তখন আমি ক্লাস এইটে কি নাইনে পড়ি।মা খুব একটা একা বাইরে যেতে দেয় না।
কিন্তু আমার গান-মুভির সিডি কিনতে হবে।ভাইয়ার সাথে যাব,কিন্তু ওর নানা তালবাহানা,সময় হয় না ইত্যাদি। আমার এক আত্মীয় তখন বলল, “তোমার সাথে বাইরে গেলে তোমাকে যে ওর গার্লফ্রেন্ড ভাববে,তাই তো নিয়ে যায় না!”
শুনে আমি হাউমাউ কান্নাকাটি শুরু করে দিলাম। ভাইয়া নানাভাবে আমাকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করল এটা মোটেও কারণ না,এবং সে আমাকে নিয়ে গিয়েছিল পরে।
কিন্তু সেই কথাটা আমাকে খুব আঘাত করেছিল।
আমার খালাত ভাইটি টেক জিনিসপত্র কোথায় কি পাওয়া যায় খুব ভালো আইডিয়া রাখে,তার সাথে সেদিন কিছু কাজ করতে বেরিয়েছিলাম। ফেরার পথে ভীড়ে রিকশা দাঁড়িয়ে, হঠাৎ এক পুরোনো বান্ধবী আর তার মাকে খেয়াল করলাম। ওরা তখনও আমাকে দেখে নাই, কিছু বলতে হলেও ভীড়ে চিৎকার ছাড়া গতি নাই তো আমি আর কিছু বলি নাই। কিছুক্ষণ পর ভাইয়া আমাকে বলল, “ওখানে এক মহিলা না তোমাকে খুব কড়া চোখে দেখে গেল,পুড়ায় খেয়ে ফেলবে টাইপ,চেনে নাকি তোমাকে?” 😛
ততক্ষণে আমি কাহিনী বুঝে গেছি,হাসতে হাসতে শেষ। খালাকে বলার পর খালা বলল , “আমাদের সময় কোন মেয়েকে ছেলের সাথে দেখলে আমরা ভাবতাম, নিশচয়ই ভাই হবে।আর এখন তোমাদের তো ভাইদের সাথে দেখলেও ভাবে, নির্ঘাত বয়ফ্রেন্ড!! ”
আর এখন দেখছি মানুষ যদি জেনেও যায় সাথে মেয়েটি বোন,তারপরও নানারকম কথা শোনাতে ছাড়ে না।
নাসিরকে অনেকদিন তার বোনকে বলা কুৎসিত কথাগুলো তাড়া করে বেড়াবে। সে মনে মনে নিজেকে দোষও দেবে কেন এমন পরিস্থিতি হবে সে আগে বুঝে নাই।
সমাজটা যে এত নষ্ট-রুচিহীন অমানুষে ভরা তা না বোঝা মনে হয় আজকাল দোষের পর্যায়েই পড়ে।
আমার তো মনে হয়, মানুষ দিন যত যাচ্ছে, প্রাইভেসি নিয়ে তত সতর্ক হচ্ছে। এই সতর্কতার পরিপেক্ষিতে আবার, ছোঁক ছোঁক স্বভাবের মানুষ, যত পারছে, তত খারাপ ধারনার বশবর্তী হয়ে মন্তব্য করে বেড়াচ্ছে।
অনলাইনের ব্যাপারটাও তেমন। যেসব লোক বাজে মন্তব্য করে অভ্যস্ত, তাদের ভেতরকার যুক্তি হলো, “মন্তব্য করতে না দিলে মন্তব্য করার সুযোগ বাদ করে দিক”-এই টাইপের। আমার মনে, আমরা যারা অনেক বেশী সঠিক-মন্তব্য আশা করি, তাদেরও অতি-সংবেদশীলতার সমস্যা রয়েছে।
আত্ম কেন্দ্রিকতার এই্ যুগে, লোকে কি মনে করলো, কিংবা কি বললো, তা নিয়ে যারা ভাবেন, তারাও তো যুগের চেয়ে পিছিয়ে আছেন বলে ধরে নেওয়া যায়, তাই না?
আত্ম কেন্দ্রিকতার এই্ যুগে, লোকে কি মনে করলো, কিংবা কি বললো, তা নিয়ে যারা ভাবেন, তারাও তো যুগের চেয়ে পিছিয়ে আছেন বলে ধরে নেওয়া যায়, তাই না?
— এই যুক্তিতে নাসিরেরও বোনের সাথে দেয়া ছবিটা ডিলিট করা উচিৎ হয়নি, কে কী ভাবলো তা যদি ম্যাটারই না করে
এসব ক্ষেত্রে “লোকে কি মনে করে” ভেবে অবশ্যই কেউ ভাই কিংবা বোনের সাথে বের হওয়া বন্ধ করে দেয় না।
কিন্তু দুটি ছেলে-মেয়ে একসাথে দেখলেই সম্পর্কটি প্রেমের ধরে নেয়া ব্যাপারটি কেবল চিন্তার সংকীর্ণতারই পরিচয় দেয়। একটু সচেতন হলেই এই সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি সম্ভব।
বছর দুয়েক আগে একটি ব্লগপোস্ট লিখেছিলাম, কীভাবে সামাজিক সমস্যাগুলোর শিকড় ট্র্যাক করা যায়, খুবই কমন সেন্স টাইপের টুল
http://shorob.com/?p=15631
খুব সাদামাটা চোখে দেখলে, এই লেখায় তোর অভিজ্ঞতার সাথে নাসিরকাণ্ড মেলানো যাবে না। তোর দিকে সেই আন্টি চোখ পাক দিয়ে তাকিয়েছে, কিছু তো আর বলেনি, অন্যদিকে নাসিরের ছবি ভেসে গিয়েছিল গালাগালিতে। কিন্তু একটু ভেতরে তাকালে বুঝা যায়, ছেলে মেয়ের সম্পর্কে একটা অসুস্থ টোন আমাদের সমাজে চলে এসেছে, যার ফলে তোর খালার মন্তব্যটা প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে, আর সেটারই বর্ধিত ফলাফল হল নাসিরের ছবির কমেন্টগুলো। 🙁
লেখালেখি চালিয়ে যাস! :beerdrink:
তুই যখন লিখেছিলি তখনই পড়েছিলাম,অনেক সত্যি কথাগুলো,সুন্দর গুছিয়ে লেখা। 🙂
এটাই আসলে বুঝতে হবে,সাদা চোখে ছোট এবং কিছুটা নির্দোষ ঘটনাই যে বড় সমস্যাগুলোর মূলকে নির্দেশ করে!
লেখার চেষটা অব্যাহত থাকবে! 🙂
:beerdrink: