বাঙ্গালী স্বভাব এবং একজন মার্ক জাকারবার্গ

চলতি বছরে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে ভাগ্যক্রমে জাফর ইকবাল স্যারের সাথে দুপুরের খাবার খাওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। স্যারের সাথে নানা বিষয় নিয়ে কথা হচ্ছিল। আমার এত প্রিয় একজন লেখকে কাছে পেয়ে নানা প্রশ্ন করছিলাম। স্যারকে প্রশ্ন করলাম আপনার প্রিয় খাবার কি?
“আমি সবই খাই। তবে বিশেষ করে আলু ভার্ত, ডাল-ভাত, মাছ ইত্যাদি বেশি ভালো লাগে।” জবার দিল স্যার।

বর্তমানে ফলে যেভাবে ফরমালিন দেয়া শুরু হয়েছে কোন ফল খাওয়া যায় না। স্যার আপনার প্রিয় ফল কি?
স্যার কিছু হেসে বললেন, “ ফরমালিন খেলে কিছু হয় না। বাঙ্গালীতে অভ্যাস হয়ে গেছে। ফরমালিন এখন আমাদের পেটে সহজে হজম হয়ে যায়। সব ধরনের ফলই আমার পছন্দ।”

স্যার কথা সত্য। আমরা খুব অভ্যাস প্রিয় জাতি। খুব সহজে আমাদের কাছে নতুন কোন বিষয় অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়। আর একটি ঘটনা মনে পড়ে গেলো।

স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাথরুমগুলোর দেয়ালে নানা বানী লেখা থাকে। বেশিরভাগ বানী অশালীন। আমি এই জীবনে যতগুলো স্কুল কলেজের বাথরুমে গিয়েছি সবগুলোতে কোন না কোন অশালীন কিছু না কিছু লিখা ছিলো।

যখন প্রথম ব্যাপারটা মাথা আসলো ভাবলাম কি করে মানুষ এই ধরনের চিন্তা ভাবনা করে তা লিখতে পারে। আস্তে আস্তে বড় হতে থাকলাম। এই ব্যাপারটা অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলো।  স্কুল কলেজের বাথরুমগুলোতে এরুপ লেখা থাকবে এটাই স্বাভাবিক।দীর্ঘদিন পর আজ সেই কথাগুলো মনে পড়ে গেলো। আমাদের চিন্তাধারগুলোর কথা। মানুষের কুরুচি পূর্ণ মনোভাবের কথা।

আপনি যদি বাংলাদেশের ফেইসবুক ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে নিশ্চিয় এতক্ষণে জেনে গেছেন মার্ক জাকারবার্গের ছবিতে বাঙ্গালীদের মন্তব্যের কথা। ফেইসবুক খুললে এখন নিউজ ফিড ভর্তি থাকে মার্ক জুকারবার্গকের ছবি নিয়ে নানা স্ট্যাটাস ও মন্তব্য।

কে এই মার্ক জাকারবার্গ?? এই নামটি আপনাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে না। সবারই কম বেশি জানা আছে তিনি ফেইসবুকের প্রতিষ্ঠাতা।  তিনি একজন আমেরিকান কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও সফটওয়্যার ডেভেলপার। তার পুরো নাম মার্ক এলিয়ট জাকারবার্গ। বর্তমানে ফেইসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রেসিডেন্ট। জাকারবার্গ এবং তার কয়েকজন সহপাঠী মিলে ২০০৪ সালে এটিকে একটি ব্যক্তি মালিকানা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন যখন তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। মাত্র ২৬ বছর বয়সেই জাকারবার্গ টাইম ম্যাগাজিনের দৃষ্টিতে বছরের সেরা ব্যক্তিত্বরূপে নির্বাচিত হয়েছেন।

Screenshot_3

এবার আসল ঘটনায় আসি। ২০১২ সালে মার্ক বিয়ে করেন  প্রিসিলা চ্যানকে। সেই সময় বিয়ের একটি ছবি তিনি ফেইসবুকে শেয়ার করেন। দুই বছর পর সেই ছবিতে  নানা প্রসংশা এবং মজার মন্তব্যে যখন দিচ্ছে সারা বিশ্বের মার্ক ভক্তরা ঠিক তখন বংলাদেশ নামক একটি দেশের ফেইসবুক ব্যবহারকারীর অশালীন এবং খুবই বাজে মন্তব্য দেয়া শুরু করেন মার্ক জাকারবার্গ ও তার স্ত্রীকে নিয়ে শেয়ার করা ছবিটিতে। কতটা বাজে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে মন্তব্যগুলোতে তা লিখে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।  এ যেন গালাগালির বিরাট এক হাট বসে গেছে । কে কত খারাপ গালি দিতে পারে মার্ক জাকারবার্গের স্ত্রীকে নিয়ে। সবচেয়ে খারাপ লেগেছে যখন একজন মার্ক এর মাকে নিয়ে খারাপ কিছু লিখে মন্তব্যে করেছে।

আমার ফেন্ড লিস্টে থাকা এক বন্ধু ছবিটি শেয়ার করেছে এবং  ক্যাপশন দিয়েছে, “ যার যার হাতে সময় আছে মার্ক এবং স্ত্রীর ছবিটির নিচে মন্তব্যগুলো দেখুন । বিনোদন। পরলে নিজে বিনোদনের শরীক হন ”

বাহ!! অবাক হলাম। এই গালাগালি দেখে আমরা বিনোদন পাই এবং গর্বের সাথে তা শেয়ার করি। এভাবে আস্তে আস্তে সবাই যেন যায় এবং যে যেভাবে পেরেছে মন্তব্য করেছে।সর্বশেষ ছবিটিতে ৩২ হাজার ৩০০ মন্তব্য করা হয়েছে। তবে মজার ব্যপার হচ্ছে এসব মন্তব্যের বেশিরভাগই বাংলা ভাষাভাষীদের।

রাশেদ নামে এক ব্যবহারকারী লিখেছেন , “এ ছবিতে বাংলাদেশীদের ২০০-৩০০ কমেন্ট পড়লাম । নিজেরে বাংলাদেশী বলতে লজ্জা লাগা শুরু করতেছে এদের কমেন্ট পরে… ছি ছি ”

খাইরুল বাশার শামিম মার্কের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, “ সবাই comment গুলা পড়েন। আমরা জাতি হিসাবে কতটা খারাপ তা দেখেই বুঝতে পারবেন।”

একজন মজা করে লিখেছেন , ‘চলেন সবাই মিলে মার্কের একাউন্টটিকে রিপোর্ট করে বন্ধ করে দেই।”
আরেকজন ব্যবহারকারী কমেন্ট করেছে, ‘ভাজ্ঞিস, জুকার বাংলা কমেন্ট গুলান পড়তে পারতেছে না! যদি পারত, তাইলে বাংলাদেশে ফেসবুক সার্ভারই বন্ধ কইরা দিত! তহন হগলরে মুড়ির ঝুড়ি গলায় ঝুলায়া ঝাল মুড়ি বিক্রি করা লাগতো!’
একজন লিখেছে, ‘জুকা কাক্কু! কমেন্ট পাবলিক করছেন কেরে? এই ফাজিল বাংলাদেশী পোলাপানগুলান আপনারে জ্বালায়া ত্যানা ত্যানা কৈরা ফেলবে তো! আমিও বাংলাদেশী পিচ্চি, তবে ফাজিল না।’

তাজিন নামে এক ব্যবহারকারী লিখেছে, “আমরা আসলেই অধ:পতনের দিকে যাচ্ছি। এদের ভবিষ্যত কি ভাবতে পারেন?”

যেখানে অন্যান্য দেশে লোকজন খুব সুন্দর মন্তব্যে করেছেন। বাংলাদেশের অনেকে ভালো মন্তব্যে করেছে। তা দেখে ভালো লাগলো। একজন মন্তব্য করেছেন , “ দুইজনকে খুব ভালো লাগছে। মার্ক আপনাকে বাংলাদেশে ভ্রমনের আমন্ত্রণ রইল।”

একই দেশে ভিন্ন ধরনের মানুষ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ধরনের বাজে মনোভাব কি কোনভাবে দূর করা সম্ভব নয়? আচ্ছা এবার ভেবে দেখুন তো যদি আপনার মা কিংবা বোন ফেইসবুকে কোন ছবি শেয়ার করেছে। এতে সবাই নানা বাজে মন্তব্য করছে আপনার কেমন লাগতো?

এখন হয়ত অবাক হচ্ছি। কিন্তু আমি শিউর আর কিছুদিন পর অভ্যাস হয়ে যাবে। বাঙ্গালী বলে কথা।

তুসিন সম্পর্কে

নিজের সম্পকে বলার মত কেমন কিছুই নেই।প্রিয় একটি গানের লাইন তুলে দিচ্ছি Say you, say me Say it for always That’s the way it should be Say you, say me Say it together Naturally I had a dream,I had an awesome dream ভালবাসি বই পড়তে।ভালবাসি প্রযুক্তিকে :) www.tusin.wordpress.com এখানে মাঝে অনুভূতিগুলো তুলে রাখি।ভাল লাগা , মন্দ ভালা........
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে ইতিবাচক, চিন্তাভাবনা, স্মৃতিচারণ-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

6 Responses to বাঙ্গালী স্বভাব এবং একজন মার্ক জাকারবার্গ

  1. লিলিপুট বলেছেনঃ

    ঠিক কখন আমাদের মানসিকতার এত অধঃপতন হল বুঝলাম না, তুমি ঠিকই বলেছ যে কেউ কেউ এইটা থেকে বিনোদন পাচ্ছে, এরই সাথে রেলমন্ত্র বিয়ে, মুশফিক কিংবা সাকিবের বৌকে নিয়ে মন্তব্য যোগ করতে পার।

    এদের পাব্লিক ডাটা নিয়ে একটা পর্যালোচনা করা গেলে মন্দ হত না

    সময়োপযোগী লেখা

    • তুসিন বলেছেনঃ

      প্রথম মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ 🙂

      আসলেই তাই আমরা পারি ভালো মনসিকতা চর্চা করতে। একটা কিন্তু আছে। যেমন গুন্ডে মুভির রেটিং ১ মানিয়ে দিয়েছিলাম আমরাই 🙂

  2. ঠিক, আমরা নিজেরাই নিজেদের অপমান করি। মননশীল ও রুচিশীল মানুষ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে আমাদের, এসবে অভ্যস্ত হলে চলবে না 🙂

  3. পাহাড়ি কন্যা বলেছেনঃ

    মার্ক জুকারবার্গের সহধর্মিণী প্রিসিলা চ্যান একজন হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েট। যারা ঐ পোস্টটাতে ওসব কমেন্ট করেছেন, তারা মেধার কদর করতে জানে না। তার চেয়েও বড় কথা তারা মানুষকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে জানে না। আমরা ইউরোপিয়ান-আমেরিকানদের বর্ণবৈষম্যকারী বলি, অথচ আমরা নিজেরাই যে অন্যদের নিয়ে বর্ণবৈষম্য করি সেটা ভুলে যাই। কথাবার্তায় আমরাই বেশির ভাগ সময় কাল-সাদা, মোটা-চিকন, চাইনিজ-আফ্রিকান প্রসঙ্গ টানি। শিক্ষা আমাদের কেবল পরীক্ষায় ভাল গ্রেড পাওয়া শিখাল, অন্য মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন শেখাতে পারল না। আফসোস!

    • তুসিন বলেছেনঃ

      আফসোস! শিক্ষা আমাদের কেবল পরীক্ষায় ভাল গ্রেড পাওয়া শিখাল, অন্য মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন শেখাতে পারল না। 🙁

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।