অনেক দিন ধরে ভাবছিলাম এই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা সূত্রপাত করব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কে নিয়ে লেখা পোস্টটা যে আলোচনার শুরু ঘটিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে যে অন্তত ৫০০০ লোক বিষয়টা নিয়ে ভেবেছেন কিংবা আলোচনা করেছেন। অনেকে আমার পোস্ট এর পর এটা নিয়ে বেশ ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন। আমি আসলে এটাই চাই। আলোচনা হোক, চিন্তা ভাবনা শুরু হোক। নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা আমাদের জানা ইতিহাস কিংবা বিশ্বাসকে দেখতে শুরু করি।
সরব এ টলারেন্স নিয়ে আমরা বহু আগে থেকেই কাজ করছি। এবারে কাজ করতে চাচ্ছি ফ্রিডম অব স্পীচ / বাক স্বাধীনতা নিয়ে। (আমি বেশ কিছু আগে ধার্মিক মুসলিমদেরকে টার্গেট করে একটি লেখা লিখেছিলাম — অফেন্সিভ কার্টুন ইস্যুগুলাতে কী করা যেতে পারে প্র্যাক্টিকাল দৃষ্টিকোণ থেকে।)
ব্লগারদের নিয়ে যে দুঃখজনক উগ্রতা, অজ্ঞতা আছে সেটা দূর করতে চাই। আসিফ মহিউদ্দিনকে আমি একদম পছন্দ করি না, সত্যিকার অর্থে তার কথার জবাব দেয়ার মতো কিংবা নোটিশ করার মতোও না! কিন্তু তবুও ভলতেয়ার এর মতো আমার অবস্থান, ওকে কথা বলতে দেয়া হোক! অপছন্দের কথা বলতে দেয়াটাই ফ্রিডম অব স্পীচ!
প্রোজেক্ট বাকস্বাধীনতা নামে আমরা কিছু করতে চাই।
সামহইয়ারইন ব্লগে আমি বহুদিন ব্লগিং করি নি মূলত ইসলাম বিরোধী লেখার কারণে। একজন প্র্যাক্টিসিং মুসলিম হিসেবে অনেক খারাপ লাগত। ভাবতাম, মানুষ এমন ক্যান?! এই সব বিষয়ে অনেক ভেবেছি। কী করা উচিৎ? কোন কাজটা সঠিক। কিন্তু চিন্তা করতে গিয়ে দেখলাম আমি জানি খুব কম! তারপর জানার আগ্রহ থেকে একটু একটু করে পড়েছি, চিন্তা করেছি। শুধু এক লেখকের কিংবা একই ঘরানার লেখকের লেখা পড়লেই চলবে না, নানান ধরনের, নানান ঘরানার লেখকের লেখা পড়তে হবে- এই বিষয়টি আমি ফলো করার চেষ্টা করি। আমি এখনও এই বিষয়ের সব কিছু ইস্যুতে স্থির সিদ্ধান্তে আসতে পারি নি। কিন্তু চেষ্টা করছি। আমার অবস্থান অনেক খানি বদলেছে মূলত পড়ার এবং চিন্তা করার কারণে। এই বিষয়ে একটু আকটু ডিবেটেও আমি আগ্রহী।
এই বিষয়ে যদি ডিবেট করতে চাই তাহলে আসলে আমাদের জানতে হবে বাকস্বাধীনতার অ আ ক খ।
এই বিষয়ে একদল বলছেন বাকস্বাধীনতার কোন সীমা নেই! যেটি কিনা মোটেও ঠিক নয়, যেমন ধরেন আপনার কথায় অন্যের ক্ষতি হলে সেটি আপনাকে বলতে দেয়া হবে না। আবার আরেকদল বলছেন অন্যের মনে আঘাত দেয়ার কথা নিয়ে – অন্যের অনুভূতিতে আঘাত দিলে সেটা বলতে দেয়া হবে না!! – এই সিদ্ধান্ত কে নেবে, কীভাবে নেবে?! এই সব প্রশ্ন আমাদের করতে হবে। কেন অন্যের মনে আঘাত দেয়া যাবে না সেই যুক্তিগুলো কি আপনার জানা আছে?
যারা ভাবছেন ধর্মকে নিয়ে আমি যা ইচ্ছা তাই লিখতে পারব আর যারা ভাবছেন ধর্মকে সমালোচনা করা ঠিক নয় – ২ পক্ষেরই নিজেদের যুক্তিগুলো কী কী সেসব নিয়ে লিখতে পারেন, আলোচনা চলতে পারে। যুক্তি না দিয়ে এক কথায় সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলে তো হবে না!
আমি প্রিলিমিনারি একটা লিস্ট দিচ্ছি। এই লিস্টের লেখার সব কিছুর সাথে আমিও যেমন এগ্রি করি না আপনারও করার দরকার নেই। কিন্তু খোলা মনে পড়তে, পড়াতে এবং চিন্তা করতে তো দোষ নেই?
স্ট্যানফোর্ড এর প্লেটো ওয়েবসাইটের ফ্রিডম অব স্পীচ এর উপর লেখাটা দিয়ে শুরু করতে পারেন। অনেকগুলো স্কুল অব থট এর একটি চমৎকার সামারি পাবেন।
খুবই বেসিক একটি ওভারভিউ পাবার জন্য পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশন পাবেন এখানে।
হার্ম প্রিন্সিপাল নিয়ে বিবিসির একটি ২ মিনিটের ভিডিও! অবশ্যই দেখুন।
জন স্টুয়ার্ট মিলের অন লিবার্টি বইটা বাকস্বাধিনতা ইস্যুতে একটি মাস্টারপিস! অবশ্য পাঠ্য! ফ্রিতেই পড়তে পারবেন এখান থেকে।
এক তার্কিশ মুসলিমের লেখা ইসলাম উইদাউট এক্সট্রিমজ। বইটি আমি পুরোটা পড়ি নি। কিন্তু আলোচনায় অনেক কিছু যোগ করবে ভেবেই লিস্টে দিচ্ছি। ভূমিকা পাবেন এখানে। শুধু ভূমিকা পড়েই আমি বেশ মুগ্ধ। আপনারাও পড়তে পারেন। কীভাবে এক মুসলিম এবং এক ননমুসলিম একটি বিশেষ প্র্যাকটিসকে ইসলামের অংশ ভেবে ভুল করে সেই ব্যক্তিগত অবজার্ভেশন থেকে উনি বইটি শুরু করেছেন।
Islam without Extremes: A Muslim Case for Liberty
আরও কিছু আর্টিকলঃ
ইন্টারনেট এনসাইক্লোপেডিয়া অব ফিলোসফিতে পড়ুন টলারেন্স নিয়ে।
পিটার সিংগার লিখেছেন হলোকাস্ট, ইসলাম এবং ফ্রিডম অব স্পীচ নিয়ে
কেনান মালিক লিখেছেন, অফেন্স করার অধিকার কেন ফ্রিডম অব স্পীচ এ থাকা উচিৎ।
কেনান মালিকের আরেকটি লেখা, উনার মতে ফ্রিডম টু অফেন্স, ফ্রিডম অব স্পীচ এর একটি “কোর” বিষয়।
কেন এমন লিস্ট দরকার?
কেন বাংলায় আরও বেশি বেশি কন্টেন্ট দরকার এই ইস্যুতে?
বাংলাদেশে শিক্ষার হার এবং সুশিক্ষার হারের কথা আমরা কল্পনা করতে পারি। আমাদের ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্র থেকে শুরু করে মাদ্রাসার ছাত্র কিংবা পিএইচডি করছেন নর্থ আমেরিকায় – এমন অনেকের মধ্যে আমি দেখেছি উনারাডিবেট করছেন, অথচ বিষয়বস্তুর অ আ ক খ নিয়েও জানেন না!! আমরা প্রায় সবাই ভুলভাল বলি, আস্তে আস্তে পড়াশোনা, চিন্তা আর ডিবেট এর মাধ্যমে কিন্তু সিলি ভুলগুলো এড়ানো সম্ভব। সেই লক্ষ্যেই এই রকম লিস্ট করা। বিতর্কটা শুরু হোক।
এরপরের পর্বগুলোতে আমি এবং আমি আমরা সবাই এই ইস্যুতে যেন ফ্রিডম অব স্পীচ ইস্যুটাতে আরও সিরিয়াসলি চিন্তা করতে পারি। আমি কয়েকটা পয়েন্ট নিয়ে লেখার ইচ্ছা পোষণ করছি। আপনারাও লিখতে পারেন। ভদ্র ভাষায় নাস্তিক কিংবা ধার্মিক কাউকে গালি বা ব্যঙ্গ করে না, যুক্তি দিয়ে লিখুন। কলমের জবাব কলম দিয়েই দিন। স্টুয়ার্ট মিল থেকে শুরু করে নোমান আলী খান এর কথা আসুক, ভলতেয়ার থেকে শুরু করে পাড়ার ভবানী চাচার কথাও আসুক!
যুক্তির মাধ্যমে আরেকজনের হৃদয় জয় করার চেষ্টা চলুক।
[আপনার যদি আরও বই এবং লেখার খোঁজ জানা থাকে প্লিজ এই খানে কমেন্ট করুন, আমি যোগ করার চেষ্টা করব]
চমৎকার একটা পোস্ট
অনেক কিছু জানতে পারলুম 🙂