মুভি নির্মাতারা অনেক কষ্টে খেটেখুটে একটি মুভি বানায়। সেটি বানানোর আগে কত কাহিনী। কাহিনী বানাও, চিত্রনাট্য লেখো, অভিনেতাদের রাজী করাও। আর কর্পোরেটদের চাপতো আছেই। টাকা ডুবলে কিন্তু তুই শ্যাষ। পরবর্তীতে যখন অসাধারণ কিছু তৈরি হয় তখন সবাই বলা শুরু করে:”এই যমুনা সেতু আমি বানাইছি”। টাকার বোমা যখন পশ্চাতদেশে ফুটে তখন আর থামাথামি নাই। আরেকটি বোমা ফুটাও বাবা। শুরু হয়ে যায় সিকুয়েলের সুনামি।
তেমনি ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু টার্মিনেটরের সিকুয়েলের খেলা। ১৯৯১ সালের দ্বিতীয় পর্বটি মুভির ইতিহাসে অন্যতম সেরা হলেও পরবর্তীতে সবগুলো মুভি টাকা বানানোর খেলা হয়ে গেছে। সেই টার্মিনেটর সিরিজের একেবারে পঞ্চম পর্ব : “টার্মিনেটর জেনিসিস”। আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার বলে কথা। না দেখে উপায় আছে?
কাহিনী জানা যাক। ২০২৯ সালের মানব বাহিনী পুরাই বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের মত। “স্কাইনেট”কে একের পর এক বাংলাওয়াশ দিচ্ছে। কোন উপায় না পেয়ে মানব বাহিনীর মাশরাফি জন কনর ( জ্যাসন ক্লার্ক) এর মা জননী কে মারার জন্য “স্কাইনেট” একটি রোবট পাঠায় টাইম মেশিনে করে। মা এর রক্ষাকর্তা হিসেবে জন কনর সেই টাইম মেশিনে করেই পাঠায় তার এক যোদ্ধা কাইল রিস ( জাই কর্টনী) কে। ১৯৮৪ সালের জন কনরের মা সারাহ কনর ( এমিলিয়া ক্লার্ক) কে বাঁচাবো। কী মজা কী মজা। কিন্তু গিয়া দেখা গেল কাহিনী তো গেসে ভচকাইয়া। সারাহ কনরকে বাঁচাইবো মানে? ১৯৮৪ সালে সারাহ কনর দেখি এখন ডেনেরিস টার্গেরিয়ান এর ন্যায় প্রস্তুত তার ড্রাগন নিয়া।
টার্মিনেটর মুভি মানেই একশান মুভি। এটিও একশান মুভি। কিন্তু প্রথম দুটি পর্বের সাথে তুলনা চলে আসায় একশানগুলি পুরোপুরি ভুয়া টাইপ মনে হয়েছে। মুভিটির কাহিনীটি মূলত টার্মিনেটর -১ এর কাহিনী থেকেই এদিক ওদিক করে বানানো হয়েছে। কাহিনী অনেক গাজাখুঁড়ি হয়ে গেলেও আমার মতে সয়ে যায়। তবে এই মুভির সবচাইতে বড় দিক হলো মুভির হাসির দৃশ্যগুলি। মুভিটি সব মিলিয়ে বেশ হাস্যরসাত্মক। বউ-শ্বাশুড়ির সম্পর্কের ন্যায় মুভিটিতে জামাই-শ্বশুড় নিয়ে এক ধরণের দ্বন্দ্ব আছে যেটি দেখতে বেশ মজা লাগে।
টার্মিনেটর মুভির নাম শুনলে একজনের নামই মনে আসে। সেটি হচ্ছে আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার। তৃতীয় মুভিটিতে শোয়ার্জেনেগারকে যখন বেশ বয়স্ক লেগেছিল তখনই বোঝা যাচ্ছিল এই মুভি আর হবেনা। চতুর্থ মুভিটি খারাপ না হলেও আর্নল্ডের অনুপস্থিতি একদমই ভালো লাগেনাই। সেখান থেকে আর্নল্ডকে একজন বয়ষ্করুপে পুনরায় উপস্থিত করার জন্য পঞ্চম মুভিটিকে বাহবা দিতেই হয়।
টার্মিনেটর হিসেবে পুরাই ফাটায় ফেলসে আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগার। যতগুলি দৃশ্যে আর্নল্ড ততগুলো দৃশ্যে দারুণ উপভোগ করেছি। আর্নল্ডকে অভিনেতা হিসেবে বেশ দুর্বল বলে বিবেচিত করা হলেও এই চরিত্র আর্নল্ড ছাড়া কারো পক্ষে সম্ভব না। মুভির একটি সংলাপের মতই : “ বুইড়া হইসি কিন্তু এখনো যে কাউরে মাইরা হুতাইলবাম”। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি হোক কিংবা একশান মুভির মাইর, সবকিছুতেই জনপ্রিয় এই সুপারস্টার।
গেইম অব থ্রোনসের কল্যাণে বর্তমানে অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী এমিলিয়া ক্লার্ক এই মুভিটিতেও বেশ ভালো করেছেন। তবে কেন জানি মনে হয়েছে সারাহ কনর হিসেবে তেমন খুব একটা মানায়নি।
মুভিটির সবচাইতে বাজে অভিনয় করেছেন কাইল রিস চরিত্রে জাই কর্টনী। কে রে ভাই এইডা? দেখলেই সকাল-বিকাল থাপড়াইতে মন চায়। মুভিটিতে তার চরিত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু পুরাই ডুবাইসে। এছাড়া জেসন ক্লার্কের অভিনয় মোটামুটি হয়েছে। জে কে সিমনসের মত বিখ্যাত অভিনেতাকে অহেতুক রাখা হয়েছে।
মুভিটির মার্কেটিং টিমের সমস্যাটি কী এখনো বুঝলাম না। ট্রেলারগুলাতে পুরা কাহিনী গুইলা খাওয়ায় দিসে। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো মুভিটি দেখার আগে ট্রেলারগুলি না দেখার জন্য।
মুভিটির পোস্ট ক্রেডিট একটি দৃশ্য আছে সুতরাং আমার মতো নাম দেখানো শুরু হলেই দৌড় না দিলেও পারেন। মুভিটি নিয়ে খুব বেশি আশা ছিল না। তবে খুব একটা খারাপও করেনি। সব মিলিয়ে মোটামুটি একটি টাইম পাস মুভি। তবে টার্মিনেটর সিরিজকে এগিয়ে নেবার জন্য এই মুভিটি একটি সুযোগ করে দিয়েছে সেকারণে পরবর্তী মুভিটি দেখার আশা পোষণ করছি।
রেটিং – ২.৫ / ৫
অনেক সুন্দর একটা রিভিউ , মুভি টা এখনো দেখা হয়নাই। দেখব অতি শীঘ্রই :happy:
ধন্যবাদ
টার্মিনেটরের সিকুয়েল এই জীবনে বুঝি শেষ হবে না!