কিছুদিন ধরে একটা মজার সার্কাস দেখছি। আসলে কিছুদিন বললে ভুল হবে, বলা যায় বেশ কয়েক মাস ধরে। পৃথিবীটা একটু অদ্ভুত ! এইখানে জাস্টিস হওয়ার “সম্ভাবনা” যতটা কম, ইনজাস্টিস হওয়ার “প্রোবাবিলিটি” তত বেশি।
আবার ধরুন কিছু মজার ব্যাপার বিশেষভাবে লক্ষণীয় ! যেমনঃ আপনি “চরিত্র” বিসর্জন দিয়ে দুনিয়া কাঁপায় ফেলবেন কিন্তু তাতে কারও কিছু আসে যায় না, শেষমেস আপনার “বিশ্ব” কিংবা “পাড়ার” বিদ্যালয় [পড়ুন আধুনিক ইনজাস্টিসের মূল কারখানা] আপনার চারিত্রিক সনদ দিবে আপনার “সিজিপিএ” দেখে ! আপনার বসও আপনাকে জব দিবে চারিত্রিক সনদ তথা “সিজিপিএ” দেখে ! আরও মজার কিছু ব্যাপার আছে, আপনি ফর্মার ফার্স্ট বয় তাতেই কেল্লা ফতে ! আপনার সাত খুন [লিটারেলি খুন করলেও] মাফ ! ! আপনি নিত্য দিনের কাজ কর্ম জগতের কাছে প্রকাশ করে বেড়াবেন ! ! আর তাহারা আপনার সাগরেদ হয়ে “ভালো করেছেন”, “ভালো করেছেন” বলে আপনার “কৃতকর্মকে” “পছন্দ” করে যাচ্ছে ! মজা ! অনেক মজা ! আসলে মজা সবাই লুটে !
কিন্তু দুঃখ আর কাহিনী ঘটে কিছু কিছু মাথায় ! ! এরা আসলে অতি মাত্রায় “জাস্টিসবাদী” ! পকেটের পয়সা খরচ হবে তাও আরেকজনের টাকা মারা যাবে না, নিজের মার্ক্স কমে যাবে কিন্তু তাও চুরি করবে না, এরা আসলে বোকা শ্রেণির প্রাণী এই সমাজে, কারণ এরা তো ভাই সমাজের ফাঁক ফোকর জানে না ! চুরি করাই যেখানে নীতি, চোরকে সেখানে গালি দিলে লাভ আছে? সবাই চোর, কেউ মুরগি চুরি করে, কেউ পুকুর চুরি করে ! চোরে চোরে মাসতুতো ভাই !
আমি এখন সবাইকে “শিক্ষক” বলতে নারাজ ! “স্যার” অনেকেই হতে পারেন, “শিক্ষক” হয়ে দেখান দেখি ! ছাত্রের “সামাজিক বিজ্ঞানের” খাতায় তিনটা গোল্লা বসায় দিলেই কী বাবা “শিক্ষক” হওয়া যায়? সামাজিকীকরণ শিখিয়েছিলন ভাইজান ! আবার একইভাবে ছাত্রকে মাথায় তুলে নাচলেই কী বাবা “শিক্ষক” হওয়া যায়? পৃথিবীতে কেউ কিছু হতে পারে না, ঐগুলা ভোগাস কথা !
“ইচ্ছা থাকতে হয়, নিয়ত থাকতে হয়! ” আমি আব্দুল্লাহ আবু সাইয়ীদ নামে একজন “শিক্ষককে” দেখেছি, আমি আমার স্কুলের মোতাহার নামে একজন “শিক্ষক” দেখেছি, আমি রতন নামের “শিক্ষক”কে দেখেছি। আমি জানি শিক্ষক কে আর কুশিক্ষক কে।
আমি জানি বেঞ্চের উপর পা তুলে বসার জন্য কিংবা প্যারেডের মাঠে হাতে ঘড়ি থাকার জন্য কিংবা চুলটা একটু বড় করে রাখার জন্য আর্মি স্টাইলের স্কুলটায় আমাকে যিনি শাষন করেছিলেন সেই তিনিই আবার বলেছিলেন “সামনে এসে বসো, এখন সামনে এসে বসার সময় তোমার।” আমির আহমেদ চৌধুরী রতন স্যারের কথা এখনও কানে বাজে, “আমি আর এই মহিউদ্দিন খান আলমগীর একই সাথে বসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করেছি, এইটা এখন বসে বসে পিলার নাড়া নীতি দেয় ! কিন্তু আমি বিক্রি হই নাই ! ঐ সামনের বেঞ্চের মেধাবী ছেলে বিক্রি হয়ে পিলার নাড়া থিউরী দেয় আর আমি এইখানে স্কুল চালাই ! আমি একা বলে কী আর শিক্ষা পাল্টাবে ! তাই তোমরা বড় হইছ ! তোমরা এখন পাল্টায় দিবা ! আমরা তো বুড়া হয়ে গেছি।” স্যারকে বলেছিলাম স্যার আমরাও তো বলবো আরেকজনকে “তোমরা” পাল্টে দিবা, তখন আবার সেই ঝাড়ি যে সবাই খালি দ্বায়িত্ব ছাড়তে চায় ! “আমি যুদ্ধ করে তোমাদের বড় করছি না, তোমরা কেন কামলা হবা !” শিক্ষক আমি তারেই বলি ! অন্যরা বিভিন্ন লেভেলের কামলা, কেউ উচ্চ পদস্থ, কেউ নিম্ন পদস্থ !
নীতিবোধ শেখানোর কথা যে প্রতিষ্ঠানের সেখানে শেখে হিংসা, গাইডলাইন দেওয়ার কথা যে মানুষটার সে হয়ে যায় “নীতি ব্যবসায়ী” তাহলে তো বাছা শিক্ষায় আঘাত আসবেই। সমস্যা মূলে ! মানুষ গড়ার কারিগর যেখানে নিজেই মানুষ না, মনুষ্যতের মাপকাঠিতে যার মান “শূন্য” সে আর যাই হোক শিক্ষক হতে পারেন না। আমির আহমেদ চৌধুরী লাগবে আরও হাজারটা ! আব্দুল্লাহ আবু সাইয়ীদ লাগবে আসলে ! এখন বানাচ্ছি ব্যবসায়ী আমরা, “শিক্ষা ব্যবসায়ী” ! খালি বাসায় নিয়ে পড়ালেই তাকে ব্যবসা বলে না ! ইউ হ্যাভ টু “চিন্তা” করতে হবে !
শেষের মুহূর্তের কথাঃ
বন্যেরা বনেই সুন্দর, শিশুরা মাতৃক্রোড়ে ! শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা না থাকলে বড় পয়সার কেরাণী হয়ে, সত্য লুকিয়ে গর্বের সাথে বাঁচতে হয়তো পারবা তুমি। কিন্তু যার কাছে মুখ লুকানোর ক্ষমতা নাই তার কাছে কী লুকাবা?
আর তাদের উদ্দেশ্যে বলি যারা ঝিনুক নিরবে সহো নীতিতে অটল রইলেনঃ অপমান করার মাধ্যম আসলে তার নাম্বার না। কেরাণী, কামলা আর কত বানাবেন ! মানুষ বানান ! মানুষ ! নাহলে নিজেরাও মরবেন, দুনিয়াকেও মারবেন ! দেয়ালিকায় নাম্বার ঝুলিয়ে যদি মানুষ বানানো যাইত তাহলে ঘরে ঘরে দেয়ালিকা ঝুলতো ! নিয়তে ঠিক না থাকলে দানও কিন্তু ব্যবসা !
সারমর্মঃ “ইহা ক্ষোভ ! ” টাঙানো মার্কটাই দেখলা ! মানুষ দেখলা না ! মানুষ দেখলে শ্রদ্ধায় নত হয়ে লাইকগুলো আকাশে উড়ে, পুড়ে, ঘেন্নায় ছাই হয়ে যেত ! সেই ছাই দিয়ে বাসন ও মাজতে পারতে না !
স্ট্যাটাসে পড়েছিলাম, অসাধারণ লেগেছিলো :clappinghands: