‘শুধু আমার সাথেই কেন এমন হচ্ছে?’

‘শুধু আমার সাথেই কেন এমন হচ্ছে?’ হতাশায় ভুগলে এ ধরণের প্রশ্ন সবার মাথায় উঁকি দেয়। ভালো ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় ফ্রাস্ট্রেশন খুব সামান্য কিছু থেকে হয়।

আমাদের জীবনটা কত গুলো মুহুর্তের সমন্বয় মাত্র। সেলফিস এ পৃথিবীতে অনেক কিছুই নিরপেক্ষ না। ‘সবার আগে আমারটা’ চিন্তার কারণে সঠিক কিছু পাওয়া কষ্টকর। এ জন্য মনে হয় যে শুধু আমার সাথেই এমন হচ্ছে। আসলে প্রায় মানুষের সাথেই এমন হচ্ছে। বলতে গেলে প্রায় সবার সাথেই।

এই ঈদে অনেকেই দুই লক্ষ বা এর অধিক টাকা দিয়ে একটা মাত্র জামা কিনবে। আর কারো কারো চার বছরের পড়ার খরচ ও এর থেকে কম। কিন্তু ওদের সাথে তুলনা করলে হতাশা এমনিতেই আসবে। সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য অত কিছু লাগে না। বলতে গেলে সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য টাকার প্রয়োজন খুবই কম। ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা পড়ে আছে। এমন কি অনেক গুলো টাকা রয়েছে, যে গুলোর কোন অস্তিত্ব ও নেই। শুধু কাগজে কলমেই যে গুলোর অস্তিত্ব। ঐ টাকা গুলো সবার মাঝে ভাগ করে দিলেও আজকের পৃথিবী যেমন আছে, তেমনই থাকবে। তেমন একটা পরিবর্তন হবে না। হলেও অল্প কয়েক দিনের জন্য।

ভালো কিছু করা বা ভালো কিছু হওয়ার, ভালো কিছু পেতে চেয়ে না পাওয়া থেকে ফ্রাস্ট্রেশন আসে। চার দিকে তাকিয়ে দেখলে দেখব আমার থেকেও খারাপ অবস্থানে মানুষ রয়েছে। বৃষ্টির দিনে একদিন রাস্তায় বের হলে দেখতে পাবেন হোমলেস মানুষ গুলো কত কষ্ট পায়। শীত কালে দুপুর রাতে বা সকালের দিকে একটু বের হলে দেখা যাবে মানুষ গুলো কত কষ্ট করেই না ঘুমায়। হাত, পা, চোখ বা অঙ্গ বিহীন মানুষ গুলোর কথা নাই বললাম। শুধু মাত্র বেঁচে থাকার জন্য কত চেষ্টাই না করে। হাসপাতালে গিয়েছেন? কি দেখেন? মানুষের কষ্ট, বেঁচে থাকার জন্য তীব্র আকাঙ্ক্ষা। টাকা দিয়েও বেঁচে থাকা কিনতে পাওয়া যায় না। আমি বেঁচে আছি, সুস্থ আছি, এর থেকে তৃপ্তি আর কি হতে পারে?

আমাদের জীবনটা অনেকটাই রেন্ডম। অনিশ্চিত। আজ যদি মারা যাই, তাহলে কি হবে? আমি বিলিয়নিয়ার হয়েই যদি মারা যাই তাতেই বা কি হবে? বা বিলিয়নিয়ার হলে আমি কি কি করব? বিলিয়নিয়ার হয়ে গেলে আপনি কি কি করবেন, তার যদি একটা লিস্ট তৈরি করতে বলি, দেখবেন সেখানে সুখী হওয়ার উপাদান কমই থাকবে। বিলাসিতা আর সুখ এক না। F1 গাড়ি চালানোর মধ্যে যে সুখ পাওয়া যাবে, একা একা গুণ গুণ করে গান গাইতে গাইতে কোন এক রাতে হাঁটার মধ্যেও একই রকম সুখ খুঁজে পাওয়া যাবে।

কোন একটা কবরস্থানে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করুণ। তারপর কিছুক্ষণ ভাবুন। যা কিছুই আছে, সব কিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে। যে কোন সময়। আমরা জানি না কখন। কেউ জানে না। বিলিয়নিয়াররাও জানে না। হতাশ না হয়ে চার পাশের সুখ গুলো খুঁজলে মন ভালো হওয়ার মত অনেক কিছুই পাওয়া যাবে।

যদি এখন দৌঁড়াতে পারেন, থেমে না থেকে দৌঁড়ান। এক সময় বৃদ্ধ হয়ে গেলে যারা দৌঁড়ায়, তাদের দিকে তাকিয়ে আপসুস হবে। শুধু মন খারাপ করে না থেকে আপনি কি করতে পারেন, তা করে যান। ভালো লাগার মত কত উপাদানই না রয়েছে।

মানুষের নিজের কাছে যদি মূল্যবান কোন গিফট থাকে, তা হচ্ছে ধৈর্য্য। সব ঠিক হয়ে যাবে, এ চিন্তা করে নিজের কাজ করে যেতে থাকুন। যাই করেন না কেন, ভালো কিছু করে থাকলে তার প্রতিদান পাবেনই পাবেন। জীবন থেমে থাকবে না। মন খারাপ করে বসে থাকলেও সময় গুলো চলে যাবে। সময় অমূল্য। মন খারাপ করে বসে না থেকে নিজের সেরাটা করার চেষ্টা করুন। ভালো সময় নিজ থেকেই হাজির হবে। এই ঈদটা সব থেকে সুন্দর ভাবে কাটুক।

জাকির হোসাইন সম্পর্কে

একজন প্রোগ্রামার। লিখতে প্রচন্ড ভালোবাসি। দুটোই। কোড এবং গল্প বা ফিকশন। পেশা হিসেবে একজন ফ্রীল্যান্সার। প্রযুক্তি নিয়ে লেখা গুলো পাওয়া যাবে আমার টেক ডায়েরীতে
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চিন্তাভাবনা-এ। স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

6 Responses to ‘শুধু আমার সাথেই কেন এমন হচ্ছে?’

  1. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    ঈদের আগে বেশ সুন্দর একটা পোস্ট পড়লাম।

    ঈদ মোবারক।

  2. সামিরা বলেছেনঃ

    খুব খুব ভালো লাগলো লেখাটা। মন খারাপের সময়ে মন ভালো করে দেয়ার মতন লেখা।
    যখন যেভাবে যেমনই থাকি, আসলেই কত মানুষের চাইতে যে ভালো আছি – মনেই থাকে না। আলহামদুলিল্লাহ্‌। 🙂

  3. অনাবিল বলেছেনঃ

    lekha ta pore jome thaka monkharap oneektai halka holo…jana kotha gulo-i mon kharap er somoy vule jai keno bujhi na….. 🙁

    alhumdulillah always…. 🙂

    oneek dhonnobaad emon sundor ekta lekhar jonno…. 🙂

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।