আমি এই লেখায় একটা ছোট ইস্যুকে হাইলাইট করার চেষ্টা করব।
সেটা হচ্ছে সাধারণ ধার্মিক মুসলিমসহ অনেকেরই ইচ্ছা যে নাস্তিকরা/ অমুসলিমরা/ ইসলাম বিরোধীরা ইসলাম নিয়ে কিছু না বলুক! বিশেষ করে নেতিবাচক ভাবে বা অপমানজনক ভাবে।
এই বিষয়ে প্র্যাক্টিকাল অবস্থান কী হওয়া উচিৎ?
আমি নৈতিক এবং ধর্মীয় গ্রাউন্ডে বলছি না। প্র্যাক্টিকাল অবস্থান থেকে বলছি।
অনেকের স্বপ্নঃ ইসলাম বিরোধী কথা বন্ধ হোক! পৃথিবীতে আমরা সবাই মিলে মিশে চালে ডালে খিচুড়ি হয়ে থাকব!
কিন্তু দুঃখজনক হলে সত্যি সেই স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে না খুব শীঘ্রই!
আমি নিজেও কয়েক বছর আগে প্লুরালিজম নিয়ে লিখেছিলাম। উল্টা ২ সাইডের গালি খাইছি! [১]
১ম পয়েন্ট, ইন্টারনেট এ সেন্সর করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। (চায়নার কাহিনী অনেক কমপ্লিকেটেড, ইরানে ফেইসবুক নিষিদ্ধ হলেও বিপুল পরিমাণ লোকজন ব্যবহার করে… এই যুগে নিষিদ্ধ করাটা প্রায় অসম্ভব! )
২য় পয়েন্ট, মুক্ত ইন্টারনেট নিয়ে দুনিয়ার অধিকাংশ মানুষের যে আইডিয়া সেটা খুব শীঘ্রই বদলাচ্ছে না। এই খানে সেন্সরশিপ অধিকাংশ মানুষ পছন্দ করে না। প্রধান ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোও আমেরিকা বাদ দিলে অন্য কোন সরকারের কথা খুব বেশি আমলে নেয় না! সুতরাং বর্তমান অবস্থা শীঘ্রই বদলাচ্ছে না।
বর্তমান দুনিয়ার প্রেক্ষিতে একটা জিনিস বলা যায়ঃ ইসলাম বিরোধী কথা কমবে না — আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এবং জাতীয় পর্যায়ে। ধর্মীয় উগ্রবাদীদের কারণে সারা দুনিয়ার মানুষ আরও উগ্র হয়ে উঠছে।
পৃথিবীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশীরা/ বাংলাভাষীরা নামে বেনামে নানান ভাবে চাইলেই ইসলামের বিরুদ্ধে লিখতে পারেন। অনেকে নিয়মিত লিখছেনও! এবং এটা শুধু বাড়বেই।
এবারে আসি যেহেতু এই জাতীয় লেখা থামানো অসম্ভব। সেহেতু মুসলিমরা কী করতে পারেন?
অ্যাভয়েড করা! খুব সহজ ব্যাপার!
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে অনেকের জন্য সেটা সহজ ব্যাপার না!
কিন্তু সেটাই করতে হবে।
আমি অনলাইনে প্রচুর সময় ব্যয় করি। গুগল এর কাঁধে চড়ে এখানে সেখানে যাই।
বিলিভ মি!
ইসলামের অবমাননা বা মুসলিমদের অবমাননা মোটামুটি সর্ব প্রকারের ওয়েবসাইটেই পাবেন!! উইকিতে কার্টুন পাবেন, নিউজসাইটে হাসাহাসি, ইউটিউবের কথা তো বাদই, ওপিনিয়ন আর্টিকল বলেন, মুভি বলেন, পর্ণ বলেন … এই লিস্ট শেষ হবার না।
কোটি কোটি পেইজ পাবেন। লক্ষ লক্ষ সাইট।
এমন অনেক সাইট আছে যা মুসলিমদের হবার ভান করে আসলে মুসলিম বিরোধী – এই অবস্থায় আপনি কী করবেন? আমি দেখেছি এই জাতীয় রিভার্স খেলাটা খুব কম লোকই বুঝতে পারেন।
সহজ সমাধানঃ
ইন্টারনেট পুরোটা ঝাড়ু দেয়া সম্ভব না!
আপনাকে জুতা পরতে হবে!
যদি জুতা না পরেন, ঝাড়ু দিতে চান তাহলে কী হবে সেটা বলি।
স্ট্রাইজ্যান্ড ইফেক্ট নামের একটা চমৎকার ফেনোমেনা আছে [২]। বারবারা স্ট্রাইজ্যান্ড নামের এক মহিলার নামে এই ইফেক্ট এর নাম। মেইন থিম হচ্ছে, কোন কিছু ধামাচাপা দিতে গিয়ে সেটা আরও ছড়িয়ে দেয়া!
মূল কাহিনী হল বারবারা স্ট্রাইজ্যান্ড নামের এই মহিলা, এক ফটোগ্রাফারকে ৫০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন যেন তার বাড়ির ছবি মুছে ফেলা হয় ১২০০০ ছবির একটি কালেকশন থেকে। ফটোগ্রাফার আসলে কোস্টাল এরিয়ার ছবি তুলেছিলেন পলিসিমেকারদেরকে দেখাতে যে কী হচ্ছে কোস্টাল এরিয়ায়। মামলার আগে, ১২০০০ ছবির মধ্যে বারবারার ছবিটি মাত্র ৬ বার দেখা হয়েছিল। মামলার পরে কয়েক লক্ষ বার দেখা হয়!
এই বাড়ির ছবি লুকাতে চেয়েছিলেন বারবারা। কিন্তু ফলাফল আসল উল্টো!
সেই থেকে এই রকম ঘটনার নাম হয়ে যায় স্ট্রাইজ্যান্ড ইফেক্ট! এ যেন পাগলকে সাঁকো নাড়ানোর কথা মনে করিয়ে দেয়া!!
শার্লি হেব্দো’র কথা মনে আছে?
কতজন পড়ত? যেই মানুষ খুন করল, দুনিয়ার অধিকাংশ লোক এই পত্রিকার কথা জানে। খুন করার আগে এবং পরের সার্কুলেশনটা দেখুন।
শার্লি হেব্দোর আগে পরের সার্কুলেশন
দেখুন কীভাবে উগ্রবাদিরা নবীর অপমান বন্ধ করতে গিয়ে কিংবা শাস্তি দিতে গিয়ে নিজেদের ধর্মের বারোটা বাজালো!
এখন শার্লি হেব্দোর কার্টুন স্থান পাচ্ছে উইকিপিডিয়ায় (যা কিনা কোটি কোটি লোক প্রতিদিন ব্যবহার করছে!), একই ভাবে ডেনমার্কের সেই পত্রিকার কথা মনে আছে? কার্টুনগুলো অন্য সব পত্রিকা তো ছাপিয়েছেই, এখন উইকিতেও সেইগুলা আছে!
একই ব্যাপার ঘটছে অভিজিৎ রায়কে নিয়ে। অভিজিৎ রায়কে আগে হয়ত বড় জোর কয়েক লক্ষ অনলাইন লোক চিনত। পাঠকের সংখ্যাও ছিল সীমাবদ্ধ।
অন্য দিকে অভিজিৎকে নৃশংসভাবে খুন করে উগ্রবাদীরা আসলে উল্টো ঘটনা ঘটাল। এখন অনেক বেশি লোক উনার নাম জানে।
বিভিন্ন ব্লগে, ফেইসবুক গ্রুপে, প্রোফাইলে উনার লেখার লিঙ্ক শেয়ার বেশি হচ্ছে।
অভিজিৎ চর্চা বেড়ে গেছে অনেক গুণ!
তসলিমা নাসরিন এর ক্ষেত্রেও এমন হয়েছিল!
লেখার মান যেমনই হোক, বিতর্ক বিশাল পাবলিসিটি তৈরি করে।
নিষিদ্ধ করাটাও আরেক রকমের ভুল!
নিষিদ্ধ বিষয় এর প্রতি মানুষ বেশি ঝোঁকে।
সুতরাং যদি চান যে কোন বিশেষ লেখা/ সাইট / বই না ছড়াক। সেটা নিয়ে উচ্চবাচ্য কম করুক! লেখার মান খারাপ হলে, চিন্তাভাবনা দুর্বল হলে এমনিতেই সেই চিন্তা এক চিপায় পড়ে মরে যাবে!!
ইন্টারনেট এর যুগে বুদ্ধিমান এর কাজ হবে, অপছন্দের লেখা/সাইট/ লেখক এড়িয়ে যাওয়া। উল্টো কাজ করেছেন তো স্ট্রাইজ্যান্ড ইফেক্ট ঘটবে!
ইন্টার্নেটকে একটা বিশাল বন ধরলে সেখানে যেমন অনেক সুন্দর ফুল ফল পাখি পাবেন, তেমন অনেক আবর্জনাও পাবেন। কোন বিষয়কে আবর্জনা ভাববেন সেটা আপনার উপর।
[১] জেনেটিকস সেই আবিষ্কার যা আমাদের নিজেদের শেকড় এর কথা মনে করিয়ে দেয়
ঋণাত্মক প্রচারণা নদীর মতন। বাঁধ দিলে উপচে পড়ে।
তবে এই ব্যপারটার যে একটা নাম আছে তা জানা ছিল না।
এই যে গত কিছুদিন ভারতের “ইন্ডিয়াস ডটার্স ” নিয়ে ব্যান ব্যান খেলা চলল, শেষতক তো ভারত সরকারের জন্যই তা বুমেরাং হল। ওই ব্যান করা প্রতিবেদন তো সবাই দেখলই, সাথে একগাদা বদনামও মিলল।
খুব জরুরি সব কথা। বিশেষ করে জুতা না পরলে তার প্রভাব যে কতটা প্রকট হতে পারে সেটার চমৎকার প্রমাণ এই ইফেক্ট। সবার জানা উচিত।
কঠিন পোস্ট! :beshikhushi: