তুমি হয়ত ভেবেছিলে তোমার জীবনটা হবে আকাশের বুকে মেঘের উড়ে চলার মত সহজ। অনেকে হয়ত অমন জীবনই পায়! নিঃসন্দেহে তারা সৌভাগ্যবান, কিংবা তারা হয়ত সৌভাগ্যবানদের মাঝেও সৌভাগ্যবান! কিন্তু তুমি তো তাদের মত কেউ নও, তুমি তো সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্মাতে পার নি ওদের মত! জীবনটা প্রতিনিয়ত তোমার সাথে চাইবে ছলনা করতে, তোমাকে পরীক্ষা করতে থাকবে, তোমার চলার পথটাকে পিছল করে দিতে থাকবে! টিকে থাকতে হলে তোমাকেই জীবনের বাঁকের সাথে তাল মিলিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার পথ করে নিতে হবে নিজের মত করে! চেষ্টা করতে হবে নিজের জীবনের পথটাকে নিজের মত করে গুছিয়ে নিতে! তাতে তোমার সামনে হাজারটা বাঁধা আসবে, বারবার তুমি হয়ত পরাজিত হবে! কিন্তু তবু তোমাকে চেষ্টা চালিয়ে যেতেই হবে।
জীবনে চলতে হলে, তিনটি জিনিসের উপর থেকে কখনও বিশ্বাস হারাতে হয় না –
আশা, আস্থা আর সততা…
হতে পারে নিজের কিছু কঠিন স্মৃতির তাড়নায় তুমি আজ ওদের এই তিন জিনিসের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছ। কিন্তু তুমি মনে রেখ, এই তিনটে জিনিস ছাড়া তুমি জীবনের পথে একটা কদমও ভালোভাবে হাঁটতে পারবে না। এই তিনটে জিনিস তোমার মাঝে না থাকলে প্রকৃতিই তোমাকে জীবনের পথে চলবার সুযোগ দেবে না!
আশা, সে যেন জীবনের আরেক নাম! মানুষ হয়ে যখন জন্মেছ, আশা নিয়েই তোমাকে বাঁচতে হবে! আশা ছেড়ে দেবার আরেক নাম হল নিজেকে নিজের হাতে গলা টিপে হত্যা করা! অনেকে হয়ত বলবে, ‘আশা – সেতো মরীচিকা’! কিন্তু জেনে রেখো, আশাকে মরীচিকা হিসেবে সম্বোধন করে সে, যে কিনা জীবনের পথে ছড়ানো কাঁটা দেখে পিছু হটে গেছে! তুমি নিশ্চয় ঐ কাঁটা দেখে পিছু হটতে চাও না! তুমি জয় করতে চাও সব অজেয়কে, সব বাঁধা ডিঙ্গিয়ে করতে চাও বিজয়োল্লাস! তোমাকে বলি, তুমি মনে রেখ, আশা কোন মরীচিকা নয়, আশা হল জীবনের চলার পথের মূল পাথেয়, যা ছাড়া জীবন অচল!
জীবনের উপর আস্থা থাকে না যার, সে কেমন করে জীবনে চলতে পারে? জীবনের পথটাকেই যদি তুমি বিশ্বাস করতে না পারলে, কেমন করে তুমি সে পথে চলবে? বেঁচে থাকতে হলেও জীবনের উপর আস্থা রাখতে হয়! জেনে রেখো, আস্থাহীন জীবন আর বিশাল সমুদ্রে ঝড়ের তোড়ে দিকভ্রান্ত একজন নাবিকের মাঝে কোন তফাৎ নেই!
অসততা করে জীবনে কখনও টিকে থাকা যায় না! তুমি নিজে অসৎ হলে কেমন করে জীবনে আর সবগুলো মানুষের কাছ থেকে সততা আশা করতে পার? আর তোমার আশে পাশের মানুষগুলো অসৎ হলে, তোমার চারপাশের পরিবেশ তোমার সাথে অসততা করলে তুমি জীবনে একটা পদক্ষেপও ঠিকভাবে ফেলতে পারবে বলে কর? কখনো না! প্রকৃতি অসৎ মানুষগুলোকে গ্রহণ করতে চায় না!
প্রত্যেকটা সফল মানুষের জীবনের দিকে তাকাও! একজনকেও পাবে না, যে কিনা জীবনে চলার পথে কখনও কোন বাঁধার সম্মুখীন হয় নি! একজনকেও পাবে না, যে কিনা অন্তত একবার হলেও জীবনে অস্বীকৃত হয় নি! পৃথিবীতে প্রতিটা মানুষ কখনও না কখনও বাজে সময় পার করে! যারা সেই বাজে সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, হতাশ না হয়ে সামনের দিকে হেঁটে যেতে পারে নিঃশঙ্ক চিত্তে, তারাই জীবনে বড় হতে পারে! তাদেরকেই আমরা আজ সফল মানুষ হিসেবে জানি!
জীবনে টিকে থাকতে হলে আরও একটা জিনিস লাগে।
জীবনের পথে দৃপ্ত পদক্ষেপে হাঁটতে হলে ‘ই-প্রত্যয়’র ব্যবহার করতে জানতে হয়!
ইতিহাসের দিকে তাকাও, এমন হাজারটা উদাহরণ পাবে, যারা জীবনে হোঁচট খেয়েছেন, আর তারপর জয় করেছেন বিশ্ব! কারণ, তারা জানতেন জীবনে কেমন করে ‘ই-প্রত্যয়’কে ব্যবহার করতে হয়!
জীবনে টিকে থাকতে হলে আরও একটা জিনিস লাগে।
জীবনের পথে দৃপ্ত পদক্ষেপে হাঁটতে হলে ‘ই-প্রত্যয়’র ব্যবহার করতে জানতে হয়!
ইতিহাসের দিকে তাকাও, এমন হাজারটা উদাহরণ পাবে, যারা জীবনে হোঁচট খেয়েছেন, আর তারপর জয় করেছেন বিশ্ব! কারণ, তারা জানতেন জীবনে কেমন করে ‘ই-প্রত্যয়’কে ব্যবহার করতে হয়!
কিন্তু এ ছাড়াও জীবনে টিকে থাকতে হলে আরেকটা জিনিস লাগে, আর তা হল ‘ই-প্রত্যয়’, ‘ই-প্রত্যয়’র ব্যবহার। সত্যি বলতে সাফল্যের মূলমন্ত্রই হল এই ‘ই-প্রত্যয়’।
ইতিহাসের পাতায় এমন হাজারটা উদাহরণ পাওয়া যাবে, যারা জীবনে হোঁচট খেয়েছেন, তারপর জয় করেছেন বিশ্ব! কারণ, তারা জানতেন জীবনে কেমন করে ‘ই-প্রত্যয়’কে ব্যবহার করতে হয়!
কিন্তু কী এই ‘ই-প্রত্যয়’? এমন প্রশ্ন হতেই পারে।
‘ই-প্রত্যয়’ হল একটা চেতনা, একটা দর্শনের নাম। একটু খোলাসা করে বলি:
‘ই-প্রত্যয়’ মানে হল লেগে থেকা!
ইতালির অধিবাসী অগাস্টিনো ডি’ অ্যান্টনিয়োর একবার খুব শখ হল তিনি একটি ‘মাস্টারপিস’ তৈরি করবেন। সেকালে মার্বেল পাথর দিয়ে ভাষ্কর্য তৈরির কাজ ছিল সবারই অজানা। কিন্তু অগাস্টিনো হাজারটা লোককে বলে-কয়ে বিশাল এক খণ্ড মার্বেল নিয়ে শুরু করলেন তার সেই ‘মাস্টারপিস’ তৈরির কাজ। দূর্ভাগ্য, তিনি সেবার ‘মাস্টারপিস’ তৈরি করতে পারেন নি। কিন্তু ক’দিন পরই তিনি বলে ফেলেছিলেন, ‘আমি এটা দিয়ে কিছুই করতে পারব না…’
এর অনেক বছর পর মাইকেল এঞ্জেলো মার্বেল পাথর দিয়ে ভাষ্কর্য তৈরি করবার কথা ভাবতে শুরু করলেন। অনেক চিন্তাভাবনা করে এক খণ্ড মার্বেল পাথর নিয়ে কাজও শুরু করলেন।
মাইকেল এঞ্জেলোও ব্যর্থ হয়েছিলেন।
কিন্তু মাইকেল এঞ্জেলোর একটা বড় গুণ ছিল। তিনি কোন কিছু হুট করে ছেড়ে দিতেন না! তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করবই!’
মাইকেল জীবনে যা কিছুর সম্মুখীন হয়েছেন, কখনো হাল ছেড়ে দিতেন না, লেগে থাকতেন নিজের সামর্থ্যের সবটুকু দিয়ে। এই লেগে থাকার মনোভাবের কারণেই পৃথিবীজোড়া ভাষ্করগণ আজ মাইকেল এঞ্জেলোকে একজন অনন্য ভাস্কর হিসেব শ্রদ্ধা করেন!
‘ই-প্রত্যয়’ মানে হল সাহস!
স্পেইনের সেরা সেরা নাবিকেরা অনেক চিন্তাভাবনা শেষে রানী ইসাবেলা আর রাজা ফার্দিন্দকে বলেছিলেন, কলম্বাসের দেখানো ‘সহজ’ পথে কখনই পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে বেঁচে থেকে নোঙ্গর করা যাবে না। কলম্বাস জোর গলায় বলেছিলেন – ‘আমি যাবই’ এবং আজ আমরা সবাই জানি, কলম্বাস তা করে দেখিয়েছিলেন!
কলম্বাস পেরেছিলেন, কারণ তিনি ছিলেন প্রচণ্ড সাহসী! তিনি জানতেন, পৃথিবী ভীরু কাপুরুষদের জন্যে নয়!
কলম্বাস সাহসী ছিলেন বলেই ইতিহাসের পাতায় আজ তার নাম লেখা হয়ে গেছে!
‘ই-প্রত্যয়’ মানে হল আত্মবিশ্বাস!
বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক থমাস আলভা এডিসন তার বন্ধু হেনরি ফোর্ডের মোটরকার তৈরির চিন্তাকে নিরুৎসাহিত করে বলেছিলেন, খামোখা সময় নষ্ট না করতে। ফোর্ড বলেছিলেন, ‘আমি এটা করে দেখাবই!’ কিন্তু এডিসন নিজেই একসময় ফোর্ডের কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলেন তার গবেষণাগারে কাজ করতে! হেনরি ফোর্ড তার স্বপ্নের এই মোটরগাড়ী তৈরি করে দেখিয়ে দিয়েছিলেন!
হেনরি ফোর্ডের সেই গাড়ীতে রিভার্স গিয়ার ছিল না, সে গাড়ী পেছনে চালানো যেত না! কিন্তু তিনিই প্রথম আধুনিক মোটরগাড়ী তৈরির পথ বাতলে দিয়েছিলেন। তিনি এটা পেরেছিলেন, কারণ তার ছিল অসাধারণ আত্মবিশ্বাস!
কে জানে, ফোর্ড কখনও পিঁছু ফিরে তাকাতে চাইতেন না বলেই হয়ত তার সেই গাড়ীতে রিভার্স গিয়ার ছিল না!
‘ই-প্রত্যয়’ মানে হল সাধনা!
বন্ধু-বান্ধব সবাই মাদাম কুরিকে তেজষ্ক্রিয়ার কথা ভুলে যেতে বলেছিলেন। কিন্তু মাদাম কুরি বলেছিলেন, ‘আমি এটা প্রমাণ করবই!’
মাদাম কুরি রেডিয়াম আবিষ্কার করেছিলেন, তিনি তেজষ্ক্রিয়া আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন। মাদাম কুরি এটা করতে সমর্থ্য হয়েছিলেন, কারণ তিনি এর জন্যে নিরলস সাধনা করেছিলেন। মানুষের সাধনা বড় কঠিন জিনিস, কোনদিন বিফলে যায় না!
জগতে যারা ঠিকভাবে সাধনা করতে জানে, তারা ঠিকই সফল হয়! ‘ই-প্রত্যয়’ মানে হল স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা।
রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের কথা কে না জানে! রাইট ভ্রাতৃদ্বয় যখন প্রথম তাদের উড়োজাহাজ বানাবার কথা বলেছিলেন, তাদের বন্ধুবান্ধব তাদের নিয়ে তামাশা করেছিলেন। আর্মড ফোর্সের অনেক বিশেষজ্ঞ তাদের নিরুৎসাহিত করেছিলেন।
রাইটরা যখন তাদের উড়োজাহাজের মডেল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন, সাংবাদিকেরা উপহাস করে বলেছিলেন পাগলের অনর্থক সময় ক্ষেপণ! এমনকি তাদের বাবাও তাদের বহু ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ করেছিলেন।
কিন্তু রাইট বলেছিলেন, ‘আমাদের একটা স্বপ্ন আছে। আমরা আমাদের এই স্বপ্ন পূরণ করবোই!’
রাইট ভ্রাতৃদ্বয় এটা করে দেখিয়েছিলেন। তাদের মাঝে ছিল স্বপ্ন পূরণের অদম্য ইচ্ছে। ইচ্ছে অনেক সময় মানুষকে নিজের সাধারণ সামর্থ্যের চাইতেও অনেক বেশে কিছু করে দেখাবার সুযোগ করে দেয়। মানুষ যখন কোন ইচ্ছে করে, সে তার জন্যে কাজ করে, সে সেটা করতে পারেই! রাইট ভ্রাতৃদ্বয়ের সেই ইচ্ছে ছিল, তাই তাদের নাম আজ ইতিহাসের পাতায় সোনার হরফে লেখা হয়ে আছে!
‘ই-প্রত্যয়’ মানে হল হিসেব করতে জানা!
ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীর নাম শোনেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া হয়ত কঠিন হবে। বখতিয়ার তার সাহস, আত্মবিশ্বাস, মনোবলের জোরে বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ইতিহাস তাকে মনে রাখতে একটুও ভুল করে নি। কিন্তু জীবন খাতায় হিসেব কষতে গিয়ে তিনিও একটি বড় ভুল করে ফেলেছিলেন। যার ফল হয়েছিল, দেভকোট থেকে ভারতে ফিরবার সময় আলী মরদানের হাতে নৃশংসভাবে খুন হতে ছিল তাকে। বখতিয়ারের ভুলটা ছিল, প্রচণ্ড সাহস আর মনোবল তাকে নিজের উপর এতটাই বেশী আত্মবিশ্বাসী করে ফেলেছিল যে তিনি নিজের নিরাপত্তার দিকেও ঠিক মনোযোগ দিতেন না। আর সেই ফাঁকে আলী মরদান খুন করেছিল ইতিহাসের অন্যতম সাহসী এক যোদ্ধাকে।
বখতিয়ার খুব ছোট্ট একটা ভুল করেছিলেন – কোথায়, কীভাবে কতটা সহসী হওয়া প্রয়োজন, কতটা সাহস দেখানো প্রয়োজনে, তার হিসেবে একটু গড়মিল করে ফেলেছিলেন। আর এই ছোট্ট ভুলটার মাশুল তাকে দিতে হয়েছিল জীবন দিয়ে।
জীবনের পথে চলতে হলে স্বপ্ন দেখতে হয়, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্যে এগিয়ে যেতে হয় সব বাঁধা-বিঘ্ন উপেক্ষা করে। তার জন্যে প্রয়োজন হয় সাহস, আত্মবিশ্বাস, সাধনা, মনোবল। আরও জানতে হয় হিসেব করতে! কোথায়, কখন, কীভাবে সাহস দেখাতে হয়, আত্মবিশ্বাসী হতে হয়, মনোবল ধারণ করেতে হয় – খুব সূক্ষ্ণভাবে তার হিসেব কষতে জানতে হয়! প্রকৃতির কাছ থেকে খুব যতনে এই হিসেব করে নেয়াটা শিখে নিতে হয়! কোন স্কুল-কলেজে এই হিসেব শেখানো হয় না! চোখ-কান খুলে প্রকৃতির দিকে তাকাতে জানলেই এই হিসেব শেখা যায়!
‘ই-প্রত্যয়’ মানে হল ঘুরে দাঁড়ানো!
মানুষ বড্ড অভিমানী প্রাণী; প্রকৃতি মানুষকে বড্ড অভিমানী একটি প্রাণী হিসেবে তৈরি করেছে। কোন কিছুর কাছ থেকে অস্বীকৃত হওয়াটা সে কোনভাবেই মেনে নিতে পারে না। মানুষ কারো কাছ থেকে অস্বীকৃত হয়ে মুখ গোমড়া করে বসে থাকলেও জীবন কিন্তু থেমে থাকে না! সে চলতেই থাকবে তার আপন গতিতে! অভিমান নিয়ে বসে থাকলে জীবনে পিছিয়ে পড়া ছাড়া আর কোন লাভই হয় না। জীবন তার প্রতি অভিমানকারীর দিকে ফিরে চাইতে বাধ্য নয় মোটেও। কিন্তু যে কিনা জীবনে হোঁচট খেয়েও অভিমান ভেঙ্গে ঘুরে দাঁড়াবে, খুব হিসেব করে আরও দৃপ্ত পদক্ষেপে সামনে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করতে থাকবে, সে একদিন জয়ী হবেই! হোঁচট খাওয়া মানেই হেরে যাওয়া নয়, বরঞ্চ হোঁচট খেয়ে যে দমে যায়, জয়ের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে, সেই পরাজিত হয় জীবন থেকে!
‘ই-প্রত্যয়’ মানে হল পরিশ্রম করতে পারা! জীবনের খুব বড় একটা ধর্ম হল, সে পরিশ্রমকে কখনও ঠকায় না! যেখানে যেমন আচরণই করুক না কেন, পরিশ্রমের প্রতি জীবন বড্ড দুর্বল। পরিশ্রমীকে জীবন আপন করে নিতে খুব ভালোবাসে! শুধু জানতে হয়, কেমন করে পরিশ্রম করতে হয়! কেমন করে নিজের মেধা, শ্রমকে ঠিক জায়গায় কাজে লাগাতে হয়!
‘ই-প্রত্যয়’ মানে হল অত্যানুকূল পরিবেশ খুঁজে নিতে পারা।
জীবনে চলার পথে চাওয়া আর পাওয়া সবসময় মনমত হবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এর মাঝেই নিজের জন্যে সবচাইতে উপযোগী পরিবেশটা তৈরি করে নিতে হবে। নিজের সবচাইতে অনুকূল সেই পরিবেশটা খুঁজে নেবার জন্যে হিসেব করতে হবে। খুব সূক্ষ্ণভাবে হিসেব কষে নিজের প্রয়োজনমত সেরা পরিবেশ বের করে নেয়াটাকে বলে বিচক্ষণতা! এরজন্যে গভীররভাবে চিন্তা করতে জানতে হয়!
‘ই-প্রত্যয়’ মানে হল জীবনকে উপভোগ করতে জানা!
জীবনে চলতে যেয়ে, লক্ষ্যকে জয় করবার জন্যে সাহস, আত্মবিশ্বাস অর্জন করতে করতে, জীবনের হিসেবে অতি ব্যস্ত হয়ে গিয়ে যদি জীবনকে উপভোগ করবার কথাই মনে না থাকে, নিজেকে নিজের পথে ধরেরাখা যায় না! একটা খুব ভাল মোটরও একটানা কাজ করতে থাকলে একসময় অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। লক্ষ্য অর্জনের জন্যে খুব ভালোমত কাজ করতে থাকলেও যদি জীবনকে উপভোগ করবার সুযোগ না থেকে, ও পথে খুব বেশীক্ষণ টেকা যায় না! বিরক্তি চলে আসে নিজের উপর! শুধু লক্ষ্য অর্জনের জন্যে না, জীবনে নিজেকেও সময় দিতে হয়!
জীবনে এটা বিশ্বাস করে নেয়া শিখতে হয় যে, জীবনে যা হয়েছে, সব ভালো’র জন্যেই হয়েছে। সামনে যা আসবে, তাও ভালো’র জন্যেই আসবে! জীবনে যা হয়েছে, যা হচ্ছে, যা হবে – তার সবকিছুর সাথে মানিয়ে নিতে পারা আর তারপর সামনে এগিয়ে যেতে পারাটাই আসল! জীবনে মানে হোঁচট খেয়ে চুপ করে বসে থাকা নয়, জীবন মানে বারবার চেষ্টা করে নিজেকে কোন কিছুর জন্যে যোগ্য করে গড়ে তোলা, যোগ্যতম হিসেবে কোন কিছু অর্জন করে নেয়া!
জীবনে যা কিছু হবে, তার সবকিছু যেন আমরা সহজভাবে মেনে নিতে পারি! আশা, সততা, বিচক্ষণতা, আস্থা, বিশ্বাস, মনোবল আর পরিশ্রমের ঘামের দামে ঘুরে দাঁড়িয়ে সব বাধাবিঘ্ন পার করে, জীবনকে জয় করে জীবনের স্বার্থকতা অর্জন করতে পারি! জীবনের ছলনার হাসিতে কেউ যেন প্রতারিত না হয়! জীবনের অঙ্কে কেউ যেন ভুল না করে! বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই জীবনকে জয় করতে হয়!
“মেঘ দেখে কেউ করিস নে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে…”
[প্রথম প্রকাশ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত সাময়িকী ‘স্বপ্নচারী’ এর প্রথম সংখ্যায় পরিমার্জিত ও সংক্ষেপিত আকারে প্রকাশিত]
ইন্টারেস্টিং!