আপনারা হয়ত অনেকেই জানবেন, বাংলাদেশ গরিব দেশ এইটা সবাই বলে। কিন্তু কতটা দরিদ্র?
বাংলাদেশ কিন্তু ভারত, পাকিস্তান থেকেও অনেক দরিদ্র।
আসুন একটা গ্রাফ দেখি
১৯৭০ এর দশকে বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান শ্রী লংকা বেশ কাছাকাছি ছিল, জিডিপি পার ক্যাপিটা ( মাথা পিছু আয়) এর দিক থেকে। এরপর গত ৪০+ বছরের ট্রেন্ডটা দেখুন।
শ্রী লংকা কই চলে গেছে আর আমরা কোথায়! এর মধ্যে শ্রীলংকার যুদ্ধের কাহিনী জানেন তো?
শ্রী লংকা ২৫ বছর গৃহযুদ্ধের মধ্যে ছিল, প্রায় ১ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল সেই যুদ্ধে। এর ইমপ্যাক্ট অর্থনীতির উপর তো বুঝতেই পারছেন! [১]
আবার এই দিকে পাকিস্তান এর জঙ্গি সিচুয়েশন এর কথা তো জানেনই, বোমা বাজি, সামরিক শাসন — তবু সব কিছু মিলিয়ে আমাদের চেয়ে পার ক্যাপিটা জিডিপি তাদের বেশি! পাকিস্তান এর জনসংখ্যা কিন্তু এখন বাংলাদেশের থেকে বেশি [2]। সুতরাং জনসংখ্যা বেশি বলে আমরা গরিব এই এক কুমির বার বার দেখিয়ে আমরা এই কারণে এতটা গরিব বললে তো চলবে না!
একটা দেশে যুদ্ধ নাই, বোমাবাজি নাই, সস্তা শ্রমিক, শান্ত নাগরিক, ইথনিক কনফ্লিক্ট তেমন নাই – এত চমৎকার ফাঁকা রাস্তা থাকা সত্ত্বেও কেন আমরা উন্নতি করতে পারলাম না?
মূল সমস্যা আসলে সুশাসন এর অভাব। আমাদের গুড গভর্ন্যান্স নাই। আমাদের সরকার এবং প্রশাসন আমাদের ঠিক মতো দেশ পরিচালনা করতে পারে না। ঠিক মত প্ল্যানিং নাই, প্ল্যানিং থাকলে বাস্তবায়ন নাই। দুর্র্নীতির কারণে টাকা পয়সা আসল কাজে যাবার কথা থাকলে সব যায় অল্প কিছু লোকের পকেটে।
ইকনমিষ্ট এর একটা আর্টিকল থেকে দেখি [৩]
With the lowest labour costs in the world (textile workers make about $35 a month) it (Bangladesh) should be growing faster than China, not more slowly than India. It is badly governed, stifled by red tape and faces severe environmental problems.
এই পত্রিকার মতে, আমাদের সস্তা শ্রমিকদের কারণে আমাদের চায়নার চেয়ে দ্রুত গতিতে আগানোর কথা ছিল অর্থনীতিতে!
অথচ আমরা কোথায়!
আমাদের অর্থমন্ত্রীর অদক্ষতা নিয়ে একটা কোট দিচ্ছি [৪]
দেশে এখন বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ থাকার পরও আমাদের শিল্প উদ্যোক্তারা কেন বিনিয়োগ করছেন না, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। কেন তারা বিনিয়োগ করছেন না- আই ডোন্ট নো।”
বিনিয়োগকারীরা বলছেন- অনিশ্চয়তার কারণে তারা বিনিয়োগ করছেন না। কিন্তু আমি এর কোনও যৌক্তিকতা দেখি না। এটা বোগাস কথা।”
এই হচ্ছে আমাদের নীতি নির্ধারকদের অবস্থা!!
কে তাঁদের নির্বাচন করে? আমরাই।
আমরা যদি সচেতন না হই তাহলে তো তারা এই ভুলগুলো করেই চলবেন!
সিংগাপুর আর সাউথ কোরিয়ার সাথে বাংলাদেশ একই লেভেল এ ছিল, এমনকি বাংলাদেশ সাউথ কোরিয়ার চেয়ে ভালো অবস্থায় ছিল!!! এখন দেখুন কী অবস্থা?!
উপরের গ্রাফ কিন্তু টোটাল জিডিপি! আর বাংলাদেশের জনসংখ্যা কিন্তু কোরিয়ার কয়েক গুণ এবং সিংগাপুরের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। আমরা কতটা দরিদ্র এটা বোঝা যায়। কীভাবে এই দুটি দেশ এগিয়ে গেলো আমাদের চেয়ে?
উত্তর সুশাসন। এই দেশগুলোর সরকার, সরকারি প্রশাসন দেশকে সঠিক ভাবে চালাতে পেরেছেন। আমরা পারি নি।
আসুন নিজেদের প্রশ্ন করি
কী করেছি আমরা গত ৪৪ বছরে? আমাদের সরকার কতটুকু জবাবদিহিতা করে আমাদের কাছে?
স্বাধীনতা দিবসে, শেষ করি একটি পজিটিভ নিউজ দিয়ে।অনেক সমস্যার মধ্যে কিছু কিছু দিকে আমাদের পার্ফমেন্স ভালো। বাংলাদেশে শিশু মৃত্যুর হার ভারত বা পাকিস্তানের চেয়ে অনেক যদি আমরা ওদের চেয়ে গরিব দেশ। এটা দেশের সরকার, এঞ্জিও, স্বাস্থ্যকর্মী, মিডিয়া, সাধারণ মানুষ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই সম্ভব হয়েছে।
এই সব ভালো দিকগুলো আমাদের উৎসাহিত করুক অন্য দিকগুলাকে এগিয়ে নিতে। আসুন ফ্যাক্ট বেইজড ভিউ গড়ে তুলি। ক্ষমতায় যারা থাকে তাঁদের ভুল ভাল দেখিয়ে দেই, প্রশ্ন করি।
মনে রাখবেন, প্রশ্নের ক্ষমতা অনেক!
সূত্রঃ
[১] http://www.abc.net.au/news/2009-05-20/up-to-100000-killed-in-sri-lankas-civil-war-un/1689524
[২] http://www.worldometers.info/world-population/pakistan-population/
[৩] http://www.economist.com/news/briefing/21565617-bangladesh-has-dysfunctional-politics-and-stunted-private-sector-yet-it-has-been-surprisingly বোল্ড আমি করেছি
[৪] http://bangla.bdnews24.com/economy/article874226.bdnews
সব ডাটা Worldbank থেকে নেয়া,
ডাটাবাবার ডাটাগিরি ভালই লাগলো।
তবে, কিছু বিষয়ে কিন্তু আছে।
নেপালে শুনেছি মাথাপিছু আয় আরো কম, অথচ, তারা সুখ বিষয়ক কি যেন বের করেছে শুনেছি। যাতে কি না, তারা বেশ এগিয়ে আছে।
প্রশ্ন হচ্ছে, আসলে কি, মাথাপিছু আয়টা বেশী জরুরী?
এমন তো হতে পারে, এদেশের সরকারী ভর্তুকি অনেক বেশী বলে সেটা কম।
আর জিডিপির ব্যাপারটাও কেন জানি ফাঁকি, অন্তত সিঙ্গাপুরের কথা আনলে। যেমন, সিঙ্গাপুর পুরোপুরি ব্যাবসা কেন্দ্রিক। তাদের কৃষিপণ্যের হিসাব নেই। আর আমাদের কৃষকদের বড় অল্প দামে বেঁচতে হয় শস্য। সব মিলিয়ে তো, সমান পরিশ্রমে জিডিপিতে অল্প কিছুই পড়ল। তবে এটা ঠিক, আমাদের দক্ষ জনশক্তির বড় অভাব আছে। অভাব আছে কৃষিকাজে প্রযুক্তির ব্যবহারের। কিন্তু, সেটাও তো ঐ কৃষকদের কথা চিন্তা করেই পিছিয়ে আছি।
দক্ষিণ এশিয়ায় বৈদেশিক নীতি আর শিক্ষার কথা বাদ দিলে, আমি মনে করি ভারত, শ্রীলংকা আর পাকিস্তানের ঠিক পরই বাংলাদেশের অবস্থান। ভারত বড় দেশ হিসাবে ভাল করবে, এটা মেনে নিলেও, শ্রীলংকার মত যুদ্ধপ্রবণ দেশের সাথে এটা কিছুতেই মানা যায় না। আর আমি মনে করি, জাতিগত ভাবে আমরা পাকিস্তানকে শিক্ষা ক্ষেত্রে পেছাতে না পারলে, সেটা আমাদের জাতীয় লজ্জা।
কোরিয়া কিন্তু তাদের দখরকারী জাপানের সাথে টেক্কা দিতে গিয়েই এত উপরে উঠেছে।