বাংলাদেশ থেকে ভারত কেন তাঁদের সেনাবাহিনী সরিয়েছিল?

একটা সময় ঐতিহাসিক হবার ইচ্ছে ছিল! (এখনও আছে!) ইতিহাসের বই পড়তে চাইতাম। আমি ক্লাস সিক্স / সেভেন থেকেই ডিগ্রির ইতিহাস বই হাতে পাইছিলাম! বড় বোন ইতিহাসের ছাত্রী ছিল তাই! সেই থেকে দেখা যেত অনেক কিছুই পড়া হয়েছিল বিশেষ করে উপমহাদেশের আর মিডল ইস্ট এর। (সেই অনেক কিছুই অবশ্য ক্লাস সিক্স / সেভেন অনুযায়ী!! ) যতই পড়ি ততই দেখি যে কম জানি আর কিছু বলতে গেলেই ভয় লাগে!

ঐতিহাসিক হতে চাওয়ার পেছনের কারণ হচ্ছে অনেক কিছুই আমরা যত সহজে বুঝে যাই, খুব সহজ সরল একটা ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে দেই – আসলে রিয়েলিটি তার চেয়ে অনেক আলাদা। বেশিরভাগ ঘটনা আমরা যেভাবে পড়ে আসছি স্কুল পর্যন্ত ভালো ভালো বই পড়লে দেখা যাবে তার এক পেশে বর্ণনা আসছে, ঘটনার ভেতরের কিংবা বাইরের পুরো কমপ্লেক্সিটি আসে নাই।

আমরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো একদম ভুলে যাই। কোল্ড ওয়ার, ইন্ডিয়া পাকিস্তান রিলেশন, পাকিস্তান চায়না রিলেশন — এই গুলা মাথায় রাখলে বাংলাদেশের জন্ম থেকে শুরু করে শৈশবটা  বুঝতে সুবিধা হয়। (এইগুলা জানা থাকলে ধরেন আপনি জানবেন সৌদি আরব এর মতো মুসলিম দেশগুলো আমাদের কবে স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছিল এবং কেন! বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা কী ছিল!)

বঙ্গবন্ধু বিদায় দিচ্ছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীকে মার্চ, ১৯৭২

বঙ্গবন্ধু বিদায় দিচ্ছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীকে মার্চ, ১৯৭২

ইন্ডিয়ান আর্মি কেন বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছিল ১৯৭২ এ?

আমার পড়াশোনা যদি খুব সীমিত। তবুও মনে পড়ে এই রকম পড়েছিলাম বাইরের চাপে এবং বাংলাদেশের মধ্যে কিছু গুজবের কারণে ইন্ডিয়াকে ভারতীয় মিলিটারিকে সরিয়ে নিতে হয়েছিল।

আজ ফেইসবুক সেলিব্রেটি “পুলিশ ভাই” মাশরুফ ভাই এর একটা স্ট্যাটাস পড়লাম। (দুর্ভাগ্যক্রমে উনি আমার বন্ধু তালিকায় নাই। )

উনি লিখেছেনঃ

“শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে যুদ্ধপরবর্তী প্রথম সাক্ষাতেই বঙ্গবন্ধু বলেন- বেহেনজী, বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারতীয় সৈন্য আপনি কবে সরিয়ে নেবেন? ইন্দিরাজী বললেন, “এটা হবে আপনার জন্মদিনের উপহার”।
ভারতীয় স্ট্র্যাটেজিস্টরা সমালোচনা করতে করতে নীল করে ফেলে ইন্দিরা গান্ধীর, কেন তিনি সেনা সরালেন বাংলাদেশ থেকে- এটা নিয়ে।

ওই স্ট্র্যাটেজিস্টরা কল্পনাও করতে পারবেনা, ছয় ফুট দুই ইঞ্চি, মোটা চশমা পরা ওই লোকটার পার্সোনালিটির সামনে কোনও স্ট্র্যাটেজি খাটেনা।

আর তাই বাংলার মাটিতে কোনও বিদেশি সেনা হাঁটেনা । ভুখা নাঙা বাংলাদেশের মানুষ চলে মাথা উঁচু করে, সগর্বে।

এগেইন, থ্যাংক্স টু দ্যাট টল, স্পেকটাকলড ম্যান উইথ আ ভয়েস অফ ভলকানো।

ফেইসবুক লিঙ্ক

এটা পড়ার পর খোঁজাখুঁজি শুরু করলাম ছোটবেলার পড়া জিনিসটা ঠিক আছে নাকি। ছোটবেলার পড়া বহু জিনিস ভুল প্রমাণিত হইছে বড় হইতে হইতে! তাই রিস্ক না নেয়াই ভালো।
আমার কয়েক ঘণ্টার খোঁজাখুঁজির ফলাফল তো মাশরুফ ভাই এর স্ট্যাটাস এর বিপরীতে যাচ্ছে।

চৌধুরী এম শামীম নামের এক লেখকঃ বাংলাদেশ ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশীপ ট্রিটি – আ ক্রিটিকাল এনালিসিস বইতে লিখেছেন
“In the international sector too, many countries were withholding recognition of Bangladesh because of the presence of Indian troops there. Prime minister Sheikh Mujib thus became aware of the necessity for the withdrawal of Indian forces from Bangladesh.”

সূত্র

 অন্যদিকে আমেরিকার স্টেইট ডিপার্টমেন্ট এর ওয়েবসাইট থেকে দেখুন কিসিঞ্জার কী বলছেন

“Kissinger stated that agreement had been reached with the Chinese on “our general game plan” and it was essential to do nothing concerning recognition of Bangladesh until the Indian troops were withdrawn from Bangladesh.”

আরেকটি বইতে একই রকম কথা পেলামঃ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সন বলেছিলেন যতদিন পর্যন্ত ইন্ডিয়ান আর্মি বাংলাদেশ ত্যাগ না করবে ততদিন পর্যন্ত আমেরিকা বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেবে না। [১]

এখন মনে হতে পারে, বাংলাদেশের স্বার্থের জন্যই ইন্ডিয়া এই কাজ করেছে বঙ্গবন্ধুর কথায়! আসলে রিয়েলিটি এত সহজ না। বাংলাদেশকে দখল করে রাখলে ইন্ডিয়া বেশ বিপদে পড়ে যেত কারণ চায়না, আমেরিকা এবং পাকিস্তান এদের সবার স্বার্থ আছে বাংলাদেশে। চায়না ভারতের এক্সপ্যানশন সহজভাবে নিত না। আর চায়না না নিলে আমেরিকাও নিত না। আর অন্যদিকে বাংলাদেশ আনস্ট্যবল হয়ে গেলে ভারতের উপর অনেক ভাবেই চাপ পড়ে যেত।

বাংলাদেশে ভারতীয় সৈন্যের অবস্থান এই দেশে ভারতবিরোধী একটা সেন্টিমেন্ট তৈরি করছিল। অনেকে এমনও বলছিলেন যে অনেক মালামাল ভারতে পাচার করা হচ্ছিল!! স্ট্রাটেজিক কারণেই বাংলাদেশ থেকে ভারতের সেনা প্রত্যাহার দরকার ছিল।
২০০৫ এ প্রকাশিত আরেকটি পেপার [২] এ এক অথর স্পেকুলেট করছেনঃ

“It was India who insisted on the withdrawal of the army before Smt Gandhi made a state visit to Bangladesh in March 1972.”

 

আসল কথা হচ্ছে  শুধু বঙ্গবন্ধুর কথায় ভারতীয়  সৈন্য ত্যাগ হবে এমনটা হবার সম্ভাবনা খুব কম। ভারত বহু কিছু চিন্তা করেই  এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর ক্যারিশমায় মুগ্ধ হয়ে অস্ত্র জমা দিয়েছিলেন এটা নিয়ে তেমন সন্দেহ নাই। হাজার মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের অস্ত্র জমা দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর কথায়। কিন্তু সেটার সাথে ভারতের ইস্যু মেলালে হবে না।

One More thing!

ইতিহাস পড়ার মজাটা আবার একটু পেলাম ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে। ক্ষমতা লোভী ভুট্টো আমেরিকাকে বাংলাদেশকে স্বীকার করে নিতে উপদেশ দিয়েছিল!! (আজিব দুনিয়া!)

হেনরি কিসিঞ্জার এর মেমো দেখতে পারেন!

“President Bhutto after his return from Peking told our Charge in Islamabad that he feels we should make official contact with the Bangladesh authorities, including Mujib, without delay and extend formal recognition soon, perhaps in early March. ”

“As Bhutto himself has pointed out, the US can have an important role in providing Bangladesh with an alternative to dependence on India and the Soviet Union.”

 

যাই হোক আশা করি মাশরুফ ভাই উনার কথার রেফারেন্স দিবেন অথবা ভুলটা ঠিক করে দিবেন।

ছবি সূত্র

[১] Nair, P. S. (2008). Indo-Bangladesh Relations. APH Publishing. page: 58-59
[২] Pattanaik, S. S. (2005). Internal political dynamics and Bangladesh’s foreign policy towards India. Strategic Analysis, 29(3), 395-426.

  • লেখাটা একটু তাড়াহুড়ো করে লেখা। আমি আরও রেফারেন্স এর অপেক্ষায় আছি।

বোহেমিয়ান সম্পর্কে

পেশায় প্রকৌশলী, নেশায় মুভিখোর আর বইপড়ুয়া। নিজেকে খুঁজে পাবার জন্য হাঁটতে থাকি। স্বপ্নের সাথে হাঁটা, স্বপ্নের জন্য হাঁটা। https://www.facebook.com/ibappy
এই লেখাটি পোস্ট করা হয়েছে সচেতনতা-এ এবং ট্যাগ হয়েছে , , , , , , স্থায়ী লিংক বুকমার্ক করুন।

2 Responses to বাংলাদেশ থেকে ভারত কেন তাঁদের সেনাবাহিনী সরিয়েছিল?

  1. রুহশান আহমেদ বলেছেনঃ

    ইতিহাসের জ্ঞান নাই বললেই চলে, রাজনীতিও টানেনা। তবে আপনার লেখায় সব সময়ই জানার মত কিছু থাকে। সো… ভালো লাগলো।

  2. বোহেমিয়ান বলেছেনঃ

    ফেইসবুকের একটি গ্রুপ থেকে আলোচনা হলোঃ

    Kai Kaus নামের একজন দিয়েছেন

    # চাপ পূর্ব থেকেই ছিল :-
    “… 1. Calls upon the the Government of India and Pakistan to take forthwith all measures for an immediate cease-fire and withdrawal of their armed forces on the territory of the other to their own side of the India-Pakistan borders.” [ Text of the Resolution 2793 9XXVI), as proposed by 34 powers and adopted by the General-Assembly on 7th December 1971. India was against it.]

    # ভারতের প্রতিশ্রুতি :-
    “…As regards the withdrawal of Indian troops from Bangla Desh, both the Government of India and of Bangla Desh are seized of the matter. This to assure you that the withdrawal of the Indian armed forces will take place as soon as the two Government consider it practicable. I should like to repeat my Foreign Minister’s assurance to the Council that the Indian troops will not be in Bangla Desh “a day longer than necessary”. They are there at the request of the Bangla Desh Government.” [ Text of the letter dated 11 January 1972 addressed to the UN Secretary-General by the Permanent Indian Representative Shri S. Sen ]

    # প্রতিশ্রুতি পূরণ :-
    “… The Prime Minister of Bangladesh paid warm tribute to the armed forces of India and the part they payed in the liberation of Bangladesh. The task having been completed, the two Prime Ministers felt that these armed forces should be withdrawn. The withdrawal of the Indian armed forces would be completed by March 25, 1972.” [ Joint Statement issued in New Delhi on 8 February 1972 on the talks between the Prime Minister of India Mrs. Indira Gandhi and the Prime Minister of the People’s Republic of Bangladesh Sheikh Mujibur Rahman. ]

    Source : India and the freedom struggle of Bangladesh / Edited by : M. S. Deora. [ Discovery Publishing House (new delhi) – 1995. P. 255/333/337 ]

    আরেকটি লিঙ্ক
    https://www.facebook.com/kay.kavus/posts/376063072575583?hc_location=ufi

    “… ১৯৭২ সাল থেকেই ইতিহাসে লেখা হত প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানেই ভারতীয় সেনাবাহিনী বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছিল। এখন নতুন তথ্য আমাদের জানানো হচ্ছে। নতুন ইতিহাস শেখানো হচ্ছে। ২১ মার্চ সংখ্যা ‘প্রথম আলো’ পত্রিকায় ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব জে এন দীক্ষিতের এক সাক্ষাৎকারের প্রথম অংশ ছাপা হয়। সাক্ষাৎকারের একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর নিম্নরূপ :

    প্রশ্ন : আরেকটা প্রসঙ্গে এবার আসি। আপনি বইতে বলেছেন, শেখ মুজিব চেয়েছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনী আরও এক বছর বাংলাদেশে থাকুক। কিন্তু আমরা তো শুনে এসেছি যে, বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনারা দ্রুত চলে যাক। বঙ্গবন্ধু সেটাই চেয়েছিলেন।

    উত্তর : না। এটা ঠিক নয়। কারন ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলিকাতায় শেখ মুজিব ও ইন্দিরা গান্ধীর আলোচনায় আমি উপস্থিত ছিলাম। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ আলাপের একজন সাক্ষী। তা ছাড়া আমি বাংলা বুঝি। শেখ মুজিব কোন জোরাজুরি করেননি। শুধু বলেছেন, ‘আপনারা অনেক করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি এখনই স্থিতিশীল হয়নি, অস্ত্র এখনও জমা দেয়নি অনেকে, কোন কোন জায়গায় পাকিস্তানপন্থীরা এখনও রযে গেছে। সে কারণে অন্তত: এক বছরের জন্য আপনার সশস্ত্রবাহিনী আমাদের দরকার। এখন যা আছে তার পুরোটা নয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জন্য তার কিছু ইউনিট।’ ইন্দিরা গান্ধী তার জবাবে বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারব না। আপনার আমন্ত্রনে আমি বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার আগেই ভারতীয় সেনাবাহিনী সেখান থেকে চলে আসা উচিত হবে। আর আমি বাংলাদেশ সফরে যেতে চাই। কারন এ আমন্ত্রণটা আমার জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক।’ সেদিনের সে বৈঠকে অনেক আলোচনার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে পাকিস্তানীদের হটানোর জন্য কক্সবাজারে কেবল এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য রাখার সিদ্দ্বান্ত হয়।”

    জে এন দীক্ষিতের এ-কথা যদি সত্য হয়, তবে দুটি বিষয় প্রমাণিত হয়। এক. বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে শেখ মুজিবুর রহমান ভারতীয় সেনাবাহিনী অন্তত: আরও এক বছর এখানে থাকুক তা চেযেছিলেন। দুই. ভারতের প্রতি তার গভীর আস্থা ছিল। কিন্তু এই সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় অংশ একই পত্রিকার ২২ মার্চ সংখ্যায় প্রকাশিত হযেছে। তার হেডিং হল : “প্রথম আলোর সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে জে এন দীক্ষিত / মুক্তিযুদ্ধে ভারতের হস্তক্ষেপে শেখ মুজিব খুশী হননি।”

    এখানেও সংশ্লিষ্ট প্রশ্ন ও উত্তর তুলে ধরতে চাই :

    প্রশ্ন : বাংলাদেশের সাথে ভারত যে সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছে সেটা হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মধ্যে সংশয় ছিল। আপনি বুঝতে পারছিলেন, সে জাতীয় সম্পর্ক হয়ত গড়ে উঠবে না, এমনকি ইন্দিরা গান্ধীও জটিলতাগুলো বুঝতে পেরেছেলেন।

    উত্তর : সমস্যাটা ইন্দিরা গান্ধী বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলেন। আমার বইয়ে আমি সে কথা লিখেছি। ইন্দিরা গান্ধী ও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সম্মানে রমনা ময়্দানে শেখ মুজিব একটা যুদ্ধ স্মারক তৈরী করতে চেয়েছিলেন। শেখ মুজিব চেয়েছিলেন ১৯৭২-এর মার্চে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে এলে তিনি তার ঘোষনা দেবেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে, ইন্দিরা গান্ধী আমাকে ডেকে বললেন, ‘তাদের গিয়ে বলুন, আমি এটা চাই না।’ পরক্ষণেই আবার বললেন, ‘থাক বলার দরকার নেই। ব্যাপারটা অশোভন দেখাবে। কিন্তু আমার হিসাব বলছে, আজ তারা যে স্মারক বানাবে, কাল ভারতবিদ্বেষী হয়ে পড়লে তাতেই আবার তারা পাথর ছুড়ে মারবে। কাজেই আরেকটা বিতর্কিত ইস্যু তৈরি করে কি লাভ।’ তিনি বললেন, ‘এটা অস্বস্তিকর ব্যাপার, আমি টের পাচ্ছি।’ মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত যখন সহায়তার হাত বাড়িয়েছিল শেখ মুজিব তখন নেতৃত্বে ছিলেন না। ভারতের হস্তক্ষেপে তিনি খুশি হননি, যদিও এটাও বুঝতে পারছিলেন যে, সেটা অনিবার্য।

    সাক্ষাৎকারের প্রথম অর্থাৎ ২১ মার্চ প্রকাশিত অংশে আরেকবার ফিরে যেতে চাই। একটি প্রশ্ন ও উত্তর এমন :

    প্রশ্ন : আপনার লেখায় বাংলাদেশ-ভারত, ২৫ বছরের চুক্তি সম্পর্কিত এক আলোচনার বর্ণনা এসেছে, যেখানে দাবী করা হযেছে যে, কলিকাতা বা ঢাকায় অনুষ্ঠিত আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকেই এ চুক্তির প্রস্তাবটি এসেছিল।

    উত্তর : ঘটনাটি ঘটেছিল একটা জাহাজে। আপনাকে আমি ঠিকঠাক সময়টাও বলে দিতে পারব। বিকাল তখন তিনটা। ঢাকা আর নারায়ণগঞ্জের মাঝামাঝি এক নৌপথে জাহাজের আপার ডেকে আমরা সবাই বসে আছি। শেখ মুজিব ইন্দিরা গান্ধীকে বললেন, ‘দিদি, এত কিছুর শেষ পরিণতিটা কিভাবে হলে ভাল হয়?’ কে একজন বললেন, যৌথ ইশতেহার। মুজিব বললেন, ‘এর চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারে না?’ আরেকজন তখন বললেন, যৌথ ঘোষণা। তখন তিনি বললেন, ‘এরচেয়ে ভাল কিছু নেই?’ ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব টি এন কাউল সে সময় বললেন, সবচেয়ে ভাল যা হতে পারে তা হল – একটা ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি। মুজিব বললেন, এ তিনটার প্রত্যেকটা আমি চাই॥”

    – আনোয়ার জাহিদ ( রাজনীতিবিদ) / কালের যাত্রার ধ্বনি ॥ [ গতিধারা – ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ । পৃ: ১৯-২০ ]

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।