একটি কমেন্টের গল্প

আমাদের কারো ব্যক্তিত্ব ভালো লেগে গেলে আমরা তাদের ইমরটেন্স দি। অথচ সে ততটুকু পাওয়ার যোগ্য না। উল্টো ভাব ধরতে থাকে। আর ভালো লাগতেও কোন কারণ লাগে না। শুধু যে  সাদা চামড়ার কোন মেয়েকেই ভালো লাগতে হবে এমন নয়। কারো ন্যাকামি ভালো লাগতে পারে। যে কোন বিষয়ে গাল ফুলিয়ে বসে থাকা মেয়েটিকে তার গাল ফুলানোর জন্য ভালো লাগতে পারে। ভালো লাগতে পারে সুন্দর করে ড্রেসয়াপ করার জন্য মেয়েটিকে। জিদ ধরে বসে থাকা কোন মেয়েকে ভালো লাগতে পারে তার জিদের কারণে।  ভালো লাগতে পারে কালোমেয়েটির ঘন কালো চুল দেখে। আমরা মানুষ গুল অদ্ভুত। আমাদের ভালো লাগা গুলো আমাদের থেকেও বেশি অদ্ভুত।

অয়নের  তিন সেমিস্টারের সিনিয়র হচ্ছে জারা। যথেষ্ট সাদাসিদে ছেলেটির কাছে জারাকে ভালো লাগে। ফেসবুকে এসে ফ্রেন্ড লিস্টে যুক্ত করে। এরপর অয়ন জারার পোস্টে লাইক দেয়, কমেন্ট করে। মাঝে মধ্যে জারাও। মাঝে মধ্যে চ্যাটে কথা হয়। Hi, hello…  স্বাভাবিক।

ঐ দিন জারা একটি সেলফি আপলোড করে। অয়ন এসে কমেন্ট করে, উপড়ে কি? জারা বলে মোবাইল, সাথে একটি ভেংচি ইমো। অয়ন দিল একটি হাসির ইমো।

জারা জিজ্ঞেস করল, হাসো ক্যান?

অয়ন লেখে, সুন্দর দেখাচ্ছে তো তাই। সাথে একটা ভেংচির ইমো।

জারা একটা ড্রাকুলার স্টিকার ইমেজ কমেন্ট করে। তার উত্তর হিসেবে অয়ন একটা আরেকটা স্টিকার কমেন্ট করে, যেখানে ড্রাকুলা থেকে নিজেকে প্রটেকশন করা হয়, এমন অর্থে।

মেয়েটি বুঝেছে ভুল কিছু। ইনবক্সে নক। জিজ্ঞেস করে, এই ইমো দিছো ক্যান? আমিকি তোমার ফ্রেন্ড?

সাদাসিদে ছেলেটির সাদাসিদে উত্তর, আপু আমি বুঝতে পারিনি আপনি রাগ করবেন। আর আমি যে অর্থে এই ইমো মনে করেছেন হয়তে সে অর্থে আমি ইমোটা দেইনি। আমি “প্রটেকশন, নির্ভিক” অর্থে দিয়েছি। আপনি মাইন্ড করেছেন। আমি সরি।

জারা লিখে, আমি তোমার থেকে এমন কিছু আশা করিনি।

অয়ন উত্তর দেয়, আপু আমি সত্যিই অনেক দুঃখিত। আমি বুঝতে পেরেছি আমার এই ইমো দেয়া ঠিক হয়নি।

জারা লিখে, পারলে কমেন্ট গুলো ডিলেট করো।

অয়ন ইতিমধ্যে কমেন্ট গুলো ডিলেট করে দিয়েছে। তাই বলে, I already did that

এখানেই সব কিছু সুন্দর ভাবে শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু হয় নি। জারা আবার লিখে, কারো সাথে গুড বিহেভ করলে যে এমন ফিডব্যক পাওয়া যায় এইটা আজ প্রুভড।

অয়ন লিখে, আপনি এখনো রাগ করে আছেন? আমি কিন্তু কয়েকবার সরি বলেছি।

জারা হয়তো কোন বিষয়কে কমপ্লেক্স করতে ভালো পারে। তাই আবার লিখল, সব ভুলের জন্য সরি প্রযোজ্য নয়। আমি অনেক হার্ট হলাম।

অয়ন বলে, কি করলে ক্ষমা করবেন? বলেন। আমি চেস্টা করব।

মেয়েদের মুডের ঠিক ঠিকানা নেই, যে কোন সময় চেঞ্জ হয়ে যায়। জারা ব্যতিক্রম নয়। তাই লিখল, it’s okk…………..   এখন মুড অফ, পরে বলব, কেমন?

অথচ মুড খারাপ হওয়ার কথা অয়নের। এত সুন্দর করে ক্ষমা চেয়েছে। একটা স্টিকার কমেন্ট। তা ডিলেট করে দিলেই সব ঠিক হয়ে যেতো। ডিলেট করা হয়েছেও । তারপর ও ঠিক হয় নি।

অয়ন তার বন্ধুর সাথে শেয়ার করল। বন্ধু বলল, দেখ, বয়সে মেয়েটি তোর থেকে ছোট। ইউনিভার্সিটির সিনিয়র, তাই তুই রেস্পেক্ট করছিলি। ক্ষমা চেয়েছিলি, এরপর ও যদি মেয়েটি ভুল বুঝে, বুঝক।  মাথা গরম করিস না। লেট ইট বি…

অয়ন তো তাই চিন্তা করতেছিল। কমেন্ট করেছে, তা ভুল অর্থ বুঝেছে মেয়েটি। ডিলেট করে দিয়েছে। তারপর ও মেয়েটি ক্ষমা করল না। কেমন নিষ্ঠুর। মেয়েটিকে পছন্দ করে, হয়তো জন্যই এত কিছু। নিজের পছন্দের মোবাইল দিয়ে কমেন্ট করেছিল। রাগ উঠার কারণে তা আছাড় দিয়ে ভেঙ্গে ফেলেছে। এরপর ও রাগ কমে না।

অথচ ছেলেটিকে কেউ রাগতে দেখে নি।

মেয়ে গুলোও কেমন জানি। কে তাকে ভালোবাসে, কে তাকে পছন্দ করে তা বুঝে না।  ছেলে গুলোও কেমন। যাকে পছন্দ করে, তার থেকে একটুও কষ্ট পেতে চায় না… তারপরও ওরা সারাক্ষণ কষ্ট দেবে। আর তা নিয়ে মন খারাপ হবে। বুঝবে না… ঐ মেয়ে গুলো তার কিছু জানবে না…

জাকির হোসাইন সম্পর্কে

একজন প্রোগ্রামার। লিখতে প্রচন্ড ভালোবাসি। দুটোই। কোড এবং গল্প বা ফিকশন। পেশা হিসেবে একজন ফ্রীল্যান্সার। প্রযুক্তি নিয়ে লেখা গুলো পাওয়া যাবে আমার টেক ডায়েরীতে
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে গল্প-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

1 Response to একটি কমেন্টের গল্প

  1. তুসিন বলেছেনঃ

    জাকির ভাই আসলেই 🙂 মেয়ে গুলোও কেমন জানি। কে তাকে ভালোবাসে, কে তাকে পছন্দ করে তা বুঝে না।

    আশা করি আপনাকে সেজন বুঝতে পারবে 🙂

    প্রেমের পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।