“আপনার গল্পটা একটু বলেন।”
নিজের মরার কাহিনী বলতে কার ভালো লাগে?
মরে ভূত হয়ে যাবার পর আজহার একটু ভালোই বিপদে পড়েছে। তার কোন আইডিয়াই ছিল না মরার পর এই রকম পরিস্থিতিতে পড়তে হবে! বিশেষ করে মরে ভূত হয়ে যাবার পর। যে জায়গাটায় আজহার মারা গিয়েছিল সেটার কাছে একটা ডাস্টবিন ছিল।
আজহার এর কাছে উড়ে এসে আরেকটা ভূত এসে দাঁড়াল।
অন্য ভূতটার অবয়বটা কিছুটা আলাদা। বাজে এক্সিডেন্ট এ মারা গিয়েছিল নাকি?
“আহ এই ডাস্টবিনটার সাথে কত স্মৃতি!” অন্য ভূতটা বলে।
“তাই নাকি? কী রকম স্মৃতি?”
“এই খান থেকে খাবার খাইতাম তো।”
“ইয়ে মানে আপনার কি টাকা পয়সার সমস্যা ছিল?”
“টাকা পয়সার ইস্যুই ছিল না আমার! আরে আমি মরার আগে তো কাউয়া ছিলাম। আপনি নিশ্চিত মানুষ?”
আজহার একটু অবাক হয়ে বলে “কাউয়া?!!”
“হ্যাঁ! এক্সিডেণ্ট এ মরার পর সব সমান। মানুষ কুত্তা বিলাই কাউয়া। মরার পরে ইন্টারনেট এর জন্য জিপি আর মোবাইল পাবেন নকিয়া ৫৩০০। ভূতদের মধ্যে কোন ইনইকুয়ালিটি নাই। সব সমান!”
আজহার যেন আকাশ থেকে পড়ল! মরার পরে মানুষ কুকুর কাকেরও একই অবস্থা!!
“আমিও মানুষ ছিলাম তাই আমি আলাদা।” শকড আজহার বলার চেষ্টা করে।
“হ! আমিও কাউয়া তাই আমিও আলাদা!!”
“কাউয়া আর মানুষ কী এক নাকি?!”
“আলাদাই তো আমি কইলাম। কিন্তু স্পেশাল কিনা সেইটা কন।”
“হ্যাঁ! মানুষ স্পেশাল।”
“কেমনে? পশু পাখি যেমন খাওয়া দাওয়া করে, হাগু করে, বংশ বিস্তার করে মানুষও তো সেইম কাজ করে! আলাদা কী করে কন দেখি!?”
আজহার একটু অবাক হয়ে যায়। বলে কী কাউয়াটা! কত বড় আস্পর্ধা! মানুষ থাকলে দিতাম একটা থাবড়া। মনে মনে সে ভাবে! মানুষ আর পশু এক হয় কীভাবে?
“কিন্তু আমরা তো অনেক আলাদা কাজ করি। যেটা তোমরা করো না।”
“যেমন?” অন্য ভূতটা বেশ ভাব নিয়েই জিজ্ঞেস করে।
“আমরা পড়াশোনা করি, জামা কাপড় পরি!”
“আমরা যে পড়াশোনা করি না এইটা কে কইল?! আর আপনে পড়াশোনা ক্যান করছেন? চাকরির জন্য?”
“হ্যাঁ!”
“চাকরি করছেন ক্যান? বেঁচে থাকার জন্য?”
আজহার একটু আমতা আমতা করে বলে, “হ্যাঁ!”
“আমিও বেঁচে থাকার জন্য যেটা জানার দরকার সেটা আমি শিখ্যা ফালাইছি। ব্যাস। আর কিছু নিয়ে পড়ি নাই! তাইলে আপনার সাথে আমার পার্থক্যটা কী? আপনি কি পেট চালানো বাদ দিলে আর কিছু নিয়ে পড়ছেন?! “
আজহার এবার এ যেন কিছু উত্তর খুঁজে পায় না, কোন মরে বলে, “নাহ!”
“তাইলে আপনার সাথে আমার পার্থক্য কী?”
“জামা কাপড় এর কথা কইলা না?”
“আমাগো জামা কাপড় লাগে না। তাই পরি না। লাগলে ঠিকই পরতাম!”
“আমরা সকাল ৯ টা ছয়টা অফিস করি, চাকরি করি … ব্যবসা করি”
“সব ক্যান করেন?! বাইচা থাকার লেগা। আমিও তো নয়টা ছয়টা ডাস্টবিনে ময়লা টুকাইতাম! এন্ড রেজাল্ট কন – পেটের জন্য! বাঁচার জন্য!”
“আমি প্রেম করছি, বিয়া করছি – তোমরা তো মিয়া বিয়া শাদী কিছু করো না!! এমনেই বাচ্চা পয়দা করো!”
“আমরা বিয়া করি না আপনারে কে কইল?!! আমাদের মধ্যে বিবাহ শাদী আছে, প্রেম মোহাব্বতও আছে! সেইটা আমাদের মতো কইরা না হইলেও আমাদের মতো কইরা আছে!”
“আমাদের ভালোবাসা আর তোমাদের ভালোবাসা কি এক নাকি! আমাদেরটা সেই রকম লেভেল এর!”
“মিয়া আমরা ভালোবাসাবাসি করি যাকে ইংরেজিতে বলে লাভ মেকিং!! আর এন্ড রেজাল্টটা কি সেইটা বলেন! সব কিছুর মূলে ঐ বংশবৃদ্ধি তো?! আমরাও বংশ বিস্তার করি আপনারাও করেন, খালি হয়ত চামচ আর মশলায় কিছু পার্থক্য আছে! মূল কাহিনী কিন্তু একই! ঐ বাচ্চা পয়দা! আপনাদের লাইফও আমাদের মতোই! জন্মান, স্কুলে যান, চাকরি করেন, বাচ্চা পয়দা করেন, তারপর একদিন পটল তোলেন!”
আজহার একটা কাকের কাছে কথায় হেরে যাচ্ছিলো দেখে অস্থির হয়ে যাচ্ছিল, “আমরা বাচ্চা বড় করি, ভর্তি কোচিং করাই, স্কুলে নেই, কলেজে পড়াই… – লালন পালন করি। ভালোবাসি!”
“ভালো পয়েন্ট! আমরাও কিন্তু একই কাজ করি! আমাগো ডিম কি আপনে পাইড়া দ্যান? কাউয়ার বাচ্চা পালা যে কত কঠিন! মানুষ জানলে কুত্তার বাচ্চা বদলাইয়া কাউয়ার বাচ্চা ডাকত! আমরাও বাচ্চা বড় করি, আদব কায়দা শিখাই! ক্যামনে কী করতে হবে সব শিখাই, ভালোবাসি। কুনু পার্থক্য নাই!”
আজহার কী বলবে বুঝতেই পারছিল না।
“আমরা কথা বলি! আমাদের ভাষা আছে!”
“তো আমরা যে সারাদিন কা কা করি! সেইটারে আপনার কথা মনে হয় না?! চাইনিজ জাপানিজ এর মতো কাওয়ানিজও আরেকটা ভাষা ধইরা নেন! সমস্যাটা কী?”
“কিন্তু আমরা তো কবিতা গল্প সিনেমা কত উঁচু মানের ক্রিয়েটিভ কাজ করি।”
“আমরা যে করি না কে কইল?! আমি ডেইলি ২ টা কবিতা লিখতাম!! বাকিদের পইড়াও শুনাইতাম! আর আমি মরছি ক্যামনে বলে আপনার ধারণা? আমার গাওয়া গানের কদর না বুঝতে পাইড়া কাউয়ারা মিলা আমারে গণঠোকরানি দিছে!! এই কারণেই তো আমি ভূত হইয়া গেছি!”
“আমাদের জীবনে বিনোদন একটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ।”
“তার মানে যেই সব গরিবদের জীবনে বিনোদন নাই ওরা মানুষ না?! আর আমাদের বিনোদন এর আনন্দ যদি আপনি বুঝতেন তাইলে আপনি কাকই হইতে চাইতেন! আমরা মানুষের মাথায় মিসাইল ছেড়ে কী যে মজা পাই! এইটাই তো আমাদের বিনোদন!”
আজহার তখন কথা হারিয়ে ফেলেছে, সে “সৃষ্টির সেরা জীব” হয়ে নিজের সাথে একটা কাকের পার্থক্য করতে পারছিল না।
“শোনেন সব কথার শেষ কথা হইল, আপনার পুরা লাইফের কাজ কর্ম ৩ ভাগে ভাগ করা যাইব। আপনি হয় বেঁচে থাকার জন্য কিছু করছেন অথবা বংশ বিস্তারের জন্য কিছু করছেন আর বাকিটা টাইম পাস যেমন ধরেন ফেইসবুকিং!! সেই টাইম পাসও আসলে আপনার বেঁচে থাকার জন্যই করা! আমিও আসলে এই ৩ প্রকারের কাজই করছি!
আজহার দ্বিমত করতে গিয়েও পারে না।
“এখন কন প্যাকেজ কোনটা নিবেন?! জিপির চাইর খান প্যাকেজ আছে। … ইন্টারনেট সিরাম স্লো। তবে ভূত হওয়ায় তাড়াহুড়া নাই। তাই সমস্যাও নাই! টাইম তো আনলিমিটেড! ফেইসবুকিং আরামসেই করতে পারবেন! আপনারে এড দিতাছি, খাড়ান!”
উৎসর্গঃ সরব পরিবারকে! শুভ জন্মদিন সরব!
সে কী! জন্মদিনে মরে ভূত হওয়ার গল্প?? :voypaisi: :voypaisi:
গল্পটা মজা লাগলো। 😀
শুভ জন্মদিন- সরব!
:happybirthday:
absolutely BRILLIANT!
:happybirthday: :happybirthday: :happybirthday:
বেশি ভালো হইছে,ভাইয়া! :clappinghands: 😀