হরতালের আওতামুক্ত প্রজাপতি
২০১৩ সালের প্রথম দিকের কিছু মাস। খালি এক এর পর এক হরতাল চলতেছিল। প্রথম দিকে হরতালের মধ্যে ক্লাস চললেও, কিছু দিন পরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে ক্লাস আর হতো না। আর হরতাল গুলোও ফলো করা খুব ঝামেলা ছিল। কখনো ৩৬ ঘণ্টা, কখনো ৬০ ঘণ্টা, কখনো ৭২ ঘণ্টা। আর তার চেয়ে বড় ঝামেলা ছিল কোন দিন হরতাল শুরু হতো সকাল ৬ টা থেকে, আবার কোন দিন সন্ধ্যা ৬ টা থেকে। আর কখন শুরু হবে তা জেনেও খুব একটা লাভ হতো না। সকাল ৬ টা থেকে শুরু হবার কথা থাকলে, তার আগের দিন সন্ধ্যা থেকে বাসে আগুন দেয়া শুরু হয়ে যেতো। মানুষের ভোগান্তির কোন সীমা ছিল না। কিন্তু, একটা দলের জন্য এটা বিশাল মজার ঘটনা ছিল। স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র–ছাত্রীদের জন্য। হরতালের ঘোষণা আসা মানেই যেনো এক মাস সিয়াম সাধনার পর “ঈদের চাঁদ” উঠার মত একটা ব্যাপার। শুধু মাত্র টিভিতে রমজানের ঐ রোজার শেষে গানটা বাজতো না। তাছাড়া ফেসবুকে আনন্দের সীমারেখা থাকতো না। অনেক ছাত্র–ছাত্রী আবার ঐ অবসর সময়ের সুবাধে কয়েক লাইন ফেসবুকে লেখালেখি করে কিঞ্চিৎ বুদ্ধিজীবী বনে যাবার বৃথা, কিন্তু তৃপ্তিকর প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতো। আর তখন অনেককেই বলতে শুনেছি যে, হরতালের সময় সূচি মনে রাখার জন্য একটা অ্যাপ এখনও কেনো গুগল প্লে স্টোরে কিংবা আই টিউন স্টোরে আসে না!
আমার জন্য হরতাল সুখ কিংবা দুঃখের কিছু ছিল না। তখন মাস্টার্স থিসিস চলতেসে। প্রতিদিন সকালে উঠে ল্যাবে চলে যেতাম, কাজ কর্ম করতাম। সময় পেলে ঘুরে বেরাতাম কার্জন হলে। আর বলে রাখি, আমাদের ল্যাব কাজ করতো লবন সহিষ্ণু ধান উদ্ভাবনের জন্য। আর আমাদের গবেষণার অনেক অনেক ধান গাছ লাগানোর জন্য একটা ছোট্ট সীমাবদ্ধ জায়গা বরাদ্দ ছিল দোয়েল চত্বর থেকে মোকারম ভবন ঢুকার মুহূর্তে ঠিক হাতের ডান পাশে। আমিও মাঝে মাঝে ভাইয়া–আপুদের সাথে সেখানে যেতাম। কখনো এমনিতেই ঘুরতে, আবার কখনো সাহায্য করতে। লাগাতার হরতালের এমনই কোন দিনে আমরা সকাল বেলা সেখানে গেলাম। হটাত করে দেখলাম যে আমাদের খাঁচাবদ্ধ সেই ঘরে দুইটা প্রজাপতি ঢুকেছে। প্রজাপতিদের জন্য তো আর হরতাল–অবরুধ কিছুই নাই। যতো ঝামেলা সব মানুষের। তার তারা খুশি মনে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। তখন আমরা সবাই মিলে ঐ দুই প্রজাপতিকে আমাদের নেট হাউস থেকে বের করে দেবার চেষ্টা করছিলাম। কিছু মানুষ বাইরের রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিলো, আর কি না কি জানি ভাবতেছিল! অবশেষে একটাকে বের করা সম্ভব হলেও অন্যটাকে পারা যায় নাই।
একটা প্রজাপতি ঢুকাতে এমন কি ক্ষতি হবে? লবন সহিষ্ণু ধানের গবেষণার কাজে আমরা অন্য অনেক প্রজাতি থেকে জিন নিয়ে তা ধানে ব্যাবহার করি। সেটা অনেক ক্ষেত্রে ব্যাকটেরিয়া, কোন ক্ষেত্রে ভাইরাস, কোন ক্ষেত্রে অন্য কোন গাছের। প্রজাপতি কেন, অন্য কোন প্রানি যদি এই গাছ খায়, তাহলে তার মধ্যে ঐ জিন চলে যাবার একটা সম্ভাবনা থাকবে। তাই এই ধরণের বায়োটেকনোলজিক্যাল গবেষণার ক্ষেত্রে পূর্ব শর্ত হল গবেষণাধীন গাছ সম্পূর্ণ আলদাভাবে রাখতে হবে। তা নাহলে জীব বৈচিত্র্য হুমকির সম্মুখীন হবে। এই সব বিষয়কে “বায়ো সেফটি”র আওতায় ফেলা হয়। এখানে বৈজ্ঞানিক ব্যাপারকে বোধগম্য করার জন্য কিছুটা অবৈজ্ঞানিক উপায়ে লিখা হয়েছে।
অনেকেই বায়ো সেফটির ব্যাপারে হয়তো জানেন না। এটা তেমন কোন বিষয় না। যেই জিনিসটা সব চেয়ে অবাক করা তা হল, বাংলাদেশে বায়ো সেফটির সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় তিনটা সরকারি কমিটি আছে। প্রশ্ন হল বাঙ্গালদেশে বায়োটেকনোলজিক্যাল গবেষণা কি এতো পরিমানেই হয় যে, তিন তিনটা আস্ত কমিটি লাগবে। হাস্যকর! আসলে এই সকল কমিটি কোন কাজ করার জন্য তৈরি হয় নাই। দলীয় মানুষ জনকে খুশি রাখার জন্য ঘটন করা হয়েছে। অমুক সাহেব এতো দিন কোন বিশ্ববিদ্দালয়ের ভিসি অথবা কোন উচ্চ পদে ছিলেন, এখন সেই পদের মেয়াদ শেষ, কিন্তু তার দলের মেয়াদ এখনঅ আছে। তাই তিনি নতুন কোন পদের বায়না ধরছেন। যেহেতু দেয়ার মতো পদ এখন নাই, তাই নামে বেনামে কিছু কমিটি ঘটন করে তাকে চেয়ারম্যান বানায় দেয়া হয়েছে। হাসবেন না, অবাক হবেন না, অপেক্ষায় থাকুন। এই সকল সায়েন্টিফিক কমিটি গুলো কখন ঘটন করা হবে, কারা এই সব পদে বসবে এই সকল ব্যাপার নিয়েও যদি কোন কমিটি ঘটিত হয়, তাহলে খানিকটা হাসা যাবে, অবাক হওয়া যাবে, দুঃখ পাওয়া যাবে। এতো সামান্যতে চিন্তিত হলে চলবে না। কারণ, আমাদের দেশে যে গবেষণার নামে আসলেই কিছু গরু–ছাগল খোজা হয়। আর এখানেই শেষ না, গরু–ছাগল খোজার পর ছাগলটাকে পাঠানো হয় হাল চাষ করতে!
বায়ো সেফটি সম্পর্কে আসলেই তেমন কিছুই কিছু জানতাম না 😳
আমাদের দেশে যে গবেষণার নামে আসলেই কিছু গরু-ছাগল খোজা হয়। আর এখানেই শেষ না, গরু-ছাগল খোজার পর ছাগলটাকে পাঠানো হয় হাল চাষ করতে 🙁
জ্ঞান সৃষ্টি না হইলেও পদ সৃষ্টিতে সেরা!