“মাঝেমাঝে অক্ষরগুলো এত চঞ্চল হয়ে ওঠে যে মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠে। আমার মাথাটা ঝিমঝিম করছে কিছুটা বেশী। আজকের খাবারে প্রোটিন বোধ হয় খানিকটা বেশি ছিল। মা বোধ হয় বমিও করেছে। ইশশ্! খারাপ লাগছে ভীষণ মায়ের জন্য। দেখতে ইচ্ছে করছে খুব। কিন্তু ইচ্ছে করলেই তো আর সম্ভব না,আমি সেটা বুঝি। অপেক্ষা করতে হবে। যা-ই হোক,অক্ষরগুলোকে স্থির করার প্রচেষ্টায় আসি। বলার কাজটা রপ্ত করতে পারলেও লেখার কাজটা রপ্ত করার সুযোগ আমার হয়নি। মা-কে কিছু বলতে ইচ্ছে করছে। শুরু করা যাক।
মা,
কেমন আছো বলো তো? সেদিন বোধ হয় জ্বর এসেছিলো তোমার। তোমায় খুব ঝামেলায় ফেলে দিলাম,তাই না? সরি মা, খুব সরি।
আচ্ছা মা,তুমি কি আমার কথা শুনতে পাও? বুঝতে পারো আমি কি বলি? যেমন এখন কি বুঝছো যে তোমায় আমি কতটা মিস করছি?
ইচ্ছে করছে কি জানো মা? ইচ্ছে করছে তোমার গায়ের ঘ্রাণ নিতে,তোমার কোলে মুখ লুকাতে,তোমার মমতা মাখা স্পর্শ পেতে। কিন্তু এখন তা কোনো ক্রমেই সম্ভব না,জানি আমি। অপেক্ষা করতে হবে…
মা কি করছো? ঘুমোচ্ছো,তাই না? কোনো সাড়াশব্দ নেই তো খাওয়ার পর থেকে,তাই বললাম। তোমার কি বৃষ্টি পছন্দ না শীত পছন্দ? মনে হয় বৃষ্টি। সেদিন দেখলাম বৃষ্টির পানি মুখে ছোঁয়াচ্ছো। দেখলে মা, বৃষ্টির ফোঁটাগুলোও কত্ত ভাগ্যবান,তোমার ছোঁয়া পাচ্ছে,আর আমি অধম পাচ্ছি না!
সেদিন সন্ধ্যায় কফি খাওয়ার পর কি সব অংক কষছিলে বাব্বাহ্! কী কঠিন! তুমি অনেক বুদ্ধিমতী,মা। আচ্ছা মা,তুমি কি নিয়ে এত পড়ালেখা করো? মাঝেমাঝে দু একটা কবিতা বা গল্প পড়ো তো,আমার ঘুমোতে শান্তি লাগে খুব তখন। সেদিন যে বারান্দায় দাঁড়িয়ে গান গাইছিলে,খুব মধুর লাগছিলো শুনতে। ইশশ্ মা! তুমি এত সুন্দর করে গাও কিভাবে? আমায় শেখাবে?
একটা সিরিয়াস কথা বলি,মা? যদিও এই কথা বলার জন্য আমি এখনো অনেক বেশিই ছোটো।তবুও বলি।
জানো মা,আমার জীবনের লক্ষ্য কি? আমার লক্ষ্য হলো,বড় হয়ে যেন আমি তোমাকে আর বাবাকে আমার চাইতেও বড় করে তুলতে পারি। বুঝলে না তো, না? মানে হলো, আমার নামের মাঝে যেন তোমরা নিজেদের সম্মান খুঁজে পাও,এটাই আমার একমাত্র ইচ্ছে। তুমি দেখো মা,আমি তোমাদের একদিন ঠিকই সেই সিঁড়িতে দাঁড় করাবো। দোয়া কোরো,মা। তাহলেই আমি পারবো।
আচ্ছা মা,সেদিন ডাক্তার আঙ্কেল তোমায় কি বললো? আমি ঘুমোচ্ছিলাম তখন,তাই স্পষ্ট সব শুনতে পারিনি। কিছুকিছু শুনেছি,তবে এই মূহুর্তে মনে পড়ছে না। মনে পড়লেই বলবো। শুধু বুঝেছি তুমি খুব চিন্তা করছো। আমার কি কিছু হয়েছে মা? আমাকে ঘিরেই তোমার যত চিন্তা,আমি বুঝি তো। আমি এও বুঝি যে তুমি আমায় নিজের জীবনের চাইতে বেশি ভালোবাসো। আমি ভালো আছি, মা। তুমি চিন্তা কোরো না তো অত,শুধু শুধু শরীর খারাপ করবে আবার। আর ঠিকঠাক মতন ওষুধ খেয়ো কিন্তু,না হয় আমি রাগ করবো।
আমি জানি এখন আমি তোমায় অনেক বেশি কষ্ট দিচ্ছি। কি করবো বলো? কন্ট্রোলিং পাওয়ার যে এখনো গ্রো করেনি আমার। তুমি দেখে নিও,বড় হয়ে তোমাকে আমি আর কষ্ট দেবো না,প্রমিস!
ওওও হ্যাঁ! অল্প অল্প শুনতে পাওয়া কথাটি মনে পড়েছে।ডাক্তার আঙ্কেল বলেছিলেন,”প্রাইমারি চেকআপ শেষ। আগামীকাল আসুন। অ্যাবোরশান কালই হয়ে যাবে আশা করা যাচ্ছে।”
বাবা ডাকছে মা,ওঠো ঘুম থেকে। বাবাও তো সেই একই কথাই বলছে দেখছি বারবার,”অ্যাবোরশানের সময় হয়েছে,অ্যাবোরশানের সময় হয়েছে,ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।”
মা, অ্যাবোরশান মানে কি? শব্দটা কেমন যেন বিচ্ছিরি,তাই না মা?
ঘুম পাচ্ছে মা, এখন ঘুমোই আমি। পরে আবার কথা হবে।
-তোমার অনাগত অংশ…”
প্রচণ্ড ভয়ে রেণুর ঘুম ভাঙলো। কপালে ঘাম জমে গেছে বিন্দু বিন্দু। শফি বারবার তাড়া দিচ্ছে রেণুকে তৈরী হয়ে নিতে। রেণু স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই শফিকে ডেকে বললো,”আর ছ’টা মাস পরে যাই? বাচ্চাটা বড্ডো অভিমান করবে গো!”
কাছের মানুষের সব কিছুকে ব্যক্তিগত দৃষ্টিতে দেখা মানুষের স্বভাব, সেই দৃষ্টিতে আমি প্রচন্ড ভীতু!
পাঠক দৃষ্টি মেলে দেখি– কিছু এলোমেলো ছায়া অথবা কিছু আলোকছটা, আবার ধোঁয়াশা…
কেমন মন খারাপ করা গল্প…
তবে লেখাটা ভালো।