আমি হাসপাতাল থেকে বের হলাম, মাথায় এক ঝাঁক চিন্তা নিয়ে। হাতে নার্সের দেয়া কাগজ। তাতে লেখা আগামীকাল আম্মাকে রিলিজ দেয়া হবে এবং বিলের অংকটা। আমি অবাক হয়ে গেলাম,এটি কি হাসপাতাল নাকি ডাকাত খানা। ১০ দিনে বিল এসেছে প্রায় এক লাখের কাছাকাছি। কিভাবে এই টাকার ঝামেলা ম্যানেজ করা যায় তা নিয়ে চিন্তা চলছে।
হঠাৎ মনে পড়লো আরে কাল তো আমার সেমিষ্টার ফ্রি দেয়ার শেষ তারিখ। তা না হলে আবার এক হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে এবং দুইদিন পর পরীক্ষা। পড়াশুনা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে ৪ মাস পর পর গুনতে হয় বিশাল অংকের টাকা। কিভাবে কি ম্যানেজ করি? সরকারি অবসর প্রাপ্ত বাবার পক্ষে এত সব ম্যানেজ করা সম্ভব নয়। আমি সংবাদপত্রে ও অনলাইন পত্রিকার লিখে যা আয় করি তাতে দিয়ে কিছুই তো হবে না এবার।
সেই সময় পথে যখন হাটছিলাম দু’চোখ দিয়ে কান্না চেপে রাখতে পারছিলাম না। পায়ে নিচে থাকা সব মাটি সরে যাচ্ছিলো। চিন্তা, হতাশা , ডিপ্রেশন মনে হচ্ছিল এখুনি আত্নহত্যা করি। ভার্সিটির সেমিষ্টারি ফ্রি যোগার করব নাকি আম্মা হাসপতালের টাকা ম্যানেজ করবো?
উপরের গল্পটা সত্যি। আমার নিজের জীবনের গল্প। ভেবেছিলাম কোনদিন কাউকে বলব না। আজ বলে দিলাম।
এরুপ হাজার হাজার গল্প রয়েছে আমাদের চারপাশে। মেস থাকা ছেলেটি ৪-৫টি টিউশনি করিয়ে ৪ মাসের সেমিষ্টার ফ্রি যোগার করে। সেখান থেকেই নিজের জমানো টাকা দিয়ে বাবা-মায়ের জন্য ঈদের জামা-কাপড় কিনে। না খেয়ে থাকে অনেক সময়। সারাদিন টিউশনি করিয়ে রাতে বাসায় যেতে কান্ত শরীরটা আর হাঁটতে চায় না। কিন্তু ছেলেটির উপায় নেই রিকশায় যাওয়ার। কেননা রিকশা ভাড়াটা বাঁচিয়ে রাতের খাবারটা সেরে ফেলতে হবে যে তার।
কি আপনার কাছে গল্পগুলো সত্যি মনে হচ্ছে না? হবে কিভাবে? আপনি যে উচুঁ তলার মানুষ। আপনার কাছে মনে হয় একজন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের প্রতিদিন ব্যায় ১০০০ হাজার টাকা। তাতে ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট হিসেব করলে হয় ৭৫০ টাকা। গনিতের নতুন সূত্র। ভিডিও লিংক ।
সেপ্টেম্বরের ৯ ও ১০ তারিখ চলমান আন্দোলনে সরকার নড়েচড়ে বসেছে। দশ তারিখের আন্দোলনে পুরো ঢাকা শহর অচল হযে গিয়েছিলো। প্রথম আলোসহ সবগুলো জাতীয় দৈনিকে এটা ছিলো প্রধান শিরোনাম।
বিকালের দিকে মোবাইলে একটি ম্যাসেজ আসলো এনবিআর পক্ষ থেকে তাতে লেখা ছিলো, ভ্যাট দিবে বিশ্ববিদ্যালয়, ছাত্র-ছাত্রীরা। এর মানে কি? ব্যাপারটা অনেকটা এরুপ হয়ে গেলো না, “দুধ দিবে খামারীরা, গরু-ছাগলে না:পশু মন্ত্রণালয়” গত কয়েকদিন ফেইসবুকে আলোচিত স্ট্যাটাস ছিলো এই লাইনটি।
শিক্ষাখাতে এই ভ্যাট নিয়ে আন্দোলনের ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ইতিমধ্যে নানা ইভেন্ট ও পেইজ তৈরি করা হয়েছে। গত কয়েক দিনে আলোচ্য বিষয়ছিলো এটি। কয়েকটি ছবি দেখে আসি আন্দোলন নিয়ে:
আরও অনেক ছবি আছে। সেই সব ছবি হয়ত ইতোমধ্যে ফেইসবুক দেখেছেন অনেক। এবার ভ্যাট নিয়ে একটি শর্টফিল্ম দেখে আসি:
https://www.youtube.com/watch?v=Zx3oWCzwsZ8
শিক্ষাখাতে ভ্যাট ইস্যু নিয়ে সবাই এক। এতে দ্বিমত নেই। তবুও কেন এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না। দেখুন এক পথচারির মন্তব্যে।তিনি একমাস হেঁটে অফিস করতে রাজি আছেন। তবুও আন্দোলন যেন চলে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এটাই চায় তিনি।
নাটকের পরবর্তী দৃশ্য কি হবে? সেটা দেখায় অপেক্ষায় । অনুরোধ এভাবে শিক্ষার্থীদের জীবনটা নিয়ে খেলা করবেন না। অনেক হয়েছে আর না। ৭.৫ শতাংশ ভ্যাট বাতিল করুন।
কবে আসবে সুদিন?