-হ্যালো! কালতো চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি- ভ্যালেন্টাইন-ডে।
সকালসকাল টিএসসি চলে যাওয়া,
দুপুরে একসাথে নীরব কিংবা স্টারে খাওয়া।
বিকেলটায় ধানমণ্ডি লেকে নৌকায় চাপার আবেদন বিনীত সুরে,
সন্ধ্যাটা কাটলো না’হয় সংসদভবনের বিপরীতের জায়গাটায়-
একটু নৈকট্য, আর খানিকটা উষ্ণতা বিনিময় করে।
কি, এখনো প্ল্যানিং চলছে বুঝি?
-কি বলছ যত ছাইপাঁশ!
মানুষের হাঁটে শরীরের করসৎ কিংবা ঠোঁটের ঘর্ষণে উষ্ণতা বিনিময়!
অতোটা নিলাজ এখনও হয়ে উঠতে পারি নি।
বড়জোর হাত ধরে হাঁটাহাঁটি, পারিপার্শ্বিকের তীব্র আবেদন অনুপেক্ষনীয়-
দিলাম না’হয় দক্ষিণ হস্ত তার বাম কাঁধে চাপিয়ে।
আর কিছু না, বাবা। ঐ যথেষ্ট।
আমি ভীষণ লাজুক সে ছোট্ট বেলা থেকে।
-ও আচ্ছা। তাই নাকি?
তা হে সুবোধ, আরো-তো উপায় আছে!
রিক্সায় চেপে হুড উঠিয়ে দাও,
নষ্ট সোডিয়াম ল্যাম্পের নীচে থাকা বেঞ্চিটাতে বসো।
কিচ্ছু দেখে যাবে না।
আর দেখা গেলেই বা-কি-
ওখানের সবাই একজাত।
একই উদ্দেশ্য সাধনের লোভে সবাই ভিড় করে ওখানে।
কিন্তু সবচাইতে ভালো হয়-
‘তাকে’ নিয়ে একটা মাঝারী মানের থাকার হোটেলে উঠলে।
কম পয়াসায় এমন হোটেল অনেক আছে এই শহরে।
বনানী ওভারব্রিজের পশ্চিম-দিককার হোটেলগুলোর নিচে দাঁড়িয়ে
থাকা ‘মামাগুলো’ খুব মাই-ডিয়ার ধরণের।
বিশটা টাকা হাতে এক্সট্রা ধরিয়ে দিলেই-
তোমার বাকি সময়টা কাটবে পোসড্ ডিমের ভেতরের মতোই রসালো।
হা…হা…হা।
-কি বলছো এসব!
চুপ করো…চুপ করো…চুপ করো।
-আহা, তোমায় স্মার্ট হওয়ার কিছু টিপস দিচ্ছি আর-কি।
ভয় কিসে?
-আমি ওসব শুনতে চাই না।
– তাহলে অন্য প্রসঙ্গেই বলি,
আমার কাছে কথা বলার হাজারটা প্রসঙ্গ আছে।
তোমার মা বহুদিন ধরে বাতের ব্যথায় ভুগছে-
ইদানিং বোধয় খুঁড়িয়ে-খুঁড়িয়ে হাঁটছেন,
পঙ্গু হতে আর বেশিদিন নেই বাকি-
আগে থেকেই দু’টা স্ক্র্যাচ কিনে ফেলা উচিত, নাকি?
অবশ্য সস্তা ধরণের লাঠিও পাওয়া যায়-
অল্প খরচায় পার করে দিতে পারো!
-চুপ করো তুমি, না’হয় তোমার টুটি চেপে ধরবো।
– আচ্ছা, তোমার বাবা না সামনে মাসে রিটায়ার্ড করছে?
সরকারি চাকুরী; ভালো অ্যামাউন্টের পেনশন পাওয়ার কথা।
মায়ের চিকিৎসা-ফিকিৎসা করে তো কোন লাভ নাই,
ইঞ্জিনের বয়স হয়েছে না, দু’দিন পর তো এমনি-ই ঠুস!
বরং এক কাজ করো- বিয়ে করে ফেলো,
বউ নিয়ে এসে ঘরে তোলো।
টিপিক্যাল বাংলা সিনেমার মতো বাপা-মা’রে পাঠাও বৃদ্ধাশ্রমে।
দিব্যি আয়েশ করে কাটবে জীবনটা।
-আরেকটা শব্দ করলে তোমায় খুন করবো!
-নিজের বিবেককে কি খুন করা যায়?
বিবেক তো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোন বস্তু নয়-
এর স্বাদ নেই, গন্ধ নেই,
ছোঁয়া যায় না, দেখা যায় না।
কেবল অনুভব করা যেতে পারে,
যেটা তুমি করছো এখন!
-তুমি কি চাও?
– তুমি যা চাওনা সেটাই আমি চাই!
-মানে?
– প্রতিবছর–তো ‘তাকে’ নিয়ে ভ্যালেন্টাইন করো-
এবার না’হয় পরিবারের সবাইকে নিয়েই করলে সেটা।
টিউশনির টাকা দিয়ে কিনে ফেলো না একটা সাদা ফতুয়া
বাবার তো সাদা ফতুয়া খুব পছন্দের।
প্রতিদিন-তো ছোটবোনই চা বানিয়ে খাওয়ায়,
কাল না’হয় তুমি-ই চায়ের কাপ নিয়ে ওর রুমে হাজির হবে।
লিকার না’হয় একটু কম-ই হবে কিংবা
চিনির আধিক্যে হয়তো একটু শরবত-শরবত লাগবে।
তাতে কি-
সে খুব আগ্রহ নিয়েই খাবে।
ওসবের জন্য তোমায় ঝাঁজালো বক্তৃতা শোনাবে না
কিংবা মেঝেতে কাপটা ছুঁড়ে ফেলবে না সজোরে!
খুব আগ্রহ নিয়েই পেয়ালার সবটুকু চা শেষ করবে।
তুমি করেই দেখোনা!
তোমার মা’র হাত ধরে একটা বিকেল ছাদে ঘুরে বেড়াও না,
ভয় নেই। শুরুতে যদিও বলবেন-
‘কি আদিখ্যেতা দেখেচ্ছিস, হাত ছাড়।’
কিন্তু মনেমনে চাইছেন, তোমার কাঁধে হাত রেখে ছাদে হাঁটতে।
পায়ের ব্যাথার কারণে কতদিন হলো উনি ছাদে উঠেন না।
প্রেমিকার সাথে তো সারাবছরই অলিখিত ভ্যালেন্টাইন পালন করো।
মা-দিবস আসে, বাবা দিবস যায়,
কিছুই কি থাকে, না মনে রাখো।
এবার চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি না’হয় ওদের সাথেই কাটালে-
ভ্যালেন্টাইনেও একটু বৈচিত্র্য আসলো না’হয়…
শুরুর দিকে কনভার্সেশনে কে কোনটা বুঝতে একটু সমস্যা হয়েছে।
ওভারল উন্নতি হচ্ছে বলেই মনে হয়। :love:
বাহ গল্পের ছলে শিখনীয় চিন্তাশীল কবিতা 🙂
নিজের বিবেককে কি খুন করা যায়?
বিবেক তো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোন বস্তু নয়-
লাইনটা মনে দাগ কেটে গেলো।