Money cannot buy everything

১.

আমার এক ফ্রেন্ডের বাবা একটি নামী ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। স্কুলে ওকে সবসময় দেখে এসেছি বেশ আদুরে মেয়ে হিসেবে। আন্টি ছিলেন হাউজওয়াইফ। বিলাসবহুল জীবনযাপন বলতে যা বুঝায় ওকে দেখলেই বুঝা যেত। একদিন সকালে ওর বাবা অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন ৭:৪৫টার দিকে। ১০:৩০টার দিকে অফিস থেকে ফোন এসেছে যে, ওর বাবা মারা গেছেন। একটি অ্যাম্বুলেন্সে লাশ বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে। ঐ ফোন রিসিভ করার পর আন্টি নির্বাক হয়ে বসেছিলেন। আমার ফ্রেন্ডের বয়সই বা কত তখন। ক্লাস সেভেন কি এইটে পড়ে। খবর পেয়ে স্কুল থেকে বাসায় ছুটে আসে ও। এসে দেখে বাবার নিথর দেহটা পড়ে আছে বাড়ির গ্যারেজে। বাসার সবাই হু হু করে কাঁদছে। ওর মা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। কিন্তু ও সেদিন কাঁদতে পারে নি। এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা ভর করেছিল ওকে। এইতো সকালবেলায় যে মানুষটা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ‘আসি মা’ বলে অফিসে গেল, সেই মানুষটার আদর, স্পর্শ, মায়াভরা কণ্ঠ সে আর কোনদিন পাবে না। পরে শুনেছি আন্টি একটি চাকরি নিয়েছেন। এখনও ওদের জীবনে অর্থবিত্ত, শৌখিনতার অভাব নেই। কিন্তু যে মানুষটা নেই তাকে কেউ কখনও ফিরিয়ে আনতে পারবে না। ওর এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের দিনও আন্টি বলছিলেন, ‘রুনার আব্বু এই দিনটা দেখে যেতে পারল না।’

২.

এবার আমার এক পরিচিত আন্টির কথা বলি। ব্যবসায়ী পরিবার। উনি আর উনার হাজবেন্ড দুজনই ব্যবসা করেন। বিশাল বাড়ি, দামি গাড়ি, ইন্ডাস্ট্রি- কি নেই তাঁদের! তাঁদের একমাত্র ছেলের বিয়েও বেশ জাঁকজমক ও ধুমধাম করে হয়েছিল। লাভ ম্যারেজ। আপুটাকেও আমার বেশ ভাল লেগেছিল। কথাবার্তা, আচার-আচরণে খুব ডিসেন্ট। দুই বছরের মাথায় সেই বিয়ে ভেঙ্গে গেল। কারণ হিসেবে শুনেছিলাম, আপুটা চেয়েছিল বিদেশে সেটেল হতে। কিন্তু যেহেতু পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনার জন্য ভাইয়াটাকে দেশেই থাকতে হবে, সেজন্য বিদেশে সেটেল হওয়া সম্ভব না। পরে শুনেছি, ঐ আপু আরেকজন প্রবাসী বাঙ্গালিকে বিয়ে করে বিদেশেই সেটেল হয়েছে। যদিও একটি বিয়ে ভেঙ্গে যাওয়ার পর ছেলের ফ্যামিলি মেয়েকে আর মেয়ের ফ্যামিলি ছেলেকে দোষারোপ করে, তারপরও আমরা ধরে নিলাম এটাই মূল কারণ ছিল। আচ্ছা, এখন আমরা বছর চারেক পরের ঘটনায় আসি। এবার ভাইয়াটা দ্বিতীয় বিয়ে করল। বেশ ধুমধামের সাথেই বিয়ে দেয়া হল। কিন্তু এবার পাঁচ মাসের মাথায় বিয়ে ভেঙ্গে গেল। শুনেছিলাম, মেয়ে নাকি বন্ধুবান্ধবদের সাথে রাত বিরাতে ঘুরে বেড়ায়। আরও অনেক কিছুই শুনেছি। সে যাই হোক। এত অর্থবিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তি থাকা সত্ত্বেও সংসার-সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। অর্থ দিয়ে অর্থ কেনা গেলেও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা যায় না।

উপরের দুইটি ঘটনাই বাস্তব ও সত্য। একটু খেয়াল করে দেখবেন, দুইটি প্রেক্ষাপটেই আপনি যদি বিপুল পরিমাণ অর্থ, ব্যাংক ব্যালেন্স শো করে ঘটনার চিত্র বা পরিণতি পরিবর্তনের চেষ্টা করেন, তাহলে তা কেবলই অবাস্তব হবে। মৃত্যুর মত অলঙ্ঘনীয় বিষয় কিংবা সম্পর্কের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে আপনি কখনই টাকা দিয়ে এড়িয়ে যেতে পারবেন না। সংসারে অনেক সাচ্ছন্দ্য আছে, সচ্ছলতা আছে কিন্তু প্রিয় মানুষটিই নেই। সেই মানুষটির শুণ্যস্থান পূরণ করতে পারবেন কি? আবার সাচ্ছন্দ্য আছে, সচ্ছলতা আছে, প্রিয় মানুষটিও আছে কিন্তু সুখ নেই, বিশ্বাস নেই, আছে শুধুই কৃত্তিমতা। সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে কি লাভ? আগেকার দিনে তো মানুষেরা শত ঝড়ঝাপটার মধ্যেও বিয়ের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখত, কিন্তু এখনকার সমাজ যে বড়ই অস্থির। মানুষগুলোর মধ্যে কম্প্রোমাইজের বড্ড অভাব। কেবল টাকার বদৌলতে জগতের সবকিছু শো-অফ করা গেলেও সম্পর্কের শো-অফ করা যায় না।

লেখাটা শেষ করব অনিক দত্ত পরিচালিত ‘আশ্চর্য প্রদীপ’(২০১৩) সিনেমাটির গল্প দিয়ে।

file

গল্পটি খুব সাদামাটা। অনিলদা গুপ্ত একজন চাকরিজীবী। মধ্যবিত্ত পরিবার। তার স্ত্রী ঝুমুর গুপ্ত পরিবারের আয়-রোজগার বাড়ানোর জন্য ও ছোট ছেলেকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তির আশায় পার্লারের কিছু কাজ শিখে এখন ছোটখাটো কাজ করে। স্ত্রীর অভিযোগ, তারা যে এলাকায় থাকে সেই এলাকার ঠিকানা দিলে ছেলেকে কোন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল ভর্তি করতে চাইবে না। সেজন্য ভাল এলাকায় ফ্ল্যাট কেনা দরকার। তাছাড়া একটা গাড়িও কেনা দরকার। এদিকে একদিন অনিলদা একটি আশ্চর্য প্রদীপ খুঁজে পেল।

maxresdefault

প্রদীপের দৈত্য তাকে একে একে সবকিছু দিল। বড় একটি কোম্পানির মালিকানা, ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাট, বিলাসবহুল গাড়ি, অঢেল টাকাপয়সা সবই অনিলদা পেল। এরপর দৈত্যকে সে দুঃখ করে বলল, তার স্ত্রী নাকি তাকে একদমই কাছে ঘেষতে দেয় না। তাই দৈত্য তাকে নাইট ক্লাবে নিয়ে গেল। সেখানে নাকি দালালদের কাছ থেকে পছন্দমত মেয়ে নিয়ে ইচ্ছেমত সময় কাটানো যায়। দালালের সাথে কথা বলে অনিলদা গেল ক্লাবের প্রাইভেট রুমে। বেশ খানিকক্ষণ পর দরজায় টোকা পড়ল। চরম উত্তেজনায় দরজা খুলতেই হতভম্ব হয়ে পড়ল অনিলদা। কারণ সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তারই স্ত্রী। বিস্ময়, ক্ষোভে দরজা বন্ধ করে দেয় অনিলদা। আর বাসায় ফেরার পথে প্রদীপটিকে লেকের পানিতে ফেলে দিয়ে আসে।

পাহাড়ি কন্যা সম্পর্কে

বাঙালি আবেগপ্রবণ জাতি, আমিও তার ব্যতিক্রম নই। বাস্তব ও কল্পনা আমার দৈনন্দিন জীবনের সহযাত্রী। জীবনকে ভালবাসি। অনেক স্বপ্ন দেখি, যদিও তা বাস্তব থেকে মাঝে মাঝে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। তবুও স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। আমি বরাবরই রাশভারী প্রকৃতির মানুষ, স্বল্পভাষী কিন্তু হাসতে খুব ভালবাসি।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।