি। আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। চিন্তা করে দেখেন যাদেরকে আমরা সহযোগিতা করতে যাই মূলত তারাই প্রতিনিয়ত আমাদের সহযোগিতা করতে থাকে কিন্তু বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে আমাদেরকে তাদের দরকার পরে। এই যেমন সামনে শীত আসবে হয়তো তাদের উপার্জনের টাকা আমাদের মত না, আর তাই চাইলেও আমি যেখানে নিজের জন্য কয়েকটা শীতের কাপড় কিনে ফেলব তা সে পারবে না। আর তাই আমরা মনে করি আমরা তাদের বিশাল সাহায্য করে ফেলছি কিন্তু আসলে তো ভিন্ন, কারণ এটাই আমাদের করার কথা।
আমরা প্রত্যেকটা মানুষ একে অপরের সাথে কানেক্টেড। আর আমরা কেউই আসলে ‘অন্য’ মানুষ না। যাদেরকে আমরা অন্য মানুষ বলি আমাদের জীবনে তাদের অবদান অনেক বেশি। আর যাদেরকে সহযোগিতা করতে যাই তারা আমাদের সহযোগিতা চায় না বরং তাদের সহযোগিতা করা আমাদের দ্বায়িত্ব। এখন আবার কেউ যদি আবার বলেন, ‘বুঝলাম ভাই, অনেক ডায়লগ তো মারলেন কিন্তু why man why? মানলাম না আপনার থিউরি আগে বলেন আমার কী লাভ? আর আপনার কী লাভ?’
প্রথম কথা ‘লাভ’কে আপনি কীভাবে ডিফাইন করেন? যদি ইকোনমিক্সের ভাষায় বলেন ‘প্রফিট’ কী তাহলে বলবো আর্থিক ভাবে এই দান কিংবা সহযোগিতা করে আপনি কোনদিন কোন প্রফিট করতে পারবেন না, লস আর লস। কিন্তু জনাব সব কিছু কি ইকোনমিক্স মেনে চলে? চিন্তা করেন। এটার উত্তর আমি দিব না, আমি যে একদম সঠিক তাও না। তবে পৃথিবীতে মানুষ বোধহয় অর্থের সুখ খোঁজে না। হয়তো মানুষ সুখই খোঁজে না, খোঁজে শান্তি। আর শান্তি কোন বস্তুগত জিনিস থেকে পাওয়া যায় না, এটা পুরোই অবস্তুগত। আপনার জীবনের সবচেয়ে শান্তির মুহূর্ত কোন বস্তুগত জিনিসটির জন্য এসেছে সেটা যদি আমাকে জানান, আমি হয়তো পুরো ব্যাপারটা নিয়ে আবার ভাবতে বসবো। তবে তার আগে একটা উদাত্ত আহ্বান। মানুষকে সহযোগিতা করুন, সেটা ছোট কিংবা বড় যেভাবেই হোক। আপনার কাছে অনেক ছোট ছোট ভলান্টিয়াররা যাবে এই শীতে কিছু অন্য মানুষকে সহায়তা করার জন্য ডোনেশন চাইতে, তাদেরকে বিশ্বাস করুন, প্রয়োজনে তাদের সাথে গিয়ে ডোনেট করুন। দেখুন প্রশ্নের উত্তর পান কি না? আর যারা নিজেদের প্রশ্ন করি আমরা, ”অন্য’ মানুষকে কোন ‘সহযোগিতা’ করে আমার কী লাভ?” একটু অপেক্ষা করি, লাভটা বোঝা যাওয়ার কথা তবে অবশ্যই সেটা কোন সার্টিফিকেট নয়।
এই লেখাটা আমার খুব প্রিয়, কাছাকাছি টপিকে
http://blog.ca-bd.org/2011/04/so-whats-the-point-of-being-a-social-activist/
হুম আমারও খুব প্রিয় একটা লেখা ! :love:
অক্ষর, অনেক সুন্দর লিখেছ 🙂 আমার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অভিমত হল লাভ/লস বলতে আসলে কিছুই নাই। পুরো ব্যপারটাই আমাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি। নিউটনের সূত্রটা আমাদের জীবনের বিরাট সত্য। আমরা মুখিয়ে থাকি কোন কাজ করে সেটার প্রতিক্রিয়া পাবার আশায়। না পেলেই যত সমস্যা। আর এই পাওয়াতেই সবকিছু ; কেউ নিজের জন্য পেয়ে খুশি আর কেউ অন্যকে পাইয়ে খুশি।
“আর এই পাওয়াতেই সবকিছু ; কেউ নিজের জন্য পেয়ে খুশি আর কেউ অন্যকে পাইয়ে খুশি।”
আপু এই কথাটা অসাধারণ ছিল। খুবই সত্যি কথা।
“তবে পৃথিবীতে মানুষ বোধহয় অর্থের সুখ খোঁজে না। হয়তো মানুষ সুখই খোঁজে না, খোঁজে শান্তি। আর শান্তি কোন বস্তুগত জিনিস থেকে পাওয়া যায় না, এটা পুরোই অবস্তুগত।” মূল উত্তর মনে হয় এটাই।
তবে ভালো কাজ করলে অনেক সময় বস্তুগত লাভও হয়। এইটা কাজ করতে শুরু করার আগে বোঝা যায় না। 😀
হুম মনে হয় বস্তুগত কিছু লাভও আছে, তবে ঐটা বোনাস ! না পেলেও সমস্যা নাই। 😛
পুরোটা লেখাই ইতিবাচক চিন্তার পসরা সাজিয়ে আছে। এমন একটা লেখায় কি গঠনমূলক সমলোচনা আসে! আসে না। তারপরও দোস্ত, আমার কাছে লেখাটা পড়ে মনে হয়েছে- তুই আরেকটু সময় পেলে বোধয় পঞ্চম প্যারায় এমন কিছু লাইন আনতে পারতি, যাতে চোখে পানি চলে আসে, অন্তত চোখ ছলছল করে। নাবিলা আপু’র লেখার শেষ প্যারাটা পড়ার পর চোখ ছলছল করে ওঠে!
একটা লাইন পড়ে হাসি, অন্য প্যারার আরেকটা লাইন পড়ে চোখ ছল-ছল করে ওঠা; এগুলোর গুরুত্ব আলাদা। আবেগপ্রবণ জাতি কি-না! আবেগানুভূতিতে ট্রিগার করতে পারলে অনেক কঠিন কাজও করিয়ে নেয়া যায়! এবং এই কাজগুলো কিন্তু তুই দারুণ পারিস! গল্পগুলোতো আমি পড়েছিলাম 🙂
মানুষ সচেতন হবে; সন্দেহ নেই 🙂
ইদানিংকালে তোর চিন্তাগুলো, স্পৃহাকাজ করার প্রচণ্ড স্পৃহা দেখে আমি মুগ্ধ, আমি ট্রিগারর্ড হওয়ার অপেক্ষায় আছি 😛
আলহামদুলিল্লাহ দোস্ত। চেষ্টা করছি আমি, আর পজিটিভ চিন্তা করা, চিন্তা করা, ক্রিটিক্যালি চিন্তা করা এই ব্যাপারগুলো তো তোদের সবাইকে দেখেই করার চেষ্টা করি। আর সমালোচনাটা ঠিক, এই লেখায় আবেগ কম, যুক্তি বেশি দেওয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু লেখাটায় আবেগ থাকা দরকার ছিল মনে হয়। নেক্সট টাইম ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো আরেকটু মডিফাই করার।
অনেক ইতিবাচক লেখা :clappinghands:
😀
‘অন্য মানুষকে সাহায্য করে আমার কি লাভ?’ -এই প্রশ্নটা আমার মাথায়ও কয়েকদিন ধরে ঘুরঘুর করছিল। ব্যক্তিগত জীবনে কিছু জটিলতায় ভুগছিলাম, এখনও ভুগছি। তবে ব্যাপারটাকে জটিলতা বলা যাবে কিনা জানি না। আপনি তো ‘অন্য’ মানুষ বলতে কেবল তাদেরকেই বুঝালেন যারা আমাদের জন্য পরোক্ষভাবে কিছু না কিছু করে যাচ্ছে। আমি বলছি, যদি এই ‘অন্য’ মানুষগুলো আপনার ‘বন্ধু’ হয়, যারা কেবল আপনার কাছ থেকে সাহায্য-সুবিধা পেয়ে আসছে অথচ প্রতিদানে আপনাকে কোন সাহায্য করছে না সেক্ষেত্রে কি তাদের বন্ধু তালিকায় রাখা উচিত? নাকি তাদের প্রতি উদারতা/ বন্ধুত্ব প্রদর্শন করা চালিয়ে যাওয়া উচিত? আসলে সাহায্য করে তাদেরই লাভ হচ্ছে। মাঝে আমার অবস্থা কলুর বলদের মতই অসহায়!
আসলে অন্য মানুষগুলো বন্ধু হলে তাদেরকে আপনি কখনই এক পাক্ষিক সহযোগিতা করছেন না, ভালো করে চিন্তা করে দেখেন এটা দুইপক্ষেই আছে। কিছু কম কিছু বেশি। কিন্তু যদি সেটা না থাকে তাহলে বোধহয় সেটা বন্ধুত্ব না, আর সব কিছুতেই চাওয়া-পাওয়ার হিসাব না রাখাই ভালো। কিছু ব্যাপার আছে যেখানে চাওয়া-পাওয়া রাখতে গেলে কমপ্লেক্সিটি বাড়ে। সম্ভবত সময় আর অভিজ্ঞতা আপনার এই জায়গাটা বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
‘কিছু ব্যাপার আছে যেখানে চাওয়া-পাওয়া রাখতে গেলে কমপ্লেক্সিটি বাড়ে।’—আমি হয়তো ইতিমধ্যে এই কমপ্লেক্স লেভেলে পৌঁছে গেছি। তবে বন্ধু চেনা বড়ই কঠিন। কে যে বন্ধু, আর কে যে না, মাঝে মাঝে বুঝতে পারি না। আর আপনার কথাটির মতই হয়তোবা সময় আর অভিজ্ঞতা আমাকে এই ব্যাপারটা বুঝতে সাহায্য করবে। আপনার কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ।
সুন্দর কিছু চিন্তার উপস্থিতি আছে লেখাটায়।
ওয়েল…আমার ক্ষেত্রে একটা ভালোলাগা কাজ করে। যখন এরকম অভিজ্ঞতা ছিলোনা তখন এইরকম ভালোলাগার সাথে পরিচয়ও ছিলোনা। নিঃশ্বার্থ ভালোলাগা-গুলো কি খুড়ে দেখার দরকার আছে? যে, কেন এই ভালোলাগা!
হয়তো আছে, যদি কোন যুক্তিযুক্ত প্রোটোকল দাড় করানো যায়- তাহলে হয়তো আরো মানুষকে ইনভল্ভ করা সম্ভব হবে।
কি লাভ হবে ব্যাপারটা আসলে আপেক্ষিক। যেমন এখন আমি এই যে মন্তব্য করছি কি লাভ হচ্ছে? এক এক জনের কাছে এক এক ব্যাখ্যা থাকবে। কিন্তু আমি মন্তব্য করে মনের তৃপ্তি পাচ্ছি সেটাই বা কম কি 🙂
চিন্তাভাবাগুলো ভালো হয়েছে। অক্ষর দিন দিন চিন্তাশীল হয়ে যাচ্ছে 🙂 আরও বেশি চিন্তা করে যাও।
ভাল্লাগছে :happy: