গ্রন্থমেলা ও তরুণ লেখকের ভাবনাগুলো(৯): রাসয়াত রহমান

লেখক, কবি, সাহিত্যিকদের বলা যেতে একটি জাতির আত্মা, জাতির প্রাণ। বই সে আত্মার ধারক, বাহক, প্রকাশক। বারো মাসে তেরো পর্বণের দেশ- বাংলাদেশ। জন্মগতভাবে উৎসবপ্রবণতা আমাদের মাঝে সহজাত ভাবে বিকাশিত হয়। বারো মাসের মধ্যে একটি বিশেষ মাস আমাদের আছে, যার প্রতিটি দিন আমাদের বিশেষভাবে মনে করিয়ে দেয়, চিনিয়ে দেয়, ভাবতে  বলে- বাঙালী জাতির আত্মাদের। সেটি বাঙ্গালীর প্রাণের মেলা, নিজের ভেতরকার ‘আমি’ কে খুঁজে পাওয়ার মেলা,  বাঙ্গালিয়ানার মেলা- অমর একুশে বইমেলা।

২১শে-বই-মেলা7

বইমেলার চিন্তাটি প্রথম যার মাথায় আসে তিনি হলেন প্রয়াত কথাসাহিত্যিক ও জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের সাবেক পরিচালক সরদার জয়েনউদদীন। ষাটের দশকে তিনি যখন বাংলা একাডেমিতে পরিচালক পদে ছিলেন, তখন বাংলা একাডেমি প্রচুর  বিদেশি বই সংগ্রহ করত। তিনি ‘Wonderful World of Books’ পড়তে গিয়ে ‘Book’ এবং ‘Fair’ শব্দ দুটি দেখে বেশ পুলকিত বোধ করেন। বইয়েরও যে মেলা হতে পারে, সেই চিন্তার শুরু সেখান থেকেই। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর নিচতলায় শিশু গ্রন্থমেলার আয়োজন করেন। ধারণা করা হয়ে থাকে, এটিই ছিল বাংলাদেশের প্রথম বই মেলা। তারপর ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক গ্রন্থবর্ষ উপলক্ষে সরদার জয়েনউদদীন বাংলা একডেমি প্রাঙ্গণে একটি আন্তর্জাতিক বইমেলা আয়োজন করেন। তারপর থেকেই বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে বই মেলার যাত্রা শুরু। (তথ্যসূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ৩১শে জানুয়ারি, ২০১৪)

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে চলা এ উৎসবে  লেখক- পাঠক- সমালোচক সবাই মিলে-মিশে একাকার হয়ে যান। পৃথিবীতে আর কোনো বইমেলাই এত লম্বা সময় জুড়ে উদযাপিত হয় না। প্রতিবছর বইমেলায় লেখক পরিচিতিতে পুরাতন লেখকদের পাশাপাশি দেখা যায় অনেক নতুন ও তরুণ মুখকে। লেখালেখি জীবনে ব্লগ থেকে বইতে পা রেখেছেন যারা, তাদের ভাবনার জগত পাঠকদের সামনে উপস্থাপনের প্রয়াসে গত বছরের মত এবছরও সরব ব্লগে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে যাচ্ছে, ‘গ্রন্থমেলা ও তরুণ লেখকের ভাবনাগুলো’।

 

১) নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন?

ভাল নাম রাসয়াত রহমান ডাক নাম জিকো। লেখক হওয়ার পাশপাশি পেশায় চাকরীজীবি। ব্যাংকে আছি। বিবাহিত। স্ত্রীর নাম মাকসুদা আজীজ। লেখাপড়া করেছি গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

 

২) লেখালেখি করেছেন কখন থেকে/কীভাবে? লেখালেখির পিছনে আপনার পরিবারের কারও বিশেষ প্রভাব আছে কী?

শিক্ষার প্রাধান্য আমাদের পরিবারে সব থেকে বেশি। কিন্তু সৃজনশীল লেখালেখির ব্যাপারটার ইতিহাস পরিবারে নেই। ক্লাস ফোরে থাকতে সম্ভবত কিছু একটা লিখেছিলাম। ক্লাস ফাইভে থাকতে কিছু একটা উন্মাদ পত্রিকায় পাঠিয়েছিলাম ছাপা হয়েছিল। বলা যেতে পারে জীবনের অন্যতম আনন্দের ঘটনা ছিল সেটা। ছাপা অক্ষরে নিজের নাম দেখে আনন্দিত হওয়ার বয়স তখন। আনন্দ এখনও লাগে।

 

৩)সাহিত্যিকরা স্বভাবত বইপ্রেমী হয়ে থাকে। ছোটবেলা থেকে নিশ্চয়ই অনেক বই পড়েছেন, এখনও পড়ছেন। লেখক মাত্রই চেষ্টা করেন, তার চিন্তাগুলোকে তার লেখার মাধ্যমে পাঠকের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। আপনার পঠিত এমন কোন বই কি ছিলো যা আপনাকে লেখালেখি করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে?

নিশ্চিত না। টিনটিন কমিক্স, শীর্ষেন্দুর অদ্ভুতুড়ে সিরিজ, হুমায়ূন আহমেদ আর সুনীলের কাকাবাবু সিরিজ এগুলার খুব ভক্ত ছিলাম। তবে প্রভাব যে কিসের আছে তা বলতে পারব না।

 

৪) অনেকের ধারণা এখন অধিকাংশ লেখকের লেখা একই প্যাটার্নের হয়ে থাকে, নতুনত্ব খুব কম পাওয়া যায় আপনি কীভাবে দেখেন বিষয়টি?

একদম নতুন কিছু কালে ভাদ্রে হয় না। যে কোন কিছুকে সময় দিতে হয়। সময় দিন, কেউ না কেউ তো নতুন কিছু নিয়ে আসবে।

 

৫) অনেকসময় দেখা যায়, নতুন লেখক/কবির বই পাঠকদের কাছে সেভাবে সমাদৃত হয় না। এটা হয়তো পাঠক হিসেবে আমাদের সংকীর্ণতা কিংবা সীমাবদ্ধতার প্রকাশ। নতুন লেখকদের বিষয়ে পাঠকদের মনোভাব কেমন হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

এই ব্যাপারটাও সময় দেওয়ার ব্যাপার। হুমায়ূন আহমেদ বাংলাদেশের সবথেকে জনপ্রিয় লেখক ছিলেন। সেটা কি একদিনে হয়েছেন? তার প্রথম বই ‘নন্দিত নরকে’ তার অমর সৃষ্টি, সেটা পড়ে তার প্রতিভা সম্পর্কে বোঝা গিয়েছিল কিন্তু সেটা কি শুরুতেই দেদারসে বিক্রী হয়েছে? তার মত লেখককেও জনপ্রিয়তা পেতে একটা সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। দেখুন সব কিছুরই একটা স্ট্রাগলিং পিরিয়ড থাকে। প্রতিভার সাথে সেই জিনিসটা যে মানিয়ে নিতে পারবে সেই আগাবে।

 

৬) একটি বই লেখার ক্ষেত্রে ব্লগে লেখার অভিজ্ঞতা কতোটুকু সহায়ক বলে আপনি মনে করেন?

সামোহায়ারে ব্লগিং শুরু। আমাকে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে চতুর্মাত্রিক এবং পরবর্তীতে সচলায়তন। ব্লগ একটা প্লাটফর্ম। সেটা না থাকলে এত তাড়াতাড়ি আমার বই প্রকাশ হত না। ব্লগ ছিল দেখেই কিছু পাঠক পাওয়া গেছে, কিছু পাঠককে বিশ্বাস করিয়েছে আমাকে যে বই বের হতে পারে। ব্লগের সাথে সাথে যে ধন্যবাদ পাবে সেটা হল অভ্র, অনলাইনে বাংলা লেখাটাকে তারা সহজ করে দিয়েছে। আর শেখার কোন শেষ নেই। ভুল টুল অনেক কিছুই লিখেছি জীবনে ব্লগের পাঠকরা ঠিক করে দিয়েছে। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

  

৭) লেখালেখি নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

পাঠককে আনন্দ দিয়ে যাওয়া এবং সেটা নতুন কিছু করেই। যদিও জানিনা কি করব। আসলে আমার মনে হয় লেখালেখি ব্যাপারটা ক্লাসরুমের পরীক্ষার মত না যে এই হল সিলেবাস, এভাবে নিয়মিত পড়লে পাস হবে। মাঝে মাঝে ১ মাসেও আপনি কিছু লিখতে পারবেন না মাঝে মাঝে ২-৩ দিনেই একটি উপন্যাস হয়ে যাবে। তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার হল, শেখার শেষ নাই।

 

৮) আপনার নতুন প্রকাশিত বই সম্পর্কে পাঠকদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন?

বইয়ের নাম “রাফখাতা”। এটা উপন্যাস। বের হয়েছে আদী প্রকাশনী থেকে বইমেলায় যাদের স্টল নং ২৬৪। ক্লাসের মধ্যম শ্রেণীর এক ছাত্রের ৩০ বছরের কাহিনী যার ধারনা তার জীবন রাফখাতার মত যেখানে যা খুশি লেখা যায়।

 

৯) ধরুন, একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনার বালিশের পাশে একটা প্রদীপ দেখতে পেলেন। এবং কিছুক্ষণের মাঝেই বুঝতে পারলেন এটা আলাদীনের সেই আশ্চর্য প্রদীপ! আপনি আপনার যেকোনো তিনটা ইচ্ছে পূরণের সুযোগ পাবেন। আপনার সেই তিনটে ইচ্ছে কী হবে?

আমি পরিশ্রমে বিশ্বাসী। আলাদ্দিনের চেরাগ পেলে তাকে বলব প্রতিটা মানুষ যেন তার পরিশ্রমের সঠিক মূল্য পায়। আমি প্রদীপ পাব দেখে সব আমার হয়ে যাবে এটা কেমন কথা!

Raafkhata

বই: রাফখাতা

লেখক: রাসায়াত রহমান

বইটির ধরণ: উপন্যাস

প্রকাশকাল: অমর একুশে বইমেলা ২০১৫

প্রকাশনী: আদী

প্রচ্ছদ: নির্ঝর নৈঃশব্দ

মূল্য: গায়ের মূল্য ১৭৫, ২৫% কমিশন দেওয়ার পর ১৩০।

সাহিত্যস্বর সম্পর্কে

সরব বাংলাদেশে বই জনপ্রিয়করণের লক্ষ্যে কাজ করতে চায়। এই লক্ষ্যে আমরা নানান ধরনের কাজ করতে চাচ্ছি। প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে একুশে বইমেলা ২০১২তে বিভিন্ন ব্লগারদের বই আমরা প্রোমোট করতে চাইছি। প্রতিদিন একজন করে ব্লগার/লেখক এর ইন্টারভিউ আমরা ছাপানোর পরিকল্পনা নিয়েছি।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে উদ্যোগ, সাহিত্য-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।