রাজিন রিভিউ: Bajrangi Bhaijaan

Bajrangi-Bhaijaan-New-Poster

 

“দোস্ত! মনডা ভালা না!“

চার ধরনের বন্ধু থেকে চার ধরনের উত্তর পাওয়া যাবে।

১ম : “দূরে গিয়া মর।“

২য়: “চল বারে যাই”

৩য়: “চল স্টারে যাই”

এবং ৪র্থ: “চল সালমান খানের মুভি দেখি”

 

গাঁজাখুড়ি মারামারি এবং বুদ্ধিহীন রসিকতার জন্য সালমান খানের মুভির জুড়ি নেই। ভাবলাম “বজরঙ্গী ভাইজান” তার থেকে আলাদা কিছুই হবে না। কিন্তু মুভি দেইখা পুরাই টাশকি। মুভি শেষে দর্শকের মুখে হাসি এবং চোখে পানি দুটোই একসাথে যদি থাকে তাহলে মানতেই হবে দারুন একটা মুভি।

 

ট্রেলার দেখে কাহিনীটা যেটা মনে করেছিলাম সেটা আগে বলি। ছোট্ট একটি পাকিস্তানী বাচ্চা মেয়ে মুন্নী তার বাপ-মা এর কাছে আবদার জানায় “মেলায় যাবো”। বাপ-মা বাচ্চার শখ পূরনের জন্য ভারতীয় ঝাকানাকা মেলায় নিয়ে যায় যেখানে সালমান ভাই সেরকম ডান্স মারে। ভিলেনরা কোনভাবে মুন্নীকে বাপ-মা থেকে আলাদা করে ভারতে রেখে দেয়। সালমান ভাই ভিলেনদের চরম মাইর দিয়া মুন্নীকে রক্ষা করে। এলাকার নায়িকা কারিনা সালমানের প্রেমে পড়ে। শুরু হয় দুজনের চাকভুম চাকভুম। এরপর পাকিস্তানে গিয়ে মুন্নীকে পৌছে দেবার পরিকল্পনা করে সালমান। ইয়া এক লাফ দিয়ে ডাইরেক্ট পাকিস্তানে। পাকিস্তানের ভিলেন এদিকে আইটেম সংয়ের নাচ দেখছে। মুন্নীর বাড়ীর উপর এক টুকরো মেঘের সাথে “ক্লাউড কম্পিউটিং” করে ঠিকানা পেয়ে যায় সালমান ভাই। মুন্নীর বাপ-মায়ের বাড়ীর সামনে এসে ভিলেন বলে:”ভিতরে ঢুকতে গেলে আমার লাশের উপর দিয়ে যেতে হবে।“ সালমান ভাইকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে গুন্ডারা। সামনের গুন্ডা দেরকে চোখের থেকে আলোকরশ্মি বের করে পুড়িয়ে ফেলে সালমান ভাই।  আর পিছনের গুন্ডাগুলারে পশ্চাৎদিক দিয়ে হালকা বায়ু ছাইড়া উড়ায় দেয় সালমান ভাই। মুন্নী বাপ-মায়ের কাছে ফিরে যায় এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কার পায় সালমান ভাই। কাহিনী শেষ।

এটাই কী সালমান খানের মুভি হওয়া উচিত না? কিন্তু না। এই মুভির কাহিনীর সাথে আমার বর্ণিত কাহিনীর ফুটা মিলও নেই। আসল কাহিনী আমার মতে নিজেই মুভি থেকে জেনে নিলে বেশী উপভোগ করবেন।

 

অসাধারন একটি মুভি। প্রথম দৃশ্য থেকে শেষ পর্যন্ত শুধুই কেঁদেছি। একেই বলে মনকে ছুঁয়ে যাওয়া। আমাদের উপমহাদেশের মানুষদের মধ্যে যেরকম পরিবারের প্রতি মায়া, ধর্ম-বর্ণ ভুলে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা সবকিছু যখন রূপালি পর্দায় ফুটে উঠে তখন আটকে যায় মনটা।

 

নির্দেশক কবীর খানকে অনেক ধন্যবাদ এই মুভিটি উপহার দেবার জন্য। হিন্দী মুভির এই যাচ্ছেতাই যুগে একটি নিখাঁদ আবেগময় মুভি দিয়ে পুরাই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। এর আগে “নিউইয়র্ক” মুভিটি দারুন হলেও “এক থা টাইগার” মুভিটি বোরিং ছিল। এই মুভিতে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি কোন খনীর তেল। মুভিটির চিত্রনাট্য , সংলাপ এবং কাহিনী সবকিছুই দারুন। চিত্রায়নের স্থানগুলিও ফাটাফাটি। বিশেষ করে কাশ্মীরে চিত্রায়িত দৃশ্যগুলির জবাব নেই। কাহিনীতে কোন যুক্তিহীন ব্যাপার স্যাপার নেই। এছাড়া মুভিটির রসিকতাগুলোই বেশ মজার। সমাপ্তিটিও দারুণ।

 

মুভিটি সালমান খানের হলেও অভিনয়ের দিক দিয়ে প্রথমে নাম নিতে হয় শিশু অভিনেত্রী  হার্শালি মালহোত্রার। মুন্নী চরিত্রটির প্রত্যেকটি আবেগময় দৃশ্যগুলিতে চোখে পানি আটকে রাখা যায়না। চরম মিষ্টি এবং নিষ্পাপ এই মেয়েটির প্রতি কারো মায়া না হলে সে মানুষ না।

 

সালমান খান ছাড়া এই মুভি অসম্ভব। বজরঙ্গী চরিত্রটি সালমানের গতানুগতিক সুপারম্যান ধরনের না হলেও দারুন লেগেছে সালমান খানকে। নিঃসন্দেহে সালমানের ক্যারিয়ারের সেরা মুভি। সালমানকে বলিউডের এক নম্বর নায়ক এখন স্বীকার না করার কোন প্রশ্নই ওঠে না।

 

পার্শ্বচরিত্রে নওয়াজউদ্দীন সিদ্দিকীকে দারুন লেগেছে। কারিনা কাপুর মুভির নায়িকা হলেও প্রকৃত অর্থে তেমন বড় কোন চরিত্র নয়। কারিনার অভিনয় ভালো হলেও এরকম চরিত্রে কারিনা কাপুরের প্রতিভা পুরাটাই অপচয়। এছাড়া সাধনা শর্মা, ওম পুরী, রাজেশ শর্মা ,শরদ সাক্সেনাকে ভালো লেগেছে।

 

মুভির সংগীতে “সেলফি লে লে”,”তু চাহিয়ে”, “তু যো মিলা” বাদে বাকি গানগুলি মোটামুটি মানের। সংগীত পরিচালক প্রীতম “ভারদো ঝোলি মেরি” গানটির জন্য আবার চোরামিতে ধরাও খাইসে।

 

মুভিটির কোন খারাপ দিক আসলেই নেই। যদি আমার বস বলে “মুভির ভুল না খুঁইজা পাইলে তোর চাকরী নাই”, তবে বলতে হবে মুভিটি কিছুটা লম্বা এবং “চিকেন” নিয়ে গানটি মজার হলেও অপ্রয়োজনীয়।

 

মুভিটি দেখে পুনরায় সৎ এবং সুন্দরভাবে চলতে ইচ্ছা হয়। ধর্ম-বর্ণ সবকিছুর ঊর্দ্ধে শুধুমাত্র মানুষকে ভালোবাসাটাই হয়তো জীবনের স্বার্থকতা।

এক কথায় দুর্দান্ত একটি মুভি। নিঃসন্দেহে এ বছরের সেরা মুভি।

 

রেটিং : ৫ / ৫

রাজিন সম্পর্কে

এক কথায় চলচ্চিত্র ভক্ত , বোদ্ধা নয়।
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে চলচ্চিত্র-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

4 Responses to রাজিন রিভিউ: Bajrangi Bhaijaan

  1. শারমিন বলেছেনঃ

    রিভিউ পড়েই মুভিটা দেখলাম 😀
    মুভিটা আস্লেই সুন্দর
    আমার দেখা সাল্মানের সেরা মুভি

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    মুভিটা গতকাল রাতে দেখলাম। আপনার কথার সাথে ১০০% একমত।
    রেটিংটায় ঠিক দিছেন। সালমান খান তাহলে ভালো মুভিও করে!
    ভাল্লাগছে আসলেই।

  3. রাহনুমা বলেছেনঃ

    পাঁচে পাঁচ?
    কয়েকদিন ধরে বিপুল প্রশংসা শুনছি মুভিটার।
    শীঘ্রই দেখার আশা রাখি…

    রিভিউর জন্য ধন্যবান। 🙂

  4. সামিরা বলেছেনঃ

    হিন্দি মুভি দেখা হয় না সাধারণত। বেশ অবাক হলাম, এবার যখন এক আমেরিকান ফ্রেন্ডও এই মুভি দেখে ভালো রিভিউ দিলো ফেবুতে। দেখবো হয়তো!

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।