হোয়াইট হাউজের গোপন কনফারেন্স হল।
সাদা রঙের দালানে হলুদ রঙের ঘর। ঘরের তেমন কোন বিশেষত্ব নেই শুধু সামনের দেয়ালে কয়েকটি ঝুলানো কাটা মাথা ছাড়া। বিভিন্ন সময়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের শিকার করা সন্ত্রাসীদের মাথা। চে গুয়েভারা থেকে শুরু করে হালের সাদ্দাম, লাদেন, গাদ্দাফি সবার মাথাই সেখানে শোভা পাচ্ছে। আমেরিকার কাছে সন্ত্রাসের সংজ্ঞা হলো আমেরিকার বিরোধিতা করা। তাই বিপ্লবী থেকে একনায়ক সবাই তার চোখে সন্ত্রাসী।
কনফারেন্স হলে অপেক্ষা করছে জাতিসংঘ, ভারত, পাকিস্তান ও ফিলিস্তিন। অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে তারা। ফিলিস্তিন অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছে। ভারত ও পাকিস্তান উসখুস করা শুরু করে দিয়েছে। পাকিস্তান ইতোমধ্যে দুইবার চেয়ার থেকে উঠে হাত-পা ঝেড়ে নিয়েছে। ভারত একটু পরপর ঘসঘস শব্দ করে বগল চুলকাচ্ছে। চুলাকনি রোগটা বোধহয় দক্ষিণ এশিয়ার জন্য এন্ডেমিক। সবচেয়ে চুপচাপ বসে আছে জাতিসংঘ। শুধু একটু পরপর নাকে নস্যি টেনে নিচ্ছে। বুঝা যাচ্ছে তার এরকম অপেক্ষা করার অভিজ্ঞতা আছে।
ঘন্টা খানেক পর একপাশে ব্রিটেন এবং অন্য পাশে ইসরাইলকে নিয়ে কনফারেন্স হলে প্রবেশ করলো আমেরিকা। সবাই হন্তদন্ত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। হাত দিয়ে ইশারা করে সবাইকে বসতে বলল আমেরিকা, “তোমরা ভালা কইরাই জানো আমি কেডা। আমি হইলাম এই দুইন্যার মাতব্বর। যে আমার বিরোধিতা করব হেরে সন্ত্রাসী বানাইয়া হের কল্লাটা এইহানে ঝুলায়া রাহুম।” দেয়ালে ঝুলানো কাটা মাথাগুলো দেখিয়ে বলল আমেরিকা।
আমেরিকার ডান পাশে বসা ব্রিটেন বলে উঠল, “হ মিয়াভাই। আফনে ঠিকই কইছেন। খালি ঐ ফিদেল ক্যাস্ট্রো আর আহমেদিনেজাদরে নিয়া যত ডর।”
“স্টপ ইট! চুপ কর।
ক্যাস্ট্রো তো একটা বাইম মাছ। এরে এতবার অ্যাম্বুশ করলাম কিন্তু হারামিটা মরে না। তয় এখন আর চিন্তা নাই। বুইড়াটা কব্বরের ভিতরে এক পা হান্দাইয়া বইয়া আছে। কিন্তু আহমেদিনেজাদ…….!
ও মাই গড!” আহমেদিনেজাদের নাম শুনে কপালে চিকচিক করে জমতে থাকা ঘাম হাতের উল্টো পাশ দিয়ে মুছে নিল আমেরিকা।
আমেরিকাকে ঘামতে দেখে ব্রিটেন ভয়ে চেঁচিয়ে উঠল, “মিয়াভাই, আই অ্যাম অ্যাফ্রেইড। আমি ভুই পাই!”
“অই বিটিশের ঘরের বিটিশ, তরে না কতবার কইছি ভয় পাইলে ভিতরে রাখবি ভেউ ভেউ করবি না। দ্যাখতাছস না সামনে পোলাপাইনরা বইসা আছে।” ব্রিটেনের কান টেনে এনে ফিসফিস করে বলল আমেরিকা।
ব্রিটেন তার বাম কান ডলতে ডলতে বলল, “শোনেন সবাই, মিয়াভাইয়ের এলাকায় কোন সন্ত্রাস, জুলুম চলব না। মিয়াভাইয়ের কাছে কারো কোন আর্জি থাকলে পেশ করতে পারেন।”
“আমার একখান কতা আছিল……” হাত তুলে বলে ফিলিস্তিন
“তোর আবার কিয়ের কতা? শান্তিতে থাকলে পেডে কামড়ায়? কয়দিন আগে না তোগর একহাজার জনরে মুক্তি দিলাম। আইজ আইছস আবার…….” রাগে গজগজ করতে থাকে ইসরাইল।
“ভায়রা ভাই, তুমি কোন টেনশন লইও না। আমি বিষয়টা দেখতাছি।” ইসরাইলকে কোনমতে শান্ত করে আমেরিকা। “আইচ্ছা বাজান, ক তো তোর সমস্যাটা কী?” ফিলিস্তিনকে বলে আমেরিকা।
“সমস্যা তো আপনেরা বালা কইরাই জানেন। আইজ পেরায় সত্তুর বৎসর হইতে লাগল, ইসরাইল আমার জায়গা-জমি দখল কইরা বইসা আছে। পয়লা আইছিল মেহমান হইয়া। জার্মানি থেইকা মাইর খাইয়া। তাই আমার ঘরে থাকতে দিছিলাম। ওষুধপত্র কিইন্যা দিছিলাম। হেই ইসরাইল দুইদিন বাদে সুস্থ হইয়া আমারে আমারই বাড়ি ঘর থেইকা লাথি মাইরা বাইর কইরা দিছে। এখন আবার বাইরেও থাকতে দিতাছে না। হেগো বোলে মাইনষে জায়গা ধরতাছে না। আমরা যেইহানেই ঘর বান্দি হেইখানে হেরা গিয়া আমাগো ঘরগুলা ভাইঙ্গা নয়া ইহুদী বসতি নির্মাণ করে। আমার পোলাপানগুলারে পক্ষীর লাহান গুলি কইরা মারে। আর আমরা এর প্রতিবাদ করলে কয় আমরা নাকি সন্ত্রাসী।” একটানে এতটুকু বলে একটু দম নেয় ফিলিস্তিন।
“তাইলে এখন তুই কী করবার চাস?” ফিলিস্তিনকে জিজ্ঞেস করে আমেরিকা।
“আমি জাতিসংঘের কাছে গেছিলাম। আমার স্বীকৃতির লাইগা। জাতিসংঘের ছোড ভাই ইউনেস্কো আমারে স্বীকৃতি দিয়া দিছে। জাতিসংঘ কইছে হেও দিব।” ফিলিস্তিনের কন্ঠে আশার বাণী।
“জাতিসংঘ!!! জাতিসংঘ আবার তোরে স্বীকৃতি দেয় ক্যামনে?” প্রচণ্ড রাগে ফেটে পড়ে আমেরিকা। “জাতিসংঘ তো আমার বাড়ির জায়গীর মাস্টার। আমার বাড়ির গুদাম ঘরে থাইকা পড়ালেহা করে। আমি চাইরটা খাইতে দিলে খাইতে পারে। জাতিসংঘের পাও এতো লম্বা হইলো ক্যামনে? কইরে জাতিসংঘ? কইরে নিমকহারাম?” চেঁচাতে থাকে আমেরিকা।
“জ্বি মিয়াভাই!” মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে বলে জাতিসংঘ।
“আমি তোরে টেকা-পয়সা দেয়া বন্ধ করলে তুই চলতে পারবি?” প্রশ্ন করে আমেরিকা।
মাথা নাড়ে জাতিসংঘ।
“আমি তোর খাওন-দাওন বন্ধ কইরা দিলে তুই খাইতে পারবি?”
আবারো মাথা নাড়ে জাতিসংঘ।
“তাইলে তুই আমার কান্ধে বইয়া আমার মাথায় কাঁঠাল ভাঙ্গার বুদ্ধি পাকাইতাছস কোন সাহসে?” ক্ষেপে উঠে বলে আমেরিকা।
“ভুল হইয়া গেছে মিয়াভাই। এই বারের মতো মাপ কইরা দেন” হাতজোড় করে জাতিসংঘ।
“তাইলে আমার স্বাধীনতার স্বীকৃতি………”, মরিয়া হয়ে বলে ফিলিস্তিন।
“আমার লাঠিয়াল বাহিনী ন্যাটোর নাম শুনছস? এই বাহিনীত খালি আমার না আমার দোস্তগের লাঠিয়ালরাও আছে।” মুচকি হেসে বলে আমেরিকা। “কি ভায়রা ভাই, ঠিক আছে তো?” ইসরাইলের দিকে তাকিয়ে বলে আমেরিকা।
এদিকে হঠাৎ ব্রিটেনের হাতে থাকা মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠে। ব্রিটেন মোবাইল আমেরিকার হাতে দিয়ে বলে, “মিয়াভাই, ভাবি ফোন দিছে।”
আমেরিকা ফোন কানে লাগিয়ে বলে, “হ্যালো জান। কেমুন আছো? ভালা না! ক্যান কী অইছে? কী কী কইলা আমার কুত্তা টমি মইরা গেছে?” আমেরিকার হাত থেকে মোবাইল পড়ে গেল। “টমি ও টমিরে তুই আমারে রাইখা মইরা গেলি!” বুক চাপড়িয়ে কাঁদতে থাকে আমেরিকা।
“ভায়রা ভাই, আপনে শান্ত হোন।” আমেরিকার কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দেয় ইসরাইল।
“ও আমার কুত্তারে। ও আমার পেরানের টমিরে। তোর লগে এক বিছনাত কতো থাকছি। তুই আমার গাল চাডছস। আমিও তোর গাল চাডছিরে। ও আমার কুত্তারে……” আরো জোরে জোরে বিলাপ করতে থাকে আমেরিকা।
এদিকে ভারত পাকিস্তানকে বলে, “ভাইয়া, কান্দেন কান্দেন। দেরি কইরেন না।”
পাকিস্তান অবাক হয়ে বলে, “ কী কইতাছেন দাদা! একটা কুত্তার লাইগা কান্দুম?”
“আরে ভাইয়া, দেরি কইরেন না। দেরি করলে লেইট হইয়া যাইব। কান্দেন কান্দেন।” ভারতের কথা শুনে কাঁদতে থাকে পাকিস্তান। কাঁদতে থাকে ভারতও।
লাখ লাখ মানুষ মেরে যাদের অট্টহাসিতে আকাশ বাতাস কেঁপে উঠে একটা কুকুরের জন্য তাদের মরা কান্না দেখে মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে ফিলিস্তিনের।
ফিলিস্তিন বাদে ঘরের সবাই যখন কান্নায় ব্যস্ত ব্রিটেন তখন দাঁড়িয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে, “ভাইসব, মিয়াভাইয়ের প্রিয় কুত্তা টমির এই অকাল মৃত্যুতে আমি দুইডা প্রস্তাব রাখতে চাই। পরথম প্রস্তাব হইলো, আইজ থেইকা পরতেক বছর এই দিনে বিশ্ব কুত্তা দিবস পালন হইবো।” ব্রিটেনের প্রস্তাব শোনার সাথে সাথে পাকিস্থান দাঁড়িয়ে সমর্থন জানায়।
“মিয়াভাই, পাকিস্তান সমর্থন দিছে।” চেঁচিয়ে উঠে ব্রিটেন।
“পাকিস্তানরে দু’বস্তা গম দিয়া দে।” টিস্যু দিয়ে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল আমেরিকা।
“আমার দুই নম্বর প্রস্তাব হইলো” আবার শুরু করে ব্রিটেন, “আইজ থেইকা দুইন্যার সকল কুত্তারে ফ্রি খাওনের ব্যবস্থা করা হইবো” এবার প্রস্তাব শোনার সাথে সাথে ভারত দাঁড়িয়ে সমর্থন জানায়।
“ভায়রা ভাই, ভারত সমর্থন দিছে।” ভারতের সমর্থন দেখে বলে উঠল ইসরাইল।
“ভারতরে ৫০০টা টেকা দিয়া দে।” আমেরিকা এতটুকু বলে আবার কাঁদতে থাকে।
কনফারেন্স হল থেকে বের হয়ে ব্রিটেন-ইসরাইল কাঁদতে থাকে। কাঁদতে থাকে ভারত ও পাকিস্তান। একে অন্যের সাথে পাল্লা দিয়ে। তাদের সবার সম্মিলিত মরা কান্নার শব্দকে অতিক্রম করে ফিলিস্তিনের অন্যায়(!) আবদার আর কারো কানে আসেনি।
[অলস মস্তিষ্কের অলীক কল্পনাপ্রসূত এই পোস্টখানার সহিত কেহ বাস্তবের কোন সাদৃশ্য খুঁজিয়া পাইলে তাহার জন্য পাঠক দায়ী থাকিবেন, লেখক নন।]
:happy:
কিন্তু কেমুন জানি লাগতেসে!! :thinking:
ভালোই তো ছিলেন হঠাৎ কেমুন লাগতেছে কেনু??? 😛
:yahooo:
দারুণ লাগলো! :dhisya:
ধইন্যা :happy:
কোপাকুপি! :dhisya:
:yahooo: :penguindance:
অসাধারণ :dhisya: :dhisya:
ধন্যবাদ রাজা মশাই :happy:
রম্যে রম্যে সাম্রাজ্যবাদীদের সম্পর্কিত কিছু বাস্তব চিত্র গল্পে ফুটে উঠেছে।
ভারত, পাকিস্তানের ভিক্ষা পাওয়ার দালালী সমর্থনে আমেরিকা গললেও ফিলিস্তিনের অসহায় আর্তি এভাবেই কুত্তা মরার শোকের মধ্যে মিলিয়ে যায়। আর জাতিসংঘ ?
এই পুতুলটি যে আমেরিকার গোলাম তা কারো অজানা নয়!
রাজামশাই, ভিলেজ পলিটিক্স অনুসারে জাতিসংঘ আমেরিকার বাড়ির জায়গীর মাস্টার। জায়গীর মাস্টার স্বভাবতই বাড়ির মালিকের গোলাম।
দারুণ। শুরুটা মজা করে পড়েছি। কিন্তু শেষে গিয়ে কেমন জানি লাগল। 🙁
পোস্ট বড় হয়ে যাচ্ছিল তাই শেষে এসে কিছুটা তাড়াহুড়া করেছি। একটু সময় নিয়ে লিখলে হয়তোবা ফিনিশিংটা আর একটু ভালো হতো।
জটিল . অসাধারণ , কোপাকুপি 8) :dhisya:
ধইন্যা :love:
লেখাটা পড়ে মনে হইলো,
কার্টুন না হইয়া যদি কুত্তা হইতাম!!!
রকেট হতে পারেন।
রকেটের কথা মনে আছে?
ওই যে চাচা চৌধুরীর কুকুরটা।
রকেট একাধারে কুকুর এবং কার্টুন।
দারুন না???? :love:
অসাধারণ একটা রম্য লেখা! অসাধারণ!!! :clappinghands:
সময় নষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ :happy:
পুরাই অস্থির! :dhisya:
ধইন্যা 😀
ভয়ংকর লেখা……
আমি কিন্তু ভয়ংকর না।
নিতান্তই গোবেচারা টাইপের মানুষ :p
বেশ মজা পেলাম!!!
:happy:
ধন্যবাদ পড়ার জন্য 🙂