আমি হ্যাট মিয়া।বয়স আড়াই বছর। আমার দেশের বাড়ি আসলে কক্সবাজার কিন্তু জন্মের পরপরেই আমাকে বিক্রি করে দেয়া হয় ইনানি বিচের পাশে ছোট্ট একটা দোকান এ। বর্ষাস্নাত সমুদ্রের পাড়ে দিনকাল খারাপ যাচ্ছিলো না… এরকম এ এক ঝুম বৃষ্টির দিনে বছর দুই আগে মোটামুটি মাথা নষ্ট এক মেয়ে আমাকে কিনে নেয়। সেই থেকে আমার কষ্টের জীবন শুরু।
কেনার দিনেই আমাকে একবার ডানে কাত,একবার বামে কাত করে শ’ দেড়েক ছবি তুলে আমার মাইগ্রেইনের পেইন উঠিয়ে ছেড়েছিল স্টুপিড মেয়েটা।আচ্ছা, হ্যাট বলে কি আমি মানুষ নই?আমার ও তো পছন্দ অপছন্দ থাকতে পারে! কক্সবাজার থেকে বদ্ধ নগরী ঢাকায় ফেরার পর শুরু হল আমার গৃহবন্দী জীবন। আমার নতুন বাসস্থান হল একটা অন্ধকার আলমারি।আমার দু জন সঙ্গী ছিল… যারা ছিল আমার শেষ আশা,তাদের কেও দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে কোন ঘরের কোন আলমারিতে যে ঢুকালো আর কোনদিন খোঁজ পেলাম না। আমার ধারণা ছিল এভাবে ধুলোবালি মেখে, তেলাপোকার কামড়ে আর ন্যাপথোলিনের কড়া গন্ধেই আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে আর আমার নতুন আবাস তখন হবে কোন ডাস্টবিনে।
কিন্তু হঠাৎ করেই আমার জীবনে এলো ১৩ ডিসেম্বর,২০১৪।
আমাকে আলমারি থেকে বের করে ঝেড়েঝুরে পরিস্কার করা হল।তারপর রাজার মুকুটের মত মাথায় চড়ে পৌঁছলাম কার্জন হল। সেখানে আমার মত অসংখ্য হ্যাটের ছড়াছড়ি দেখে খুশিতে পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম আমি! তারপর আমরা সবাই মিলে রওনা দিলাম রাঙামাটির দিকে। সবার সাথেই আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল কিন্তু আমার দুই প্রিয় হ্যাট বান্ধবী সাদা নেট হ্যাট আর ক্রিম নেট হ্যাট।ওদের সাথে সারারাত গল্প করতে কি যে মজা! আমাদের মাথা নষ্ট মালিকেরা সারা দিন রাত লাফায়, তাদের সাথে আমরাও। আমার মালিকের নাম আমি দিয়েছি ভুলিয়া বেগম। ৯দিনের সফরে সে যে কতবার আমাকে হারিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই! কখনও সে আমাকে চান্দের গাড়ি থেকে ফেলে দেয়, কখনও বা রেস্তোরায় ফেলে আসে। কখনও আমি পানিতে পড়ি, কখনও একা রয়ে যাই গাছের তলায়। মাঝে মাঝেই মনে হত ইশ! আমি যদি ওর দুই বান্ধবীর হ্যাট হতাম কতই না যত্নে থাক্তাম।মাঝে মাঝে তো ভুলিয়ার বন্ধুরা মশকরা করে বলেও যেতো যে আমার আর হায়াত নেই!
এভাবে রাঙামাটি ,বান্দরবান, কক্সবাজার ,সেন্ট মারটিনে স্বপ্নের মত ৯টি দিন কাটিয়ে শেষদিন ঘটলো এক দুর্ঘটনা। ভুলিয়া বেগম হিমছড়িতে গিয়ে তার মোবাইল হারিয়ে বসলেন! আর ওদিকে হিমছড়ির অসহ্য সৌন্দর্য দেখে আমিও খুশিতে দিলাম ছোট্ট একটা লাফ। ব্যস! কখন যে আমি মাথা থেকে পড়ে গেলাম ভুলিয়া তা খেয়ালও করল না। কারণ সে তখন মোবাইল শোকে দিশেহারা। এভাবে আমারই চোখের সামনে আমাকে ফেলে চলে গেল বাসে উঠে ।
আমার বন্ধুবান্ধবের জন্য খুব কান্না পাচ্ছিলো। আর সত্যি বলতে কি ভুলিয়া বেগমের জন্যও একটু খারাপ লাগছিল। আহারে! মানুষটা খারাপ ছিল না… হোক নাহয় একটু কেয়ারলেস !
কিন্তু এরপর আমি পেলাম মুক্তি!!! এখন আমি ভালই আছি, নিজের মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছি। এখানে আমার মত অনেক হারানো হ্যাট আছে। আমরা একসাথে খেলি ,পাহাড় আর সমুদ্র দেখি,নিজেদের জীবনের গল্প বলি। রাস্তার ছোট ছোট বাচ্চারা আমাদের মাথায় পড়ে খেলে। জীবনটা মন্দ লাগে না!
:welcome:
:happy:
ভিন্ন আঙ্গিক থেকে লিখা। খুবই সুন্দর। ট্যুর এর আরো কাহিনী থাকলে লিখে ফেল! :happy:
:welcome:
ট্যুরের কাহিনী আরও লিখলে পোস্ট করব… অনেক ধন্যবাদ 😀
খুবই ভালো লাগল।
ভুলিয়া বেগম কি লেখিকা নিজেই নাকি?
আমার জামা কাপড় নিশ্চিত আমারে অভিশাপ দেয় আর কান্না কাটি করে!
:welcome:
হ্যাঁ ভুলিয়া বেগম নিজেই লেখিকা :p ধন্যবাদ
এককালে আমিও হ্যাট পরতাম… … … 🙂
:welcome:
ধন্যবাদ :happy:
সরব পরিবারে স্বাগতম! 😀
:welcome:
অনেক ধন্যবাদ 🙂
ধন্যবাদ তখনই পূর্ণরূপে পরিগনিত করা হইবে যখন অন্যদিগের লিখাও সময় করিয়া (ধরুন, অবসরে) পড়িয়া লইবেন! 😛
(নিজের লেখার বিজ্ঞাপন নিজেই দিচ্ছি আর কি, মার্জিত উপায়ে! 8) 😛 )
অবশ্যই 🙂
:welcome:
ভালো লেগেছে 😀
ধন্যবাদ :happy:
অসাধারণ! লেখাটার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে বেশ মজা পেলাম। আশা করি লেখালেখি কন্টিনিউ করবেন।
:welcome:
ধন্যবাদ 😀