‘বাহ দেশে এগিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল হচ্ছে বাংলাদেশে।’ রিকশায় বসে থাকা আমার এক বন্ধু বলে উঠল।
আমি পাল্টা প্রশ্ন করলাম, হঠাৎ কি দেখে তোর কাছে মনে হলো ডিজিটাল হচ্ছে দেশটা।
দেখ রাস্তায় নির্বাচনের যত পোস্টার আছে সবগুলোর উপর পলিথিনের কভার দেয়া আছে।যেন বৃষ্টিতে পোস্টারে ক্ষতি না হয়।
আমি কিছুটা অবাক হলাম। ব্যাপারটা আমার চোখে পড়েনি আগে।আমার মতো অনেকে হয়ত প্রথম পলিথিনের এই পোস্টারগুলো দেখে অবাক হয়েছেন। পরক্ষণে মনে প্রশ্ন জেগে উঠলো, যখণ নির্বাচন শেষ হবে তখন এই পোস্টারগুলো কি করা হবে? পলিথিন কখনো পঁচে না। এটা সবারই জানা। পরিবেশকে দূষণ করতে পলিথিনের ভূমিকা অপরীসিম। যদি হিসেব করা হয় তাহলে সারা ঢাকা শহরে লাখ লাখ পোষ্টার রয়েছে। নির্বাচন শেষে, ঝড়ে, বাতাসে সেগুলো ড্রেন গিযে পড়বে। ড্রেন বন্ধ হয়ে যাবে। রাস্তার জলবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। কিছু পোষ্টার বুড়িগঙ্গা বা তুরাগ নদীতে গিয়ে পড়বে।
সাধারণ ভাবে দেখলে তাতে কি? প্রচারণা দরকার নির্বাচনের প্রর্থীদের। কেন নির্বাচন কমিশনার বৃষ্টির সময় নির্বাচন দিলো? সব দোষ কমিশনের।
আসুন এবার দেখি নির্বাচনী প্রর্থীদের ঘোষণা কি?
১৭ এপ্রিল ঢাকা উত্তর অঞ্চলের মেয়র প্রার্থী আনুসল হকে ফেইসবুক পেইজ থেকে শেয়ার করা হয়েছে, ‘দূষণমুক্ত, স্বাস্থ্যকর ঢাকা সবার প্রত্যাশা।’
দূষণের নগরী রাজধানীকে বদলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের চার মেয়রপ্রার্থী। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি, জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারা ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থীরা। প্রবীণদের অভিজ্ঞতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন বিএনপি সমর্থিত উত্তরের প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। ইশতেহারে প্রজন্মের শহর গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিকল্পধারা সমর্থিত উত্তরের প্রার্থী মাহী বি চৌধুরী।
২০০২ সাল থেকে সরকার পলিথিন শপিং ব্যাগের উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রি, বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুত, বিতরণ, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পরিবহন ও ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর পলিথিনের ব্যবহার নিয়ে ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে উল্লেখ করা হয়, পলিথিন ব্যাগ বিভিন্ন রূপে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা স্পষ্টত সরকারি আদেশের লঙ্ঘন এবং দণ্ডনীয় অপরাধ।
সম্প্রতি প্রথম আলোতে এই প্রতিবেদন জানানো হয় পলিথিনে মোড়ানো পোস্টার সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণ বিধি মালার লঙ্ঘন নয়। ২০১০ সালের আচরণবিধিতে এ সম্পর্কে কিছু বলা নেই। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম জানান, প্রথম এ ধরনের পোস্টার আচরণবিধির লঙ্ঘন করছে না। তবে পরিবেশবান্ধব কি না তা দেখার দায়িত্ব আমার না।’
এমনি করে ঢাকা সুন্দর করতে বড় বড় নানা কথা বলছে প্রার্থীরা। কিন্তু পলিথিনের পোষ্টারে কি তার প্রমান দেয়? নির্বাচনের আগেই এই অবস্থা কিন্তু নির্বাচনের পর কি হবে? এমনি নানা প্রশ্ন আসছে মনে।
নাগরিকদের এই অভিযোগ কে শুনবে? ঢাকা কি তাহলে প্রতিনিয়ত বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠবে? সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তায় নৌকা চলার মত অবস্থা হবে? অক্সিজেনের অভাব হবে? থাকবে না গাছ? বন্ধ হবে ড্রেন? নদীরে বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ আর পলিথিন থাকবে?