পিএসসি ২০১৪, ইংরেজি পরীক্ষার আগের রাতে জনৈক অভিভাবক ফোন দিলেন, অনেকক্ষণ গুঁতিয়ে বের করার চেষ্টা করলেন ‘ফেসবুক থেকে কীভাবে প্রশ্ন পাওয়া যায়’। আমি যতই বলি, **** যে মানের শিক্ষার্থী, যতটা পরিশ্রম করেছে, এমনিতেই পিএসসিতে ভালো করবে ইনশাআল্লাহ– মূল বইটাই ভালো করে পড়ে যাক, পরীক্ষায় ওকে আটকাতে পারবে না। কে শোনে কার কথা! তাঁর কথার সারমর্ম হল, সবাই প্রশ্ন পেয়েছে, তিনি রিস্ক নিতে চান না। বাচ্চার হাতে প্রশ্ন দেবেনও না, শুধু এনশিউর করবেন যে প্রশ্নগুলো বাচ্চার পড়ার মধ্যে আছে। ভালো তো, ভালো না?
ফেসবুকে ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র তানভীর ভাইয়ের পোস্টে পড়লাম–
“এতকাল শুধু স্ট্যাটাসেই দেখতাম- অমুক প্রশ্ন পেয়েছে, আমার মেয়ে প্রশ্ন পায়নি।
গতকাল রিকশায় করে বাসায় ফিরছি। পাশের রিকশায় একটা ছোট্ট স্কুল ড্রেস পরা মেয়ে, মা’কে সাথে নিয়ে বসা – গাড়ির হর্ন ছাপিয়ে উঁচু স্বরে তার বাবাকে জিজ্ঞেস করছে- বাবা, কোশ্চেনে এটা আসছে, এটার ইংরেজি কি? ফোনের ওপাশ থেকে বাবা বলে দিচ্ছেন- পাশে বসে মা সেগুলোকে ছোট একটা খাতায় টুকে নিচ্ছেন।
প্রশ্ন ফাঁস এই মূহুর্তে সবচে’ বড় ইস্যু হওয়ার কথা। সেটা হয় নাই, কখনো হ’বেনা। এটা দেখতে দেখতে আসলে অভ্যস্ত হয়ে গেছি যে- আমরা সরকারের রীতিমত পরোক্ষ তত্ত্বাবধানে একটা বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নৈতিকভাবে পঙ্গু প্রজন্ম তৈরি করছি। কিন্তু এই প্যাথেটিক ব্লেম-গেমে শিক্ষার্থী থেকে সরকার পর্যন্ত দৌড়ানোর দরকারই নাই- আরে বাপ-মা’রই তো ঠিক নাই (স্ট্রেইটই বললাম)।”
বাংলা মাধ্যম শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের অনেক অভিযোগ থাকলেও অন্তত কনটেন্ট এর কোয়ালিটি নিয়ে অভিযোগ ছিল না– সায়েন্সের একজন ছাত্র হিসেবে বলতে পারি আমাদের মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিকের গণিত, পদার্থবিজ্ঞানের সিলেবাস রীতিমত বিশ্বমানের ছিল! নকলের অভিশাপ থেকেও মুক্ত হয়ে এসেছিলাম আমরা।
অতঃপর অধঃপতন। শিক্ষার্থীদের, অভিভাবকদের নীতিবাক্য শুনিয়ে কতক্ষণ ঠেকিয়ে রাখা বাস্তব, জানি না। হয়ত ফোন দেয়া সেই অভিভাবক আরেকজনের কাছ থেকে ঠিকই লিঙ্ক খুঁজে নিয়েছেন। আচ্ছা, প্রশ্ন ফাঁস রোধ করতে কি আসলেই রকেট সায়েন্স প্রয়োজন? এতই কঠিন কাজটা?
যেমনটা আরেক বড় ভাই বললেন, এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বড় লেইম জোকের নাম পাবলিক পরীক্ষা।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে নৈতিকতা ব্যাপারটা বাবা-মা’দের ক্ষেত্রেও আর কাজ করে না, সন্তান শিখবে কীভাবে!
ভালো লিখেছেন ভাইয়া 🙂 আমিও ভাবি- সবাই এরকম চুপ কেনো আমরা 🙁
‘অল্প পরিশ্রমে ভাল রেজাল্ট করা’- এই মানসিকতা বদলাতে হবে। ক্লাস ফাইভের একটা বাচ্চাকে যদি এমন ভাবে আমরা চুরি বিদ্যা শিখিয়ে গোড়াতেই ধ্বংস করে ফেলি, সে তো পরবর্তীতে পাঠ্যবই একেবারেই পড়তে চাইবে না, বরং সাজেশনের পিছনেই ছুটবে। আর স্কুল-কলেজ লেভেলে যদি পাঠ্যবই পড়তে এত অনীহা হয়, তাহলে সে কিভাবে উচ্চতর পর্যায়ে পড়াশুনা করবে? বাবা-মায়েরা কেন তাদের সন্তানদের এসব শেখান না জানি না। আর এসব প্রশ্ন ফাঁস সংক্রান্ত ইস্যুর কারণে অরিজিনাল ভাল স্টুডেন্টরা হতাশ হয়ে যাচ্ছে, অনুৎসাহিত হচ্ছে।