জীবন রহস্য উন্মোচন
বিগত কয়েক বছরের মধ্যে যেই সকল বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের সংবাদ জাতীয় দৈনিকে ফলাও করে ছাপা হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল পাট আর ছত্রাকের জীবন রহস্য উন্মোচনের ঘটনা। আর এই কাজে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন সদ্য প্রয়াত বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ডঃ মাকসুদুল আলম। সাথে সাথে সরকার ও তাদের বিরাট বড় অবদানের কৃতিত্ব নিয়েছেন।
চলুন একটু আলাপ করি এই রহস্য উন্মোচনের তাৎপর্য। সাধারন মানুষের দৃষ্টিতে যদি দেখি, তাহলে প্রথমেই প্রশ্ন আসে যেখানে দেশের পাটকল এক এক করে বন্ধ হয়ে যায়, সেখানে জিনোম সিকোয়েন্স এর জন্য পয়সা ঢালা কতোটা যুক্তি যুক্ত ছিল? কারণ, টাকা খরচ করে জিনোম সিকোয়েন্স করা তখনই দরকার, যখন ওই শস্য আপনার দেশের জন্য অনেক অনেক অর্থনৈতিক মুদ্রার জোগান দিবে। পাট আমাদের জন্য অন্যতম প্রয়োজনীয় শস্য। কিন্তু, চলমান পাটকল চালু রাখা যেখানে সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে জিনোম সিকোয়েন্স করা কি গোড়া দিয়ে শিকড় কেটে আগা দিয়ে পানি ঢালার মতো হাস্যকর ব্যাপার না!
এবার আসি বৈজ্ঞানিক আবিস্কারের দিক থেকে এর গুরুত্ব কতটুকু। বিশ্বাস করেন আপনি চাইলে আপনার বাসার আসে পাশের সব গাছ পালা জন্তুদের জিনোম সিকোয়েন্স করাতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে বিজ্ঞানী হতে হবে না। শুধু লাগবে টাকা। কারণ, জিনোম সিকোয়েন্স এর আগেও অনেক অনেক কিছুর জন্য করা হয়েছে আর এখন ও চলতেসে। সুতরাং, লাফালাফি করার আগে একটু ভাবেন, কি জন্য লাফাচ্ছেন। কারণ, মানুষ যখন কারণ ছাড়া লাফায়, তখন তার সাথে বান্দরের কোন তফাত থাকে না!
এখন তাহলে বলা লাগে, কেন আমি এমন একটা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে তাচ্ছিল্য ভরে লেখাটা শুরু করলাম। জিনোম সিকোয়েন্স করা মানে আপনি কিছু আবিস্কার করেন নাই। বরং, এর পর থেকে আপনার কাজ শুরু হবে। উদাহারন না দিয়ে পারছি না। এরাবিডপসিস এর জিনোম সিকোয়েন্স ২০০০ সালে সম্পূর্ণ হবার পর ও আজ পর্যন্ত আমরা এর ফাংশনাল ব্যাপার তেমন কিছুই জানি না। আর বলে রাখা ভালো, গাছের মধ্যে এরাবিডপসিস নিয়ে সারা দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশি গবেষণা হয়। তার মানে, জিনোম সিকোয়েন্স করার পর যে জিনিসের দরকার ছিল, তা হল জিনোম রিসার্চ প্রতিষ্ঠান। তার দিকে কোন মনোযোগ না দিয়েই আবার করা হল ছত্রাকের জিনোম সিকোয়েন্স। সবই মানলাম। কিন্তু একটা ব্যাপার খুবই হাস্যকর ছিল, যখন আলম স্যার নিজে বললেনঃ “আগামি দুই বছরের মধ্যে আমরা পাটের জিনোমের সকল কিছু জানতে সক্ষম হবো।” উনি একজন বিজ্ঞানী হয়ে এমন রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের মতো আশা দেখানর কোন মানে ছিল না।
আমার লেখায় আমি আলম স্যারকে ছোট করতে চাই নাই। আমার সিরিজের একটা অংশ হিসেবে এই লেখাটা উপস্থাপন করলাম। কারণ, গবেষক হিসেবে উনার অনেক ভালো ভালো জার্নালে পাবলিকেশন আছে। বরং উনার জন্য দোয়া করছি। আর আমাদের মানুষদেরকে যেনো সামান্য বুঝে শুনে খুশীতে আত্মহারা হবার তৌফিক দেন খোদা সেই প্রার্থনা করছি।