আজ ২৭শে জুলাই- সরবের জন্মদিন। জন্মদিন নিয়ে বিশেষ আগ্রহ আমার কখনোই ছিলো না। আগ্রহের সুনসান অবসান ঘটে শংকরের ‘জন-অরণ্য’ বইয়ের নায়ক সোমনাথের দর্শন পড়ে। তাই ধরেই নেয়া যায়, এটা জন্মদিন উপলাক্ষিক কোন লেখা না। আমি আমার কিছু অনুভূতি লিখবো। যা কোন উপলক্ষ ছাড়াও বছরের তিনশত পঁয়ষট্টি দিনই লেখা যায়।
সরবের সাথে আছি দু’বছর তো হবেই। আমার তারিখ ভালো মনে থাকে না, তাই অনেক চেষ্টা করেও আমি শুরুর দিনটা মনে করতে পারছি না। যদিও এতদব্দী আমার জীবনের অন্যতম সেরা দিনগুলোর মধ্যে ওটা একটি। তবে জুন মাসের মাঝামাঝিতেই বোধয় সরবে অ্যাকসেস পাই। তার আগে একমাসের অপেক্ষা। সরবে যারা লিখে থাকেন, সরব সম্পর্কে যারা জানেন, তারা জানেন রেজিস্ট্রেশন করা আর অ্যাকসেস পাওয়ার মধ্যবর্তী সময়টা সাধারণত কেন এতো দীর্ঘ। সরবের অনেকগুলো স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এটি একটি। যদিও মজার ব্যাপার হলো, আমি সিম্পলি সরবের লেখাগুলো পড়া আর মন্তব্য করার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম, কারণ সরবে যে লেখাগুলো প্রকাশিত হতো সেগুলোর মান এতো -ই ভালো ছিলো যে ‘সরবে লিখবো’ এমনটা ভাবার সাহস তখনও হয়নি। (না, নন-রেজিস্টার্ড হয়েও মন্তব্য করা যেত। কিন্তু আমার মাথায় পোকা ঘুরঘুর করছিলো- আমি রেজিস্টার্ড মেম্বার হয়েই মন্তব্য লিখবো!) এতো মুগ্ধ হয়ে আমি লেখাগুলো পড়তাম যে এমনও সময় গেছে, প্রায় পুরোদিন সরবে পড়ে রইতাম। (অবশ্যই খাওয়া, গোসল, মাঝে একটু রেস্ট নেয়া- সবগুলোকে সাথে নিয়েই পড়তাম :p) এবং আজ দুই বছর পর, এই অবস্থানে দাঁড়িয়ে, একই কথা ঠোঁটে আসে, ইটজ বিন অ্যান অনার টু রিড দ্যাটস টাইপ অফ রাইটিং।
(যার কল্যাণে অ্যাকসেস পাওয়া তার কথা না বললে তো হয় না। তিনি আমাদের জাতীয় বোন কানিজ ফাতেমা ছন্দা ওরফে ফিনিক্স। যাকে দোস্ত অক্ষর ষণ্ডা’পি বলে ডাকে। তা আজকের এই দিনে ষণ্ডা’পিকেও কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ না করলে একরকম গুনাহ-ই করা হবে। ছন্দা’দি তুমি এই মুহূর্তে লেখাটা পড়তে থাকলে, আমার সালাম গ্রহণ করো 😛 )
তারপর থেকেতো কেবলই সামনে এগিয়ে চলা। লিখাও শুরু করলাম সরবে। কী লিখবো আমি। স্পেসিং সেন্স শূন্যের কাছাকাছি (এই সেন্সটা এখন যে খুব ধারালো তা নয়। তবে তখন খুব বেশি কনফিউশন কাজ করতো), বিরাম চিহ্ন প্রয়োগে দুর্বলতা, বানান-বিভ্রাট আরও কত কিছু। তাও লিখতাম। ভাইয়া, আপু’রা ভুল ধরিয়ে দিতেন। অবনী আপু বিরাম চিহ্নের সঠিক প্রয়োগ যথেষ্ট হেল্প করেছেন। তাছাড়া ছন্দা আপু আর সামিরা আপু’র সরবে লেখা ‘বানান-বিভ্রাট’ সিরিজ পড়ে, সহজাত ভুল হয় এমন বানানগুলো জানতে পেরেছিলাম। ভুল করতাম, লিখতাম; নতুন কিছু ভুল করতাম, নতুনভাবে শিখতাম। একজীবনে ভুল করা তো আর শেষ নেই। হরেক রকম ভুল মৃত্যুবদি মানুষ করে যায়। কিন্তু এটা বলতেই হয়, সরব শিখিয়েছে অনেক, মাঝেমাঝে তা ছিলো সরব তবে অনেকটা সময়েই নীরবে।
শুধু অনলাইনেই না, অফলাইন অ্যাকটিভিটিতেও সরব সবসময়ই ‘সরব’। সরব আড্ডাগুলোতে আমরা ‘সরব’ ছিলাম হাকিম চত্বর, টিএসসি, কার্জন হলে। এক্ষেত্রে প্রশ্ন হতে পারে, অলস গোত্রীয় কারো জন্য উত্তরা থেকে ক্যাম্পাসে আসাটা এতো সুখকর কী করে হয়? আমিই বোধয় সবচেয়ে দূর থেকে আসতাম। কিন্তু ফ্রেপড্ মিলনায়তনে সরবের হওয়া একটা ওয়ার্কশপে থাকাটাই বাসে ঝিমুনিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর সাহস জুগিয়েছে। ঐ ওয়ার্কশপে থেকে ফেরার পথে আমার কেবলই মনে হয়েছে, এই মানুষগুলোর কথা শোনার সুযোগ পেলে, সেটা ছাড়া যাবে না। তবুও ছাড়তে হয়েছে বারকয়েক। ভ্যাকেশন বাদে প্রতি শনিবার আমার ডিপার্টমেন্টে মিডটার্ম পরীক্ষা থাকে। তাই শুক্রবারে আড্ডা পড়লে মুখ কালো হওয়াটাই স্বাভাবিক ছিলো। এবং তাই-ই হতো। 😛 তবে তা পুষিয়ে যেতো পরের কোন আড্ডায় গল্পের ফাঁকে ফাঁকে চা খেতে খেতে।
সরবস্বরের চতুর্থ ইভেন্টের একফাঁকে সঞ্চালক, ছোটভাই সাফির হঠাৎ করেই সরব সম্পর্কে কিছু বলার জন্য দাঁড়াতে বলে। কি বলবো আমি? সরব নিয়ে আমার মাথায় যে কথাগুলো সৃষ্টি হয়ে আছে, তা অত অল্প সময়ের ব্যাপ্তিতে সংলগ্ন হয়ে উঠার ফুরসত পাবে না। জাহিদ ভাইয়ার (স্বপ্নবিলাস) লেখা ‘দৌড়’, সামিরা আপুর ‘পড়ুয়ার প্রেম, পড়ুয়ার প্রেমিকা’, শৈশবদা’র ‘ঘুণপোকা’, ছন্দা’দির ‘সেক্সুয়াল অবজেক্টিফিকেশন নিয়ে ধারাবাহিক লেখাগুলো , নিশমের ‘ফিটাসের কান্না’, অক্ষরের ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের স্বপ্ন পূরণের গল্প’, ‘মাধবীলতা তুমি বিরঙ্গনা নও’ (আমার লেখিকার নাম আপাতত মনে আসছে না), বাপ্পিদা (বোহেমিয়ান), একুয়া রেজিয়া আপু সহ আরও অনেকের কিছু কিছু লেখা মনে এমনভাবে দাগ কেটেছে, মাঝেমাঝে ইচ্ছে করে যারা ওগুলো পরেনি তাদের বসিয়ে লেখাগুলো পড়াই। শুধুতো সুখাদ্য খেলেই তৃপ্তির ঢেঁকুর আসে তা না, সুপাঠ্য পড়েও আসে বৈকি।
সরব ছাড়াও সামহ্যোয়ার-ইন, সচলায়তন, প্রথম আলো ব্লগ, চতুর্মাত্রিক ব্লগেই তো লিখার সুযোগ পেয়েছিলাম (লেখার সুযোগ পাওয়া তেমন কঠিন না, রেজিস্ট্রেশন করলেই হয়। 😛 সচলে শয্যা পেতে অবশ্য অপেক্ষা করতে হয়েছিলো) …একটা কিংবা দুইটা লেখা দিয়েই আর মন টিকে নি। ‘ধুর! সরব-ই ভালো, ওখানেই লিখি।’ ফিরে এসেছি। তাইতো বোধয় বছর না ঘুরতেই সরবে আমার পোস্ট করা লেখার সংখ্যা সত্তুর ছাড়িয়েছিল (মানের দিক থেকে আমি তলানিতেই ছিলাম। আছি এখনও। কিন্তু ঐ যে বললাম, সরবে প্রকাশ করতেই অলাদা আনন্দ কাজ করতো। লিখা রেডি হলেই প্রকাশ করতাম) আলস্য, ব্যস্ততার কারণে অনেকটাই ঝিমিয়ে গেছি। না মানে, বয়সও তো হচ্ছে, তাই না? :p তবে ইনশাল্লাহ, ম্যারাথন আবার হয়তো শুরু হবে নিকট ভবিষ্যতে।
দেখতে দেখতে চারবছর কেটে গেছে। পুরাতন অনেক কিছু হারিয়ে গেছে সময়ের দাবিতে, নতুনত্ব এসে ঠাঁই নিয়েছে, বৈচিত্র্য এসেছে। সরব কখনো সেজেছে ‘তারুণ্যের বিশ কুড়ি’র বইয়ের পৃষ্ঠার ভাঁজেভাঁজে, অক্ষরে-অক্ষরে। কখনও বা ‘সরব-স্বরে’ কোন তরুণের কণ্ঠে প্রশ্ন রূপে কিন্তু চেতনটা আজও রয়ে গেছে অবিকৃত- চিন্তায় সরব থাকুক সবাই।
সরবকে বলি, পালতোলা নৌকো হলেও তুমি বহমান থেকে যাবে। তোমার দিক ঠিক রাখার জন্য, তোমার বেগ বাড়িয়ে নেয়ার জন্য অলক্ষ্যেই সরব থেকে যাবে কিছু মানুষ। আমরা বুড়িয়ে যাবো, তুমি রয়ে যাবে চির নবীন, চির তরুণ, তারুণ্যের জয়গান গাওয়ার জন্য, তারুণ্যের মাস্তুল ধরার জন্য। এই রে, একটু বেশি-ই ফর্মাল হয়ে গেলো বোধয় কিচ্ছু করার নাই। শেষ করার আগে, এসব বলা লাগে (যান, পরিবেশ হালকা করে দিলাম :p কিন্তু একটা কথাও বাড়িয়ে বলা না! )
পুনশ্চঃ আমি লেখার শুরুতেই বলেছি, অনুভূতি লিখবো। আমি সেটাই করেছি শেষ লাইন লিখা আগপর্যন্ত। নিয়ম মানি নি। নিজের মনে বলে গেছি। অনুভূতি লিখন আর নিজমনে গল্প আউড়ানোর মধ্যে বিশেষ প্রার্থক্য নেই যে 🙂
:welcome: 🙂